অনলাইন ডেস্ক : এ বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন সুইডিশ বিজ্ঞানী সাভান্তে পাবো। কিছুক্ষণ আগে নোবেল কমিটি এ ঘোষণা দিয়েছে। তারা জানিয়েছে বিলুপ্ত মানব প্রজাতি ও বর্তমান মানব বিবর্তনের মধ্যে জিনোম সম্পর্কে তার গবেষণা ও আবিষ্কারের জন্য নোবেল কমিটি ২০২২ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাকে পুরস্কার দিচ্ছে। সহজ করে বললে, মানব বিবর্তন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য তাকে এই অভিজাত পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। সুইডেনের ক্যারোলাইনস্কা ইনস্টিটিউটে নোবেল অ্যাসেম্বলি তাকে এই পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা সারাবিশে^র সবচেয়ে অভিজাত পুরস্কারের অন্যতম। পুরস্কারের আর্থিক মূল্য এক কোটি সুইডিশ ক্রোনা বা ৯ কোটি ৩৫৭ ডলার। এ বছর নোবেল পুরস্কারের এটাই প্রথম ঘোষণা। ডিনামাইট আবিষ্কারক ও সুইডেনের সম্পদশালী ব্যবসায়ী আলফ্রেড নোবেলের স্মরণে ১৯০১ সাল থেকে প্রতি বছর চিকিৎসা, সাহিত্যে এই পুরস্কার দিয়ে যাচ্ছে কমিটি।

পরে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে অর্থনীতি। ১৯০১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ১১৩ বার চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে। সেই পুরস্কার পেয়েছেন ২২৫ জন বিজ্ঞানী।
সাভান্তে পাবো সম্পর্কে নোবেল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৯৫৫ সালে সুইডেনের স্কটহোমে তার জন্ম। ১৯৮৬ সালে তিনি আপসালা ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি থিসিস সম্পর্ক করেন। এ ছাড়া সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব জুরিখের একজন পোস্টডক্টরাল ফেলো ছিলেন। পরে একই পদ ধারণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলিতে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায়। ১৯৯০ সালে জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখের একজন প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন। জার্মানির লিপজিগে অবস্থিত ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইভ্যালুয়েশনারি অ্যানথ্রোপোলজি প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৯৯ সালে। এখনও সেখানে তিনি সক্রিয়। এ ছাড়া জাপানের ওকিনাওয়া ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স টেকনোলজিতে তিনি একজন সহযোগী প্রফেসরের পদে আসীন আছেন।

নোবেল কমিটি বলেছে, মানুষ সব সময়ই তার উৎস সম্পর্কে কৌতুহলী। তারা ভাবে, আমরা কোথা থেকে এলাম? আমাদের আগে যারা এসেছিলেন তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেমন? কিভাবে আমরা ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’ হয়ে উঠলাম? অন্য মানবপ্রজাতির সঙ্গে আমাদের পার্থক্য কি? এসব প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন সাভান্তে পাবো। এক্ষেত্রে যুগান্তকারী গবেষণার মাধ্যমে এমন কিছু তিনি আবিষ্কার করেছেন, যা মনে হতে পারে অসম্ভব। তিনি নেন্দারথালের জিনোমের সিকুয়েন্স করেছেন। নেন্দারথাল হলো বর্তমান সময়ের মানবজাতির বিলুপ্ত এক গোষ্ঠী। তিনি এর আগে অজ্ঞান হোমিনিন (মানবপ্রজাতি) ডেনিসোভা সম্পর্কে স্পর্শকাতর এক আবিষ্কার সামনে এনেছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সাভান্তে পাবো আবিষ্কার করেছেন যে, প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে যখন আফ্রিকা থেকে মানবজাতি অভিবাসী হয় বা অন্য দেশে দেশান্তরী হয় তখন বর্তমানে বিলুপ্ত হোমিনদের থেকে জিন স্থানান্তর হয়েছে হোমো স্যাপিয়েন্স বা বর্তমানের মানবজাতিতে। মানুষের দেহ থেকে জিনের এই যে প্রবাহ তার সঙ্গে বর্তমান সময়ের মানুষের শারীরবৃত্তের প্রাসঙ্গিকতা আছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এটা বলে দেয় সংক্রমণের বিরুদ্ধে কিভাবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ সিস্টেম কাজ করে।
সাভান্তে পাবো’র এই গবেষণা পুরো বিজ্ঞানে এক নতুন শাখার উদ্ভব ঘটিয়েছে। তা হলো পালিওজিনোমিক্স। জিনের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণের মাধ্যমে তার গবেষণা আমাদের সামনে এই তথ্য হাজির করে যে, কি আমাদেরকে অনন্য এক মানবজাতি হিসেবে তৈরি করেছে। এই জিন জীবিত সব মানুষ থেকে বিপুলপ্ত হোমিনদের আলাদা করে।