আহমেদ হোসেন : পোস্টটা দশ মিনিট আগে করলেও ইতিমধ্যে ২০ বার ফিরে ফিরে দেখলো কতজন লাইক দিলো, কে মন্তব্য করলো। ক’জন বললো মৃম্ময়ী তোর আর বালাম এর এত সুন্দর ছবি দেখে হিংসে হয়। ক’জন বললো সুখী যুগল। কারা কারা মুখস্থ কথা লিখলো শুভ কামনা কিংবা অভিনন্দন।
বছর খানেক আগে বালাম বাংলাদেশ গিয়ে বিয়ে করেছে মৃম্ময়ীকে। প্রথমে বিয়েতে রাজি ছিল না সে সংগতকারণে। কারণটা আর কিছু নয় প্রেম। ভালবাসার শেষ টানতে অপ্রস্তুত বেকার প্রেমিক বিপ্লব এর প্রতি আস্থার নিক্তির কাটা ছিল অসম। বছর কয়েকের মধ্যে সমান হবার সম্ভাবনা নাই সেটা ছেলের চলনে বলনে বুঝে নিয়েছে মৃম্ময়ীর মন।জেনে গেছে মনের ভেতরের আগামীর হিসেবনিকেশ। তাই বালাম এর বিয়ের প্রস্তাব ফেলে দেয়ার মতো ছিল না। পাত্র বিদেশ থাকে, দেখতে মন্দ নয়। অর্থবিত্ত নিশ্চয় আছে। বিদেশে থাকে বলে কথা। দুই একজন আরোও খোঁজ নিতে বললেও বিপ্লব এর সাথে গভীর প্রেমের সম্পর্ক আছে জেনে বাবা মা দ্রæত ছোটখাটো অনুষ্ঠান করেই বিয়ে দিয়ে দেয় মৃম্ময়ীর।
বিয়ের রাতে বেশ কয়েকবার ফোন আসে বিপ্লবের। ইনবক্সে কই কই করে সাড়া। মৃম্ময়ী একবার ভেবেছে বøক করে দিবে। থাক বলে রেখে দেয়। নিজেকেই ডিএকটিভেট করে দেয় সব যোগাযোগ মাধ্যম থেকে। এমনকি ফোন কম ব্যবহার করে বিয়ে পর।
মাস খানেক হেসে খেলে থেকে মৃম্ময়ীকে আশা ভরসা দিয়ে বালাম চলে এলো টরন্টোতে। এখানে তার সদ্য আলাদা হওয়া স্ত্রী আছে। দশ বছরের কন্যা আছে। সব তথ্য গোপন করেছে মৃম্ময়ীর কাছে। বালামের যুক্তি কেউ জানতে চায় নাই তাই বলা হয় নাই। বলার কীবা আছে। সংগতকারণেই তাদের পৃথক হওয়া। আগে বিয়ে করে থাকলে আবার বিয়ে করতে পারবে না এমন তো না।
বালাম দেশ ছাড়ার রাতেই সব জেনে যায় মৃম্ময়ী একটি উড়ো ফোনে। গত পনের দিন এই নম্বর থেকে অনেকবার ফোন এসেছিল। অপরিচিত ফোন পাছে বিপ্লব এর ফোন ভেবে ফোন ধরা হয় নাই মৃম্ময়ীর। সপ্তাহখানেক মন খারাপ ছিল।কী করবে, কী করা উচিৎ ভেবে ভেবে বধির হয়ে গিয়েছিল সে। আত্মীয়স্বজন ভেবে নিয়েছে বর বিদেশে থাকলে এমনটা হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। আরও স্বাভাবিক দেখানোর জন্যে মৃম্ময়ী বালাম এর সাথে বিয়ের ছবি দিয়ে ফেইসবুক আবার চালু করে। বিবাহিত বলে প্রোফাইল আপডেট করে দেয়।
বিপ্লব ইনবক্সে অভিনন্দন জানায়। মৃম্ময়ী কথা বাড়ায় না। প্রায় প্রতিদিন একটা দুইটা ছবি পোস্ট করতে থাকে। লাইক আর কমেন্ট দেখে দেখে সময় কেটে যায়। মধ্য দুপুরে হঠাৎ হঠাৎ ফোন আসে বালাম এর। বেশি কথা বাড়ায় না সে, বলে ব্যস্ত জীবন।
আজ একমাস হলো সে টরন্টোতে এসেছে।সৌভাগ্যক্রমে একবছরে মধ্যেই তার ভিসা হয়েছে। চলে এসেছে টরন্টোতে। একরুমের বেশ পরিপাটি বাসা হলেও বালামের কাপড়ে মধ্যে উৎকট দুর্গন্ধ। বালাম দুটি কাজ করে। দুটোই রেস্টুরেন্টে। গন্ধগুলো খাদ্যের শুধু নয়। দীর্ঘদিন না ধোয়ার কারণে পুঞ্জীভ‚ত। প্রথম দিন থেকেই মান অভিমান শুরু হয়েছে। বালাম কিছুটা ভিত, কিছুটা সাহসী। কীভাবে বলবে তার আগের বিয়ের কথা। সন্তানের কথা। বালাম কেন মিথ্যে বলে বিয়ে করেছে এই নিয়ে কয়েক দফা ঝগড়া বিবাদ হয়েছে। কিল ঘুষি চড় চাপ্পর হয়েছে পরস্পরের। বালাম মৃম্ময়ীর গলা টিপে ধরেছিল বার কয়েক। কিন্তু কি করে পুলিশেকে খবর দিতে হয় সেটা বুঝে উঠতে পারি নাই। তাছাড়া মৃম্ময়ীর ইচ্ছে নাই টরন্টো থাকবার। একটি মিশন নিয়ে এসেছে সে।
দেশ থেকে আনা অনেক চিন্তার আশিটি ট্যাবলেট গুড়ো করে চার ভাগ করে সে। একভাগ মেশায় ভাতের সাথে। একভাগ তরকারিতে। একভাগ পানির সাথে আরেকভাগ বালামের আধ খাওয়া ভদকার বোতলের ভেতর।
মেঘ না চাইতে জল আজ বালামের ছুটি। গভীর রাতে এসে লিভিং রুমে অঘোরে ঘুমাচ্ছে। দুপুরে মৃম্ময়ী বালামকে ডেকে আদরে আদরে তরকারি ভাত দেয়। পানি খেতে দেয়। এমনকি নিজ থেকে বলেই বাকি ভদকা খাইয়ে দেয়। বলে তোমার তো আজ ছুটি। না হয় খেলেই দুই পেগ।
আজ একদিন পার হয়ে গেছে বালাম এর ঘুম ভাঙ্গছে না। মৃম্ময়ী ছবিটা পোস্ট করেই মিনিট পনের পর পাশের বাসায় গিয়ে বালাম একদিন ধরে টানা ঘুমাচ্ছে জানালে তারা এসে দ্রুত ৯১১ কল করে।
পুনশ্চঃ গল্প লেখার চেষ্টা করছি। মিথুন রাশির জাতক তো সব ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখবার অদম্য আগ্রহ, উচ্ছ্বাস।
আহমেদ হোসেন : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, টরন্টো