অনলাইন ডেস্ক : সদস্যগণের ভোটে বোর্ড অব ট্রাস্টি নির্বাচন, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, আজীবন সদস্য, টানা তিন বছরের স্থলে এক বছর চাঁদা পরিশোধকারিকেই ‘গুড স্ট্যান্ডিং মেম্বার’ হিসেবে ভোটাধিকার প্রদান, সহকারি কোষাধ্যক্ষ পদ সৃষ্টির অনুরোধ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে কানেকটিকাট স্টেটের ম্যানচেস্টার সিটির বায়তুল মামুর মসজিদে।

গত শুক্রবার ২৬ জুন বাদ আসর তিন বছর মেয়াদি নতুন কমিটি গঠনের সাধারণ সভায় লংকাকাণ্ড ঘটেছে। ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক অনিয়মের অভিযোগের পর এক কর্মকর্তা কর্তৃক মুসল্লিগণকে ‘শয়তান’ হিসেবে গালি দিলে মুহূর্তেই হট্টগোল ও অপ্রীতিকর ঘটনার অবতারণা হয়। এরপর এশার নামাজের আগে সভা সমাপ্ত করতেই হবে ঘোষণা দিয়ে টানা তিন বছরের চাঁদা পরিশোধকারি ছাড়া অন্য সকল মুসল্লিকে মসজিদ ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। এভাবেই পুরনো কমিটির সভাপতি, সহ-সভাপতি, সেক্রেটারি আর কোষাধ্যক্ষ রেখে নতুন দু’জন সদস্য নিয়ে নয়া কমিটি গঠনের কার্যক্রম শেষ করা হয়।

এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে মুসল্লিগণের মধ্যে। ক্ষমতাসীনদের হামলার আশংকায় একদল মুসল্লি কর্তৃক নিকটস্থ পুলিশ প্রেসিঙ্কটে আবেদন করা হয়েছে নিরাপত্তা দাবিতে।
উল্লেখ্য, এর আগেও এই মসজিদে এক কর্মকর্তা কর্তৃক ইমাম লাঞ্ছিত হবার ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ ১৩ বছরের অধিক সময় যাবত কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনকারি তারেক আম্বিয়ার পছন্দের লোক না হওয়ায় এর আগের রমজানের ইফতার মাহফিল থেকে কয়েক রোজাদারকে তাড়িয়ে দেয়ার গুরুতর অভিযোগও রয়েছে।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে বোর্ড অব ট্রাস্টির অন্যতম সদস্য মঈনুল হক চৌধুরী হেলাল ২ জুলাই এ সংবাদদাতাকে জানান, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সবকিছু করা হয়েছে। কিন্তু কিছু মুসল্লি চেয়েছিলেন সেই রীতি ভাঙতে। সে সুযোগ না পেয়ে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরীর চেষ্টা করেন। তবে এক পর্যায়ে সবকিছু মিটে গেছে এবং নতুন কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বিদায়ী ও নতুন কমিটির সেক্রেটারি আসিক রহমান ১ জুলাই লিখিত এক বিবৃতিতে জানান, বার্ষিক সাধারণ সভা চলাকালে মসজিদের রেজিস্টার্ড সদস্যগণের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন/সংশোধনের প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে সাধারণ সম্পাদককে বিভিন্নভাবে প্রশ্ন করাতে উপস্থিত মেম্বারদের মধ্যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে কে বা কারা সদস্যকে উদ্দেশ্য করে ‘শয়তানী কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়া’র মন্তব্য করলে উপস্থিত কিছুসংখ্যক মেম্বারের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। উপস্থিত সম্মানীত সদস্য, ট্রাস্টি বোর্ডের নাজমুল ফারুক, মো. আব্দুল কাইয়ুম, মইনুল হক চৌধুরী হেলাল এবং বর্তমান কমিটিসহ সকলের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।’

অপরদিকে মুসল্লিরা জানান, মসজিদের নতুন কমিটি গঠন করার জন্য গত শুক্রবার সাধারণ সভা বাদ আছর মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশিক রহমান শান্তিপূর্ণভাবেই শুরু করেছিলেন। মাগরিব নামাজের পূর্ব পযন্ত কোন প্রকার সমস্যা দেখা যায়নি। মাগরিব শেষে আবারো সভা শুরু হয়। সে সময় মুসল্লি তথা সাধারণ সদস্যগণের পক্ষ থেকে ভোটার হবার বিদ্যমান বিধি টানা ৩ বছরের সদস্য থাকার স্থলে এক বছর করে মসজিদের গঠনতন্ত্রে কিছু পরিবর্তন/সংশোধনের দাবি উঠে। এর পক্ষে উপস্থিত মুসল্লিগণের সিংহভাগই তাদের সমর্থন দিলেও কমিটির কোষাধ্যক্ষ তারেক আম্বিয়া ও তার ভাই তৌফিকুল আম্বিয়াসহ কিছু মুসল্লি ঐ দাবির বিপক্ষে অবস্থান নেন। এ সভায় গঠনতন্ত্র বহির্ভূত কিছু কাযর্ক্রমের ব্যাপারে মুসল্লিগণ প্রশ্নের অবতারণা করেন। এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর না দিয়ে প্রশ্নকারিদেরকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করা হয় ক্ষমতাসীনদের সমর্থকদের পক্ষ থেকে।

মুসল্লিগণ আরও অভিযোগ করেন যে, ‘মইনুল ইসলাম এক পর্যায়ে বলেন, ‘এখানে অনেক শয়তানও আছে।’ গণহারে মুসল্লিগণকে শয়তান হিসেবে অভিহিত করার তীব্র প্রতিবাদ জানান ২০০৬ সালে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠাকালিন সদস্যগণের অন্যতম হারুন আহমেদ। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। মারমুখি হয়ে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা চলে উভয় পক্ষে। হামলা ও হট্টগোলের সময় মসজিদে ‘বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট’ (বাক) এর বেশ কিছু কর্মকর্তাকেও দেখা গেছে।

ক্ষুব্ধ মুসল্লিরা অভিযোগ করেছেন যে, প্রতিষ্ঠার পর এই মসজিদের নিজস্ব ভবন ক্রয় এবং বর্তমানে প্রথম তলায় ৫শতাধিক মুসল্লি এবং বেসমেন্টেও বেশ কিছু মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করতে যত অর্থের প্রয়োজন হয়েছে সবটাই দিয়েছেন এবং এখনও দিচ্ছেন এলাকার মুসল্লিরা। অথচ সংগৃহীত কোন অর্থের হিসাব যথাযথভাবে উপস্থাপন করা দূরের কথা, চাঁদাদাতাগণকে ন্যূনতম সম্মান প্রদানেও আগ্রহী নন ১৩ বছরের অধিক সময় যাবত নেতৃত্ব দখলে রাখা লোকজন।

মুসল্লিরা আরো অভিযোগ করেছেন যে, সভাপতি নূরল ইসলাম, সেক্রেটারি আসিক রহমান, কোষাধ্যক্ষ তারেক আম্বিয়া টিপু নতুন কমিটি গঠনের সব সভাতেই মারমুখী হন এবং যে কোন উপায়ে নেতৃত্ব অটুট রাখেন। এবারও সেটাই করা হয়েছে। কারণ, উদ্দেশ্যমূলকভাবে হট্টগোল সৃষ্টি করে সাধারণ মুসল্লি/সদস্যগণকে মসজিদ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে নিজেদের সমর্থকগণের মাধ্যমে একই নেতৃত্ব বহাল রাখা হয়েছে কথিত সেই নতুন কমিটিতে। পরিবর্তন করা হয়েছে শুধু নির্বাহী সদস্যের ২টি পদে। এরা হলেন হাবিবুর রহমান ও নাসিমুল করিম বাবু। আর বাকি সব সদস্যই আগের কমিটিতেও ছিলেন।

এদিকে আরো জানা গেছে, গঠনতন্ত্রকে যুগোপযোগী করাসহ চলমান অনিয়ম দূর করার অভিপ্রায়ে নতুন নেতৃত্বে কমিটি গঠনের দাবিকারিগণ নিরাপত্তা চেয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রেসিঙ্কটে একটি দরখাস্ত দিয়েছেন।

মসজিদ প্রতিষ্ঠাকালিন সদস্যগণের কয়েকজন এ সংবাদদাতাকে জানান, এলাকাবাসীর ধর্মীয় আবেগ আর অনুভূতিকে পুঁজি করে বিশেষ একটি পরিবারের ব্যবসায়িক মূলধনে পরিণত করা হয়েছে এই মসজিদকে। আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রদানের সময় ব্যাংকের কোন স্টেটমেন্ট উপস্থাপন করা হয় না। অর্থাৎ আয়-ব্যয়ের খাত নিজেদের একাউন্টে রেখে ক্রেডিট লাইন গড়ছেন তারা।

জানা গেছে, ম্যানচেস্টার সিটির এশিয়ান গ্রোসারির বেসমেন্ট থেকে শুরু হয় ধর্মীয় নানা কার্যক্রম। এ সময় হারুন আহমেদ, জাহেদ চৌধুরী লিটন, দরুদ মিয়া, শরিফুল ইসলাম হেলাল, নজরুল ইসলাম সাদেক এবং সাবেক ইমাম আনোয়ার হোসেনসহ অনেকেই মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করেন। ম্যানচেস্টারের অরেঞ্জ হলের এক অনুষ্ঠানে এশিয়ান গ্রোসারির সাবেক মালিক শরিফুল ইসলাম হেলালের মা প্রথম ১০০ ডলার দান করে মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে অনুপ্রাণীত করেন। আরো জানা গেছে, বতর্মান কমিটির সভাপতির নিকট সংবিধানের কিছু অনৈসলামিক এবং অযৌক্তিক বিষয় সংশোধনের জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ৮৩ জন স্বাক্ষরিত একটি আবেদন দাখিল করা হয়। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ন্যূনতম পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

অভিযোগে প্রকাশ, গত ১২ অক্টোবর মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ তারেক আম্বিয়া সাবেক পেশ ইমাম জোবায়ের আহমেদকে অকারণে লাঞ্ছিত করেন। উক্ত ঘটনাটি কানেকটিকাটসহ উত্তর আমেরিকায় ব্যাপকভাবে প্রচার হলে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ মুসলমান কমিউনিটিতে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। অনেকেই ঐ আচরণের নিন্দা প্রকাশ করেন।