মুহাম্মদ মুসা খান: তিন দিনব্যাপী (১৭, ১৮, ১৯ আগস্ট) শেষ হলো ‘সাস্কাটুন ফোক ফেস্টিভ্যাল-২০২৩’। ‘বাংলাদেশি কমিউনিটি এসোসিয়েশন অব সাস্কাচোয়ান-বিকাস’ এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে। তিনদিনব্যাপি বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের অনুষ্ঠানে তাঁরা বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে সুুুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।

তিনদিনের প্রোগ্রামে তাঁদের দেশপ্রেম, অধ্যবসায়, পরিশ্রম ও সেক্রিফাইসকে লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশ হতে ১২ হাজার মাইল দূরে এসে তাঁরা যেভাবে বাংলাদেশকে বুকে ধারণ করে আছে, বাংলাদেশের ভালোবাসাকে তাঁরা যেভাবে লালন করে যাচ্ছে-তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। কি ছিল না- তাঁদের অনুষ্ঠানমালায়! ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, একক অভিনয়, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত, আঞ্চলিক, ফোক, মাইজভান্ডারি, দেশাত্মবোধক, আধ্যাত্মিক- সব ধরণের গান ও গানের সাথে নৃত্য -কিছুই বাদ যায়নি। ফ্যাশন শো’র মাধ্যমে বাংলাদেশের তাঁত ও জামদানিসহ বিভিন্ন শাড়ির প্রদর্শনি ও বীরংগনা চরিত্রের একক অভিনয় মন ছুঁয়ে যায়। শিল্পী চমৎকারভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, আলবদর ও পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার, বিজয়ের আনন্দ ফুটিয়ে তুলেছেন।

অনুষ্ঠানে ছোট ছোট শিশুদের অংশগ্রহণে গ্রামবাংলার মানুষের জীবন-জীবিকা, বিবাহ সংস্কৃতি ও বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। সৌখিন বাংলাদেশি শিল্পী ও শিশুদের মুখে যখন-
“আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি,
চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস
আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি… ”

– গান শুনেছে, তখন দর্শকরা আবেগাপ্লুত হয়ে যায়। অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণকারি সাস্কাটুনের বাংলাদেশি শিল্পীরা ‘সবাই প্রফেশন শিল্পীর মতোই চমৎকার পারফর্ম’ করেছেন। তবে ‘সাস্কাটুন বাংলা স্কুলের’ শিশু শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা অবিশ্বাস্য সুন্দর। বয়সে খুব ছোট বলে এখনও ভালো করে কথা বলতে পারছে না- এমন শিশুদের তৈরি করে, শাড়ি পরিয়ে গান-নাচ-অভিনয় করার জন্য মঞ্চে তুলে দেয়া হয়েছে এবং এই শিশুরা শিক্ষক-অভিভাবকদের সম্মান রক্ষা করেছে চমৎকার পারফর্ম করে। দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরার জন্য ‘র‌্যালির’ ধারণাটিও চমৎকার।

“তোমরা এক তারা বাজাইও না
দোতারা বাজাইও না…………..
একতারা বাজাইলে মনে পইরা যায়
একদিন বাংগলি ছিলাম রে…”

– গানের তালে তালে র‌্যালিতে অংশগ্রহণকারিদের নৃত্য বেশ মনোমুগ্ধকর। অনুষ্ঠানে বোনাস ছিল বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন থ্রি স্টার হোটেল Confederation Inn এর সুলভ মূল্যের বাংলাদেশি খাবার। যা খাওয়ার জন্য কানাডিয়ান ও অন্যান্য দেশের অভ্যাগতরা লাইন ধরেছিল। ফোকফেস্ট প্যাভিলিয়ন ম্যানেজার ড. আরিফের পরিকল্পনা ও কালচারাল সেক্রেটারি বকুলের উপস্থাপনা ছিল চমৎকার। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে সাস্কাটুনের সিটি মেয়র ও এমপি উপস্থিত ছিলেন।

ফোক ফেস্টিভ্যাল মূলত এই বিভিন্ন দেশ ও স¤প্রদায়ের মধ্যে স¤প্রীতি সৃষ্টি এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার জন্য কানাডা সরকার ও স্থানীয় ‘সিটি অব সাস্কাটুন’ কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য যে, কানাডার সব প্রভিন্সেই ফোক ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করা হয়। এবারের ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশ, ক্যামেরুন, চাইনিজ, ফ্রাঙ্কোফোন, জার্মান, ভারত, ভারতীয় মেটিস, আইরিশ, জাপান, নরওয়ে, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, স্কটিশ, শ্রীলঙ্কা, ইউক্রেনীয় কার্পাটি, ভিয়েতনাম ও ইরান অংশগ্রহণ করে। ১৭টি ভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হলেও নির্দিষ্ট ফি দিয়ে টিকেট নিয়ে ফ্রি সার্ভিসের মাধ্যমে দর্শকে ১৭টি দেশের প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করতে পেরেছে।

অংশগ্রহণকারি দেশগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্ব স্ব দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছে। আয়োজক কর্তৃপক্ষের ঘোষণায় আশা প্রকাশ করা হয়েছে- ‘বহু সংস্কৃতিতে সাস্কাটুন শহরকে প্রাণবন্ত করার জন্য এবং পারস্পরিক ঐতিহ্য, ইতিহাস আবিষ্কার ও অন্বেষণ করার জন্য’ এই আয়োজন। শহর ত্যাগ না করে বিশ্ব ভ্রমণ করার অতুলনীয় অভিজ্ঞতা অর্জনে জন্য এই ফোকফেস্ট বিখ্যাত। অনুষ্ঠানকে সফল করার জন্য বাংলাদেশি কমিউনিটি এসোসিয়েশন সাস্কাচোয়ানের সভাপতি মোহাম্মদ আজাদ (সাজ্জাদ)- কার্যকরী কমিটি, ফোকফেস্ট উপকমিটি, স্পন্সর ও সাস্কাটুনের প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সকলের সহযোগিতা ছিল বলেই অনুষ্ঠান সফল হয়েছে।

লেখক- মুহাম্মদ মুসা খান, কলামিস্ট ও সমাজকর্মী।