অনলাইন ডেস্ক : কানাডার শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় ভারতীয় এজেন্টদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন কানাডিয়ান শিখরা। স্থানীয় সময় সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দেশটির তিনটি শহরে ভারতের কূটনৈতিক মিশনের বাইরে এসব বিক্ষোভ হয়।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ওই শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীর হত্যার সঙ্গে নয়াদিল্লির যোগসূত্র থাকতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ আনার এক সপ্তাহ পর এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হলো। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
এর আগে গত সপ্তাহে কানাডার শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় ভারত সরকারের দিকে সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সেসময় পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা শিখ নেতা নিজ্জারের হত্যার সাথে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে।
কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের একটি শিখ মন্দিরের বাইরে গত ১৮ জুন গুলি করে হত্যা করা হয় ৪৫ বছর বয়সী হরদীপ সিং নিজ্জারকে। হাউস অব কমন্সের সভায় প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, কানাডার মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে হত্যার পেছনে ভারতীয় এজেন্টরা জড়িত থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করার মতো ‘বিশ্বাসযোগ্য কারণ’ রয়েছে।
রয়টার্স বলছে, শিখ নেতা নিজ্জারের হত্যার প্রতিবাদে সোমবার কানাডায় বিক্ষোভ করেন শিখরা। টরন্টোতে প্রায় ১০০ জন বিক্ষোভকারী ভারতীয় পতাকা পুড়িয়ে দেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি সম্বলিত কার্ডবোর্ডে জুতা দিয়ে আঘাত করেন।
এছাড়া প্রায় ২০০ জন বিক্ষোভকারীও ভ্যাঙ্কুভারে ভারতীয় কনস্যুলেটের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন। অন্যদিকে রাজধানী অটোয়াতে ভারতীয় হাইকমিশনের (দূতাবাস) সামনে প্রায় ১০০ জন বিক্ষোভকারী জড়ো হন। এসময় তাদের হাতে ‘খালিস্তান’ লেখা হলুদ পতাকা ছিল।
অটোয়ায় ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেন রেশমা সিং বলিনাস নামের এক বিক্ষোভকারী। তিনি বলেন, ‘আমরা জাস্টিন ট্রুডোর কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ… আমরা চাই যে এই কাপুরুষোচিত কাজের শেষ দেখতে কোনও চেষ্টা বাকি না থাকুক। ভবিষ্যতে নিরপরাধ মানুষ হত্যা বন্ধ করতে কানাডার উচিত ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।’
শিখ জনগোষ্ঠী ভারতের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার মাত্র দুই শতাংশ হলেও পাঞ্জাবে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। অন্যদিকে পাঞ্জাবের বাইরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিখ বাস করেন কানাডায়। উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে বসবাসরত শিখের সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ৭০ হাজার।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানাডায় শিখ জনগোষ্ঠী অনেক বিক্ষোভ করেছে যা কার্যত ভারতকে বিরক্ত করে চলেছে। এছাড়া ভারত ২০২০ সালে নিজ্জারকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসাবে ঘোষণা করে এবং নিজ্জারকে হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর আনা অভিযোগটিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে নয়াদিল্লি।
তবে ট্রুডোর এই অভিযোগ কানাডার শিখ সম্প্রদায়ের আন্দোলন ও তাদের দাবির ওপর সবার নজর এনে দিয়েছে। সোমবার টরন্টোর বিক্ষোভে অংশ নেন কুলজিত সিং। শিখস ফর জাস্টিস গ্রুপের এই সদস্য বলছেন, ‘ভারত সরকার নোংরা কৌশল ব্যবহার করেছে এবং কানাডার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে।’
অবশ্য ভারতের বিরুদ্ধে ট্রুডোর এই অভিযোগ সামনে আসার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি ট্রুডোর এই অভিযোগ ভারত ও কানাডার মধ্যে কুৎসিত কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে, যদিও এই দুটি দেশের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং ভালো বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে।
উত্তেজনার একপর্যায়ে উভয় দেশ একে অপরের একজন করে কূটনীতিককে বহিষ্কার করে এবং গত বৃহস্পতিবার থেকে কানাডিয়ান নাগরিকদের জন্য ভিসা পরিষেবা স্থগিত করে ভারত। এছাড়া কানাডা ভারতে তার কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে এনেছে এবং বলেছে, কানাডিয়ান কিছু কূটনীতিক সোশ্যাল মিডিয়ায় হুমকি পেয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে টরন্টো এবং অটোয়ায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কিছু বিক্ষোভকারী কানাডায় ভারতীয় হাইকমিশনার (রাষ্ট্রদূত) সঞ্জয় কুমার ভার্মাকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন। ভারতীয় এই রাষ্ট্রদূত অবশ্য আগেই বলেছিলেন, কর্তৃপক্ষকে বিক্ষোভের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে এবং তারা নিরাপত্তা প্রদান করছে।
সিবিসি নিউজ গত সপ্তাহে অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার হত্যার বিষয়ে মাসব্যাপী তদন্তে কানাডিয়ান সরকার মনুষ্য ও সাংকেতিক উভয় ধরনের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেছে।
এছাড়া কানাডা সরকারের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, গত জুন মাসে কানাডিয়ান এই নাগরিকের হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় এজেন্টদের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততার বিষয়ে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কানাডার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে।
এছাড়া হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় ভারতের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। চলতি মাসে ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনের সময় ওই উদ্বেগ জানান তিনি।
এছাড়া একই বিষয়ে মোদির কাছে উদ্বেগ জানিয়েছেন মার্কিন মিত্র আরও কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান।