শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : পঙ্গপালের প্রাদুর্ভাব ঘূর্ণি ঝড়ের কালো মেঘের মতো দক্ষিণ অঞ্চলের আকাশকে ছেয়ে ফেলেছে! একটানা কয়েকটা দিন ও রাত পঙ্গপালগুলো ঠোকর দিয়ে খেয়েছে ক্ষেত খামারগুলোর প্রতিটা সবুজ অঙ্কুর! কৃষকরা ক্ষেত খামারের এই ভয়াবহ দূর্যোগের পর উচ্চ স্বরে বিলাপ করছে, ফসল পাকার আগেই ক্ষেত খামার নষ্ট হওয়ার মতো বিপর্যয় উপর থেকে নেমে আসার কারণে ওরা দোষারোপ করছিলো নিজেদের ভাগ্যকে, দিচ্ছিলো অভিশাপ! তারা ফসল ক্ষেতের আইলের উপর দাঁড়িয়ে খুঁজছিলো ক্ষেতের মধ্যে মরে পরে থাকা পঙ্গপালগুলো, বিক্ষুব্ধ মানুষগুলো ছিলো ক্ষুধার্থ!

আর পঙ্গপালগুলো মারা গিয়েছিলো পেট ফুলে, ওরা খাচ্ছিল ওদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মাত্রাতিরিক্ত খাবার! ক্রোধে উন্মত্ত আর দারুণভাবে আশাহত মানুষগুলো ধান ক্ষেতে জড়ো করছিলো মরে যাওয়া পঙ্গপালগুলো, গড়ে তুলেছিলো পঙ্গপালের ছোট পাহাড়, তারপর আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছিলো পঙ্গপালের স্তুপ! শোনা যায়, পঙ্গপালের স্তুপের আগুন জ্বলছিলো একটানা দুই রাত দুই দিন! আর অগ্নি দগ্ধ পঙ্গপাল স্তুপের অস্বস্তিকর পোড়া গন্ধ ছড়িয়ে পরেছিলো শত লি-এর এলাকাব্যাপি, প্রতিবেশী দেশের নগর-গঞ্জেও পাওয়া যাচ্ছিলো সেই পোড়া গন্ধ!

রাজ দরবারে সভাসদদের সামনে পঙ্গপালের প্রসঙ্গ আসলেই ওদের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। ওরা ভয় পাচ্ছেন, দক্ষিণ অঞ্চলে পাকা ফসল কাটার সময় এক দানা ফসলও অবশিষ্ট থাকবে না ঘরে তোলার মতো, এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতি হেমন্তের শেষে সারা দেশে তৈরী করতে পারে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি এবং এর ফলশ্রুতিতে হতে পারে জন অসন্তোষ!

প্রাত্যহিক ক্রিয়াকলাপের সূচী অনুসারে আমি রাজ দরবারে বসলে সারাক্ষণই আমার কান দু’টোতে আসে পঙ্গপাল, পঙ্গপাল, পঙ্গপাল এবং এরপর আমার সারা শরীরে চুলকানির অনুভূতি আসে, আমার মনে হয় পঙ্গপাল নামের পতঙ্গগুলো উড়ে এসে ঢুকে পরেছে বিলাস কেন্দ্র প্রাসাদের ভিতরে! আমি সিংহাসনে বসা অবস্থায় অস্থির হয়ে পরি, সম্রাটের দরবারে অগণিত বিভিন্ন বিষয় আর সমস্যা নিয়ে আলোচনায় নিমগ্ন প্রধানমন্ত্রী ফং আও-কে আমি থামিয়ে দেই, পঙ্গপালের প্রসঙ্গ আর নয়, অনেক হয়েছে! আমি বললাম, “মন্ত্রীবর্গ, আপনারা কি দেশের আর কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন না? পঙ্গপাল ছাড়া অন্য যে কোন বিষয়ে!” প্রধানমন্ত্রী ফং আও খানিকটা বিব্রতবোধ করে একে বারে নিশ্চুপ হয়ে গেলেন, তারপর বিমর্ষ বদনে ধীরে ধীরে পিছনে সরে গেলেন সিংহাসনের দিকে মুখ করে! ধর্মীয় আচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী ইয়েন য ছিং সম্রাটের উদ্দেশ্যে একটা দরখাস্ত পেশ করলেন। তিনি বললেন, “মাটির ঢিপি নামের জেলায়, জেলা আদালতের বিচারক ও জেলা প্রশাসক চাং খাই পঙ্গপাল দূর্যোগকালে জনসেবায় নিয়োজিত থাকে কর্তব্যরত অবস্থায় শাহাদত বরণ করেছেন, জাঁহাপনা অনুগ্রহ করে চাং খাই এর বিধবা পত্নী ও সন্তানদের জন্য কিছু আর্থিক পুরষ্কারের ব্যবস্থা করার হুকুম দেন, আর ওর পিতামাতাকে ওনাদের পুত্রের কৃত মহৎ কাজের জন্য সম্মাননার আয়োজন করেন।” আমি প্রশ্ন করলাম, “চাং খাই জনগণের কোন সেবায় রতো থেকে শহীদ হয়েছে? সে কি পঙ্গপালের কামড়ে মারা গেছে?”, ইয়েন য ছিং অতি উৎসাহের সাথে আনুষ্ঠানিক কায়দায় বিবরণ দিলো, “মাননীয় জেলা আদালতের বিচারক চাং খাই পঙ্গপালের কামড়ে দেহ ত্যাগ করেন নাই, তিনি পঙ্গপাল গলাধঃকরণ করেছেন এবং এ কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে! ফসল ক্ষেতের নতুন অঙ্কুর রক্ষা করার জন্য, তিনি নিজ উদ্যোগে এক দল জেলা প্রশাসনের সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে গ্রামের ফসলের মাঠে গিয়েছিলেন। তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে সদল বলে পঙ্গপালের মধ্যে ঢুকে পরেছিলেন অঙ্কুর রক্ষার কর্যক্রমের অংশ হিসেবে। কিন্তু অঙ্কুর রক্ষার এই প্রচেষ্টা দৃশ্যত কার্যকর না হওয়ার কারণে আবেগ আর উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে তিনি নিজে মুঠ মুঠ করে প্রচুর পঙ্গপাল গলাধঃকরণ করে নিজের পাকস্থলীতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ দৃশ্য দেখে মাঠে দাঁড়ানো আমজনতা আবেগে অভিভূত হয়ে চোখের পানি ফেলেছে!”

ইয়েন য ছিং-এর আনুষ্ঠানিক বিবরণ আমার শুনতে ইচ্ছা করছিলো না, আমার প্রচন্ড হাসি পাচ্ছিলো, যা আমি চেপে রাখতে পারছিলাম না, কিন্তু আমি হাসলাম না! আমি খানিকটা অস্পষ্টভাবে প্রতি উত্তর দিলাম। আমি বললাম, “পঙ্গপাল খায় নতুন অঙ্কুর, জেলা আদালতের বিচারক খান পঙ্গপাল! জগতটা কতো বড়! কতো বিচিত্র ঘটনা ঘটে এ জগতে! সব কিছুই যেন ঘটছে আমাকে হতবিহ্বল করার জন্য!”

আমি সত্যিই হতবিহ্বল হয়ে পরেছি! মাটির ঢিপি জেলার জেলা প্রশাসকের পঙ্গপাল ভোজনের বিশাল আয়োজন যেমন অযৌক্তিক তেমনি বেদনাবিধুর, যার সমাপ্তিতে এসেছে করুণ পরিণতি। জানি না গোটা ঘটনা এবং ব্যপারটাকে উচ্চ নৈতিক দায়িত্ব সম্পূর্ণ কাজের মর্যাদায় ভূষিত করে উপস্থাপন করা আদৌ ঠিক হচ্ছে কি না!

রাজ দরবার চলাকালীন সময়ে আমি প্রায়ই এমন বিব্রত কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হই! অদ্ভুত সব সমস্যা আর প্রশ্ন উপস্থাপিত হয় আমার সামনে, আর আমিও আমার পর্যবেক্ষণ ও মতামত ব্যক্ত করি যা সাধারণত হয় অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক!

“তোমাদের মধ্যে কে দাড়া বাজির দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার খেলা দেখেছো?”, আমি প্রধানমন্ত্রী ফং এবং আরও দু’জন মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এই প্রশ্নটা করলাম!
তারা সবাই স্পষ্টতই বিস্মিত হয়েছেন, তারা বুঝতে পারছেন না আসলে আমি আমার কথা দিয়ে কি বুঝতে চাচ্ছি! তাদের মুখ গহ্বর হাঁ হয়ে গেছে, কোন কথা বেরিয়ে আসছে না তাদের কারো মুখ থেকেই!

এমন সময়, একটা তীব্র হট্টগোলের শব্দ কানে এলো বিলাস কেন্দ্র প্রাসাদের বাইরে থেকে। কেতাদুরস্ত পোশাক পরিহিত নিরাপত্তা রক্ষীরা এক এক করে দৈড়ে প্রাসাদ ভবনের বাইরে চলে গেলো।

প্রাসাদের নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতরে অনুপ্রবেশকারী এক ব্যক্তিকে সৈনিকরা আগেই আটক করেছে। ধরে আনছে। আমি সুস্পষ্ট পরিস্কারভাবে শুনতে পাচ্ছি ঐ মানুষটার কর্কশ উচ্চ স্বরে বলা শব্দগুলো, যাতে আছে দক্ষিণ অঞ্চলের আঞ্চলিকতার টান!
সে বলছে, “তোমারা সবাই সরে যাও। আমাকে সিয়ে দেশের সম্রাটের সাথে দেখা করতে দাও!”
ঐ দিন আমার মন খুবই অনুসন্ধিৎসু হয়ে উঠেছিলো, প্রাসাদ চত্বরে অনুপ্রবেশকারী সেই মানুষটা সম্পর্কে!

নিরাপত্তারক্ষীরা খানিকটা ঝুঁকি নিয়ে ধরে নিয়ে আসলো চল্লিশ ঊর্ধ্ব এক ব্যক্তিকে! দেখে মনে হয় এই যুবক পেশায় একজন কৃষক, ওর পোশাক আশাক অত্যন্ত মলিন, তাতে ফুটে আছে দারিদ্র্যের সুস্পষ্ট চিহ্ন।

চীন দেশের বেশির ভাগ মানুষের ত্বকের রঙ হয় হালকা হলুদ। কিন্তু ঐ লোকটার অবয়বের হলুদ রঙ রোদে পুড়ে তামাটে বর্ণের হয়ে গেছে! চেহারা দেখেই বুঝা যায় সে খুবই ক্লান্ত-অবসন্ন। তবে ওর অক্ষি যুগল বিশাল ক্রোধ ধারণ করে জ্বলজ্বল করছে, আর ঈগল পাখীর মতো বিকিরণ করছে আলো! আমি ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম ওর পোশাকের উপর রয়েছে চাবুক কিংবা বেত্রাঘাতের সুস্পষ্ট দাগ! ওর উন্মুক্ত নগ্ন পা দুটোর বৃদ্ধাঙ্গুলীর উপর জমে আছে কালচে রক্ত, বুঝাই যায় কোন কিছু দিয়ে দীর্ঘ সময় চেপে রাখা হয়েছিলো সেই পা জোড়ার পাতা দুটো!

তুমি কে? সিয়ে রাজ প্রাসাদের অঙ্গনে অনুপ্রবেশের দুঃসাহস পেলে কি ভাবে?
এই চাষীর নাম লি ই চ্রি, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনসাধারণের পক্ষ থেকে সে এসেছে এখানে! সে এসেছে সম্রাটের অনুগ্রহ ভিক্ষা করতে। পঙ্গপালের আক্রমণে বিধ্বস্ত এলাকার জনসাধারণের উপর নির্ধারিত নতুন ফসলের কর, প্রত্যেক পরিবার প্রতি মাথা পিছু কর, জল সেচ কর মওকুফ করার জন্য জন সাধারণের পক্ষ থেকে সবিনয় আবেদন জানাচ্ছে এই চাষী!
আমজনতার জন্য জমি চাষ ও লাঙ্গল চালানোর কর খুবই যুক্তি সঙ্গত, ওরা তো এই কর দিবেই, এটা তো স্বর্গীয় বিধান! তোমরা কেন এসেছো এই কর মওকুফের আবেদন জানাতে?
সম্রাট, আপনি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করুন, দক্ষিণ অঞ্চলে পঙ্গপালের আক্রমণটা ছিলো খুবই অপ্রত্যাশিত! ফসলের ক্ষেতে নতুন গজানো অঙ্কুর পঙ্গপালের দল পুরোপুরি খেয়ে ফেলেছে, ফসলের মাঠগুলো পরিণত হয়েছে ঊষর ভূমিতে! মানুষ কোত্থেকে দেবে নতুন ফসলের কর? আর কোত্থেকেই বা আসবে পানি সেচের কর? একইভাবে পরিবার প্রতি মাথা পিছু কর জোগাড় করা আরও দুঃসাধ্য, আর এই মুহূর্তে এমন কর খুবই অযৌক্তিক! দূর্যোগপূর্ণ এলাকায় সাধারণ মানুষ এখন বুনো ঘাস আর লতাপাতা খেয়ে জীবন বাঁচাচ্ছে! প্রচন্ড ঠান্ডা আর অনাহারে প্রতি দিনই মানুষ মারা যাচ্ছে! আমজনতা কাটাচ্ছে চরম দূর্দশার সময়! রাজ দরবার দূর্গত এলাকার মানুষের জন্য কোন রকম ত্রাণ তো বরাদ্দ করেই নাই, উপরন্তু মাথা পিছু কর আদায়ের জন্য চাপ দিচ্ছে! রাজস্ব আদায়কারী সরকারি কর্মচারীরা প্রতিদিনই দরজায় দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ছে, কর না দিলে শাস্তি দেয়ার হুমকি দিচ্ছে! আমজনতা বেঁচে থাকার আর কোন অবলম্বন দেখতে পাচ্ছে না! সম্রাট যদি না এখক্ষণই কর মওকুফের ফরমান জারী না করেন তবে, দক্ষিণ অঞ্চলে আমজনতার মধ্যে বড় অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠবে! দেখা দেবে চরম বিশৃঙ্খলা!

সিয়ে দেশে আগেই তো বিরাজ করছিলো চরম বিশৃঙ্খলা, আর কি বাড়ার বাকী আছে অশান্তির?
আমি লি ই চ্রি-র সতর্কতামূলক বয়ান থামিয়ে দিলাম! তাকে প্রশ্ন করলাম, “তুমিই বলো, গণঅসন্তোষ বিশৃঙ্খলা বেড়ে কতো দূর যেতে পারে?”

কতগুলো যুদ্ধ প্রিয়, শৌখিন, রমনী রঁজক ব্যক্তিবর্গ নিজেদেরকে মহৎ আখ্যায়িত করে পচন ধরা রাজ দরবারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নিজেদের জন হিতৈষী প্রমাণ করার চেষ্টা করতে পারে, দূর্নীতিবাজ কিছু সরকারি কর্মকর্তা জাতীয় দূর্যোগের সময় নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়ার সুযোগ নিতে পারে, এরা নিজেদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে পারে, আবার প্রতারিত করতে পারে অধঃস্থনদের, সরকারি তহবিল তসরুপ করে ভর্তি করতে পারে নিজের পকেট! এরা নিজেদের অন্তরে দীর্ঘদিন লুক্কায়িত লালসা চরিতার্থ করার জন্য ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার মতো করে বিদেশী শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে ওদেরকে আমন্ত্রণ জানাতে পারে দেশকে আক্রমণ করার জন্য, নিজেদের বর্বর আকাক্সক্ষাকে চরিতার্থ করতে স্বীয় অযোগ্যতাকে লুকিয়ে রেখে উচ্চ পদে আসিন হওয়ার জন্য এরা আপনার কাছে করতে পারে অন্যায্য আবদার!

তুচ্ছ নগন্য একজন গ্রাম্য সাধারণ মানুষের এত বড় সাহস কিভাবে হলো যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে শুনিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী এমন ভয় দেখানো কথাবার্তা বলতে পারছে? আমি মৃদু হাসলাম, চিৎকার করে লি ই চ্রি-কে পিছনে সরে যাওয়ার হুকুম দিলাম। আমি বললাম, “দরবার চলাকালীন সময়ে প্রাসাদ অঙ্গনে অনুপ্রবেশ করা হচ্ছে সংক্ষিপ্ত বিচারে মৃত্যুদন্ড যোগ্য অপরাধ! এটা জানা সত্বেও তুমি জীবনের পরওয়া না করে এসেছো কঠোর ভাষায় সম্রাটকেই সতর্ক করতে!

তোমার এই সহস প্রশংসা যোগ্য, তাই আমি তোমাকে মৃত্যুদন্ড না দিয়ে দিচ্ছি প্রাণ ভিক্ষা! বাড়ি ফিরে যাও, চাষাবাদের কাজে মন দাও।”

কৃতজ্ঞতার আনুষ্ঠানিক বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ লি ই চ্রি দরবারের দিকে মুখ করে ধীরে ধীরে পিছনে যেতে লাগলো, ওর চোখ বেয়ে নেমে আসছিলো উষ্ণ অশ্রু ধারা, সব শেষে বেরিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে সে জামার ভিতর থেকে বের করলো একটা রুমাল, সেটা সে মেঝের উপর পেতে রাখলো। কুঁচকানো রুমালের উপর রাখা আছে একটা শুকিয়ে কালো হয়ে যাওয়া মরা পঙ্গপালের দেহ! এই কাজটা লি ই চ্রি কেনো করলো, সেটার কোন ব্যাখ্যা সে দিলো না। দরবারে উপস্থিত মন্ত্রীবৃন্দসহ অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা সবাই চোখ বড় বড় করে লি ই চ্রি-র বিলাস কেন্দ্র প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্থান দৃশ্য অবলোকন করে, শুরু করলো ফিস ফিস করে কানে কানে কথা বলা, এক জনের সাথে আরেক জন! আমি শুধু শুনতে পেলাম একটা কথা, একটা শব্দ বার বার : পঙ্গপাল, পঙ্গপাল, পঙ্গপাল!

আমি ভেবে ছিলাম লি ই চ্রি হৃদয়ের কৃতজ্ঞতার বোধ নিয়ে গ্রামে ফিরে যাবে, কিন্তু কে জানতো, ওকে গ্রামে ফিরে যেতে দেয়াটা হবে অনাগত ভবিষ্যৎ দিনগুলোতে আমার জন্য হৃদয়ের মধ্যে যন্ত্রণাদায়ক হুল ফুটানোর মতো একটা ঘটনা! চূড়ান্ত পরিণতিতে যা কি না আমাকে চরমভাবে হাস্যস্পদ হিসেবে প্রমাণ করে ছিলো। চন্দ্র বছরের চতুর্থ মাসে ফেই, থা, ইউ, চিয়েন জেলাসমুহ থেকে আসা হাজার হাজার গ্রামীণ কামার লাল কাদা খালের খাড়া পাড় বরাবর আইন অমান্য করে ধ্বজা আর পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়েছে, আয়োজন করেছে পঙ্গপাল নিবৃত্তির লোকজ আচার অর্ঘ্য প্রদান ও ফসল পূজার সমাবেশ! এরা একটা সশস্ত্র দল, এরা সংগঠিত হয়েছে, গঠন করেছে একটা পূর্ণাঙ্গ সেনা দল, যারা লাল কাদা খালের পাড় বরাবর পশ্চিম দিকে এগিয়ে আসছে। (চলবে)