শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : “তুমি একটু আগে পাখিদের মতো উড়াল দেয়ার ভঙ্গি করছিলে?”, ঘোড়ার পিঠে বসে আমি হুই সিয়েনকে জিজ্ঞেস করলাম।
“ঠিক বলেছেন। আমি ছোট বেলা থেকেই পশুপাখী পছন্দ করি।
জাঁহাপনা, আপনিও কি পশু পাখীদের ভালোবাসেন?”

“তুমি পশু-পাখী যতটুকু ভালোবাসো, আমি ওদের তার চাইতেও বেশি ভালোবাসি!”, আমি মাথা উপরের দিকে তুলে সিয়ে রাজপ্রাসাদের আকাশের দিকে তাকালাম। আকাশের গায়ে একটা বিশাল বড় সোনালী রঙের আলোর ফিতার আবির্ভাব ঘটছে! শুভ্র সূর্য ঘড়ি নামের তোরণের উপর দিয়ে সূর্যটা ধীরে ধীরে উঠছে উঁচুতে! প্রাসাদের উজ্জ্বল রঙের টালির ছাদের ফোঁকরে দীর্ঘ দিন যাবত যে ভোরের পাখিগুলো বাসা বেধেছে, জানি না ওরা কেন জানি এখন অনুপস্থিত, কোথায় যেন চলে গেছে! আমি সন্দিহান কন্ঠে বললাম, “পাখীর ঝাঁক উড়ে চলে গেছে! তোমার প্রাসাদে আসার কারণেই বুঝি ওরা ভয় পেয়ে চলে গেছে, তাই কি!”
আমার দাদী হুয়াং ফু ফুরেন আর আমার মা মঙ ফুরেন-এর মধ্যে সম্পর্ক কখনো ভালো যায় নাই! তাঁদের মধ্যে কখনওই কোন মিল আমার চোখে পড়ে নাই! তবে একটা বিষয়ে তাঁদের উভয়ের মধ্যে বেশ মিল দেখলাম! আর সেটা হচ্ছে, হুই সিয়েনের সাথে এই দুই মহিলার আচরণ! তাঁরা দু’জনেই হুই সিয়েনকে খুবই অপছন্দ করেন। ওনারা একে বারেই সহ্য করতে পারেন না, হুই সিয়েনের প্রতি আমার বিশেষ স্নেহ!

হুয়াং ফু ফুরেন বলেন, “হুই সিয়েনের অঙ্গ ভঙ্গি শহরের রাস্তা ঘাটের ছোট লোকদের মতো আপত্তিকর, ঘৃণা করার যোগ্য!”, তিনি প্রাসাদের উপপত্নীদের বিষয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তাকে বললেন, “এমন মেয়েকে প্রাসাদের জন্য বাছাই করে প্রাসাদের ভিতরে ঢুকতে দেয়াই ঠিক হয়নি।”

অন্য দিকে মঙ ফুরেন, এই রূপবতী মেয়েটির অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে পরেছেন! তাঁর ধারণা আগের জন্মে এই মেয়েটি ছিলো একটা ধূর্ত শেয়াল! তিনি নিশ্চিত, অনাগত ভবিষ্যতের দিনগুলোতে এই তুচ্ছ মেয়েটিই হতে পারে রাজ প্রাসাদের ভিতরের সবচেয়ে বড় অশান্তির কারণ! এমন কি সে ধীরে ধীরে হয়ে উঠতে পারে রাষ্ট্র নীতি আর রাজ ক্ষমতার জন্য হুমকি স্বরূপ!

ফিন চৌ-এর মেয়ে হুই সিয়েনকে আমি রানী হিসাবে গ্রহণ করতে চাচ্ছিলাম। আমার এই অভিপ্রায়ে সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন এই দুই মহিলা একত্রিত হয়ে! এঁদের কারণে এবারের বসন্ত কালের পুরো সময়টা আমাকে কাটাতে হয়েছে উদ্বিগ্নতা আর অশান্তির মধ্যে। আমি সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করেছি প্রমাণ করার জন্য যে ফিন চৌ-এর এই মেয়েটির প্রতি আমার হৃদয়ের স্নেহের সঞ্চালন পুরোপুরি ঈশ্বরের ইচ্ছায় ঘটেছে। এই প্রাসাদের মধ্যে সে হচ্ছে, আমি বাদে দ্বিতীয় ব্যাক্তি যার আছে পাখীদের প্রতি ভালোবাসা আর আসক্তি! মেয়েটি তো ছোট মানুষ, ওর নির্মল বিশুদ্ধ আত্মার সাথে আমার নিঃসঙ্গতা মিশে গিয়ে যেন তৈরী করেছে একটা ধ্বনি, ধ্বনির পর প্রতিধ্বনি! কিন্তু সংকীর্ণমনা বিরক্তিকর দুই মুরুব্বি মহিলা আমার হৃদয়ের ভিতর থেকে নিসৃত শব্দগুলোকে পরিণত করেছেন, অসংলগ্ন স্বপ্নের ঘোরে উচ্চারণ করা কথায়! তাঁরা কোন কারণ ছাড়াই সন্দেহ করছেন যে, আমি নাকি হুই সিয়েনের প্ররোচনায় প্রভাবিত হয়েছি। সে কারণে তাঁরা দু’জনই আরও বেশি পরিমাণে তাঁদের অন্তরে পুঞ্জীভূত ক্রোধের উদগীরণ ঘটাচ্ছেন হুই সিয়েনের উপর!

এর আগে হুই সিয়েনকে হুয়াং ফু ফুরেন গুলজার কক্ষ প্রাসাদে বদলি করেন কাজ করার জন্য। প্রথমেই তাকে মোকাবিলা করতে হয় একটা ক্লান্তিকর দীর্ঘ পরিহাসে ভরা প্রশ্নোত্তর পর্বের। হুয়াং ফু ফুরেন সরাসরি হুই সিয়েনকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, “এরপর থেকে সম্রাটের মন ভুলানোর জন্য সম্রাটের সাথে দেখা করতে যাওয়া চলবে না!”

এর কিছুক্ষণ পরই আমার মাতা মঙ ফুরেন, নিষ্প্রাণ হেরেম প্রাসাদে যাওয়ার হুকুম দিলেন হুই সিয়েনকে। তিনি ওকে নিজের চোখে দেখে আসতে বললেন ঐ সব প্রাসাদ দসী আর সম্রাটের উপপত্নীদের যারা নানা রকম দণ্ডের শাস্তি পেয়েছে, শাস্তির কারণে কেউ কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এরপর তিনি মুখে একটা ক্ষুদ্র হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে হুই সিয়েনকে প্রশ্ন করলেন, “তুমিও কি এদের পথেই হাঁটতে চাচ্ছো?” হুই সিয়েন ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। সে মাথা নেড়ে বললো, “না। এই দাসীর তো কোন অপরাধ নেই!” আমার মাতা মঙ ফুরেন খুব ঠাণ্ডা একটা হাসি হাসলেন। তিনি বললেন, “কোনটা যে আপরাধ কিংবা পাপ, আর কোনটা যে পাপ নয়; মানুষই তা নির্ধারণ করে! মানুষেই দণ্ড দেয় অপরাধের! আমি তোমাকে বলছি, সম্রাটের মন ভুলানো খুব সহজ ব্যাপার, ঠিক একই রকম সহজ ব্যাপার আরেকটা আছে! সেটা হচ্ছে নাসিকা কর্তন আর চক্ষু উত্পাটনের মতো শাস্তি নিয়ে হীম প্রাসাদে প্রবেশ!”

এ ব্যাপারগুলোর পুরোটাই আমি পরে শুনেছি আমার অনুগত-বিশ্বস্ত খোজা গোলাম ইয়েন লাঙের কাছ থেকে। হুই সিয়েনকে কিছু দিন গৃহবন্দী করা হলো পার্শ্ব প্রাসাদের কড়িকাঠ বিহীন কক্ষের ভিতরে।
আমি ছিলাম নিরুপায়, আমি চিঠি লিখতাম, কিছুই করার ছিলো না আমার, শুধুমাত্র আবেগ ভরা পত্র বিনিময় করা ছাড়া!
শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহ আর কড়ি কাঠ বিহীন কক্ষের মাঝে চিঠি আনা নেয়ার কাজটা করতো ইয়েন লাঙ!

ফিন চৌ এর এই মেয়েটিকে প্রতি নিয়ত স্মরণ করে আমার আকাঙ্খার ছবি ফুটিয়ে তুলে আমি রচনা করতাম কবিতা; গাঁথতাম ছন্দের মালা! ঐ দুর্বিষহ বসন্ত কালটাতে আমার রাজ দরবারে বসতে একে বারেই ইচ্ছা করতো না! প্রতিটা দিন আমার কাজ ছিলো, শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহে সোজা হয়ে বসে প্রাসাদের বিভিন্ন কাগজ আর দলিল পত্র দেখার ফাঁকে ফাঁকে হাতের কলম দিয়ে নিজের আবেগ ফুটিয়ে তোলা, আর অপেক্ষা করা নীরব গভীর রাতের জন্য! কখন যাবে ইয়েন লাঙ? আমার রচনা করা ছন্দের মালায় গাঁথা পদ্য নিয়ে; যাবে কড়ি কাঠবিহীন কক্ষে, পৌঁছে দেবে হুই সিয়েনের হাতে! আমি মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে এই কাজটা করি! আসলে এটা একটা মন্ত্র মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন দুঃখ ভরা খেলা! হৃদয়ের মধ্যে সঞ্চার হয় একটা জটিল অদ্ভুত আর বিচিত্র অনুভূতি! নীরব নিঃস্তব্ধ বসন্তের রাতে অশ্রæ ভেজা অবয়ব নিয়ে, আমি উজ্জ্বল চাঁদ আর চারি দিকে বিস্তৃত তারার আলোর দিকে চেয়ে আবৃত্তি করি সোং রাজত্ব কালের নারী কবি লি ছোং চাও এর কাব্য গ্রন্থ ‘ধীরে বয়ে যাওয়া ধ্বনি’ থেকে! এ সময় আমার মনে হতো আমি তো কোন মহামান্য সম্রাট নই, আমি যেন হয়ে গেছি রঙ্গিন প্রাসাধনী মাখা মুখের এক সুন্দরী নারীর স্মৃতি রোমন্থন কারী হতাশাগ্রস্ত একজন বিদগ্ধ পণ্ডিত! নিজের কল্পনায় নিজেরই এই পরিবর্তন, আমার নিজের মধ্যেই সৃষ্টি করতো এক নিরশ, হতাশ আর কিংকর্তব্য বিমূঢ় অনুভূতির!

আমার আহত মনের অনুভূতির প্রতিফলন ঘটা পদ্যগুলো পরবর্তীকালে সংকলিত হয়েছে, লোকে এর নাম দিয়েছে ‘শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহের সংকলন’! এক সময় খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলো আমার এই কাব্য সংকলন, ছড়িয়ে পরেছিলো, বনে লাগা দাবানলের মতো সিয়ে দেশ আর এর প্রতিবেশী দেশগুলোর শহরে আর গঞ্জে! আমি এবং ইয়েন লাঙ গভীর মনোযোগের সাথে শব্দ সাজিয়ে তৈরী করছিলাম রাজ প্রাসাদের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক কবিতা, যেমন : চন্দ্র মল্লিকার কাব্য, লাল শতদল ফুলের কাব্য, স্বর্ণ সিঁচন কাব্য, পাঁচ রঙের চূর্ণ কাব্য ইত্যাদি। পরে অনেক সম্পদশালী আর ক্ষমতাবান মানুষ এ বইগুলোকে নকল করেছেন। যা হোক, এ সবই হচ্ছে পরবর্তীকালে ঘটা ঘটনা, এখন না হয় উত্থাপন না-ই করলাম!

কোন এক রাতে হালকা এক পশলা বৃষ্টি হয়েছিলো, বইছিলো মৃদু মন্দ আরাম দয়ক বাতাস। কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই ইয়েন লাঙ-কে সাথে নিয়ে আমি রওয়ানা দিলাম কড়ি কাঠবিহীন কক্ষের দিকে। নিঃশব্দে উপস্থিত হলাম গোপন দরজায়, যার অবস্থান একটা ঘন দাগকাটা বাঁশ বাগানের পিছনে। বিশাল এই কড়ি কাঠবিহীন ঘরটা বিগত প্রজন্মের কারিগরদের দক্ষতার এক অনাবদ্য কৃর্তী! বিরাট বড় ছাদ, ছাদে কোন কড়ি কাঠ চোখে পড়ছে না! গোটা কক্ষে দেখা যাচ্ছে না কোন জানালাও! এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় অর্ঘ মঠ, যেখানে মূলত শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করা হয় সিয়ে দেশের প্রতিষ্ঠাতা পূর্ব পুরুষ আর বীরদের আত্মার উদ্দেশ্যে। আমি জানি না হুয়াং ফু ফুরেন আর মঙ ফুরেন কি নিয়ত করে হুই সিয়েনকে এ জায়গায় গৃহবন্দী করেছেন! এমন কি হতে পারে, কড়ি কাঠবিহীন কক্ষটা তো একটা আড়াবিহীন ঘর। সাধারণত দুঃখী মেয়েরা যা করে, ঘরের আড়ার সাথে কাপড় ঝুলিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে! আড়াবিহীন এই ঘরে হুই সিয়েন তো সেই কাজটা করতে পারবে না, এমনটাই কি তাঁরা দু’জন ভেবেছেন? আর এ জন্যই কি তাঁদের পছন্দ হয়েছে এই ঘরটা! আবার এমনও হতে পারে, তাঁরা ভেবে রেখেছেন, ভবিষ্যতে হুই সিয়েনকে নির্বাসন দিবেন ভয়ঙ্কর অন্ধকার সেই কুখ্যাত ভাগাড় দলানে! অত্যন্ত সূক্ষ্ণ বুদ্ধি আর ধৈর্যশীল এই দুই মহিলা বিশেষ কায়দা ব্যবহার করে হুই সিয়েনকে কি, ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে নিয়ে তিলে তিলে একে বারে মেরে ফেলতে চাচ্ছেন? এটা কি কারো মনোযোগ আকর্ষণ না করেই কাউকে চরম শাস্তি দেয়ার অভিনবত্বে ভরা একটা পদ্ধতি নয়? আমি এমনটাই ভাবছিলাম। মনটা খুবই খারাপ, মন যেন লোহার মতো ভারী হয়ে আছে! আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করলাম দেয়ালে। স্যাঁতসেঁতে দেয়ালের গায়ে জমেছে শেওলা। পিচ্ছিল বরফ শীতল একটা অনুভূতি নাড়া দিচ্ছে আমার দেহকে। আমার মনে হচ্ছে আমি যেন হাত রেখেছি একটা মৃত্যু পুরীর দরজায়!

সুবিশাল কক্ষে মিট মিট করে জ্বলছে একটা মোমবাতি। মোমবাতির আলোয় দেখা যাচ্ছে হাড়জিরজিরে কঙ্কালসার এক নারীর অবয়ব। ওর সামনে রাখা আছে বেশ ক’টি কাগজে লেখা চিঠি। সে বসে আছে একটা দুঃখ ভরা মুখ নিয়ে। আমি দেখতে পাচ্ছি মোট আঠারোটা পাখীর খাঁচা জড়ো করে রাখা আছে ঠিক ওর পাশেই। প্রত্যেকটা খাঁচাই ফাঁকা! গত আঠারো দিন যাবত আমি ইয়েন লাঙ-কে দিয়ে কড়ি কাঠবিহীন কক্ষে বেশ কয়েক জাতের চড়ুই পাখী এক একদিন একেকটা করে পাঠিয়েছি, এই কঠিন দিনগুলোতে হুই সিয়েনের নিঃসঙ্গতায় খানিকটা সঙ্গ দেয়ার জন্য। কে ভেবেছে, ঐ আঠারোটা আঠারো জাতের চড়ুই পাখির প্রতিটাকেই সে খাঁচা থেকে মুক্ত করে উড়িয়ে দিবে! আমার হৃদয়টা ঐ শূন্য খাঁচার মতোই শূন্যতায় ভরে গেলো। আমি হয়ে গেছি নিঃশ্চুপ, আমার মুখ দিয়ে কোন কথা আসছে না। আমি ওর সাথে কোন কথা বলতে পারছি না! হঠাত করেই হুই সিয়েন আমাকে টান দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে এলো ঘোর থেকে বাস্তব জাগতে!

“জাঁহাপনা, ক্ষমা করবেন। এই দাসী পাখিগুলো ছেড়ে দিয়েছে! দাসী ইচ্ছা করে করেনি!”
“তা’হলে কেনো? তুমি না বলেছিলে, তুমি পাখি পুষতে ভালোবাসো?”
“দাসী নির্দোষ, আর পাখিগুলোরও কোন অপরাধ নেই! শুধু মাত্র আমার বিনোদনের জন্য পাখিগুলো কষ্ট পাক সেটা আমি সহ্য করতে পারছিলাম না।”

হুই সিয়েন আমার হাঁটু দু’টো জড়িয়ে ধরে মাথা নীচু করে কাঁদতে লাগলো। ওকে অনেক দিন দেখি নাই। আগে এলাচি মতো ছোট একটা মেয়ের রিন রিনে কন্ঠস্বর ছিলো ওর, এখন তা পূর্ণতা পেয়ে পরিণত হয়েছে পূর্ণ বয়স্ক নারীর শ্রদ্ধা ভাজন ভরাট স্বরে! সে বললো, “জাঁহাপনা, কখনোই মনে করবেন না যে আমি আমার প্রতি আপনার অনুগ্রহকে প্রত্যাখান করেছি। এই দাসীর চেহারার উজ্জ্বলতা মুছে গেছে, দাসীর বয়স বেড়েছে, নেই সেই তারুণ্যের সৌন্দর্য, হৃদয়টাও যেন এরই মধ্যে মরে গেছে, দাগহীন দেহের হাঁড়গুলো বেঁচে আছে শুধু মাত্র জাঁহাপনার জন্য। দাসীর একটুখানি সত্যিকারের ভালোবাসা পাখির ডানায় জুড়ে দিয়ে ওগুলোকে ছেড়ে দিয়েছি, যদি ওরা আমার ভালোবাসাকে পৌঁছে দিতে পারে জাঁহাপনার কাছে! অন্যথায় এই দাসী মারা গেলেও ওর চোখ দু’টো বুঁজবে না, ঐ চোখ জোড়া চেয়ে থাকবে আশা নিয়ে, কখন পৌঁছাবে হৃদয়ের ভালোবাসার সংবাদ জাঁহাপনার কাছে! তৃপ্ত হতে পারবে দাসীর হৃদয়!”

“আমি তোমাকে দায়ী করছি না। আমি জানি না, আমি দায়ী করবো কাকে? গায়ে দাগ কাটা একটা দোয়েলের মতো চড়ুই পাখি, যেটার জন্মই হয়েছে আবদ্ধ পরিবেশে খাঁচার মধ্যে। তুমি সেটাকেও তো ছেড়ে দিয়েছো, সেটা তো বেশি দূর উড়তে পারে না!
ওটা তো আধা পথ উড়তে গিয়েই মারা পরবে। ঐ দাগ কাটা দোয়েলের মতো পাখিটাকে তোমার ছেড়ে দেয়া ঠিক হয়নি!

“গায়ে দাগ কাটা দোয়েলের মতো চড়ুই পাখিটা অনেক দিন হলো মারা গেছে। দাসীর কোন উপায় ছিলো না ওটাকে মাটি দেয়ার, কাপড় পেচিয়ে ওকে একটা বাক্সের মধ্যে রেখেছি, ঐ বাক্সটাই হচ্ছে ওর শবাধার।”, হুই সিয়েন খুব তাজিমের সাথে পুজার বেদীর পিছন থেকে দুই হাতে ধরে একটা বেগুনি রঙের চন্দন কাঠের প্রসাধনীর বাক্স বের করে আনলো, আর ওটার ডাকনা খুলে আমাকে দেখাতে চাইলো! (চলবে)