শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : কিন্তু শেষে এসে এমনটা কেনো হলো? আপনি, আপনার এই ষড়যন্ত্র আর হীন প্রবৃত্তির কথা গোপন রেখে নিজের সাথে করে কবরে নিয়ে যাচ্ছেন না কেনো, কেনো আপনি আমাকে আবার এগুলো শুনাতে গেলেন? রাগে দুঃখে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো। রাজকীয় শয্যায় শোয়ানো বৃদ্ধার দেহটা ধরে আমি খুব জোরে ঝাঁকুনি দিলাম। কিন্তু এবার তিনি সত্যি সত্যিই মরে গেছেন, তাঁর প্রতি আমার করা বেয়াদবি তিনি আর বুঝতে সক্ষম হলেন না! আমি শুনতে পেলাম তাঁর বুকের ভেতর থেকে ঘন কফ পিছলিয়ে বেরিয়ে আসার শব্দ। আমার হাসতে ইচ্ছা করছে! সব শেষে ভিতরে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না, সেটার উদগীরণ হলো দুঃখের কান্নার শব্দ দিয়ে!
বৃদ্ধার মহাপ্রয়াণ ঘটেছে! প্রাসাদ তত্ত¡াবধায়কের শোক সংবাদের ঘোষণা মুক্তা ঝুলানো ঝালারের বাইরে চলে এসেছে! গুলজার কক্ষ প্রাসাদের ভিতরে বাইরে জোয়ারের পানির শব্দের মতোই শোনা যাচ্ছে হট্টগোল! একটা আঁধারে জ্যোতি বিতরণকারী দূর্লভ মুক্তা হাতে নিয়ে আমি লোকজ প্রথা অনুযায়ী সদ্য প্রয়াত বৃদ্ধার মুখের মধ্যে গুঁজে দিলাম। মৃত মানুষটার চোয়াল একবার স্ফীত হয়ে উঠলো অসঙ্গত আকৃতিতে, আবার একটু পরেই চুপসে গেলো। এ ভাবে একটা ঠান্ডা পরিহাসের হাসি দৃশ্যমান হয়ে উঠলো মৃত দেহের অবয়বে! মানুষ জন মৃতদেহের শয্যার কাছে ধাবিত হওয়ার আগেই বেশ তাড়াহুড়া করেই, আমি ঝটপট মরা মানুষটার চেহারার উপর এক দলা থুতু ফেললাম! আমি যথেষ্ট সতেচন এ বিষয়ে যে, একজন সম্রাটের পক্ষে এমন কাজ করা মোটেও শোভনীয় নয়! কিন্তু আমি এমনটাই করেছিলাম, যেমনটা মহিলারা প্রায়ই করে থাকেন!
আট বছর পর আবার চললাম রাজকীয় সমাধি ক্ষেত্রে! তাম্র কাঠি পাহাড়ের দক্ষিণ পাশের পাদদেশ-এর ঘন সবুজ ঝাউ গাছ ঢাকা এই এলাকাটা আমার কাছে মনে হয় একটা বিচ্ছিন্ন জগৎ, যার অবস্থান বাস্তবতার কোলাহল থেকে বহু দূরে, যুগ যুগ ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্মের মানুষ একে অতিক্রম করে চলে গেছে! হুয়াং ফু ফুরেনের জাঁকজমকপূর্ণ অন্তেষ্টিক্রিয়ার সময়, আমি লক্ষ্য করলাম, আগমন ঘটছে এক ধরনের দূর্লভ ধূসর রঙের চড়ুই পাখীর! ওরা মানুষকে ভয় পাচ্ছিলো না একটুও, ভয় পাচ্ছিলো না ঢোলের বাদ্যের আওয়াজকেও! ওরা নিঃশঙ্ক আর নির্বিঘœ চিত্তে ওদের বাসাগুলো থেকে নীচে নেমে এসে বসেছিলো সমাধি পাথর আর সমাধি ছাওনিগুলোর উপর! শ্বেত শুভ্র কাফনের স্পর্শ ঘেরা অন্তেষ্টিক্রিয়ায় দৃষ্টিগোচর হলো এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের, আমার মনে হচ্ছে হুয়াং ফু ফুরেনের শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া আত্মা এই ধূসর চড়ুই ঝাঁকের রূপ ধরে ফিরে এসেছে আবার!
শোকের প্রতীক সাদা রঙের পোশাক পরিহিত বহু মানুষের সমাগম হয়েছে। সবুজ সতেজ ঘাসে ঢাকা পাহাড়ের ঢাল ঢাকা পরে গেছে মানুষের ভীড়ে! অন্তেষ্টিক্রিয়ার শেষ যাত্রার সঙ্গী হিসাবে আরও কয়েকটা লাল রঙের ছোট আকৃতির শবাধার যার সংখ্যা নয়-এর চেয়েও কিছু বেশি! এবারের অন্তিম যাত্রার সঙ্গীদের সংখ্যা আট বছর আগে ঘটা, আমার প্রয়াত পিতা প্রাক্তন সম্রাটের শেষ যাত্রার সফর সঙ্গীদের চেয়েও বেশি বলে মনে হচ্ছে! আসলে উত্তরসূরীদের প্রতি ঐ বৃদ্ধার করা এটাই হচ্ছে সব শেষ সন্ত্রাস! তাঁর ক্ষমতা আর কুদরতের সর্বশেষ প্রদর্শন! আমি জানি লাল রঙের শবাধারের মধ্যে নয় জন স্বেচ্ছাসেবী প্রাসাদ দাসীকে জীবন্ত সমাহিত করা হবে, তারা হচ্ছে হুয়াং ফু ফুরেনের জীবন ও মরণ উভয় কালের সার্বক্ষণিক সঙ্গী, হুয়াং ফু ফুরেনের মহাপ্রয়াণ ঘটার দিনের দিবাগত রাত্রে, নয় জন প্রাসাদ দাসী দুই হাত তুলে নিয়েছিলো স্বর্ণ গোলোক, ওদের মধ্যে রীতিমতো শুরু হয়েছিলো প্রতিযোগিতা, কে হবে প্রথম অন্তিম যাত্রার সঙ্গী, হামাগুড়ি দিয়ে শবাধারের মধ্যে ঢুকবার দ্বন্দে ওরা জড়িয়ে পরেছিলো পরস্পরের সাথে! ওরা হয়ে পরেছিলো চরমভাবে সম্মোহনের শিকার! ওরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেছে হলুদ ঝর্ণার পথে চিরকালের জন্য ওরা সঙ্গী হয়ে অবিরাম সেবা দিতে পারবে মহা মর্যাদাবান ঐ বৃদ্ধা মহিলাকে!
কাঁসার ঢোলে বাড়ি দেয়া হলো নিরানব্বুই বার! রাজ পরিবারের সদস্যরা, মন্ত্রী পরিষদ এবং রাজ দরবারের উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিবর্গ একই সাথে উচ্চ স্বরে কেঁদে উঠলেন! সেই উচ্চ স্বরের সমবেত ক্রন্দনের আওয়াজের প্রতিধ্বনি শুনে মনে হচ্ছে, এটা হাস্যকরভাবে বাজানো নানা ধরনের বাদ্য যন্ত্রের বাজনার সংমিশ্রণ বৈ অন্য কিছু নয়! যা কি না ভীড় জমানো এক দল নানা জাতের বদ মতলবধারী মানুষের কণ্ঠ থেকে নির্গত ঐক্যতান! কোন্ কান্নার শব্দ কি ভাবার্থ প্রকাশ করছে তা আমি স্পষ্ট ধরতে পারছি, কারো কারো কান্নার মধ্যে সত্যি সত্যিই আছে গভীর শোক আর দুঃখের বহিঃপ্রকাশ, কারো কারো কান্না হচ্ছে শুধু ফোঁপানো যেখানে দুঃখের সাথে মিশানো আছে হিংসা! যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এমন প্রতারণা ভরা সংস্কৃতি, যা আমার হৃদয়কে স্পর্শ করে না, কিন্তু যা কিনা কানের পর্দা প্রায় ছেদ করেই ফেলেছে, যা শুনতে আমি একেবারেই আগ্রহী নই!
আমি চলে গেছি একটা ঘোরের মধ্যে, আট বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার দৃশ্য আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে অস্পষ্ট ভাবে। আমি দেখতে পাচ্ছি ইয়াং ফুরেন-এর অলীক অবয়ব! তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত বদনে নিঃশব্দে রাজ সমাধি ক্ষেত্রের বাম পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর অন্তরটা যেন পরিপূর্ণভাবে জ্বলছে ক্ষোভের আগুনে! তিনি জনতার দিকে মুখ করে হাত নাড়ছেন, তাঁর হাতে আছে উত্তরাধিকার নামার রাজকীয় ফরমান! আমি দুঃস্বপ্নের ঘোরে যেন শুনতে পেলাম, আমাকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে, তুমি সিয়ে দেশের সম্রাট নও! সত্যিকারের সিয়ে দেশের রাজা হচ্ছে জেষ্ঠ্য পুত্র তুয়ান ওয়েন! এরপর আমি লক্ষ্য করলাম সমাধি ক্ষেত্রে আসা ধূসর রঙের চড়ুই পাখীর ঝাঁক হঠাৎ করেই উড়ে গেলো, ওদের ঝাঁকটা উড্ডয়নকালে শূন্যে তৈরী করলো একটা অদ্ভুত আয়তক্ষেত্র, তারপর মিলিয়ে গেলো আকাশে!
পালিয়ে যাওয়া পাখীর ঝাঁক আতঙ্কিত হয়ে পরেছিলো, ওরা শুনতে পেয়েছিলো আরেক দল শোক প্রকাশকারী মানুষের মাতন! এই দলটার পরনে আছে যুদ্ধ ক্ষেত্রের পোশাক! গায়ে আছে বর্ম, মাথায় শিরস্ত্রান। ওরা ঘোড়ায় চোড়ে তাড়াহুড়া করে ছুটে আসছে, ওদের মাথায় বাঁধা আছে সাদা রঙের রেশমের রুমাল যা শোকের নির্দেশক! তাদের ধূলিমাখা দেহ থেকে আসছে পোশাকে লেগে থাকা রক্ত আর শরীরের ঘামের গন্ধ! পথে ওদেরকে যারাই প্রথম বারের মতো দেখেছে, তারাই উত্তেজনায় উঁচু স্বরে চিৎকার করে উঠেছে!
কেউই ভাবে নাই, তুয়ান ওয়েন দিন রাত অবিরাম ছুটে হাজার লি পথ অতিক্রম করে এসে ধরতে পারবে, অংশগ্রহণ করতে পারবে হুয়াং ফু ফুরেনের অন্তেষ্টিক্রিয়ায়! আমি দেখতে পাচ্ছি একটা লাল কেশরওয়ালা অশ্বের পিঠে বসা আছে তুয়ান ওয়েন! ঊষার শেষ ভাগের আভা, ওর ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া অবসন্ন অবয়বকে যেন আলোর স্নানে সিক্ত করছে। ওর হাতে থাকা কালো চিতার অবয়ব খচিত ধ্বজার সাথে সরু লম্বা শোকের পতাকা এবং ওর মাথার শিরস্ত্রানের সাথে পেচানো শোক নির্দেশক রুমালের বেশ খানিকটা অংশ বাতাসের দোলায় পত পত করে উড়ছে! তুয়ান ওয়েন! জেষ্ঠ্য রাজ কুমার তুয়ান ওয়েন! পরাক্রমশালী সেনাপতি তুয়ান ওয়েন! নান ফা এলাকায় সামরিক অভিযানের সেনা সর্বাধিনায়ক তুয়ান ওয়েন!
আমার বৈমাত্রেয় ভাই, জম্ম থেকেই যে আমার স্বাভাবিক প্রতিদ্ব›দ্বী, বর্তমান কালে এখন, সে আবারও এসে দাঁড়িয়েছে, উপস্থিত হয়েছে আমার সামনে!
আমার মনে আছে, ঐ সময় আমার ভাবনায় একটা অদ্ভুত প্রশ্নের উদয় হয়েছিলো! হঠাৎ করে আসা তুয়ান ওয়েন-এর ঘোড়ার খুড়ের শব্দই কেনো ধূসর চড়ুই পাখীর ঝাঁকের রূপ নিয়ে আসা প্রয়াত মানুষটার প্রেতাত্মাকে আতঙ্কিত করেছে? ওরা ভয় পেয়েছে, উড়াল দিয়েছে আকাশে! আমার কাছে মনে হচ্ছে, রাজ দরবারে ফিরে আসা বিজয়ী বীরের কাছে এটাই হচ্ছে আমার একমাত্র যথোপযুক্ত প্রশ্ন! আমি পশ্চিম আকাশের দিকে আঙ্গুল তুলে তুয়ান ওয়েন-এর উদ্দেশ্যে বললাম, তুমি কে? কেনো তুমি ধূসর রঙের চড়ুই পাখীদের ঝাঁকটাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছো?
। ৫।
কলম সমর পাহাড়ের পাদদেশে সংগঠিত এক তীব্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ফসল পূজার সমাবেশের সমাপ্তি ঘটলো, বিদ্রোহী বাহিনী সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হলো। সরকারি সেনা দল ইতস্ততবিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিদ্রোহী যোদ্ধাদের মৃতদেহগুলো মাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো। কালো চিতার অবয়ব খোচিত ঝান্ডা সমেত পতাকার খুটি গেড়ে স্থাপন করা হলো পাহাড়ের চূড়ায়! পিছনের পাহাড়ের নীচে পুরোনো তক্তা বিছানো পথে গিয়ে, ওরা সামনের এবং পিছনের দিক থেকে আক্রমণ চালাচ্ছিলো বিদ্রোহীদের উপর।
ফসল পূজার সমাবেশের আয়োজক আর সর্বোচ্চ নেতা লি ই চ্রি-কে পালিয়ে যাওয়ার সময় তীর ধনুকসহ পাকড়াও করা হয়েছে!
লি ই চ্রি-কে গোপনে কড়া প্রহরাধীন অবস্থায় রাজধানীতে নিয়ে আসা হলো। পানিতে ডুবিয়ে ভিজাবার জন্য পানি-প্রকষ্ঠের ব্যবস্থা করলো দন্ড মন্ত্রণালয়! তিনটা আদালতে লি ই চ্রি-এর মামলার শুনানি হলো কোন অর্থবহ ফলাফল ছাড়াই! সে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার নিজের অবস্থানে সুদৃঢ় থাকলো, তার বক্তব্য ফসল পূজার সমাবেশের আয়োজন সে করেছিলো মহৎ উদ্দেশ্যে শুধু মাত্র জনসাধারণের কল্যাণের জন্য! সে সরাসরি অস্বীকৃতি জানালো নিজেকে গ্রাম আর তৃণ ভূমির ডাকাত-দুর্বৃত্ত হিসাবে মেনে নিতে! তাকে জিজ্ঞাসাবাদকারী রাষ্ট্র পক্ষের অভিযোক্তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা করলেন, তারপর সিদ্ধান্ত নিলেন যে রাষ্ট্রের দন্ড বিধির ‘নমনীয়তা’ লি ই চ্রি- এর প্রতি দেখানো হবে, শাস্তি হবে শুধু তার চামড়া ও পশমের উপর! তারা ভেবে চিন্তে বের করলেন কয়েক ধরনের সর্বোচ্চ শাস্তির পদ্ধতি, যেগুলো আগে কখনও প্রয়োগ করা হয়নি! লি ই চ্রি-কে শেষ বারের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। আমার খোজা দাস দলের দলপতি ইয়েন লাঙ প্রাসাদের বিশেষ প্রতিনিধি হিসাবে এই বারের জেরা পর্বে অংশ গ্রহণ করলো। পরে ইয়েন লাঙ আমার কাছে কয়েক ধরনের সর্বোচ্চ শাস্তি পদ্ধতির বর্ণনা দিয়েছিলো যা আগে কখনও প্রয়োগ করা হয়নি, ভবিষ্যতেও আর কখনও প্রয়োগ করা হবে বলে মনে হয় না!
প্রথম ধরনের পদ্ধতির নাম ‘প্রতিক‚লতার কারণে সুযোগ সন্ধানীর সুযোগ পরিত্যাগ’! ইয়েন লাঙ বললো, একটা পাতলা লোহার পাত দিয়ে একটা বালতির মতো পাত্র তৈরী করে, ভিতরে পেরেক দিয়ে অসংখ্য ছিদ্র করে ঐ ছিদ্রগুলো দিয়ে ধারালো তীক্ষ্ণ সূঁচ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে, তারপর ঐ বালতির মতো লোহার পাতটা দিয়ে লি ই চ্রি-র সারা দেহটা ঢেকে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে ওরা! দু’জন কারারক্ষী চেপে ধরেছে ঐ লোহার বালতিটা, তৃতীয় আরেক জন লি ই চ্রি-এর লম্বা চুলের খোঁপা ধরে টান দিয়ে বালতির ভিতর তাকে হেঁচড়ে বের করেছে! ইয়েন লাঙ বললো যে সে শুনতে পেয়েছিলো লি ই চ্রি-র যন্ত্রণা কাতর তীক্ষ্ণ চিৎকার! তীক্ষ্ণ সূঁচের খোঁচায় সরু সরু দাগ কেটে নগ্ন শরীরের চামড়ায় চিড় ধরিয়ে মাংস বেরিয়ে আসছিলো। হচ্ছিলো তীব্র রক্ত ক্ষরণ। পাশে থাকা একজন কারারক্ষী এক বাটি লবণ নিয়ে এসেছিলো। সে ধীরে ধীরে ঐ বাটিতে থাকা লবণ ছিটিয়ে দিয়েছিলো সেই মাংস বেরিয়ে আসা রক্তাক্ত শরীরের উপর! ইয়েন লাঙ বলেছে, নিশ্চিতভাবেই লি ই চ্রি অনুভব করেছে অসহ্য ব্যথা যা মাংস ভেদ করে হাঁড় পর্যন্ত চলে যাওয়ার কথা! ইয়েন লাঙ শুনতে পেয়েছিলো, লি ই চ্রি-র পাগলের মতো করে করা চিৎকার! তারপরেই সে চেতনা হারিয়ে বেহুশ হয়ে গিয়েছিলো!
দ্বিতীয় পদ্ধতিটির নাম জ্বীন-পরীদের টেনে আনা কুজ্ঝটিকা! আগের শাস্তি পদ্ধতির সাথে এর আছে নিখুঁত সামঞ্জস্য! খুব অল্প সময়ের মধ্যেই লি ই চ্রি-র জ্ঞান ফিরিয়ে আনা হয়, তখন তাকে সইতে হয় আরেক ধরনের যন্ত্রণা! কারা রক্ষীরা লি ই চ্রি-কে ঝুলিয়ে দেয় উল্টা করে, পা জোড়া থাকে উপরের দিকে, মাথা থাকে নীচের দিকে। তাকে ঝুলানো হয়েছিলো একটা ফুটন্ত পানির পাত্রের উপরে। “জাঁহাপনা, আপনি অনুমান করেন, ঐ পাত্রের মধ্যে কি ছিলো?”, হঠাৎ করেই ইয়েন লাঙ হেসে উঠে বললো, “সিরকার অ¤øরসে টইটুম্বুর ছিলো ঐ পাত্রটা! কতো বুদ্ধি ওদের, ওদের ভাবনা ছিলো কি সাংঘাতিক! পাত্রের ঢাকনিটা সরিয়ে দিয়েছিলো ওরা, আর সাথে সাথে উত্তপ্ত অ¤ø আর ঝাল মেশানো বাষ্প দ্রæত ধাবিত হয়ে এসে সিক্ত করেছিলো লি ই চ্রি-র মুখমণ্ডল! তার চেতনা ফিরে এসেছিলো, তবে এমন ব্যবস্থা ওর অজ্ঞান হয়ে পরার কষ্ঠের চেয়ে হাজার গুণ বেশি!
তৃতীয় পদ্ধতিটার নাম বেগুন চিড়ে ফেড়ে ফেলা! ইয়েন লাঙ বললো যে, বেগুন কেটে ফেড়ে ফেলা হচ্ছে সবচেয়ে সোজা আর সরল একটা শাস্তি পদ্ধতি! ওরা কড়িকাঠের সাথে বাঁধা লি ই চ্রি-কে বাঁধন খুলে নামিয়ে এনেছিলো। তারপর একটা খুবই ছোট, যার ক্ষুদ্রতার তুলনা নাই, এমন একটা ধারালো ছেদক ছুরি সরাসরি ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিলো তার দেহের নি¤œ ভাগে! ইয়েন লাঙ থামলো, চুপ করে থাকলো কিছুক্ষণ। (চলবে)