অনলাইন ডেস্ক : করোনার প্রভাবে ২০২০ সাল জুড়ে গড়ে কর্মঘণ্টা ৮ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। পূর্ণকালীন কর্মঘণ্টা হিসেবে ক্ষতি হয়েছে ২৫ কোটি ৫০ লাখ শ্রমশক্তি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) হিসেবে ২০০৯ সালে অর্থনৈতিক সংকটকালীন সময়ের চেয়ে এই ক্ষতি চারগুণ বেশি। গতকাল জেনেভাস্থ সদরদপ্তর থেকে প্রকাশিত ‘আইএলও মনিটর :কোভিড-১৯ অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়ার্ক’-এর সপ্তম সংস্করণে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

আইএলওর হিসেবে গত বছর কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্বের ১১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের। তার মধ্যে ৭১ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ ৮ কোটি ১০ লাখ স্থায়ীভাবে কাজ হারিয়েছেন। অর্থাৎ এই মানুষগুলো করোনার প্রভাব মোকাবিলায় লকডাউন, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন কারণে কাজ হারিয়েছেন। এই বিশাল ক্ষতির কারণে শ্রম আয় কমেছে গড়ে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থের পরিমাপে যার পরিমাণ ৩ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার বা বিশ্ব জিডিপির (স্থূল দেশজ উত্পাদন) ৪ দশমিক ৪ শতাংশের সমান।

সংস্থাটির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, করোনার প্রভাবে সারাবিশ্বের পুরুষের তুলনায় নারীর কর্মসংস্থান তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছর পুরুষের কর্মসংস্থান ৩ দশমিক ৯ শতাংশ হারালেও নারী কর্মসংস্থান হারিয়েছে ৫ শতাংশ। কাজ হারানো নারীদের বড় অংশ নতুন করে কাজ ফিরে পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।

আইএলওর হিসেবে তরুণ শ্রমশক্তিতে বড় ধাক্কা লেগেছে। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি তরুণদের মধ্যে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ কাজ হারিয়েছেন। তুলনামূলক বেশি বয়সিদের মধ্যে এই হার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এই তথ্য এক প্রজন্ম পিছিয়ে যাওয়ার দিকেই নির্দেশ করে।

বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আবাসন ও খাদ্য পরিসেবা খাত। এই খাতে গড়ে ২০ শতাংশ কর্মসংস্থান কমেছে। এর পরেই রয়েছে খুচরা বিক্রেতা এবং শিল্প উত্পাদনশীল খাত। ক্ষতিগ্রস্তের তৃতীয় সারিতে রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ খাত, আর্থিক ও বিমা শিল্প। তবে বছরের শেষ দিকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করতে দেখা গেছে খনি এবং পরিবেসা খাতের কর্মসংস্থানে।

আইএলওর প্রতিবেদনে কিছু আশার দিকও শুনিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হওয়ায় এ বছর দ্বিতীয় ভাগে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে। এর পরেও করোনার রেশ থেকে যাবে। চলতি বছর গড়ে ৩ শতাংশ হারে কর্মঘণ্টা কমবে ২০১৯ সালের তুলনায়। এর ফলে ৯ কোটি পূর্ণকালীন কর্মসংস্থানের সমপরিমাণ ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।

যদি ভ্যাকসিন কার্যক্রমে ধীর গতি হয় সেক্ষেত্রে শ্রমঘণ্টা কমতে পারে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। বর্তমান ধারণার চেয়েও দ্রুত গতিতে যদি ভ্যাকসিন কার্যক্রম এগোয় সেক্ষেত্রে ক্ষতি কমে ১ দশমিক ৩ শতাংশের মতো হতে পারে। সবকিছু নির্ভর করছে করোনা অতিমারি অবস্থা কতটা নিয়ন্ত্রণে আসে এবং ব্যাবসায়িক আস্থা কতটা বৃদ্ধি পায় তার ওপর।

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে দেশে দেশে লকডাউন জারি করা হয়। ব্যাপকভাবে শ্রমিকের কর্মঘণ্টা হ্রাস পায়। যা বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের শ্রম আয় ব্যাপক কমিয়ে দিয়েছে। মহামারির কারণে এরই মধ্যে কয়েক কোটি মানুষ চাকরি তো হারিয়েছেই, একই সঙ্গে ব্যাপক মাত্রায় কমেছে মজুরিও। ক্ষতির পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে তুলনামূলক দ্বিগুণ। প্রতিবেদনের বিষয়ে আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার উল্লেখ করেছেন, বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চিহ্ন আশা জোগাচ্ছে কিন্তু এর প্রক্রিয়া ভঙ্গুর এবং অনিশ্চয়তা রয়েছে।