শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : আমি পড়ে দেখলাম, হান ছোট রানীর নিজের খয়াল খুশী মতো লেখা ব্যবস্থাপত্র ও ঔষধ তৈরীর উপাদানের বিবরণ। কাগজের উপরিভাগে আছে দশ পদেরও বেশি ধরনের নানা রকম ভেষজ ঔষধ, কি পরিমাণ সেবন করতে হবে সে তথ্য।
ভেষজ ঔষধগুলোর মধ্যে আছে : জোরা হলুদ নামের এক ধরনের উদ্ভিদের ভূগর্ভস্থ কাণ্ড, মৌরি, বায়ুর বাঁধ নামের পেটের বায়ু কমানোর এক ধরনের ভেষজ ঔষধ, পেই মু নামের এক ধরনের প্রজাপতির শুক কীট, পাই চ্রি নামের সাদা রঙের গাছের পাতা যা কিনা রেশম পোকার খাবার! তাং কুউ নামের এক ধরনের গাছের শিকড়, লোবান গাছের কষ, হলুদ ঘন্টা ফুল, চুলের কলপ হিসাবে ব্যবহৃত বহু দানা ঘাস, মধু চোষন ফুল, মরু ছত্রাক। আরও আছে একটা জিনিসের নাম, ওটাই শেষ ঔষধ!
হান ছোট রানী-র তৈরী করা ব্যবস্থাপত্রের সব শেষ ঔষধটা পরিষ্কারভাবে নির্দেশ করছে ওর প্রতিশোধ আকাক্সক্ষাকে!
খুবই অপ্রত্যাশিত একটা নাম এসেছে ব্যবস্থা পত্রের সর্বশেষ ঔষধ হিসাবে, আর সেটা হচ্ছে চ্রæ নিয়াও ফাও, যা নির্দেশ করে একটা শুকরের মূত্রথলী! আমার মনে হচ্ছে, ঔষধ তৈরীর পাত্র থেকে নির্গত উৎকট আঁশটে দুর্গন্ধের উৎস হচ্ছে ঐ মূত্রথলীটাই!
হতভাগ্যের দল! আমি হাসতে চাচ্ছি, কিন্তু হাসি আসছে না! ঐ ঔষধ ব্যবস্থাপত্র সম্বলিত কাগজটা ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করতে করতে আমি যেন কল্পনার জগতে ডুবে গিয়ে দেখতে পেলাম এক দৃশ্য, আর সেটা হলো আমার রানীগণ হাত দিয়ে নাক চেপে ধরে উৎকট গন্ধ যুক্ত ঐ ভেষজ ঔষধ সেবন করছে খুব কষ্ট করেই!
আমার নজরে আসলো, হান ছোট রানী-র গর্বিত বিস্তীর্ণ আর চমৎকার তলপেটটা, একটা হাত প্রসারিত করে সে নিজের তল পেটের উপর হাত বুলালো কিছুক্ষণ!
এরপর আমি হান ছোট রানীকে প্রশ্ন করলাম, “এখন তুমি কি খুব খুশী হয়েছো?”
“অবশ্যই খুশী হয়েছি জাঁহাপনা! আমি কি ভাবেই বা অখুশী থাকি এখন? আর দুই মাস পরেই তো জন্ম নিবে রাজ সিংহাসনের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী!”, খুশী আর ভালো লাগা আনন্দের একটা রক্তিম আভা ফুটে উঠলো হান ছোট রানীর অবয়বে! সে একটা সরল আর নিষ্পাপ ভঙ্গিতে আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলো, “জাঁহাপনা, আপনি কি খুশী হন নাই?”
“ঈশ্বরই জানেন, আমি খুশী হয়েছি কি না!”, আমি হান ছোট রানীর অসুস্থ আবেগ আর আনন্দে ভরা চোখের দৃষ্টিকে এড়িয়ে গেলাম, মাথা নীচু করে ঘরের কোণায় জল চৌকির উপর থাকা একটা শ্বেত পাথরের মালা হাতে তুলে গোল গোল পাথরগুলো নিয়ে নেড়ে চেড়ে খেলা করতে করতে বললাম, “তোমার কি ভয় করছে না? তুমি কি ভয় পাচ্ছো না, হঠাৎ করে ধেয়ে আসা কোন বিপর্যয়কে? তুমি ভয় পাচ্ছো না, হুই ছোট রানী-র মতো পরিণতি যদি তোমার ভাগ্যেও থাকে?”
“ভয় পাই না! আমার আছে জাঁহাপনা আর মঙ ফুরেন-এর দেয়া নিরাপত্তা ছাউনি! নীতি জ্ঞান বিবর্জিত কোন পন্থায় ওরা আমার কোন ক্ষতি করার সাহস করবে না! যদি কোন কারণে দুর্যোগ আসেই, জাঁহাপনা এবং মঙ ফুরেন কি আমার দায়িত্ব নিবেন না?”, হান ছোট রানী আমার কাছে আসলো, খানিকটা জড়তার সাথে আমার হাঁটুর উপর এসে বসলো। সে এমনই মোটা হয়ে গেছে, যে নড়া চড়া করতেই ওর বেশ অসুবিধা হচ্ছে।
সে আসলে আবেগ আর আদর সোহাগের দ্বারা উদ্ভট আর অদ্ভুতভাবেই আমাকে আকৃষ্ট করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে! চোখের পলকেই যেন আমি সচেতন হলাম, আমার নিজের উপর পড়া চাপগুলো যে কতটা জটিল, কতটা ভয়াবহ, যাদের সাথে তুলনা করা যেতে পারে বিশাল বড় বড় প্রস্তর খণ্ডের, যেগুলো ফেলা হয় পাহাড়ি ঢলকে ঠেকাবার জন্য! এমন সব পাথর যেন একটার উপর একটা রেখে স্তুপ করা হয়েছে আমর মাথায় থাকা ভঙ্গুর রাজ মুকুটটার উপর!
“বিপর্যয় আসছে প্রাসাদ-দেয়ালের বাইরে থেকে! মনে করো ধেয়ে আসা বিপর্যয়ে বিশাল সিয়ে রাজ প্রাসাদটা ধ্বংস হলো, প্রত্যেকটা মানুষই ভুগা শুরু করলো নিরাপত্তা হীনতায়, তখন কে কাকে সহায়তা করতে পারবে? এমন একটা দিনই তো ঘনিয়ে আসছে!”, আমি হঠাৎ করেই উঠে দাঁড়ালাম, ধাক্কা দিয়ে হান ছোট রানীকে সরিয়ে দিলাম। অনেকটা পালিয়ে যাওয়ার মতো করেই বেরিয়ে আসলাম হান ছোট রানীর কক্ষ থেকে। ঘরের দরজার বাইরে গিয়েই হঠাৎ করে এক ধরনের প্রবল উত্তেজনা আর ক্রোধের মনোভাব আমাকে পেয়ে বসলো, যা আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। আর রাগের নিয়ন্ত্রণ হীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটালাম, হান ছোট রানীর আবাস চন্দ্র প্রমোদ দলান-এর নানা রকম ছোট ছোট পাথর আর মুক্তা দিয়ে কারুকাজ করা বিশাল ঝালারের উপর সজোরে লাথি মেরে, পর্দাটাকে দুলিয়ে দিয়ে! আতঙ্কিত হান ছোট রানীকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বললাম, “ঐ নীচু ছোট লোক মেয়ে মানুষগুলোকে বলে দাও, ওরা নিজেদের অন্তর্বাস খুলে ফেলে প্রাসাদের ফটকে গিয়ে যেন দাঁড়িয়ে থাকে!
তুয়ান ওয়েন ধেয়ে আসছে, আর বেশি দেরী নাই, এই এসে পরলো বলে!”
আমি পর্যায়ক্রমে আমার রানীদের সাথে সঙ্গ-শয্যার জীবন পরিত্যাগ করলাম, প্রতি রাতে শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহের মধ্যে একাই থাকতাম! আসলে বলতে লজ্জা পাচ্ছি, বলার অযোগ্য একটা সমস্যা! যা এসেছিলো অপ্রত্যাশিতভাবে, যার মূল কারণ ছিলো, আমার মন খারাপ করা নিরাশ ও হতাশাগ্রস্থ জীবন! রাজ বৈদ্য-কে ডেকে এনে কোন যাদুর মতো প্রাণ শক্তি বর্ধক ঔষধের ব্যবস্থাপত্র নেয়ার কোন ইচ্ছা আমার হচ্ছিলো না। আমার রানীদের তীব্র কৌতুহল নিবৃত্তির নিমিত্তে নানা পদ্ধতির অনুসন্ধান আর গুপ্তচর বৃত্তির মুখেও আমি রইলাম সম্পূর্ণ নির্বাক আর নিশ্চুপ! হয়ে গেলাম যেন বাক প্রতিবন্ধী বোবা, আর শ্রæতি প্রতিবন্ধী বধিরের ভূমিকায় অভিনয় করা এক জন অভিনেতা! আমি প্রত্যাখ্যান করলাম ওদের নানা রকম ইঙ্গিত পূর্ণ কাম উদ্দীপক প্রলোভন। আমার মনে হচ্ছে, আমি এখন করছি, আমার জীবনের সবচেয়ে হৃদয় বিদারক দুঃখ ভরা অঙ্গ ভঙ্গির অনুশীলন, যা কিনা আসন্ন কেয়ামত দিবসকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি স্বরূপ বৈ অন্য কিছু নয়!
আর ওটা ছিলো সম্রাট হিসাবে আমার রাজকীয় কর্ম জীবনের সর্বশেষ মাস! আমার হৃদয়টা আসলে ভালোবাসার অভাবে জ্বলে পুড়ে মরে গিয়ে পরিণত হয়েছে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ছাই-এ! মোহনীয় রূপবতী নারীদের বিকল্প হিসেবে আসলো বিশ্বস্ত অনুচর খোজা দাস ইয়েন লাঙ! সে আমাকে সঙ্গ দেয় সারা দিন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকে আমার ডানে বামে আশেপাশে। আমার মনে আছে, কোন এক বজ্র বৃষ্টির রাতে, আমি এবং ইয়েন লাঙ জ্বালানো মোমবাতির আলোয় বসে দীর্ঘ সময় ধরে কথাবার্তা বলছিলাম, আড্ডা মারছিলাম। বিস্তৃতভাবেই স্মৃতি চারণ করছিলাম কৈশর কালের নানা ঘটনা, যখন প্রাসাদ জীবনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে আমরা ছিলাম প্রায় অজ্ঞ! আমাদের স্মৃতি রোমন্থনের বড় একটা অংশই ছিলো ঐ বারের ছদ্মবেশ ধরে ফিন চৌ শহরের রাস্তায় সেই ঘুরে বেড়ানোর ঘটনা! আমার মনে হচ্ছে লাপা উৎসবের সময় ফিন চৌ শহরের জনাকীর্ণ রাস্তায় আনন্দে মুখরিত মানুষের ভীড়ের দৃশ্য আমাদের স্মৃতির মণিকোঠায় যেন ফেলেছে অমোচনীয় কালির ছাপ। রাতের আকাশে বজ্রের নিনাদ, শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহ দালানের গায়ে আছড়ে পরা মুষলধারের বৃষ্টির পানির ছাটের শব্দ তৈরী করছিলো একটা কম্পন। মোমবাতির জ্বলন্ত শিখাটা ক্ষণে ক্ষণে দুলে দুলে কেঁপে উঠে হঠাৎ করেই নিভে গিয়েছিলো। গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে বিজলির চমকানি দেখে আমি রাজকীয় শয্যার বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠলাম। আমার ইচ্ছা করছিলো উঠে গিয়ে জানালা বন্ধ করতে। কিন্তু ইয়েন লাঙ আমার হাত ধরে টেনে রাখলো, সে বললো, “জাঁহাপনা, ভয় পাবেন না, ওটা তো একটা বিদ্যুৎ-এর চমক। বজ্রের বিদ্যুৎ কখনও-ই সম্রাটের প্রাসাদের শয়ন কক্ষে ঢুকে না!”
না! এমনও তো হতে পারে বজ্র বিদ্যুৎ খুব নিখুঁতভাবেই এসে আমার মাথার ঠিক মাঝ খানে হানবে আঘাত! আমি আতঙ্ক ভরা দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহের বাইরে বাতাসের মাঝে দুলতে থাকা গাছের ডালপালার দিকে। এখন আমি আর কোন কিছুই বিশ্বাস করি না। আমি ইয়েন লাঙ-কে উদ্দেশ্য করে বললাম, “আমি শুধু বিশ্বাস করি, বিপর্যয় এখন একটু একটু করে হুমকি দিতে দিতে এগিয়ে আসছে বিশাল সিয়ে রাজ প্রাসাদের দিকে! ঘনিয়ে আসছে সিয়ে দেশের চূড়ান্ত পরিণতির দিন!”
ইয়েন লাঙ ওর দীর্ঘ দিনের অভ্যাস অনুযায়ী দেহটাকে মোচড় দিয়ে এঁকে বেঁকে অন্ধকারের মধ্যে উঠে দাঁড়ালো, আমি ওর মুখটা পরিষ্কার ভাবে দেখতে পাচ্ছিলাম না, কিন্তু আমি শুনতে পাচ্ছিলাম ওর হুহু কান্নার শব্দ! অনেকটাই যেন ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠা একজন নারীর মতো। আমি জানি ইয়েন লাঙ উপলব্ধি করতে পেরেছে আমার ভয় জাগানিয়া আতঙ্কের বোধ! আর দুঃখে ভারাক্রান্ত অনুভূতিগুলো!
“যদি এমনটা হয়, ধ্বংসাত্মক বিপর্যয়কে আমি এড়িয়ে যেতে সক্ষম হই, যদি এমনটা হয়, আমি জীবিত অবস্থায় সিয়ে রাজ প্রাসাদ ত্যাগ করে চলে যেতে পারি, ইয়েন লাঙ, তুমি অনুমান করো, আমি কি কাজে ব্যস্ত হবো?”
“আপনি ফিন চৌ গিয়ে দড়াবাজী খেলার সেই দলকে খুঁজবেন, আপনি দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার অনুশীলন করবেন।”
“তুমি ঠিক বলেছো, আমি সেই দড়াবাজীগরদের দলটাকে খুঁজবো, আমি অনুশীলন করবো দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার কসরত!”
“জাঁহাপনা যদি দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার কায়দা অনুশীলন করতে যান, তা’হলে এই গোলামের ইচ্ছা, সে করবে গাছের গুড়ি গড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার খেলার অনুশীলন!”
আমি ইয়েন লাঙের কাঁধে হাত রেখে ওকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরলাম। এই রকম একটা আশাহীন হতাশার বজ্র বৃষ্টির রাতে, নীচু জাতের পরিবারে জন্ম নেয়া এক জন খোজা দাস এবং আমি জড়াজড়ি করে চোখের জল ফেলছি, একটু আগে ভাগেই শোক প্রকাশে রত হয়েছি, আমার সম্রাট হিসেবে আট বছরের রাজকীয় কর্ম জীবনের পরিসমাপ্তির আসন্ন আগমনের কারণেই!
৬.
চন্দ্র বর্ষের অষ্টম মাসের ২৬ তারিখে, সরকারি বৃত্তিধারী জেষ্ঠ্য সেনাপতি তুয়ান ওয়েন এবং পশ্চিম অঞ্চলের সুবাদার চাও ইয়াং, কাঁধে কাঁধ মিলানো সুশৃঙ্খল বাহিনী নিয়ে দ্রæত অগ্রসর হওয়া শুরু করলো, ছেড়ে গেলো ফিন চৌ শহরের নগর তোরণ! তাদের পিছনে পিছনে অগ্রসর হতে লাগলো বিপুল সংখ্যক তারুণ্যের উদ্দীপনায় ভরা এক দল পদাতিক সেনা। তাদের হাতে থাকা অসংখ্য ধ্বজা আর পতাকা ঢেকে দিয়েছিলো আকাশ আর প্রখর সূর্য কিরণ। সিঙ্গার শব্দ ধ্বনিত হয়ে ভেদ করে চলে যাচ্ছিলো উত্তর পশ্চিম অঞ্চলের গোটা এলাকা। প্রায় দশ হাজার সৈন্যের ভরবেগ আর প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর সেনাদল এগিয়ে গেলো সিয়ে দেশের রাজধানীর উদ্দেশ্যে। তিন দিন পর ভোর বেলা ওরা পৌঁছালো রাজধানী শহর থেকে ষাট লি পশ্চিমে অবস্থিত ছ্রি চৌ শহর এলাকার সীমানার ভিতরে!
তৃতীয় দিন ভোরে সংগঠিত হলো সিয়ে দেশের ইতিহাস বিখ্যাত “ছ্রি চৌ-এর যুদ্ধ”! ছ্রি চৌ-র প্রতিরক্ষা রেখায় নিয়োজিত দশ হাজার সৈন্য মুখামুখি হলো বিদ্রোহী সেনাদলের। রক্ত মাংস ছড়িয়ে ছিটিয়ে উড়ে ছিটকিয়ে গিয়ে পরছে শহরের বাইরে থাকা ক্ষেত খামার আর বহমান নদীর প্রবাহের মধ্যে! ঐ যুদ্ধটা এক টানা চলেছিলো পুরো এক দিন এক রাত! উভয় পক্ষেরই হতাহতের সংখ্যা ছিলো অগণিত!
বহু সংখ্যক! পরের দিন দুপুর নাগাদ বেঁচে যাওয়া মানুষেরা যুদ্ধে নিহতদের মৃত দেহগুলো নির্বিচারে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছিলো জলাশয়, খাল আর নদীতে। উদ্দেশ্য, যুদ্ধ ক্ষেত্রের জন্য পর্যাপ্ত স্থান, মাঠ খালি করা যেখানে সংগঠিত হবে ফলাফল নির্ধারণকারী চূড়ান্ত সমর! কতগুলো মৃত দেহ জলধারার পথকে আটকে দিলো! তৈরী করলো দুলতে থাকা অনেকগুলো ভাসমান সেতু!
ভীতসন্ত্রস্ত বিশ্বাসঘাতকতাকারী সৈন্যরা এই ভাসমান মৃত দেহের সেতুগুলোর উপর দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে নদীর ওপারে যাচ্ছিলো। পালাচ্ছিলো নিজ নিজ গ্রামের বাড়ির দিকে! ওদের সারা শরীর ছিলো রক্ত মাখা, যা নির্দেশ করছিলো ঐ যুদ্ধ ক্ষেত্রের ভয়াবহ রক্তপাতকে! ওরা পালানোর পথে ফেলে যাচ্ছিলো ওদের নানা রকম যুদ্ধাস্ত্র! পরবর্তীতে ওদের পরিত্যক্ত অস্ত্রগুলো গলিয়ে ছাঁচে ঢেলে কৃষকরা তৈরী করেছিলো লাঙ্গল, কোদাল প্রভৃতি কৃষি কাজের যন্ত্রপাতি আর ঘাস টানা গাড়ির চাকার অর, যা কিনা এই যুদ্ধকে মানুষের স্মৃতিতে করেছিলো চিরস্থায়ী!
আমার প্রিয় ভাজন সেনাপতি চি চাং, তুয়ান ওয়েনের হাতে থাকা ঝনঝন শব্দ করা কুঠার সংযুক্ত বর্শার আঘাতে ঘোড়ার পিঠ থেকে পরে গেলো, যা ছিলো ছ্রি চৌ-এর যুদ্ধে সরকারী সেনাদলের সাধারণ সৈনিক এবং সেনা কর্মকর্তাদের সম্পূর্ণ ব্যর্থতা এবং শেষ পরিণতির পূর্বাভাস! (চলবে)