অনলাইন ডেস্ক : চীনা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সিনোফার্মের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ বাজারে আসতে পারে। এই ভ্যাকসিনের দুই ডোজের দাম পড়বে ১ হাজার ইউয়েন (১৪৪ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১২,২০০ টাকা)-এরও কম। এ খবর দিয়েছে চীনা সংবাদ মাধ্যমে সিজিটিএন।
খবরে বলা হয়, বাজারজাতকরণ পর্যালোচনা প্রক্রিয়া শুরু হবে বিদেশে এই ভ্যাকসিনের তৃতীয় দফার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হওয়ার পর। চীনা ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ বা সিনোফার্মের চেয়ারম্যান লিউ জিংঝেন নিজেই এই কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন, বাজারে আসার পর ভ্যাকসিনের দামও অত বেশি হবে না।
তিনি বলেন, চীনের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি হলেও, এদের সকলেরই ভ্যাকসিন প্রয়োজন নেই। শিক্ষার্থী বা যারা শহরে কাজ করেন, তারাই ইনজেকশন আকারে এই ভ্যাকসিন নিতে পারেন।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে বা কম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যারা থাকেন, তাদের না নিলেও চলবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে আসার পর এই ভ্যাকসিন অনেকেই বিনামূল্যে পাবেন। বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মী ও শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে ভ্যাকসিনটি পেতে পারেন। অন্যদের হয়তো নিজ খরচায় ভ্যাকসিন নিতে হবে।
চীনের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকা জানিয়েছে, পুরো ট্রায়াল শেষ না হলেও কিছু রাষ্ট্র-মালিকানাধীন হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের জুলাই থেকেই বিনামূল্যে ঐচ্ছিকভাবে ইনজেকশেনটি দেওয়া শুরু করেছে সিনোফার্ম। ভ্যাকসিনের সম্ভাব্য দাম প্রকাশ হওয়ার পর অবশ্য চীনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ওয়েইবোর করা এক জরিপে দেখা গেছে যে, ৫ হাজার উত্তরদাতার মধ্যে ২৫২৭ জনই বলছেন যে তারা এই ভ্যাকসিন কেনার সামর্থ্য রাখেন না। ২১২৭ জন বলছেন দাম নাগালের মধ্যে।
সাংহাই-ভিত্তিক ভ্যাকসিন গবেষক তাও লিনা বলছেন যে, যেহেতু চীনে মহামারির প্রকোপ এখন বেশ কমে এসেছে সেহেতু নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে ভ্যাকসিন গ্রহণে ক্ষতির কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘যদি নতুন করে সংক্রমণ শুরু হয়, তাহলে জাতীয় কর্তৃপক্ষ হয়তো আলাদা ব্যবস্থা নেবে।’ এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা এমনিতেই বিনামূল্যে ভ্যাকসিনটি পাবেন।
চীনের জাতীয় ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রামে যদি এই ভ্যাকসিন অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাহলে হয়তো সকল নাগরিকই বিনামূল্যে ভ্যাকসিনটি পেতে পারে। এখন পর্যন্ত পোলিও, হেপাটাইটিস বি সহ ১৫টি রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর ১৪টি ওষুধ এই প্রকল্পের আওতায় সকল নাগরিককে দেওয়া হয়।
এর আগে বেইজিং ও উহানে সিনোফার্মের বিভিন্ন ইন্সটিটিউটের প্রস্তুতকৃত দু’টি পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু হয়।
সিনোফার্মের চেয়ারম্যান লিউ নিজেও এই পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, এখন পর্যন্ত তিনি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখতে পাননি।
বেইজিং-এর একটি কারখানায় প্রতি বছর ১২ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তৈরি করতে সক্ষম। ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেয়ে কারখানাটি প্রস্তুত আছে। উহানে অবস্থিত সিনোফার্মের আরেকটি ওয়ার্কশপও প্রতি বছর ১০ কোটি ডোজ প্রস্তুতে সক্ষম।