রাশিদুল হাসান : কানাডার পার্লামেন্টে একটি বিশেষ আইন পাসের পর থেকে দেশটির ফেসবুক ও ইনস্টগ্রাম ব্যবহারকারীদের কাছে সংবাদ প্রচার সীমিত করেছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘মেটা’। উল্লেখ্য, কানাডা সরকার আইন করেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে সংবাদ প্রচারের জন্য এসব প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে ‘নিউজ পাবলিশারদের’ অর্থ প্রদান করতে হবে। এই আইনের প্রতি সাড়া হিসেবে ‘মেটা’ তার প্ল্যাটফর্মে সংবাদ প্রচার বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করে।
পাবলিশারকে অর্থ দিতে রাজি নয় ‘মেটা’ এবং সে কারণে কানাডার মানুষেরা যেন তাদের প্ল্যাটফর্মে সংবাদ প্রচার করতে না পারেন, সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মেটার এই পদক্ষেপে কানাডা সরকার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে যে এটা ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতা’। সারা বিশ্ব এখন কানাডার দিকে তাকিয়ে আছে যে সেখানে কীভাবে বিষয়টির সুরাহা হয়।
স¤প্রতি কানাডার সংসদে অনলাইন নিউজ অ্যাক্ট পাস হয়েছে। এ আইনের বলে গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেট ও মেটাকে কানাডার সংবাদ প্রকাশকদের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করতে হবে, যদি তারা কানাডার কোনো সংবাদমাধ্যমের সংবাদ ব্যবহার করতে চায়। কানাডায় মেটার নীতিবিষয়ক প্রধান র্যাচেল কারান বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমগুলো পাঠক বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নিজে থেকে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে সংবাদ শেয়ার করে। আমরা জানি, মানুষ সংবাদ পড়ার জন্য আমাদের প্ল্যাটফর্মে আসে না।’
কানাডা সরকারের ইতিহাস ও ঐতিহ্য–বিষয়ক মন্ত্রী প্যাসকেল সেইন্ট-ওঙ্গি এই প্রক্রিয়ায় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন। গত ১ আগস্ট, মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, ‘এটা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা’।
মন্ত্রী আরও বলেন, সংবাদমাধ্যমগুলোকে ন্যায্য পাওনা দেওয়ার চেয়ে এরা বরং ভালো মানের ও স্থানীয় সংবাদ থেকে ব্যবহারকারীদেরকে বঞ্চিত রাখবে। তবে সরকার নিজের অবস্থানে অনড় থাকবে। সর্বোপরি সরকার যদি প্রযুক্তি খাতের এই মহিরুহদের বিরুদ্ধে জনগণের পক্ষে না থাকে, তাহলে কে থাকবে।
শুধু কানাডায় নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই এখন এই লড়াই চলছে। প্রযুক্তি খাতের বিশাল কোম্পানিগুলোকে নিজেদের প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত সংবাদের মূল্য পরিশোধে বাধ্য করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু তারা নাছোড়বান্দা। গত জুন মাসে মেটা ও অ্যালফাবেট বলেছে, তারা রাজস্ব ভাগাভাগি করবে না, বরং কানাডায় সংবাদ প্রচার বন্ধ করে দেবে। এর আগে ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় একই ধরনের আইন হয়। তখনো মেটা ও অ্যালফাবেট একই হুমকি দেয়। এরপর আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হলে মেটা ও অ্যালফাবেট অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে।
কিন্তু কানাডার বেলায় তারা বেশি অনড় বলে মনে হচ্ছে। তাদের ভাষ্য, এই আইন অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের আইনের চেয়ে আরও বিস্তৃত। কারণ, এখানে অনুসন্ধানে যে সংবাদের লিংক আসবে, তার জন্যও মূল্য ধরা হয়েছে এবং এমনকি যারা সংবাদ তৈরি করে না, তাদেরও এর আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ‘মেটা’ আরও বলেছে, ব্যবহারকারীদের ফিডে যত কনটেন্ট বা আধেয় আসে, তার মধ্যে সংবাদের হিস্যা তিন শতাংশেরও কম। তারা আরও বলেছে, সংবাদের অর্থনৈতিক মূল্য নেই। তবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো মে মাসে বলেছেন, এ ধরনের যুক্তি ভুল এবং দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।