অনলাইন ডেস্ক : গোষ্ঠীহিংসার জেরে ফের উত্তপ্ত ভারতের মণিপুর। রবিবারও (১৭ নভেম্বর) সে রাজ্যের জিরিবাম জেলার জিরি নদী থেকে দু’টি দেহ উদ্ধারের খবর মিলেছে। মণিপুর পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ষাটোর্ধ্ব এক বয়স্কা এবং বছর দুয়েকের এক শিশুর মাথাবিহীন দেহ নদীতে ভেসে আসে। রবিবার পর্যন্ত জিরিবাম জেলায় মোট ৬টি দেহ উদ্ধার করা হল। ধারণা করা হচ্ছে, ওই লাশগুলো জিরিবাম থেকে অপহৃত ৩ মহিলা এবং ৩ শিশুর। সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকালে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার জিরিবামে অসম সীমানা লাগোয়া অঞ্চল থেকে অপহরণ করা হয়েছিল ওই ৬ জনকে। এ ক্ষেত্রে অভিযোগের আঙুল ওঠে কুকি জঙ্গিগোষ্ঠীর দিকে। নদীতে দেহ উদ্ধারের পরেই মণিপুরের ইম্ফল সংলগ্ন এলাকায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন মেইতেই জনগোষ্ঠীর সদস্যেরা।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, শনিবার মনিপুর রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী গোবিন্দদাস কন্ঠৌজাম, বিজেপি বিধায়ক ওয়াই রাধেশ্যাম, বিজেপি বিধায়ক পাওনাম ব্রজেন, কংগ্রেস বিধায়ক টিএইচ লোকশ্বরের বাড়িতে আগুন ধরানো হয়। সে সময় মন্ত্রী, বিধায়ক এবং তাদের পরিবারেরা কেউ বাড়িতে ছিলেন না। ফাঁকা বাড়িতে ঢুকে বিক্ষোভকারীরা প্রথমে জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন। বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। ইম্ফল পূর্ব জেলার লুয়াংশাংবামে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের পৈতৃক বাড়িতেও হামলার অভিযোগ ওঠে।
এছাড়াও, হামলা হয় মণিপুরের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সাপম রঞ্জন, বিজেপি বিধায়ক তথা মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের জামাতা আরকে ইমোর বাড়িতেও। হামলাকারীদের দাবি, জিরিবাম জেলায় ছ’জনকে খুন করায় অভিযুক্ত যারা, তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ইম্ফলে কারফিউ জারি করা হয়।
অন্যদিকে ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব, বিষ্ণুপুর, চূড়াচাঁদপুর-সহ মোট সাত জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিরাপত্তাজনিত একাধিক বিধিনিষেধও জারি করা হয়। সেনাবাহিনী এবং অসম রাইফেল্সের জওয়ানদের এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভ দমন করতে রবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ এবং নিরাপত্তাবাহিনী। তবে তার পরেও উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি।
উল্লেখ্য যে, মণিপুরের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রে ভোটপ্রচারের কর্মসূচি বাতিল করে রবিবার দিল্লি ফিরে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দিল্লি ফিরেই মণিপুর-পরিস্থিতি নিয়ে শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ওই বৈঠকে মণিপুরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গিয়েছে। সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ পদাধিকারীদের নিয়ে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে অমিত শাহ’র।