অনলাইন ডেস্ক : ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২০ সালে দ্বিগুণ বেড়েছে দারিদ্র্যের হার। করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার (আপার পোভার্টি রেট) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশ। ২০১৮ সালে যা ছিল ২১ দশমিক ৬ শতাংশ।

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) করোনায় দারিদ্র্যের হার নিয়ে এক অনলাইন আলোচনা সভায় গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। ২০১৮ সালের সঙ্গে গত বছর দেশের দারিদ্র্য এবং জীবিকার সঙ্গে তুলনামূলক গবেষণা করেছে সানেম। গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০২০ সালে করোনার প্রভাবে দেশে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ ভাগে।

দারিদ্র্যের হার ও আয় বৈষম্য কমানো না গেলে দারিদ্র্য বিমোচনে দেশের অর্জন অনেকটা পিছিয়ে পড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান জানান, সানেমের হিসাবে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে বেতন কমেছে প্রায় ২৪ ভাগ চাকরিজীবীর। এছাড়া আয় কমেছে ২৯ ভাগ শ্রমিকের ও ৩২ ভাগ উদ্যোক্তার। সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের হার রংপুর বিভাগে।

মহামারিতে কাজ হারানো, পারিশ্রমিক না পাওয়া, কর্মক্ষেত্র বন্ধ হওয়াসহ বিভিন্ন কর্মসংস্থান সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে অনেকেই। আয় কমে যাওয়ায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য বহির্ভূত খাতে ব্যয় কমেছে ব্যাপকহারে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, দুই বছরে প্রায় ১৮ শতাংশ দরিদ্রতা বেড়েছে রংপুরে। জেলাটিতে ৫৭ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ দরিদ্রতা নিয়ে বসবাস করছে। এছাড়া সিলেটে ৩৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫৫ দশমিক ৫ শতাংশ, খুলনায় ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ, ঢাকায় ৩৮ দশমিক ৪ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৪৬ দশমিক ২ শতাংশ, চট্টগ্রামের ৩৫ দশমিক ১ শতাংশ ও বরিশালে ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ দরিদ্রতা নিয়ে বসবাস করছে। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২০ সালে প্রায় প্রত্যেক জেলায় দরিদ্রতা দিগুণ হারে বেড়েছে।

অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, করোনার প্রভাবে দরিদ্রতা ও আয় বৈষম্য বেড়েছে। এই হার কমানো না গেলে দেশ দারিদ্র্য বিমোচনের অর্জন থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মাহবুবুল মোকাদ্দেম জানান, দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনতে করোনা মোকাবিলা, নগদ লেনদেন কমানোসহ সামাজিক সুরক্ষা বৃদ্ধি, পণ্যের দাম সহনীয় রাখা, দুর্নীতি কমানো এবং কর্মসংস্থান তৈরি করা প্রয়োজন।

জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, করোনার প্রভাবে দারিদ্র্যের কারণে মানুষ খাদ্য বহির্ভূত ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি অনেকে সঞ্চয় ভেঙে খেয়েছেন, ঋণ নিয়েছেন, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনেছেন। এছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ পরিবার বলেছে, তারা খাপ খাওয়ানোর পথই খুঁজে পাননি।