অনলাইন ডেস্ক: ওয়ারদা কুয়েতের এক নারী। ৩৭ বছরের ওয়ারদাকে পরিবার শুধু দুটি জায়গায় যেতে অনুমতি দিয়েছে। তাঁর কর্মক্ষেত্র ও রূপচর্চার স্যালন। করোনার সংক্রমণের কারণে স্যালন এখন বন্ধ। অথচ এখানেই ওয়ারদা সমাজের অন্যদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পেতেন। তিন মাস আগে করোনার সংক্রমণ রোধে স্যালন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওয়ারদার জন্য যেন বাইরের জগতের একটা জানালাই বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকেই তিনি বিষণ্ন ও হতাশ।

এএফপিকে ওয়ারদা বলেন, ‘সেখানে গল্পগুজবের সময়টা তাঁর খুব মনে পড়ে। আমি রক্ষণশীল পরিবার থেকে এসেছি। খুব বেশি বাইরে যাই না। আমি স্যালনে যেতাম সময়টা উপভোগ করতে। কল্পনা করতে পারবেন না—সেখানে আমরা কত মজা করতাম।’ কবে স্যালন খুলবে, সে অপেক্ষায় আছেন ওয়ারদা। বললেন, ‘স্যালন ছাড়া আমি আমার জীবন কল্পনাও করতে পারি না।’

কুয়েতে সরকারের বিভিন্ন শীর্ষ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। তবে পুরোনো চিন্তাধারার কিছু পরিবারে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। এ ধরনের পরিবারের নারীরা একা কোনো শপিং মলে, কফি শপে, এমনকি শরীরচর্চার জন্যও যেতে পারে না। তবে রূপচর্চার জন্য নারীদের পরিচালিত স্যালনগুলোয় যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। নিয়মিত কাজের ফাঁকে নারীরা এসব স্যালনে যেতে পারেন। পুরুষদের আড্ডা, কফিপানের মতো বিষয়গুলো কুয়েতে ‘দিওয়ানিয়া’ নামে পরিচিত। এর বিকল্প হিসেবে মনে করা হয় নারীদের স্যালনগুলো।

কুয়েতে কেনাকাটার এলাকাগুলোয় একটা বা দুটো স্যালন নেই, এমন কোনো ভবন খুঁজে পাওয়াই কঠিন। কুয়েত সিটির দক্ষিণে আল ফিনতাস এলাকায় এমস দুটি স্যালন পরিচালনা করেন আদিবা আল ওয়াদি। তিনি জানান, স্যালনগুলো জীবনের একটা অংশ হয়ে উঠেছে।

তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েতে বছরে গড়ে প্রত্যেকের আয় ৭০ হাজার ডলারের বেশি। এখানকার বেশিভাগ নাগরিক বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। এ কারণে কুয়েতি নারীদের বেশির ভাগই রূপচর্চার স্যালনে যেতে অভ্যস্ত।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাসিন্দা এক নারী এএফপিকে বলেন, কুয়েতের বেশ কয়েকজন নারী সপ্তাহে কমপক্ষে দুবার বা তিনবার স্যালনে যান। সেখানে তাঁরা অন্যদের সঙ্গে গল্প করেন। কফি পান করেন।

কুয়েতি নারীদের এ ধরনের স্যালনগুলো খোলার জন্য আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এএফপির খবরে জানা যায়, কুয়েতে করোনা শনাক্ত মানুষের সংখ্যা ৩৪ হাজারের বেশি। দেশটিতে মারা গেছে ২৭৯ জন।

করোনার কারণে কুয়েতে অনেক ব্যবসায় ধস নেমেছে। স্যালনগুলোয় কর্মীদের ছাঁটাইও করা হয়েছে।

স্যালনের পরিচালক আদিবা আল ওয়াদি বলেন, ‘অনেকে আমাকে ফোন ও মেসেজ পাঠিয়ে বাসায় সেবা নিতে চেয়েছেন। কিন্তু আমরা এর অনুমতি পাইনি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর স্যালনগুলো আবার সামাজিক মেলামেশার কেন্দ্র হবে বলেও আশা করেন না আদিবা। কারণ, সতর্কতা হিসেবে স্যালনগুলোতে সামাজিক মেলামেশায় বিধিনিষেধ থাকবে।’ ওয়াদি বলেন, তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় সেবা নিতেই কুয়েতি নারীরা স্যালনে যাবেন। স্যালন আর তাঁদের সামাজিক মেলামেশার কেন্দ্রস্থল হতে পারবে না।