শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : গল্পের নাম ‘হোং ফেন’, আমি যার ভাবার্থ করেছি ‘লাল প্রসাধনী’! এই গল্পটাকে ছোট গল্পই বলা যায়, তবে গল্পটা আকারে বেশ বড়। গল্পের লেখক সু থোং, এই নামটি লেখকের ছদ্মনাম। ‘লাল প্রসাধনী’ গল্পের প্রেক্ষাপটের সময়কাল হচ্ছে গত শতাব্দীর পঞ্চাশ দশক। গল্পটার শুরু করছি, পাঠকদের অনুরোধ করছি গল্পটা পড়ার জন্য!

(পূর্ব প্রকাশের পর)

ছিউ ই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করলো ট্রাকের পাটাতনে পায়ের গোড়ালি দিয়ে সজোরে আঘাত করে। সে বললো, আমি তো কোন কিছুই সাথে আনি নাই, আমার কাছে একটা পয়সাও নাই। একটা তিন কোণা আন্ডারওয়্যারও তো সাথে নাই যে কাপড় বদলাবো। আপনি বলেন আমি কি করতে পারি? গাড়ীর পরিচালক বললেন, তোমার সাথে কোন কিছুই নিতে হবে না, ওখানে পৌঁছাবার পর সবাইকেই নিত্য দিনের ব্যবহার্য এক সেট সব জিনিসই দেয়া হবে। ছিউ ই বললো, কার দরকার আছে আপনাদের দেয়া জিনিস-পত্রের, আমি আমার নিজের জিনিস নিয়ে আসতে চাই! আমার সোনা-রূপার গহনা, রেশমের পায়জামা, রজঃশ্রাবের কাপড়, এ গুলোও কি আপনারা দিবেন? এ সব কথা শুনে গাড়ীর পরিচালক গম্ভীর হয়ে গেলেন, তিনি বললেন, আমি তো দেখতে পাচ্ছি তুমি হচ্ছো একটা চরম বেয়াদব মেয়ে! আবার যদি উল্টা-পাল্টা কথা বলো তবে গুলি করে তোমায় শেষ করে দেবো!

সিয়াও অ শক্ত করে ছিউ ই-র হাত ধরে রেখেছে, সে বললো, তুমি কোনো কথা বলো না, তোমার পায়ে পড়ছি, তুমি আর কোন কথা বলতে যেও না। ছিউ ই সিয়াও অ-কে বললো, উনি গুলি করবেন না। গুলি ছুঁড়ার সাহস ওনার নেই! সিয়াও অ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো, সে বললো, সব কিছুই কি রকম কঠিন অবস্থায় পৌঁছিয়েছে, আর তুমি ভাবছো ঐ সব জিনিসের কথা, ওগুলো দিয়ে এখন তুমি কি করবে? ধারালো ছুরিকে খাড়া করে রাখো আর শুইয়ে রাখো, ওর ধারালো বুক তো থেকেই যাচ্ছে, তাই ওরা যা ইচ্ছা তা করুক। অনেক দূরে নগর প্রাকারের উত্তর তোরণ দেখা যাচ্ছে, নগর প্রকারের উপর গেড়ে রাখা খুঁটির লাল পতাকাগুলো পত পত করে উড়ছে। ট্রাকের উপরে থাকা মেয়েরা হঠাৎ করেই উপলব্ধি করলো যে ট্রাকটা ওদেরকে এই পরিচিত ঐশ্বর্য শালী শহর থেকে বাইরে নিয়ে যাবে, বাইরে নিয়ে ফেলে দেবে। ওদের মধ্যে কেউ কেউ উচ্চ স্বরে কান্নাকাটি শুরু করলো। “পরিচালক আপনি আমাদের ফিরে চলে যেতে দিন!” এমন করুণ অনুনয়ের শব্দ শুনা গেলো এক জনের পর আরেক জনের কন্ঠ থেকে! অন্য দিকে তরুণ বয়সের গাড়ী বহরের পরিচালক কোমর ও পিঠ খাড়া করে এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো, তার চেহারা গম্ভীর ইস্পাত কঠিন, সে একটুও নড়লো না। যে মেয়ে গুলো পরিচালকের খুব কাছাকাছি ছিলো, তারা অনুভব করতে পারলো যে, এই লোকটির শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে খুবই দ্রুত গতিতে এবং তার শরীর থেকে আসছে এক ধরনের মিশ্র গাঢ় রসূনের গন্ধ।

ট্রাকটা শহরের উত্তর তোরণ অতিক্রম করার সময় গতি কমালো খানিকটা। এই সময়ে উত্তেজনায় ছিউ ই সিয়াও অ-র হাতের আঙ্গুল ধরে টানলো। তারপর হঠাৎ করেই দেহ বাকা করে লাফ দিলো, বেড়িয়ে আসলো ট্রাক থেকে? সিয়াও অ দেখতে পেলো ছিউ ই-র শরীরটা নগর প্রাচীরের সাথে খানিকটা ঘষা খেলো, তারপর দেয়ালের সাথে বাড়ি খেয়ে মাটিতে পড়লো। ব্যাপাটা হতবাক হওয়ার মতোই, ট্রাকের সবাই তীক্ষ্ণ স্বরে চেঁচিয়ে উঠলো। সিয়াও অ হতবাক হয়ে পড়লো। ওর পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিলো, তরুণ সেনা কর্মকর্তা হাত চেপে ধরা। গুলি করবেন না, ওকে যেতে দিন। সিয়াও অ এমন করে চিৎকার করার সময় দেখতে পেলো, ছিউ ই পড়ে যাওয়া অবস্থা থেকে খুবই দ্রুত দাঁড়িয়ে গিয়েছে, সে হাই হিল জুতা জোড়া ফেলে দিয়েছে, খালি পা হয়েছে, এক হাতে স্কার্টের কোণা টেনে ধরে উড়ে যাওয়ার মতো করেই দৌড় দিয়েছে, সে খুব জোড়ে দৌড় দিয়ে ছুটে, চোখের পলক ফেলার সময়ের মধ্যেই নগর তোরণের ফাঁকের মধ্যে ঢুকে দৃষ্টি সীমার বাইরে অদৃশ্য হয়ে গেলো। তরুণ সেনা অফিসার আকাশের দিকে তাগ করে বন্দুক উঁচু করে একবার ফাঁকা আওয়াজ করলো। সিয়াও অ যা শুনতে পেলো সেটা হচ্ছে, সেনা কর্মকর্তাটি শান তং প্রদেশের আঞ্চলিক ভাষায় এমন কিছু বাজে কথা বললো যা কানে ঢুকার অযোগ্য : মরণও ধর্ষণ করতে পারবে না এমন একটা খানকি মেয়ে লোক! (ক্রমশ)

৩.
১৯৫০ সালের বসন্ত কালের শেষ ভাগে, সিয়াও অ পার্বত্য উপত্যকার মধ্যে অবস্থিত কায়িক পরিশ্রম অনুশীলন কেন্দ্রে এসে পৌঁছালো। সিয়াও অ-র জন্য এটা হচ্ছে ওর দেশের বাড়ী, দিগন্ত পাহাড়পুর ছেড়ে আসার পর দ্বিতীয় কোন স্থানে অনুপ্রবেশ। শ্রম অনুশীলন কেন্দ্রে আছে কয়েক সারি লাল মেঝে বিশিষ্ট সাদা দেয়ালের ঘর, আঙ্গিনায় আছে কয়েকটা পীচ ফল গাছ। ওরা যখন এখানে পৌঁছালো, তখন গোলাপি রঙের পীচ ফুল সবে মাত্র ফুটেছে, আর এই ফুল গুলো সিয়াও অ-কে যেন দিয়েছে একটা উষ্ণ নিশ্বাস ফেলার স্থান। শেষ কালে ফুল ফোটা পীচ ফল গাছগুলোর কারণেই সিয়াও অ-র কান্নার আর চোখের পানি ফেলা বন্ধ হলো!

চার দিকে আছে আঁকাবাঁকা মসৃণ পাহাড়ের ঢাল, একটা মাটির কাঁচা রাস্তা পাহাড়ের বাইরে চলে গেছে। উম্মুক্ত বিশাল এলাকায় কোন কাঁটা তারের বেড়া নেই, কিন্তু রাস্তার মাথায় যেন পিঠ টান টান করে দাঁড়িয়ে আছে অনেক উঁচু একটা প্রহরা চৌকি, প্রহরারত সৈনিক প্রহরা চৌকির উপর দাঁড়িয়ে ক্যাম্পের ভিতরে নড়াচড়া কাজকর্ম সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছে। রুই ফঙ এখানে এসেই অন্য সবাইকে বললো যে, সে আগেও এখানে এসেছে, তখন জাপানী সৈন্যরা এই ক্যাম্পে থাকতো। সিয়াও অ বললো, তুমি এখানে এসেছিলে কি জন্য? আঙ্গুলের নখ দাঁত দিয়ে কাটতে কাটতে রুই ফঙ বললো, ওদেরকে শয্যায় সঙ্গ দিতে, আমি এ ছাড়া আর কোন্ কাজই বা করতে পারি?

ওদের থাকার ঘর গুলোতে কোন খাট নাই, শুধু আছে ইটের তৈরী একটা বেদীর উপর ঢালাও বিছানা। এমন প্রতিটা বিছানা ছয় জনের জন্য, সেনা কর্মকর্তা হুকুম দিয়েছেন যে, পতিতা মেয়েরা নিজেরাই ঠিক করে নিবে কারা কারা একসাথে থাকবে। রুই ফঙ, সিয়াও অ-কে বললো, আমরা পাশাপাশি শোব, কেমন? সিয়াও অ ঢালাও বিছানার উপর বসেছিলো, সে তাকিয়ে ছিলো বিচিত্র রঙের পানিতে ভিজা স্যাৎস্যাতে দেয়াল আর মাকড়সার জাল গুলোর দিকে। সে নীরব থাকলো দীর্ঘ ক্ষণ, সে কোন কথা বলতে পারছিলো না। সে ভাবছিলো ছিউ ই-এর কথা, ছিউ ই, কি জানি কোথায় চলে গেছে? যদি ছিউ ই এখন পাশে থাকতো, তা হলে সিয়াও অ-র মন অনেকটাই ভালো থাকতো! এই কয়েক বছরে ছিউ ই -র স্নেহ ইতিমধ্যেই সিয়াও অ-র জন্য পরিণত হয়েছিলো একটা শক্ত অবলম্বনে, যে কোন ব্যাপারে সে ছিলো ছিউ ই-র কথার উপর নির্ভরশীল, ছিউ ই না থাকাতে সে স্নায়ুর চাপে ঘাবড়িয়ে গিয়ে বেশী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।

কায়িক শ্রম অনুশীলন কেন্দ্রে প্রথম রাতে, পতিতা মেয়ে গুলো ঘুমাতে পারলো না। ঢালাও বিছানার উপরে আছে অসংখ্য নীল মাছি আর উকুন, দেয়ালের গর্ত থেকে যখন তখন ইঁদুর এসে লাফিয়ে পড়ছিলো মেয়ে গুলোর মুখের উপর। গালিগালাজ আর তীক্ষ্ণ চিৎকারের শব্দ একাকার হয়ে গেছে ঐ হোস্টেলের ভিতরে। রুই ফঙ বললো, এমন জায়গায় কি মানুষ থাকে? কোন এক জন ওর কথার সূত্র ধরে বললো, একেবারে গোড়া থেকেই তো তোমাকে মানুষ বলে গণ্য করা হয় নাই, একটা বন্দুকের গুলি খরচের চেয়েও তোমার দাম সস্তা। রুই ফঙ বললো, আমাদেরকে এখানে আনা হয়েছে কেনো? পুরুষ মানুষের সাথে ঘুমানোর জন্য? পতিতা মেয়েরা হেসে উঠলো, সবাই বললো, রুই ফঙ-এর বুদ্ধিশুদ্ধি পুরপুরি লোপ পেয়েছে। মধ্য রাতে কোন একটা মেয়ে ভ্রাম্যমাণ প্রহরীদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললো, ঘুমাতে পারছিনা, একটা ঘুমের বড়ি দিয়ে যাও! প্রহরারতো সৈনিক ছিলো অনেক দূরে দাঁড়ানো, অত্যন্ত ঘৃণা ভরে কর্কশ কন্ঠে সে বললো, করো হট্টগোল! আগামীকাল থেকে দেখবে মজা! কাল তোমাদেরকে কাজে লাগিয়ে দেয়া হবে। তোমরা কি ভেবেছো, আনন্দে আর সুখে দিন কাটানোর জন্য তোমাদের এখানে আনা হয়েছে? তোমাদের তো এখানে আনা হয়েছে সংশোধনীর জন্য, যেন তোমরা সংশোধিত হয়ে নতুন ভাবেই জম্ম নিবে ঠিক এমনটাই হওয়া দরকার! ঘুমাতে পারছো না? তাহলে আর কি করা যায়, ঘুমিও না!

সংশোধিত হওয়া আবার কি? রুই ফঙ সিয়াও অ-কে প্রশ্ন করলো।
আমি তো বুঝি নাই! সিয়াও অ মাথা নেড়ে বললো, আর এর অর্থ আমি বুঝতেও চাচ্ছি না!

বুঝলে না? এর অর্থ হচ্ছে তুমি আর নিজেকে বিক্রি করতে পারবে না! কোন এক জন পতিতা মেয়ে ফিক ফিক করে হেসে বললো, তারা তোমাকে দিয়ে কাজ করাবে। তোমাকে ভুলিয়ে দিবে পুরুষ মানুষের সঙ্গ, পরে আর কখনও সাহস পাবে না খদ্দের টেনে আনার!

ভোর হয়ে আসলো। সিয়াও অ যেন হতবুদ্ধি অবস্থায় খানিকক্ষণ ঘুমিয়ে নিলো। এই সময়ের মধ্যে সে একটানা বেশ কয়েকটা দুঃস্বপ্ন দেখলো। যতক্ষণ পর্যন্ত না, পতিতা মেয়ে গুলি এক জন এক জন করে উঠে পেশাবের বালতিতে গিয়ে বসা শুরু করলো। ওদের পেশাব করার শব্দই ওকে জাগিয়ে দিলো। সিয়াও অ-র শরীরটা যেনো ভেঙে পড়বে! সে দেয়াল ধরে উঠে পাশের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। একটা ফুলে ভরা পীচ গাছের শাখা বাঁকা হয়ে জানালার ঠিক সামনে এসে ঠেকেছে। গাছের ডালের পীচ ফুলগুলোর পুংকেশরে এখন লেগে আছে মুক্তার মতো শিশির বিন্দু। সিয়াও অ হাত বাড়িয়ে ঐ ফুল গুলো তুলে আনলো, ঠিক এই সময় হুইসেল টাওয়ার থেকে শোনা গেলো ট্যাম্পপেট বেজে ওঠার শব্দ। সিয়াও অ-র শরীর ভয়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো, সে যেন জেগে উঠে সচেতন হলো যে, এক ধরনের নতুন অদ্ভুত আর অপরিচিত জীবনের কর্মযজ্ঞ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে! (ক্রমশ)

৪.
ছিউ ই যখন ফিরে এসেছিলো লাল রঙ্গ দালান-এ, তখন রাতের আঁধার ঘনিয়ে এসেছে, দরজার উপরে থাকা লণ্ঠন ছিঁড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিউ ই, ওর মাথার অবিন্যাস্ত চুলগুলো ঠিক করলো। দলানের দরজা শক্ত করেই বন্ধ করা আছে, ভিতর থেকে আসছে মাহযোং (mahjong) খেলার ঘুঁটি চালাচালির অস্পষ্ট শব্দ। ছিউ ই দরজা ধাক্কা দিয়ে কড়া নাড়লো অনেক ক্ষণ ধরে, মাসী এসে দরজা খুললো বেশ খানিক ক্ষণ পরে। মাসী খুব অবাক হয়ে বললো, ওরা কি তোমায় ছেড়ে দিয়েছে, তুমি ফিরে আসলে কি ভাবে? ছিউ ই কথার কোন জবাব দিলো না। সে সরাসরি ভিতরে ঢুকে গেলো। পিছন থেকে মাসী বললো, তুমি কি পালিয়ে এসেছো? যদি তুমি পালিয়ে এসে থাকো, তবে তা মোটেও উচিৎ হয়নি, ওরা আগামীকালই এই দরজায় হানা দিবে তোমার খোঁজে। যে খবর শুনা যাচ্ছে তাতে মনে হয় পরিস্থিতি খুবই খারাপ। একটা শীতল হাসি হেসে ছিউ ই বললো, আমি কোন কিছুকে-ই ভয় পাই না, তুমি আমাকে নিয়ে ভয় পাচ্ছো কেনো? আমি তো কেবল মাত্র আমার জিনিস পত্রগুলোই নিয়ে যাওয়ার জন্য ফিরে এসেছি। মাসী বললো, কোন জিনিস নিতে এসেছো? তোমার স্বর্ণালঙ্কার এবং দামী জামা-কাপড় গুলো তো সৈন্যরা বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে গেছে। ঠক্ ঠক্ করে শব্দ করে সিড়ি বেয়ে উপরের তলায় উঠে গেলো ছিউ ই, সে বললো, এবারে তুমি আমার পিছনে পিছনে এসো না, তুমিই তো আমার জিনিসপত্র গুলো খেয়ে ফেলেছো, তোমার মাথায় ঠাডা পড়ুক, তুমি কি অভিশাপকে ভয় পাও না?

ঘরের মধ্যে বিরাজমান চরম বিশৃঙ্খলা, সব কিছুই প্রচন্ড রকম এলোমেলো, তবে প্রত্যাশা অনুযায়ীই ছিউ ই ওর গহনার বাক্সটা খুঁজে পেলো, কিন্তু বাক্সে কিছু নেই! সে ছুটে গেলো বৈঠক খানা ঘরে, ওখানে যে চার জন মানুষ মাহযোং খেলছিলো, তাদের উদ্দেশ্যে সে বললো, এখন কি আমার গহনাগুলো হয়ে গেছে মাহযোং নামের জুয়া খেলার বাজি ধরার জিনিস? মাসী তখনও মাহযোং খেলার ঘুঁটি সাজানোতে ব্যস্ত, সে বললো, তুমি বেশী কথা বলে বাড়াবাড়ি করছো, এত বছর ধরে আমি-ই তো তোমাকে লালন পালন করছি, আমি কি ভাবে তোমার রক্ত পানি করা টাকা খেয়ে ফেলতে পারি? ছিউ ই ঘৃণা ভরে একটু হাসলো, সে বললো, আসলে তো তুমি ছিলে আমার উপার্জন করা টাকার উপরই নির্ভরশীল। এখন তো অবলম্বনের গাছটা পড়ে গেছে, গাছে থাকা বানর গুলো তো পালিয়ে যাবেই! কে কাকে চিনে না বলো? মাসী মুখ গোমড়া করে বললো, আমার কথা বিশ্বাস না হলে, যাও না! খুঁজে দেখো, তোমার সাথে ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না আমার। ছিউ ই বললো, আমারও ইচ্ছা করছে না, কিন্তু আমাকে ঠকানো অত সহজ নয়, আমি সব কাজ করারই সাহস রাখি। ছিউ ই-র কথা শুনে খুব কড়া গলায় মাসী বললো, তুমি কি করতে চাও? ছিউ ই মাসীর বাহু চেপে ধরে মাসীকে টানতে টানতে মাহযোং এর টেবিলটার চার পাশে এক পাক ঘুরে আসলো, হঠাৎ করেই সে বলে উঠলো, একটা দিয়াশলাই এর কাঠি জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া তো খুব সহজ কাজ! আর তাহলেই তো এই পঁচা দুর্গন্ধ যুক্ত ব্যাশ্যালয়টাকে আমার আর দেখতে হবে না! মাসীও শব্দ করে একটা শীতল হাসি হেসে বললো, আমার মনে হয় না, তোমার এতো সাহস আছে! তোমার কি ভয় নাই? আমি যদি লোক জন ডেকে তোমার …… উপরে ফেলে কুকুরকে দেই! ছিউ ই বললো, আমার ভয় কিসের? আমি ষোল বছর বয়সে এই ব্যাশ্যালয়ে ঢুকেছি, কোন কিছুকে-ই ভয় পাই না, ……… আর ওর চার পাশের কেশ আর কি? আমার হৃদপিণ্ডটাকে উপরে ফেললেও আমি ভয় পাবো না!

ছিউ ই দৌড় দিয়ে নীচের তলায় ছুটে গেলো, সে দেয়াল থেকে একটা পেইন্টিং টান মেরে নামিয়ে ঘর গরম করার জ্বলন্ত ফার্নেসের মধ্যে ছবিটার এক কোণা ঢুকিয়ে তাতে আগুন ধরালো, তারপর সেই প্রজ্জ্বলিত ছবিটা দুলিয়ে দুলিয়ে বললো, পুড়িয়ে দিচ্ছি, পুড়িয়ে দিচ্ছি, সোজাসাপটা বলি, যদি এই ব্যাশ্যালয়টাকে জ্বালিয়ে দেই তাহলে এখানকার সবারই দিন আর কাটবে না, রুটি রুজি বন্ধ হয়ে যেতে পারে! (চলবে)