অনলাইন ডেস্ক : চীনের ওপর পাল্টা শুল্ক নিয়ে এবার সুর নরম করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগের অবস্থান পাল্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, চীনের ওপর পাল্টা শুল্ক যথেষ্ট পরিমাণে কমবে। তবে সেটা ‘শূন্য’ হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প এ কথা জানান। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপে বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুই অর্থনীতির মধ্যে যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, ট্রাম্পের অবস্থান বদলের মধ্য দিয়ে উত্তেজনা কমে স্বস্তি ফিরবে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ট্রাম্প। এর পর থেকে কয়েক দফায় চীনের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে তাঁর প্রশাসন। বর্তমানে চীনা পণ্যে মার্কিন শুল্কের হার দাঁড়িয়েছে ১৪৫ শতাংশে। ট্রাম্প প্রশাসনের পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় চীনও কম যায়নি। বেইজিং দফায় দফায় পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ শতাংশে।

চীনের ওপর পাল্টা শুল্ক কমানো নিয়ে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘১৪৫ শতাংশ অনেক বেশি হয়ে যায়। এটা যথেষ্ট পরিমাণে কমানো হবে। কমিয়ে এমন একটা জায়গায় নিয়ে আসা হবে, যেটা এত বেশি হবে না। তবে সেটা শূন্যও করা হবে না।’

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের করা এক মন্তব্য নিয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে এ কথাগুলো বলেন ট্রাম্প। স্কট বেসেন্ট এক দিন আগে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্কের হার বেড়ে এত বেশি হয়েছে যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক সেবা সংস্থা জেপি মরগান চেজ আয়োজিত এক বিনিয়োগ সম্মেলনে এ কথা বলেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী। সম্মেলনে থাকা এক ব্যক্তির তথ্য অনুযায়ী বেসেন্ট সেখানে বলেন, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে, সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। তিনি মনে করেন, বাণিজ্য নিয়ে দুই দেশের মধ্যে এই লড়াই নিকট ভবিষ্যতে থাকবে না।

চীনের ওপর পাল্টা শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান বদলের ঘোষণা এবং মার্কিন অর্থমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে যে ক্রমেই দরপতন হচ্ছিল, মঙ্গলবার থেকে আবার তা স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। এদিন মার্কিন পুঁজিবারের প্রধান তিনটি সূচক সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। এশিয়ার পুঁজিবাজারগুলোর সূচকও বেড়েছে দেড় থেকে দুই শতাংশ পর্যন্ত।

ট্রাম্পের মন্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। ‘ট্রাম্প ভীরু’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে এমন শব্দবন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইনে। এ ছাড়া ট্রাম্পের বক্তব্যের ভিডিও চিত্র ‘চীনের ফেসবুক’ হিসেবে পরিচিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে দেখেছেন ১৫ কোটির বেশি মানুষ।

বেইজিংও চুক্তি চায়
চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানো নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণা ও মার্কিন অর্থমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেইজিং। দেশটি বলেছে, হুমকি বা জবরদস্তির মাধ্যমে চাপ তৈরি করে কাজ হয় না। বেইজিং বলেছে, এসব না করে যুক্তরাষ্ট্র যদি চুক্তি করতে চায়, তাহলে তারা আলোচনায় বসতে রাজি। ওয়াশিংটনের জন্য বেইজিংয়ের দরজা খোলা আছে।

ট্রাম্প ও বেসেন্টের মন্তব্য নিয়ে জানতে চাইলে গতকাল বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে (চীনকে) হুমকি দেওয়া ও জবরদস্তি বন্ধ করা। যদি তারা চুক্তি করতে চায়, বেইজিং তাতে রাজি আছে। এ ক্ষেত্রে এসব বাদ দিয়ে সমতা, পারস্পরিক সম্মান ও দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের ভিত্তিতে চীনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুয়ো জিয়াকুন বলেন, ‘চীনের সঙ্গে চুক্তি করতে চাওয়ার কথা বলে ক্রমেই সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করা চীনের সঙ্গে আলোচনার সঠিক কোনো পন্থা নয়। সোজা কথায় বলতে গেলে, এসব করে কোনো কাজ হবে না।’

বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে চীনের অবস্থান স্পষ্ট উল্লেখ করে গুয়ো জিয়াকুন আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছে, তা নিয়ে চীনের অবস্থান স্পষ্ট। এ অবস্থান হলো আমরা কোনো ধরনের লড়াইয়ে যেতে চাই না। কিন্তু আমরা লড়াই করার জন্য ভীতও নই। যদি লড়াইয়ের প্রশ্ন আসে, তাহলে আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব। আর যদি আলোচনার প্রশ্ন আসে, তাহলে আমাদের দরজা খোলা আছে।’