অনলাইন ডেস্ক : কানাডা সরকারের নেয়া অস্থায়ী বিদেশি কর্মীবিষয়ক প্রকল্পগুলোকে সমসাময়িক বা আধুনিক দাসত্বের প্রজনন ক্ষেত্র বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ। এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার আহ্বানও জানান দাসপ্রথার সমসাময়িক রূপবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত তোমোয়া ওবোকাটা। দেশটির অন্টারিও প্রদেশে বসবাসকারী জ্যামাইকার খামারকর্মীরা যেসব দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছিল তা প্রকাশের প্রায় এক বছর পর এমন মন্তব্য করেন এই বিশেষজ্ঞ।
জাতিসংঘের বিশেষ দূত তোমোয়া ওবোকাটা গত ৬ সেপ্টেম্বর, বুধবার জানিয়েছেন, কানাডায় দুই সপ্তাহের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের সময় অভিবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে শোষণ ও অপব্যবহারের যে বিবরণ তিনি শুনেছেন তাতে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
ওবোকাটা বলেন, ফেডারেল সরকারের অ্যাম্প্লোয়ার স্পেসিফিক ওয়ার্ক পারমিট ব্যবস্থার মাধ্যমে অনেক অস্থায়ী বিদেশি কর্মী ও অভিবাসী কর্মী টিএফডব্লিউপি প্রকল্পের আওতায় সমসাময়িক দাসত্বের ঝুঁকিতে রয়েছেন। নিপীড়নের কথা প্রকাশ করলে নির্বাসিত হতে পারেন এমন ভয়ে এসব কর্মীরা অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকেন।
গত বছরের আগস্টে জ্যামাইকা থেকে আসা অভিবাসী খামার শ্রমিকদের একটি দল অন্টারিওর দুটি খামারে নিপীড়িত হওয়ার ঘটনাকে পদ্ধতিগত দাসত্বের সঙ্গে তুলনা করে নিজ দেশের শ্রমমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি পাঠান। এর পরই এ বিষয়ে মুখ খোলে জাতিসংঘ। চিঠিতে তারা জানিয়েছেন, আমাদের সঙ্গে খচ্চরের মতো আচরণ করা হয় এবং যথেষ্ট দ্রুত কাজ না করার জন্য শাস্তি দেয়া হয়।
তারা অভিযোগ করেন, আমরা পর্যাপ্ত সুরক্ষা ছাড়াই বিপজ্জনক কীটনাশকের সংস্পর্শে এসেছি, এবং আমাদের কর্তারা মৌখিকভাবে গালিগালাজ করেন। তারা আমাদের শারীরিকভাবেও ভয় দেখান, আমাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নষ্ট করে আমাদেরকে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকিও দেন।
বছরের পর বছর কানাডা সরকারকে তার অস্থায়ী বিদেশি কর্মীবিষয়ক কর্মসূচিতে এমন পদ্ধতিগত সমস্যাগুলো সমাধান করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন অধিকারকর্মীরা। তারা জানিয়েছেন যে এই প্রকল্পগুলো অভিবাসী শ্রমিকদের অপব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ফল ও শাকসবজি চাষ থেকে শুরু করে মাংশ প্রক্রিয়াকরণ পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে কাজ করার জন্য প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ হাজার বিদেশি শ্রমিক অস্থায়ীভাবে কানাডায় আসেন।
সিজনাল এগ্রিকালচারাল ওয়ার্কার প্রোগ্রাম (এসএডব্লিউপি)-এর মাধ্যমে মেক্সিকো এবং ক্যারিবিয়ান ১১টি দেশ থেকে অস্থায়ী অভিবাসী কর্মীকে নিয়োগের অনুমতি দেয় কানাডা। বছরে সর্বোচ্চ আট মাস তারা কানাডায় অবস্থান করতে পারেন।
যেসব শ্রমিক কয়েক দশক ধরে কানাডায় আসা-যাওয়া করছেন, তারা জানিয়েছেন, তারা জনাকীর্ণ, নিম্নমানের আবাসনে বসবাস করতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে দীর্ঘ সময় কাজ করতে বাধ্য হন। তারা আরও বলেছেন, তারা অভিযোগ করলে তাদের নির্বাসন বা অন্যান্য প্রতিশোধের হুমকির মুখোমুখী হতে হয়।
গত বছর, কানাডার কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আল জাজিরাকে জানিয়েছে, ২০২১ সালে অটোয়ার প্রাদেশিক সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের সহায়তায় তিন কোটি ৮১ লাখ ডলার বরাদ্দ রেখেছে। এবং তারা সবধরনের শ্রমিকদের সুরক্ষিত রাখার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। তখনকার মন্ত্রী কার্লা কোয়ালট্রোফ জানিয়েছেন, অস্থায়ী বিদেশি কর্মীদের তাদের অধিকার, সুস্বাস্থ্য এবং কর্মস্থলে সুরক্ষার বিষয়ে আরও ভাল তথ্য জানার দরকার আছে। কানাডা সরকারও জানিয়েছে, বিদেশি কর্মী এবং আন্তর্জাতিক ছাত্রদের স্থায়ী বসবাসের সুযোগ দিতে কাজ করছে তারা। সূত্র : সিবিসি নিউজ