অনলাইন ডেস্ক : নোভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন আবিষ্কার নিয়ে গোটা বিশ্ব গলদঘর্ম হচ্ছে। বর্তমানে মোট ১৪৭টি ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্টের কাজ চলছে। এদের মধ্যে ১৮টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এবং বাকি ১২৯টি প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে আছে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে মানুষের হাতে পৌঁছতে কমপক্ষে আরও ৮ মাস থেকে এক বছর সময় লাগবে।
সে পর্যন্ত বিশ্ববাসীকে করোনা থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। প্রত্যেককে মাস্ক পরতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেই টিকা আবিষ্কারের দাবি করেছে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ইতোমধ্যে তারা প্রাণীর শরীরে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগে সফলতা পেয়েছে এবং একইভাবে মানবদেহেও এর সফলতা পাওয়া সম্ভব। মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান কোম্পানি বায়ো এন টেক সফল ভ্যাকসিন তৈরির ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছে। জার্মান জৈবপ্রযুক্তি সংস্থা বায়ো এন টেককে সহযোগী করে মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ) পদ্ধতিতে এ ভ্যাকসিন তৈরি করছে ফাইজার।
ফাইজারের সিইও অ্যালবার্ট বোরলা টাইম অনলাইনকে জানিয়েছেন, এর আগে কোনো সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে এমআরএনএ ভিত্তিক ভ্যাকসিন অনুমোদন পায়নি। চলতি মাসের শেষ দিকে বড় আকারে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বিশ্বের ১৫০টি স্থানে ৩০ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিনটি দেয়া হবে। তারা আশা করছেন আগামী অক্টোবর মাস নাগাদ তাদের ভ্যাকসিনের জন্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছ থেকে অনুমোদন পেয়ে যাবেন।
গ্লোব বায়োটেকের দাবির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ভ্যাকসিন কিংবা ড্রাগ আবিষ্কারের পর তার পূর্ণাঙ্গ ডাটা, ট্রায়াল সম্পন্ন করে, আন্তর্জাতিক জার্নালে রিপোর্ট প্রকাশের পর আবিষ্কারের দাবি করা হয়ে থাকে। কিন্তু গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের বেলায় সেগুলো অনুপস্থিত। এমনকি তারা একটি ভ্যাকসিন ডেভেলপ করে ‘এনিমেল ট্রায়াল’ সম্পন্ন করল কিন্তু রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী কোনো প্রতিষ্ঠানকে জানানোর বা অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। এসব অস্পষ্টতার কারণেই প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাকসিন আবিষ্কার নিয়ে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে একটি ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্টের কয়েকটি পর্যায় আছে। এগুলো হচ্ছে এক্সপ্লরাটরি স্টেজ, প্রি-ক্লিনিক্যাল স্টেজ, ক্লিনিক্যাল ডেভেলপমেন্ট, রেগুলারেটরি রিভিউ এবং অনুমোদন। এর পরের পর্যায়ে রয়েছে উৎপাদন এবং মান নিয়ন্ত্রণ। সব ধাপ পেরিয়ে সাধারণ মানুষের নাগালে আসতে একটি ভ্যাকসিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় নেয়। মহামারীর মতো জরুরি পরিস্থিতিতে এই সময় কমিয়ে নিয়ে আসা হলেও কমপক্ষে এক থেকে দেড় বছর সময় প্রয়োজন হয়। ৬ মাসের বেশি সময় আগে থেকে টিকা নিয়ে গবেষণা চলছে। কাজেই কমপক্ষে আরও এক বছর অপেক্ষা করতে হবে।
ইমার্জেন্সি ইউজ অথোরাইজেশন-ইউএ পেলে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে একটি ভ্যাকসিন বাজারে আসতে পারে। সময় বিবেচনায় বিশ্বের যে কোনো দেশই আবিষ্কার করুক তা মানুষের হাতে আসতে এখনও অনেক সময় লেগে যাবে। এজন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও বেশ কিছুদিন।
গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড মূলত ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। গত ১ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দাবি জানানো হয়। পরদিন ২ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানায় তারা।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড ২০১৫ সালে ক্যান্সার, আর্থ্রাইটিস, রক্তস্বল্পতা, উচ্চ রক্তচাপ, অটোইমিউন ডিজিজসহ অন্যান্য দুরারোগ্য রোগ নিরাময়ের জন্য বায়োলজিক্স, নোভেল ড্রাগ এবং বায়োসিমিলার উৎপাদনের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক গবেষণাগার স্থাপনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানটি গবেষণার পাশাপাশি কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট, টিকা ও ওষুধ আবিষ্কার সংক্রান্ত গবেষণা শুরু করে। সিইও ড. কাকন নাগ ও সিওও ড. নাজনীন সুলতানার সার্বিক তত্ত্বাবধানে তারা ‘কোভিড-১৯’ প্রতিরোধে টিকা (ভ্যাকসিন) আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এনসিবিআই ভাইরাস ডাটাবেজে ৩০ জুন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৫৭৪৩টি সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স জমা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে জমা হয়েছে ৭৬টি। এসব সিকোয়েন্স বায়োইনফরম্যাটিক্স টুলের মাধ্যমে পরীক্ষা করে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড তাদের টিকার টার্গেট নিশ্চিত করে। টার্গেটের সম্পূর্ণ কোডিং সিকোয়েন্স যুক্তরাষ্ট্রের এনসিবিআই ভাইরাস ডাটাবেজে জমা দেয়া হয়েছে এবং এরই মধ্যে এনসিবিআই তার স্বীকৃতি দিয়ে প্রকাশও করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ আশা করছে, তাদের টিকা যৌক্তিকভাবে এই ভৌগোলিক অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে বেশি কার্যকর হবে। আবিষ্কৃত টিকা বিস্তারিত বিশ্লেষণের পর গবেষণাগারে প্রাণীর মডেলে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে যথাযথ অ্যান্টিবডি তৈরিতে সন্তোষজনক ফল মিলেছে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের প্রধান ড. আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আসলে আমরা কাজ শুরু করার পর প্রাথমিকভাবে এটা নিয়ে সফল হয়েছি। এনিমেল মডেলে এটা সফল হয়েছে। এখন আমরা আশা করি মানবদেহেও এটা সফলভাবে কাজ করবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে এখন সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কাছে যাব। এরপর তাদের দেয়া গাইডলাইন অনুযায়ী পরবর্তী ধাপগুলো সম্পন্ন করব।’
তবে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী তারা বিষয়টি অফিসিয়ালি চিঠি দিয়ে আমাদের জানাবে। এরপর আমরা সেটা দেখব।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা নানাভাবে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। কেউ ইনঅ্যাক্টিভ ভ্যাকসিন, কেউ লাইভ ভ্যাকসিন আবার কেউ ডিএনএ ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছে। লাইভ ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে মূলত রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসকেই ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সেগুলো শরীরের ক্ষতি করতে পারে না, অর্থাৎ সেগুলোর রোগসৃষ্টির ক্ষমতা শূন্য থাকে। ফলে ওই ভাইরাসের কারণে শরীর আক্রান্ত হয় না, কিন্তু মানবদেহের কোষের ভেতর সেগুলো বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম।
ভাইরাসের বংশবিস্তার শুরু হলে মানবদেহের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে ভাইরাস ধ্বংস করে। এভাবেই মানুষের শরীরে বিশেষ ওই রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে ওই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে শরীরে থাকা অ্যান্টিবডি সহজেই সেগুলোকে চিহ্নিতের মাধ্যমে ধ্বংস করে ফেলতে সক্ষম হয়। এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই গুটিবসন্তের টিকা আবিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া আফ্রিকার দেশগুলোতে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া ইবোলার বিরুদ্ধে প্রথম অনুমোদন পাওয়া টিকাও একই পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে।
ইনঅ্যাক্টিভ ভ্যাকসিন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, ভাইরাসের দেহে কোনো নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম নেই; এটি কেবল প্রোটিন এবং নিউক্লিক এসিড দিয়ে গঠিত। ভাইরাস কেবল উপযুক্ত পোষকদেহের অভ্যন্তরে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এদের অভ্যন্তরীণ তথ্য বহনকারী সূত্রক দুই প্রকারের হতে পারে- ডিএনএ এবং আরএনএ। ইনঅ্যাক্টিভ ভ্যাকসিনে সুনির্দিষ্ট ভাইরাল প্রোটিন বা নিষ্ক্রিয় ভাইরাস থাকে। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এগুলোকেই হত্যা করবে। যেহেতু শরীরে নিষ্ক্রিয় বা মৃত ভাইরাস প্রবেশ করানো হয় তাই সেগুলো বংশবিস্তার করতে পারে না। কিন্তু দেহে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সেগুলোকে চিহ্নিত করে এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে। ইনফ্লুয়েঞ্জা, পোলিও, হুপিংকাশি, হেপাটাইটিস বি ও ধনুষ্টংকারের টিকায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।
জিন-বেজড ভ্যাকসিন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা অনেকটা ইনঅ্যাক্টিভ ভ্যাকসিনের মতো। তবে বাড়তি সুবিধা হচ্ছে, ওষুধ কোম্পানিগুলো ইনঅ্যাক্টিভ ভ্যাকসিনের চেয়ে জিন-বেজড ভ্যাকসিন দ্রুত উৎপাদন করতে পারে। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ কোভিড-১৯ প্রতিরোধে টিকা আবিষ্কার হলে দ্রততম সময়ে সারা বিশ্বে সেই টিকা ছড়িয়ে দিতে কোটি কোটি ডোজ উৎপাদন করতে হবে।
জিন-বেজড ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসের ডিএনএ বা আরএনএ থেকে একদম সঠিক জিনগত তথ্য নিয়ে তৈরি করা যাবে। এই টিকা শরীরে প্রবেশের পর সেটা নির্বিষ ভাইরাল প্রোটিন তৈরি করবে এবং মানবদেহের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা সেগুলোকে নির্মূল করতে অ্যান্টিবডি তৈরি করবে। তবে এখন পর্যন্ত এই পদ্ধতিতে তৈরি কোনো টিকা বাজারে নেই। নানা দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এ পদ্ধতির উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৬০-৭০ ভাগ ভ্যাকসিন প্রি-ক্লিনিক্যাল স্টেজ পার হলেও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে বাদ পড়ে যায়। যেগুলো সফল হয় সেগুলোকেও অনেক সংযোজন-বিয়োজনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ভ্যাকসিনের নানা প্রকারভেদ আছে। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মূলত যেগুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে, সেগুলো হচ্ছে- ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন, আরএনএ ভ্যাকসিন, ডিএনএ ভ্যাকসিন, ইনঅ্যাক্টিভেটেড ভ্যাকসিন এবং প্রোটিন সাবইউনিট ভ্যাকসিন। এদের মধ্যে প্রথম তিন প্রকারের ভ্যাকসিনের ধারণা একেবারেই নতুন।
এ বিষয়ে বায়োটেকের গবেষক দলের প্রধান ড. নাগ বলেন, ‘আমাদের এখনও একটা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বাকি আছে। কেবল অ্যানিমেল (প্রাণী) মডেলে কাজ করেছি। এখনও আমাদের হিউম্যান (মানবদেহে) মডেলে কাজ করতে হবে। হিউম্যান মডেলে কাজ করে ‘ফেস ওয়ান’ একটা স্টাডি আছে এবং ‘ফেস টু’ একটা স্টাডি আছে। ‘ফেস টু’ স্টাডির মধ্যে কয়েকবার ডোজটা দিতে হবে, দিলে অ্যান্টিবডি গ্রো (গড়ে উঠবে) করবে, যে অ্যান্টিবডি করোনাভাইরাস মেরে ফেলতে পারবে। অর্থাৎ সেটাকে নিউট্রিলাইজ করতে পারবে। আরেকটা প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করব। এর পর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যাব।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্লোব বায়োটেক সম্ভবত একটি আরএনএ ভ্যাকসিন ডেভেলপ করছে। এক্সপ্লোরাটরি স্টেজ শেষ করে এই মুহূর্তে তাদের কাজ প্রি-ক্লিনিক্যাল স্টেজে আছে। এরপর তারা অ্যানিমেল মডেলে (ইঁদুর) ৬-৮ সপ্তাহের একটি রেগুলেটেড প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দেবে। তাতে সফল হলে তারা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অংশ হিসেবে মানবদেহে পরীক্ষার জন্য বিএমআরসির কাছে আবেদন করবে। পরবর্তীতে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছে উৎপাদনের আবেদন করবে।
এ প্রসঙ্গে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ভ্যাকসিন বা ডায়াগনস্টিক কিট ডেভেলপমেন্ট, ভাইরাসের জেনম সিকুয়েন্সিং ইত্যাদি ধরনের কাজগুলো যেমন কয়েকটি দেশে নিয়মিত হয়ে থাকে আবার অনেক দেশে একেবারেই হয় না। আমাদের দেশে গবেষণা বলতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিদেশি জার্নালের কপি-পেস্ট বোঝায়।
এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন যে বাংলাদেশে সম্ভবত এখনও সেরাম নিউট্রালাইজেশন পরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ পরীক্ষা করার জন্য প্রয়োজন বায়োসেফটি লেভেল ৩ ফেসিলিটি, যা গ্লোবের নেই। কিন্তু করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ছ’মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও করোনাভাইরাসের কালচার করার কোনো ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানা নেই। ১৬ কোটি মানুষের দেশে একটা ল্যাবও নেই যেখানে করোনাভাইরাস কালচার করা যায় বা সেরাম নিউট্রালাইজেশন পরীক্ষা করা যায়।
দেশে সেরাম নিউট্রালাইজেশন পরীক্ষা করার ব্যবস্থা না করতে পারলে গ্লোব ফার্মার উচিত বিদেশে পাঠিয়ে তাদের স্যাম্পল পরীক্ষা করিয়ে আনা। এ পর্যায়ে সফল হলে আরও অ্যানিমেল মডেলে ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেই বলা যাবে প্রি-ক্লিনিক্যালি ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, এটাকে এখনও আবিষ্কার বলা যাবে না। এটা একটা উদ্ভাবনের প্রাথমিক পর্যায়। ইতোপূর্বে যেসব ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে সেগুলো সম্পন্ন হতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। দেখা গেছে একটি রোগের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে যত উদ্যোগ নেয় হয় তার মধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ সফলতার মুখ দেখে। তাই এখনই এটা নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। যেতে হবে আরও অনেকটা পথ।