শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : দখল নিয়ে অতিক্রম করেছে ইউন চৌ পা সিয়েন জেলা, গোটা পথ বরাবরই তারা ক্রয় করেছে ঘোড়া, নিয়োগ করেছে নতুন যোদ্ধা। খুব শীঘ্রই ওদের শক্তি সামর্থ খুব বেশি মাত্রায় বেড়ে যাবে, মোট সৈন্য সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে দশ সহস্রাধিক! ওরা পরিণত হবে একটা শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীতে!

খবরটা রাজ প্রাসাদ পর্যন্ত এলো, পুরো প্রাসাদ আতঙ্কিত হয়ে উঠলো! সিয়ে দেশের বিগত দুই শত বছরের ইতিহাসে দেখা যায় সাধারণ মানুষ বরাবরই ছিলো সরকার ও রাজ পরিবারের প্রতি অনুগত, কখনওই কোন উল্লেখযোগ্য সীমা লঙ্ঘন করার ঘটনা ঘটে নাই। অর্ঘ্য দান ও ফসল পূজার এই বেআইনী সমাবেশ ও বিদ্রোহ করার বিষয়টা রাজ দরবারের কাছে হয়ে উঠলো একটা অপ্রত্যাশিত বিস্ময়কর ব্যাপার যার জন্য দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের একেবারেই কোন প্রস্তুতি ছিলো না। সৃষ্টি হলো একটা অস্থিরতা আর আতঙ্কের পরিবেশ!
প্রধানমন্ত্রী ফং আও আমাকে জানালেন, যে অর্ঘ্য দান ও ফসল পূজা আয়োজনের নেতৃত্বে আছে লি ই চ্রি নামের কৃষকটি, কোন একবার এই লোকটিই প্রাসাদের অঙ্গনে বিনা অনুমতিতে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা চালিয়েছিলো। আমার স্মৃতিতে ভেসে উঠলো সেই কালো মুখের যুবকের ভয় লাগা চোখের চাহুনির দৃশ্য! আমার মনে পড়ছে, বিলাস কেন্দ্র প্রাসাদে ঐ মানুষটার তাক লাগানো অস্বাভাবিক কথাবার্তা ও ব্যতিক্রমী আচরণ ও শিষ্ঠাচার! আমার খুবই অনুতাপ হচ্ছে আমার নিজেরই করা একটা চরম নির্বুদ্ধিতার কাজের জন্য! ফসল হানি আর পঙ্গপালের আক্রমণের কারণেই কি ঘটেছে এই বিদ্রোহ? আমি প্রধানমন্ত্রী ফং আও-এর কাছে জানতে চাইলাম।

মূলত পঙ্গপাল দুর্যোগের কারণে কর মওকুফ করার দাবি না মানার প্রেক্ষিতে ঘটেছে এই ঘটনা। উত্তেজিত জনতার বেশির ভাগই দক্ষিণ অঞ্চলের পঙ্গপাল আক্রমণে বিপর্যস্ত এলাকার স্থানীয় মানুষ। সাধারণত রাজ দরবার কর্তৃক আরোপিত করের বোঝা বেশি ভারী হয়ে গেলেই এমন মতো বিরোধের সূত্রপাত হয়।
“চাপিয়ে দেয়া কর প্রতিহত করো, জনগণের সেবা করো!”
এমন “আদর্শ বাণী” প্রচার করে জন মনে অসন্তোষের বিষ ঢেলে উত্তেজিত করার কাজ করছে লি ই চ্রি নামের ব্যক্তিটি!
সব শুনে তো মনে হচ্ছে ব্যাপারটা নিষ্পত্তি করা বেশ সহজ! যেহেতু তারা কর দিতে চাচ্ছে না, আমি দক্ষিণ অঞ্চলের জন্য ভূমি কর মওকুফ করার রাজকীয় ফরমান জারী করতে পারি। শুধু কি কর দিতে না চাওয়া ছাড়া ওদের কি আরও কোন চিন্তা ভাবনা আছে? ওরা কি যোদ্ধাদের সংগঠিত করে আমার সিয়ে রাজ প্রাসাদ আক্রমণ করে দখল করতে চাচ্ছে?
কর দেয়া প্রত্যাখান করে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণের ব্যবস্থা, এ সব বুলি আর মহৎ উদ্যোগের কথা হচ্ছে অর্ঘ্য প্রদান ও ফসল পূজার একটা ছদ্মাবরণ! দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের দৃষ্টিতে লি ই চ্রি হচ্ছে এক জন সাহসী, ন্যায় নিষ্ঠ মহামানব! প্রকৃত পক্ষে এই ব্যক্তিটি একজন অতি উচ্চাভিলাষী মানুষ! তাও বাদি, কনফুসিয়াস দর্শনের অনুসারী এবং বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী, দেশের সর্ব প্রান্তের এই তিন মতবাদ ও ধর্মের মানুষের কাছে ঐ লোকটা হয়ে উঠেছে জনপ্রিয়! ভয় হয়, সে হয়তো ষড়যন্ত্র করতে পারে রাজ ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়ার! অভ্যন্তরীণ গোলযোগ উৎসাহীত করতে পারে বিদেশী শক্তির আগ্রাসনকে! ঘটতে পারে চরম বিপজ্জনক ঘটনা কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই; জাঁহানপানা, আপনি অবশ্যই ব্যবস্থা নেন ওর বিরুদ্ধে, অলস ভাবে কালক্ষেপণ করা একেবারেই ঠিক হবে না!

সবুজ ঘাস আর ফসলের মাঠের এই ডাকাত, দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া দরকার, আর সেই শাস্তিটা শুধুই এক ধরনের! খুন! আমি বললাম।
আমার অসুস্থতার কালে অচেতন অবস্থায় আমি যে শব্দটা প্রয়াশই উচ্চারণ করতাম, সেটাই আমার মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো, তৎক্ষণাৎ আমি যেন ঘোরের মধ্যে নিপতিত হলাম। কয়েক বছর আগের সেই সময়ের জ্বরের ঘোরে পরার মতো। আরও বড় বিষয়, আমার নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য লাগছে, আমার মনে হচ্ছে পুরো বিলাস কেন্দ্র প্রাসাদটা যেন দুলছে, থর থর করে কেঁপে উঠছে! সব কিছুই যেন একটা অস্পষ্ট লাল আলোর মধ্যে ডুবে আছে! আমি যেন দেখতে পাচ্ছি খুন হয়ে যাওয়া ইয়াং ভ্রাতৃদ্বয়ের অস্পষ্ট রক্ত মাখা দেহ! ওদের দেহ দু’টি খানিকটা সময় ধরে পরে আছে নিঃশ্চল নিথর হয়ে, আবার একটু পরেই ওগুলো যেন দোলা শুরু করেছে! খুন! আমি একটা সমাধিস্থ অন্যমনস্ক অবস্থার মধ্যে চলে যাচ্ছি! আমি দেখতে পাচ্ছি, একটা দমকা বাতাসের ঝাপটা বিলাস কেন্দ্র প্রাসাদ-এর পাথর আর মনি মুক্তার কারুকাজ খোচিত পর্দাগুলোকে গুটিয়ে ফেলেছে। ইয়াং তোং এর দেহ থেকে আলাদা করা হালকা হলুদ রঙের চামড়াটা বাতাসে ভেসে ভেসে আসছে! আর সেটা ঘিরে ফেলেছে রাজকীয় শকটের ছাউনিকে, উড়িয়ে নিয়ে বাজিয়ে চলেছে ছাউনির গায়ে টাঙ্গানো ছোট ছোট ঘন্টাগুলোকে। বার বার অতিক্রম করছে আমার মুখ মণ্ডল, আমার অবয়ব, সবশেষে সেটা আমাকে সিংহাসন থেকে ফেলে দিলো, আমি পরে গিয়ে জাপটে ধরলাম প্রধানমন্ত্রী ফং আও এর দেহটা!

খুন, খুন, খুন! আমি আমার হাত দু’টি শূন্যে তুলে নখ দিয়ে আঁচড় দেয়ার ভঙ্গি করলাম। ফং আও-এর উদ্দেশ্যে বার বার পাগলের মতো উচ্চ স্বরে চিৎকার করে বললাম, “ওকে খুন করো, ওদেরকে খুন করো!”

“জাঁহাপনা, আপনি অতিরিক্ত উত্তেজিত হবেন না! আমাকে আরও দু’জন অভিজ্ঞ মানুষের সাথে আলোচনা করার অনুমতি দেন।”, খুব ধীর স্থিরভাবে প্রধানমন্ত্রী ফং আও আমার অতি উত্তেজিত কথার প্রতিত্তোর দিলেন। ফং আও এর চোখ দু’টো গভীরভাবে লক্ষ্য করছিলো আমার শূন্যে উত্তলিত হাত জোড়ার গতিবিধি। ওর দৃষ্টিতে ধরা পরেনি সেই ভয়াবহ হালকা হলুদ রঙের বাতাসে ভাসমান মানুষের চামড়াটা! ও’ তো কিছুই দেখতে পাচ্ছে না! শুধু আমিই দেখতে পাই সিয়ে রাজ প্রাসাদের ভিতরে ঢুকে যাওয়া অশুভ আত্মাগুলোকে! অন্য কোন মানুষ স্বাভাবিকভাবেই এগুলোকে অবলোকন করতে পারে না।

ছয় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সভার সভাপতি, যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত কুয়ো সিয়াং। সে তার নিজের নেতৃত্বে নান ফা এলাকায় সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলো। যুদ্ধ যাত্রা শুরুর আগে রাজ দরবারের সামনে এসে দাঁড়িয়ে শপথ করলো এবং আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিশ্রæতি দিলো যে যদি এই সামরিক অভিযান ব্যর্থ হয় তবে এর দায়িত্ব সেনা দলের অধিনায়কের, আর এর জন্য প্রাপ্য শাস্তিসমুহ সে মাথা পেতে নিবে। নান ফা-র এই সামরিক অভিযান সাফল্য বয়ে আনলে অভিযানের অধিনায়ক পাবে সম্মান সূচক তলোয়ার, সৈনিকরা পাবে বিশেষ পুরস্কার! আর যদি অভিযান ব্যর্থ হয়, তবে অধিনায়ককে ঐ তলোয়ার দিয়ে নিজেরই কন্ঠনালীচ্ছেদ করে দিতে হবে আত্মাহুতি!

রাজ দরবারে কুয়ো সিয়াং-এর সুখ্যাতি আছে বিভিন্ন সমরে বীরত্বের সাথে লড়াই করে জিতে আসার কারণে। দরবারের সামরিক ও বেসামরিক উভয় দলের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারাই উচ্চ ধারণা পোষণ করেন কুয়ো সিয়াং-এর নেতৃত্ব সম্পর্কে, ওরা সবাই নান ফা-র সামরিক অভিযানের সাফল্য সম্পর্কে শত ভাগ আশাবাদী।

কে ভেবে ছিলো, মাসের অর্ধেক না যেতেই নান ফা থেকে আসবে হতাশার সংবাদ! কুয়ো সিয়াং এবং তার সেনা দল লাল কাদা খালে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়েছে। মৃত সৈনিকরা যেন হয়েছে ফসল পূজার অর্ঘ্য! লাল কাদা খালের দু’পাড়ে স্তুপ করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ওদের মৃতদেহগুলো। খালের পাড় বরাবর যেন তৈরী হয়েছে মানুষের মাংস দিয়ে গড়া একটা বাঁধ!
শুনা যায়, ফসল পূজার আয়োজকেরা লাল কাদা খালের দক্ষিণ পাড়ে প্রতিপক্ষের সেনাদের প্রলুব্ধ করে টেনে নিয়ে গিয়েছিলো নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার গভীরে। কুয়ো সিয়াং ছিলো যুদ্ধে জেতার জন্য উদগ্রীব, সে রাতের বেলা তার লোকজনকে হুকুম দিয়েছিলো দ্রæততার সাথে ভেলা তৈরী করার জন্য। প্রত্যুষে সরকারি সেনা দল ভেলায় উঠে ছিলো খাল পাড় হওয়ার জন্য। তারা কখনোই ভাবে নাই, খালের ঠিক মাঝামাঝিতে পৌঁছাবার পর প্রতিটা ভেলার বাঁশের বাঁধনগুলো ছুটে যাবে। উত্তর অঞ্চল থেকে আসা সৈনিকদের প্রায় সবাই সাঁতার কাটতে জানতো না। পানিতে পরে গিয়ে ওরা সবাই হাবুডুবু খেয়েছে, স্রোত বরাবর ভেসে যাওয়া বাঁশের খন্ডগুলোকে ধরে প্রাণ বাঁচাবার চেষ্টা করেছে। কুয়ো সিয়াং-এর গোটা সৈন্য দলই হয়ে পরেছিলো বিশৃঙ্খল, আর সেই বিশৃঙ্খলাই ডেকে নিয়ে এসেছে ওদের অনিবার্য পরাজয়। খালের দক্ষিণ পাড়ে লি ই চ্রি-এর নেতৃত্বে দাঁড়িয়ে থাকা শতাধিক তীরন্দাজরা অবিরাম অট্টহাসি হাসছিলো, বিপর্যস্ত সরকারি সেনা দলের শোচনীয় অবস্থা অবলোকন করে। একই সাথে ওদের নিক্ষেপ করা তীর আঘাত হেনে ছিলো ডুবন্ত সৈন্যদের অঙ্গে, শোনা যাচ্ছিলো সরকারি সৈন্যদের আর্তনাদের শব্দ অনেক দূর থেকেও। খালের তীব্র স্রোত, ভেসে ওঠা মৃত দেহগুলোকে দ্রæত ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো ভাটি বরাবর। কালো চিতার অবয়ব অঙ্কিত সিয়ে দেশের মহান পতাকা রক্তে রঞ্জিত হয়ে মৃত দেহগুলোর সাথে ভেসে উঠেছিলো খালের মাঝখানে পানির উপরে!

সার্বিক বিশৃঙ্খলার মধ্যেই কুয়ো সিয়াং নিজে সাঁতরে খালের উত্তর পাড়ে গিয়ে উঠলো। সে ঘোড়া ছুটিয়ে খালের পাড় বরাবর জেলেদের গ্রামের দিকে গেলো। সেখানে পৌঁছাবার পর ভেলা তৈরীর কারিগর এবং কয়েক জন ভেলার মাঝিকে ধাওয়া করে ধরে হত্যা করলো। ভেলা বিপর্যয়ে মৃত্যু থেকে বেঁচে যাওয়া কুয়ো সিয়াং তীব্র দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো। তিন জন মাঝির কর্তিত শির সাথে করে সে ঘোড়া ছুটিয়ে ফিরে আসছিলো রাজধানীর দিকে। গোটা পথ জুড়েই তার কান্না থামে নাই! তৃতীয় দিন উসকো খুসকো কেশ, শুষ্ক অবয়ব আর রক্ত মাখা দেহ নিয়ে সে উপস্থিত হলো রাজধানী শহরের প্রধান ফটকে। সে তার হাতে থাকা তিনটা কর্তিত মাথা নর্দমায় ফেলে দিলো। তারপর ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে নগর তোরণের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সৈনিক ও সেনা কর্মকর্তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো!

কুয়ো সিয়াং বললো, “তোমারা কি আমাকে চিনতে পারছো?”
“আপনি তো যুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং সেনা অধ্যক্ষ কুয়ো সিয়াং। আপনি তো সেনা দল নিয়ে দক্ষিণ অঞ্চলে গিয়েছেন বেআইনী ঘোষিত অর্ঘ্য দান ও ফসল পূজার সমাবেশ দমন করার জন্য!”, কথাগুলো বললো নগর তোরণের একজন নিরাপত্তা রক্ষী।
“ঠিক বলেছো! কিন্তু আমি এখন আমার অদক্ষতা ও ভুল স্বীকার করে আমার নিজের জীবন নিজেই নাশ করবো!”, কুয়ো সিয়াং সম্রাটের উপহার দেয়া সেই সম্মান সূচক তলোয়ারটা খাপ থেকে বের করার সময় উচ্চ স্বরে হাসলো কিছুক্ষণ, তারপর এক জন নিরাপত্তা রক্ষীকে উদ্দেশ্য করে বললো, “আমি তোমাকে বলছি, তুমি সিয়ে দেশের সম্রাটকে গিয়ে বলো, কুয়ো সিয়াং হেরে গেছে। সিয়ে দেশের পাহাড়-নদীর নিরাপত্তা রক্ষার কাজটা দূরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে!”

মৃত্যুর ঠিক আগমুহূর্তে কুয়ো সিয়াং-এর বলা কথাগুলো ভাসমান বুদ বুদের মতো দ্রæত ছড়িয়ে পরলো রাজধানীর ভিতরে আর বাইরে! যা কি না রাজ দরবারের অনেক সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে সঞ্চারিত করেছিলো বিশাল ক্রোধ! লাল কাদা খালে কুয়ো সিয়াং এবং তার সেনা দলের বিপর্যস্ত পরাজয়ের কিছু দিনের মধ্যেই, প্রায় প্রতিদিনই কিছু কিছু সরকারি কর্মকর্তা বিলাস কেন্দ্র প্রাসাদের সামনে এসে দাঁড়াতো, তারা আবেদন করছিলো যাতে সামরিক পদক্ষেপ নেয়া হয়, আসলে ঐ ছোট বড় কর্মকর্তারা লি ই চ্রি এবং ফসল পূজার সমাবেশের শক্তিকে ছোট করে অবজ্ঞার দৃষ্টিতেই দেখছিলো। তাদের মতে সরকারি সেনা দলের পরাজয়ের পুরো দায়িত্বই কুয়ো সিয়াং-এর অদক্ষতা, ভুল সৈনিক বাছাই, মূল দুর্ঘটনা ঘটেছে খাল পাড় হওয়ার সময়, যদি সাঁতারে দক্ষ এমন একটা সেনা দল বাছাই করা হতো, তা হলে এক মাসের মধ্যেই হয়তো ফসল পূজার সমাবেশের বিদ্রোহ সম্পূর্ণভাবে দমন করা যেত!

আমার কাছে মনে হচ্ছে সামরিক অভিযানে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে যে স্মারকলিপিগুলো সম্রাট বরাবর দাখিল করা হয়েছে, সেগুলো আসলে কিছু মিথ্যা তথ্যে ভরা উচ্ছিষ্ট কাগজ বৈ অন্য কিছু নয়! এই মিথ্যা কথা লেখার পিছনে লুকিয়ে আছে কিছু মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতর্থ করার হীন আকাক্সক্ষা! কেউ কেউ জাহির করতে চাচ্ছেন নিজেদের মহত্ত¡, কেউ বা ধান্দায় আছেন পদন্নোতি পাওয়ার, এদের উচ্চাকাক্সক্ষা আমাকে বিস্মিত করছে! স্মারক পত্রগুলোর সবগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে অতি মাত্রায় বীরত্ব আর উচ্চ প্রশংসাসূচক তোষামোদী শব্দসমূহ, তুলে ধরা হয়েছে অনেক মিথ্যা তথ্য, যেগুলো বাস্তবতা থেকে বহু দূরে! এ ধরনের অবিশ্বস্ত আর সন্দেহ জনক তথ্যের উপর ভিত্তি করে নান ফা এলাকায় নতুন করে সেনা অভিযানের নিমিত্তে সেনা অধিনায়ক নির্বাচন করতে গিয়ে আমি বেশ দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে গিয়ে পরলাম। আমি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।
বর্ধক্য জনিত রোগে দীর্ঘ দিন ধরে রোগ শয্যায় শায়িত আমার দাদী হুয়াং ফু ফুরেন আমার উপর খুব অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। (চলবে)