মোস্তফা কামাল হিমু : অনেক পুরোনো দিনে ঢাকার বনভোজন হতো সদরঘাট থেকে লঞ্চে বা নৌকায় রওয়ানা দিয়ে, মিরপুরের দরগাহ হয়ে, বেগুনবাড়ি গিয়ে বনভোজন সারাদিন। রান্না হত স্পটেই। পিকনিক স্পটে লাইভ রান্না ও গরমাগরম খাবারের মজাই ছিল আলাদা।
আমাদের ছোটবেলায় নুরু-পুষি ও আয়শা-শফীদের মতো চড়ুইভাতি হতো। সব বাচ্চারা চড়ুইভাতিতে পাঁচ বাড়ির ডাল চাল ও বাসনকোসন নিয়ে, কাঁচা হাতের রান্না হত। তাতে তেমন স্বাদ হতো না, কিন্তু রান্নার এবং ‘বড়’ হওয়ার আনন্দ খাবারের স্বাদকে ছাপিয়ে যেত। সাধারণ, স্বাদবিহীন সাদামাঠা খাবারও জিবে অসাধারণ হয়ে উঠতো।

পিকনিকের কোন একক উদ্দেশ্য থাকে না। নিখাদ আনন্দ এবং আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকল মানুষ নির্বিশেষে মিলনের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে পিকনিকের প্রকৃত সার্থকতা।

পিকনিক শব্দটিকে বাংলায় বনভোজন, চড়িভাতি, চড়ুইভাতি, পৌষালি ইত্যাদি নানা নামে ডাকা হয়। কিন্তু বনভোজন কেন? এটা হলো বাড়ির বাইরে গিয়ে খাওয়াদাওয়া, তবে তা রেস্তোরাঁয় হওয়া চলবে না। ‘বনে (‘বন’ এখানে বাহির) গিয়ে বন্ধুদের সাথে আনন্দ-ফুর্তি করে ভোজন করাই হলো বনভোজন।’ প্রাচীনকালেও হিন্দু সমাজে সকলের পাপমুক্তির জন্য বনভোজনের আয়োজন হতো,প্রার্থনা করে সমস্ত কর্মফল শ্রীকৃষ্ণে অর্পণ করা হতো। বিশ্বাস ছিল বনভোজন করলেই সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল এবং শত রাজসূয় যজ্ঞের ফল লাভ করা যায়। একঘেয়ে জীবন ও পাপ মুক্তির জন্য মানুষ তাই পিকনিকের আয়োজন করতো।
বিজ্ঞানও বলে “একসঙ্গে একজায়গায় আনন্দ উদ্দেশ্যে সমেবত হলে, মানুষের দেহ ও মনের অনেক অসুখ সেরে যায়” ও তেমনই একটি অসুখ সারানিয়া অনুষ্ঠান হয়ে গেলো আজ ২৮শে অগাস্ট, ২০২২। এটি ছিল Greater Dhaka Association (Canada) Inc. এর আনন্দঘন পিকনিক অনুষ্ঠান।

এই পিকনিকে, E.T. Seton Park এ কেটেছে সারাটাদিন। E.T. Seton Park (Ernest Thompson Seton) একটি বিশাল পার্ক। বিভিন্ন ট্রেইল ধরে সারাদিন ঘুরলেও পুরো এলাকাটা ঘোরা হয় না। পার্কটাকে এক পাহাড়ী জঙ্গলই বলা যায়। আজকের পিকনিকে খাবার ও আদর-আপ্যায়নে ঢাকাইয়া আতিথেয়তা ছিল বিরাজমান। সকালে নানা রকম খাবারের প্রাতঃরাশ, চা। দুপুরে কাচ্চি বিরিয়ানী, বোরহানী, মুরগি , মাছ, ডাল ভর্তা আরও কত কি! বিকালে মিষ্টি, তরমুজ, মুড়ি মাখানো, আবার চা ইত্যাদি মিলিয়ে যে ভুরিভোজ হলো, তা মনে থাকবে অনেকদিন। এই বিদেশ বিভুঁইয়ে ভালোবাসা ও আন্তরিকতার (যা আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি) ছোঁয়া পেলে মন যেন কেমন করে ওঠে।

কানাডাতে গ্রীষ্ম আসে অল্প সময়ের জন্য। এখানে পিকনিক করার সময়টা যেন ‘হিল্লোল তুলে কল্লোলে চলিয়া যায়’ ও তারপরেও এই স্বল্প সময়েই, অভিবাসী বাংলাদেশিরা এমন মিলন মেলার আরও বেশি বেশি আয়োজন করে, নতুন পরিচিতির সুগন্ধ, পারস্পরিক বন্ধন, বন্ধুত্বের ঠিকানা, হৃদ্যতার আলিঙ্গন মেখে, বাকি জীবনটা কি কাটিয়ে দিতে পারলে মন্দ হয়না? যেখানে আমাদের প্রবাসী জীবনের ক্লান্তি ভরা সময়ের ফাঁকে, আমাদের নতুন করে বাঁচতে শেখাবে। সব খারাপের পরেও ভালোর আশ্রয়ে প্রতিমুহূর্তে মানুষের মধ্যে মনুষত্বের চর্চা হবে!

ধন্যবাদ আয়োজক এবং পিকনিক তদারককারীদের এমন সুন্দর মনকাড়া আনন্দঘন একটি দিন উপহার দেবার জন্য। ভালো থাকুন সব্বাই।