অনলাইন ডেস্ক : দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর মূল টার্গেট গাজার হাস্পাতালগুলো।যুদ্ধ শুরু হওয়া থেকেই অবরুদ্ধ গাজার ছোট বড় বহু হাস্পাতাল-ক্লিনিকে তান্ডব চালায় ইসরাইলি সেনারা।

সোমবার ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলা এবং গাজার একটি হাসপাতালের চত্বরে আগুন লাগার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসির সাথে তাদের শোক ও দুঃখের কথা বলেছেন।তারা অনেক মানুষকে আহত ও আগুনে পুড়ে মারা যেতে দেখেছেন বলে বর্ণনা করেছেন। একজন নারী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বললেন এটি ছিল “আমাদের দেখা সবচেয়ে খারাপ দৃশ্যগুলির একটি,” এবং আহত একটি মেয়ে জানিয়েছে যে মানুষের চিৎকার করছে এবং তাঁবু ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে।প্রতক্ষ্যদর্শী একজন পুরুষ বলেছেন তিনি নিজেকে এতটাই অসহায় মনে করেছেন যে তিনি অন্যদের আগুনে পুড়ে যেতে দেখে কিছুই করতে পারেননি।

ইসরাইলি বাহিনী করা এই হামলা সোমবার ভোরে গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহর আল-আকসা হাসপাতাল চত্বরে আঘাত করে এবং আগুন ছড়িয়ে পড়ে।সেখানে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিল।

হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই হামলায় কমপক্ষে চারজন নিহত এবং অনেক লোক, বিশেষত নারী ও শিশু আহত হয়েছেন।

বিবিসি একটি ভিডিওতে একজন মানুষকে আগুনে পুড়ে যেতে দেখা যায।শিবিরে অবস্থানরত মানুষেরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে এবং বিস্ফোরণের ফলে আকাশে আগুনের বিশাল গোলা দেখা যাচ্ছিল।

এদিকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে যে তারা হাসপাতালের পার্কিং এলাকায় থাকা হামাস যোদ্ধাদের একটি কমান্ড সেন্টারকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল। তারা আরও জানিয়েছে যে এই হামলার পর আগুনের সূত্রপাত ও বিস্ফোরণের কারণ পর্যালোচনা করছে।

শরনার্থীদের সাহায্যকারী সংস্থা ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস’ (এমএসএফ), যাদের কর্মীরা আল-আকসা হাসপাতালে কাজ করছে, বিবিসিকে জানিয়েছে যে তারা হামাস এর সাথে হাস্পাতালে অবস্থানের কোনো নেই “হাসপাতালটি শুধুমাত্র মানুষের সেবায় কাজ করে।”

জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে “মানুষ আগুনে পুড়ে মারা গেছে” এবং এই ধরনের নির্মমতা বন্ধ করতে হবে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র এই ভিডিওগুলোকে “ভয়ংকর” বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন “ ছবি এবং ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে ইসরাইলি বিমান হামলার পর বাস্তুচ্যুত সাধারণ ফিলিস্তিনিরা আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে, তা গভীরভাবে বিক্ষুব্ধকারী। আমরা আমাদের উদ্বেগ ইসরাইলি সরকারকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছি,”তিনি আরো বলেন “ইসরাইলকে অবশ্যই বেসামরিক লোকদের ক্ষতি এড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে—এটি খুবই ভয়াবহ, যদি হামাস হাসপাতালের কাছেও কাজ করে এবং বেসামরিক লোকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।”

এই হামলাটি স্থানীয় সময় সোমবার(১৪অক্টোবর) মধ্যরাতে ঘটেছে।

এমএসএফের(MSF) জরুরি সমন্বয়ক আনা হ্যালফোর্ড জানান হামলার সময় যদিও তিনি হাস্পাতালে ছিলেন না।তিনি আরও জানান হামলার স্থানে সাধারণ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছিলেন।

বিবিসির এক সাংবাদিককে হিবা রাদি নামে এক নারী জানান তিনি হাসপাতালের পিছনে একটি তাঁবুতে থাকতেন এবং হামলার পর তিনি চারপাশের তাঁবুগুলোতে আগুন ও শব্দ শুনে জেগে ওঠেন।তিনি আরও বলেন প্রতিদিন আমরা বিস্ফোরণ ও হামলার শিকার হচ্ছি কিন্ত সোমবারে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি সবচাইতে ভয়াবহ ছিল এবং এর আগে কখনো এমন ধ্বংসযজ্ঞ দেখিনি।

আতিয়া দরবিশ নামে একজন ফটোগ্রাফার যিনি কিছু ভিডিও রেকর্ড করেছিলেন তিনি বিবিসিকে বলেন “একটি বড় ধাক্কা ছিল” এবং তিনি কিছু করতে পারেননি যখন সাধারণ ফিলিস্তিনিরা আগুনে পুড়ছিল এবং তাদের জন্য কিছুই করতে পারছিলাম না।

উম ইয়াসের আবদেল হামিদ দাহের নামে এক ব্যক্তি বিবিসিকে বলেন, “আমরা এত লোককে আগুনে পুড়তে দেখেছি যে মনে হচ্ছিল আমরা নিজেরাও আগুনে পুড়ে যাব।”

আহতদের মধ্যে তার ছেলে, তার স্ত্রী এবং তাদের সন্তানরা ছিল। তার ১১ বছরের নাতনি লিনা,।

তিনি আরো বলেন তাদের প্রতিবেশীর একটি মেয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছিল এবং তার বাবা মারা সহ অন্য প্রতিবেশীরাও মারা গিয়েছে।প্রতিবেশী লোকেরা তাদের বের করার জন্য তাঁবুটি ছিঁড়ে ফেলেছিল’ তারা তাদের সবকিছু হারয়েছে।

সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ওই হামলায় ৪০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে এবং চারজন মারা গেছে। এমএসএফ(MSF) মঙ্গলবার আরও জানিয়েছে যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের দেহগুলো পুড়ে যাওয়ার পর উদ্ধার করা হয়েছে, এবং ৬৫ জন আহত হয়েছে।আহতদের মধ্যে ২২ পুরুষ,৮ নারী এবং ১০ শিশু রয়েছে বলে আল-আকসা হাসপাতালে জানিয়েছে।বাকিদের অন্যান্য হাস্পাতালে পাঠানো হয়েছে।

হ্যালফোর্ড বলেন তিনি ও তার সহকর্মীরা এমন ভয়াবহ পোড়া রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছেন কিন্ত তাদের বেঁচে থাকার নিশ্চিয়তা নেই।তিনি বলেন।সোমবারের এই হামলাটি মার্চ থেকে শুরু হওয়া হামলার মধ্যে সপ্তম হামলা এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয় হামলা ছিল হাস্পাতালে।

জাতিসংঘের (UN’s)অফিস ফর কোঅর্ডিনেশন অফ হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্সের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বলেছেন যে এই হামলাটি এমন এলাকায় ঘটেছে যেখানে উত্তর গাজার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য যেতে বলা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন “গাজায় সাধারণ মানুষের যাওয়ার জন্য সত্যিই অবশিষ্ট নিরাপদ আর কোনো জায়গা নেই,”।

সূত্র : বিবিসি।