শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : আমি জানি আমার উচিত হয় নাই দশ লি পরিমাণ পথ বেশি পাড়ি দিয়ে, ঘুরে রাত যাপন করার জন্য এই স্থানে আসার! সৌরভ জেলার নিম্ন শ্রেণীর পতিতালয়ে এসে সিয়ে রাজ প্রাসাদের জাঁকজমকপূর্ণ জীবনের স্বপ্ন-ঘোরে পুণঃপ্রবেশ নিতান্তই দুঃখজনক আর হাস্যকর! একই সাথে সময় অনুপযোগী ও অযথাযথ! কিন্তু আমার পা দু’টো যেন কোন একটা জরুরি আকর্ষণের টানে আমাকে হাঁটিয়ে নিয়ে এসেছে সৌরভ জেলার জেলা শহরের রাস্তায়, এখান থেকে সেখানে! আমি আশা করছি, আমি খুঁজে পাবো সাশ্রয়ী মূল্যে কোন নরম আরামদায়ক লম্বা একটা স্বপ্নের ঘোর লাগা চমত্কার বিছানা! যদি আমি জানতাম, ঘটতে যাচ্ছে হৃদয় ভাঙ্গা চরম বিস্ময়কর একটা ঘটনা, তাহলে আমি কোনভাবেই দশ লি পথ ঘুরে রাত যাপনের জন্য সৌরভ জেলায় আসতাম না! কিন্তু আমি যে ঠিক ঠিক জায়গা মতো এসে পৌঁছিয়েছি! একেবারে ঠিক মতোই প্রবেশ করছি অগ্নি ময়ুর দালান-এর ভিতরে! আমি ভাবি, এটা ছিলো আমার প্রতি উপরওয়ালার সব চাইতে গুরুতর রসিকতা এবং শাস্তি!
আমি শুনতে পেলাম, আমার পিছনে ক্যাচ ক্যাঁচ শব্দ করে একটা দরজা খুললো। নৃত্য গীত করার একটা মেয়ে ওর অপূর্ব মোহনীয় রূপ আর পুরু প্রসাধনীর সাজে সজ্জিত অবয়ব নিয়ে, আমার চোখে চোখ রেখে সরাসরি তাকালো আমার দিকে, সে আমাকে বললো, “জাঁহাপানা, আপনি কি আমাকে চিনতে পারছেন না? আসেন, ভালো করে তাকিয়ে দেখেন, আমি কে!”, আমার মনে আছে, আমি খুব জোরে চিত্কার করে উঠে ছিলাম! আমি ভাবছিলাম দৌড় দিয়ে নীচে নেমে যাবো। কিন্তু আমার সাথের টাকার থলেটা মেয়েটি পিছন থেকে টেনে ধরেছে!” পালাবেন না জাঁহাপনা, আমি তো ভূত নই!”, সে বললো, “আপনি আসেন, আমি আপনাকে সিয়ে রাজ প্রাসাদে থাকাকালীন সময়ের মতো করেই যত্ন করবো, আপনাকে একটা কানাকড়িও দিতে হবে না!”
এ যে হুই ছোট রানী! আমি তো সত্যিই শয়নেস্বপনে যার কথা ভাবতাম, এ তো সেই হুই ছোট রানী!
“আমি দালানের নীচে দেখলাম, কে যেন ঘুরাঘুরি করছে! ক্ষনিকের মধ্যেই আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি! আমার তো বিশ্বাস করতেই সাহস হচ্ছিলো না! আমার মন বলছিলো, যদি আপনি উপরের তলায় আসেন, তাহলে আপনিই হবেন আমার জাঁহাপনা! আর যদি আপনি উপরে না উঠে সরাসরি চলে যেতেন, তা’হলে আমি ধরে নিতাম, দেখতে জাঁহাপনার মতো চেহারার কাউকে আমি রাস্তা দিয়ে চলে যেতে দেখেছি! কিন্তু আপনি তো সত্যি সত্যিই উপরের তলায় এসেছেন! গতকাল রাতে আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি, আমি এখন বিশ্বাস করছি, যে স্বপ্নটা আমি দেখেছি তা বাস্তবে রূপ লাভ করেছে! জাঁহাপনা সত্যিই অগ্নি ময়ুর দালান-এ চলে এসেছেন!”
কিন্তু, এ যে সত্যি নয়, আমার কাছে তো এটা যেন দুঃস্বপ্ন! আমি পতিতা বৃত্তির জীবনে নিমজ্জিত হুই ছোট রানীকে জড়িয়ে ধরে উচ্চ স্বরে কেঁদে উঠলাম! আমি ভাবছি, আমি কি বলবো? একটা বিশাল দুঃখের ভার গলার মধ্যে তৈরী করেছে এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না! হুই ছোট রানী একটা রেশমী রুমাল দিয়ে অবিরত আমার চোখের পানি মুছে দিচ্ছিলো। সে কাঁদে নাই! ওর ঠোঁটের কোণায় আবির্ভূত হচ্ছিলো একটা অস্পষ্ট, অবোধগম্য মৃদু হাসির রেখা, যা আমাকে শঙ্কিত করে তুলছিলো!
“আমি জানি, আপনি কেনো কাঁদছেন! আর এটাও জানি, আমি কেনো কাঁদছি না!”, হুই ছোট রানী বললো, “শুরুতে একটা সময় অতিক্রান্ত হয়েছে, যখন ফং বড় রানী আমাকে জোর করে সিয়ে রাজ প্রাসাদ থেকে বের করে দিয়েছিলো। আর এখন তুয়ান ওয়েন বহিষ্কার করেছে আপনাকে বিশাল সিয়ে রাজ প্রাসাদ থেকে!
এরই মধ্যে, অনেক আগেই আমি যখন রাজ প্রাসাদ ত্যাগ করি তখনই আমার চোখের জল পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে! জাঁহাপনা, আপনি আর আঘাত দিয়ে আমার হৃদয়টাকে ভেঙ্গে দিতে পারবেন না!”
আমি কান্না থামালাম। অশ্রু ধারার কারণে অস্পষ্ট ঘোলা চোখে তাকিয়ে দেখছিলাম বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখা মেয়েটাকে! এ রকম একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনার মাধ্যমে সাক্ষাত হওয়া, যেন একটা গগণ বিদারী চমক লাগা কাকতালীয় ঘটনা! আমার এখনও মনে হচ্ছে, আমি যেন অবস্থান করছি একটা দুঃস্বপ্নের ঘোরের মধ্যে! আমি টান দিয়ে খুলে ফেললাম হুই ছোট রানীর গায়ে থাকা হালকা সবুজ রঙের গরম কাপড়ের জামাটা, খুঁজে বের করলাম আমার অতি পরিচিত, ওর পিঠের উপরে থাকা লাল তিলটা! এমন সময় হঠাত করেই আমার মনে উদয় হলো, ধাঁধায় পড়া হত বুদ্ধি হওয়ার মতো প্রশ্নের! “তোমার তো এখন লিয়েন চৌ-এর নারী সন্ন্যাসী আশ্রমে বৌদ্ধ ধর্ম অনুশীলন করার কথা!”, আমি দুই হাতের তালুর মাঝে হুই ছোট রানীর মুখটা উঠিয়ে ধরলাম। একবার ওর মুখটা ডান দিকে ফিরালাম, আরেক বার ফিরালাম বাম দিকে! উচ্চ স্বরে প্রশ্ন করলাম, “তুমি কি ভাবে এখানে আসলে, কি ভাবে তুমি নিজেকে জড়ালে মুখের হাসি দিয়ে শরীর বিক্রির ব্যবসায়?”
“আমি বৌদ্ধ সন্ন্যাসীনিদের আশ্রমে থেকেছি, রাতে ঘুমিয়েছি সাতটা দিন! অষ্টম দিন যখন আসলো তখন আমার আর কোনভাবেই ঘুম আসছিলো না! ঘুমাতে পারছিলাম না, তাই পালিয়ে এসেছি!”
“কেনো পালিয়েছো? আর পালিয়েই বা এমন ধরনের জায়গায় কেনো এসেছো?”
“আমি এখানে এসেছি জাঁহাপনার অনুগ্রহ তালাশ করার জন্য!”, হুই ছোট রানী হঠাত করেই জোর দিয়ে তেজের সাথে আমার হাতটা ছাড়িয়ে নিলো, এখন ওর চেহারায় ফুটে উঠেছে এক ধরনের পরিহাসের শীতল হাসি!” সবাই বলে, সিয়ে সম্রাট এখন ফং কুয়ো দেশের উদ্দেশ্যে নির্বাসনে পালিয়ে যাচ্ছেন! সবাই বলে সিয়ে সম্রাট ফং কুয়ো দেশে যাচ্ছেন প্রাসাদ পুনর্দখলের জন্য সৈন্য চাওয়ার অনুরোধ নিয়ে! কে ভেবেছে, একজন অপদস্থ পরাধীন নৃপতি কাজের কাজ বাদ দিয়ে আসবে প্রমদের খোঁজে পতিতালয় দালানে! এমনটাও কি সম্ভব?”, হুই ছোট রানী ঘরের সাজ গোজ করার তাকটার কাছে গেলো, কাঁসার আয়নাটার দিকে মুখ করে নিজের চেহারার উপর এক প্রস্থ প্রসাধনীর গুড়া মাখলো, তারপর বললো, “আমি হচ্ছি এমন এক জন মেয়ে মানুষ, যে লজ্জা কাকে বলে তা জানে না! কিন্তু তাকিয়ে দেখেন, প্রাসাদের ভিতরে কিংবা বাইরের জগতের সব খানের নারী-পুরুষ! এদের মধ্যে কে আছে যে জানে, লজ্জা কিংবা অপমান কি জিনিস?”
আমার হাত দু’টো যেন বাতাসের শূন্যতায় আটকিয়ে আছে! অনুভব করছি একটা প্রাণঘাতী দুর্বলতা! হুই ছোট রানীর করা পাল্টা প্রশ্নের মুখে আমি হয়ে গেছি বাক্য হারা! একটা অসহ্য নীরবতার মাঝে, আমি শুনতে পেলাম দরজার বাইরে মানুষের চলাচলের শব্দ, একটা কাঠের পাত্র ভর্তি গরম পানি কে যেন দরজার ফাঁক দিয়ে ঠেলে দিলো ঘরের ভিতরে!
“নবম কন্যা! আঁধার তো ঘনিয়ে এসেছে। লন্ঠন তো জ্বালাতে হবে!”, বাইরে সম্ভবত পতিতাদের মাসী উঁচু স্বরে কথা বলছে
“সে কার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলছে?”, আমি হুই ছোট রানীকে প্রশ্ন করলাম।
“আমি! আমিই হচ্ছি নবম কন্যা!”, হুই ছোট রানী নিতান্তই অনিচ্ছায় অলসভাবে উঠে দাঁড়ায়ে দরজার পাশে গেলো। আমি দেখতে পেলাম, সে দরজা দিয়ে অর্ধেক শরীর বের করেছে। “তাড়াহুড়ার দরকার নাই!”, হুই ছোট রানী বললো, নীল লন্ঠনের বাতি জ্বালিয়ে দেন। মেহমান এখানে রাত কাটাবেন!”
দুই বছর পরে প্রকাশিত ‘সিয়ে দেশের গোপন ইতিহাস’ গ্রন্থে অগ্নি ময়ুর দালান-এ আমার সাথে হুই ছোট রানীর সাক্ষাত এর ঘটনাকে অনেক বাড়িয়ে বর্ণনা করা হয়েছে, দেয়া হয়েছে অনেক অসত্য আর অসংলগ্ন তথ্য, যার সাথে বাস্তবের কোন সম্পর্ক একে বারেই নাই! ঐ গ্রন্থে বিবৃত হয়েছে নিষিদ্ধ প্রেমের সম্পর্কে জড়ানো এক জোড়া নারী-পুরুষের গোপন অভিসার, আনন্দ-দুঃখ, বিচ্ছেদ-পুণর্মিলন, জীবনের উত্থান-পতনের একটা মিশ্র অনুভূতির বৃত্তান্ত, যা কিনা একে বারেই এক ঘেয়ে, কিছু নির্বোধ বুদ্ধিজীবির উর্বর মস্তিষ্ক প্রসূত ভুল তথ্যের বয়ানে ভরা। বাস্তবে যা ঘটে ছিলো সেটা হচ্ছে, জীবনের বিপর্যয় মোকাবেলা করার পর আমাদের অপ্রত্যাশিত সাক্ষাত-এর আনন্দ-উচ্ছ্বাসের উষ্ণতা খুব দ্রুতই পর্যবসিত হয়েছিলো প্রবল শীতলতায়! আমাদের উভয়ের মধ্যে উদ্ভব হয়েছিলো এক ধরনের অস্পষ্ট বৈরিতার! এমন বৈরিতার কারণেই পরবর্তীতে আমি বিদায় না নিয়েই ওর কাছ থেকে চলে গিয়েছিলাম। অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ত্যাগ করেছিলাম পতিতা বৃত্তির হীনতায় পতিত হওয়া হুই ছোট রানীকে, আর ছেড়ে এসেছিলাম অসামাজিক বিশৃঙ্খলার দূষণে দূষিত সুন্দরীদের আখড়া অগ্নি ময়ুর নামের সেই দালানটাকে!
আমি যে তিন দিন অগ্নি ময়ুর দালানে অন্তরীণ ছিলাম, তার পুরো সময়টাতেই দালানের সামনে নীল আলোর লন্ঠন টাঙ্গানো ছিলো, যা কিনা নতুন খদ্দের আপ্যায়ণ বন্ধ থাকার নির্দেশক! এটা নিশ্চিত যে পতিতালয়ের মাসী হুই ছোট রানীর পরিচয় সম্পর্কে একে বারেই অবগত নয়! আরও বেশি অজ্ঞাত আমার পরিচয় সম্পর্কে! এটা হয়তো ওর কল্পনাতীত, যে আমি হচ্ছি নির্বাসনে পালিয়ে বেড়ানো একজন সম্রাট! মাসী হুই ছোট রানীর কাছ থেকে পেয়েছিলো অনেক টাকা —– বড় অঙ্কের টাকা! তাই আমার উচ্চ মর্যাদার ধণাঢ্য পরিচয় পত্র সম্পর্কে, ওর নিঃসন্দেহে ছিলো দৃঢ় বিশ্বাস! পতিতালয়ের পতিতারা খদ্দেরদের কাছ থেকে নেয়া পারিশ্রমিক থেকে পতিতালয় মাসীদের বাখড়া পরিশোধ করে, এটাই রীতি! আমি জানি হুই ছোট রানী ঝামেলা এড়ানোর জন্য যে কাজটা করেছিলো, তা ছিলো প্রচলিত ধারার বিপরীত! নিজের সঞ্চিত টাকা থেকে সে আগে ভাগেই পতিতালয় মাসীর বখড়া পরিশোধ করে দিয়েছিলো। আর আমার জন্য, ভ্রমণ জনিত ধূলা বালি শরীর থেকে ধূয়ে মুছে পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা করেছিলো এমন একটা বড়লোকি বিলাস বহুল স্থানে!
চূড়ান্ত সমস্যাটার উদ্ভব হলো আমার দিক থেকেই! মেঘের সাথে বৃষ্টির যেমন আছে একটা নিবিড় ঘনিষ্ঠতা, আমার আর হুই ছোট রানীর সম্পর্ক তো ছিলো মেঘবৃষ্টির মতোই নিবিড় ঘনিষ্ঠ। তাই আমার পাশে থাকা রক্ত মাংসের সুডৌল দেহ ধারী এই মেয়েটিকে আমি অর্ধেক নিতে পারছি, অর্ধেক নিতে পারছি না! অর্ধেক আস্থা আছে, অর্ধেক নাই! হুই ছোট রানীর শরীরের মধ্যে আমি সব সময় অন্য পুরুষ মানুষের গায়ের গন্ধ পাচ্ছি, ওর চোখের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি অন্য মানুষের ছায়া। যা কিনা আমাকে দুঃখে ভারাক্রান্ত করে পাগল বানিয়ে ফেলেছে! প্রাসাদের ভিতরে হুই ছোট রানীর সাথে যে ভাবে আমি যৌন মিলনে মিলিত হোতাম, এখন মনে হচ্ছে শারীরিক মিলনের ক্ষেত্রে হুই ছোট রানীর মধ্যে এসেছে পদ্ধতিগত মৌলিক পরিবর্তন! আমার মনে হচ্ছে ঐ সব নোংরা, অশ্লীল কথাবার্তা বলা বেশ্যালয়ে নিত্য দিন যাতায়াতকারী খদ্দেরবৃন্দই, স্বচ্ছ পানির মতো উষ্ণ হৃদয়ের মমতাময়ী ফিন চৌ-র এই মেয়েটাকে বদলিয়ে দিয়েছে! কোন এক কালে শাসন খাল-এর পাড়ে পাখীর অনুকরণে উড্ডয়নের ভঙ্গি করা রূপসী লাবণ্যময়ী মেয়েটি, এখন সত্যি সত্যিই পাখীর মতো উড়াল দিয়েছে, যে কিনা চলে গেছে, ফিরবে না আর, রেখে গেছে অধঃপতিত, অস্পষ্ট, কটু গন্ধে ভরা একটা শারীরিক খোলস!
আমার মনে আছে, তৃতীয় দিন দিবাগত রাতটা ছিলো উজ্জ্বল পরিষ্কার জ্যোত্স্নার আলোয় ভরা। জানালার বাইরে ঘন বসতি পূর্ণ এলাকার পতিতালয় দালানগুলোর সামনের রাস্তা আর গলিগুলোতে বিরাজ করছে শুনশান নিরবতা। কোথাও নাই কোন কোলাহলের শব্দ! সুতার কারুকাজ খোচিত বিছানার উপর হুই ছোট রানী ঘুমিয়ে আছে, হয়তো প্রবেশ করেছে স্বপ্নের ঘোরের মধ্যে! আমি খুব হালকা নরম আর নিপুনভাবে হুই ছোট রানীর হাতের মধ্যে মুট করে ধরে থাকা লাল রঙের কাপড়ের রুমালটা ছুটিয়ে আনলাম। সৌরভ জেলা-র গ্রীষ্মের রাতে শুধু চাঁদের আলোতে, ঐ লাল কাপড়ের রুমালটার উপর আমি লিখলাম হুই ছোট রানীর উদ্দেশ্যে আমার লেখা শেষ কবিতাটা, যা ছিলো একটা উপহার, বন্ধুর প্রতি আরেক বন্ধুর লেখা একটা বিদায় পদ্য! আমি ওটা রেখে গেলাম ওর বালিশের পাশে। আমার ঠিক মনে পড়ছে না, এই জীবনে আমি মোট কয়টা আড়ম্বরপূর্ণ শব্দ সমৃদ্ধ কবিতা লিখতে পেরেছি। কিন্তু হয়তো এটিই হয়েছিলো সব চাইতে অভিমান মাখা দুঃখের সুর সমৃদ্ধ পঙতি মালা! হয়তো এটিই ছিলো আমার জীবনের শেষ বারের মতো করা শব্দ নিয়ে খেলা!
‘সিয়ে রাজ প্রাসাদের গোপন ইতিহাস’-এর লেখক, ইতিহাসবিদ পন্ডিতরা, তাঁদের ইতিহাস গ্রন্থে আমাকে তুলে ধরেছেন একজন শক্তিহীন বিধ্বস্ত রাজাধিরাজ হিসাবে, যে কিনা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলো নিজের পরিত্যাক্ত পত্নীর উপর, আর সেই পত্নীটি জীবিকা নির্বাহ করতো নিজের মুখের হাসি বিক্রি করে! যাকে হয়ে যেতে হয়েছিলো দেহপসারিনী! অথচ, প্রকৃতপক্ষে আমি সৌরভ জেলায় অবস্থান করেছিলাম মাত্র তিন দিন! বাস্তব ঘটনা হলো, আমি যাচ্ছিলাম ফিন চৌ-এর দিকে একটা দড়াবাজী খেলার কৌশলী দলের সন্ধানে! (চলবে)