সোনা কান্তি বড়ুয়া : করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে যেন বিপর্যস্ত ভারত! দিল্লির রাস্তায় মরদেহ ছিঁড়ে খাচ্ছে কুকুর (B.B.C. reported শনিবার, ১ মে, ২০২১)! মৃত্যুপুরী বললেও কিছুই বোঝানো যাচ্ছে না আর। দিল্লি নরককুণ্ড ছাড়া আর কিছুই নয়। এদিন সেখানে কোভিডে দৈনিক মৃতের সংখ্যা সাতশ’-তে পৌঁছেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, শিগগিরই এ সংখ্যা হাজার ছাড়াবে।
ভারতের রাজধানী শহরের বিভিন্ন শ্মশানের বাইরে রাস্তায় টোকেন নিয়ে মরদেহের দীর্ঘ লাইন। ২০ ঘণ্টা কেটে যাচ্ছে আগুন পেতে। লাশ ছিঁড়ছে কুকুর। শ্মশানের দরজায় দরজায় ঘুরে জায়গা না পেয়ে স্রেফ বরফ চাপা দিয়ে ৪৮ ঘন্টাও বাড়িতে শব রেখে দিচ্ছে স্বজনেরা। কুকুরের মৃতদেহ পুঁতে ফেলার জায়গা ব্যবহার করা হচ্ছে মানুষকে দাহ করার জন্য। এ যদি নরক না হয়, তা হলে নরক ঠিক কী? প্রশ্ন দিল্লিবাসীর।

সারা ভারতে মৃত্যু মিছিল চলছে! ভারতের সেন্টার ফর ডিজিজেস ডায়নামিকস, ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিসির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. রামাণন ল²ীনারায়ণ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সহায়তার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েই বলেছেন, ভারতের এখন ‘মরিয়া’ দশা; এসব সহায়তায় সঙ্কটের ‘ছিটেফোঁটা’ হয়ত মিটবে। ভারতের ডুবতে বসা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নৌকার সব ছিদ্র বন্ধ করতে এসব সহায়তা যথেষ্ট কিনা- তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে।

বিভিন্ন দেশের এই সহায়তায় কি ভারতের পরিত্রাণ মিলবে? কেউ দিচ্ছে অক্সিজেন জেনারেটর, কেউবা টিকা তৈরির কাঁচামালে দিচ্ছে; বড় বড় কোম্পানির নেতৃত্বে থাকা ভারতীয় ব্যবসায়ীরা দিচ্ছে নগদ টাকা। ২০২১ সালের শুরুতেও নরেন্দ্র মোদী সরকারের কথায় মনে হচ্ছিল, ভারত করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয় পেয়ে যাচ্ছে। অবশ্য মোদীর কণ্ঠ এখন অনেক গম্ভীর। রোববার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে (25 April 2021) তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের এই ‘ঝড়ে’ ভারত ‘কেঁপে উঠেছে।”

এরই মধ্যে অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে যথারীতি বসেছে আইপিএল-এর আসর। দর্শকশূন্য মাঠ হলে হবে কী! নিরাপত্তার ব্যবস্থা তো করা চাই! অতএব স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে অ্যাম্বুলেন্স, কোভিড পরীক্ষার যাবতীয় সরঞ্জাম। ওদিকে শহরের মানুষ খাবি খাচ্ছেন, ওষুধের অভাবে, শয্যার অভাবে ধুঁকছেন। আইপিএল চলছে। কারা চালাচ্ছে? কার স্বার্থ রক্ষা করছে ভারতীয় ক্রিকেট? ক্ষোভে ফেটে পড়ছে নাগরিক সমাজ।

দিল্লির সুভাষনগর শ্মশানে টিনের চালের নিচে সারি সারি চিতা জ্বলছে। উড়ছে ছাই। এমনিতে নতুন নয় এই দৃশ্য। কিন্তু সেই ছাই উড়ে পড়ছে পাশের যে চাতালে? সেই চাতাল ধরেই এখন মৃতদেহের সর্পিল রেখা। এক ঝলক তাকালেই মাচার সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা অন্তত ১৫-২০টি দেহ চোখে পড়ছে। পাশের উঁচু বাঁধানো জায়গায় ঘি এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে বসে রয়েছেন স্বজনরা। এক, দুই ঘণ্টা নয়, ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টাও বসে রয়েছেন কেউ কেউ। যে প্লাস্টিকের ব্যাগে মৃতদেহ মোড়া রয়েছে, তার ওপর নাম, নম্বর লেখা। হাতছাড়া হওয়ার ভয় নেই। তাই একটানা বসে না থেকে পোড়া দেহের গন্ধ এবং ধোঁয়া থেকে বেরিয়ে মাঝেমধ্যে বাইরে ঘুরে আসছেন অনেকে। শুধু একটি শ্মশানের ছবি নয় এটা। দক্ষিণ দিল্লির বিকাশ নগরে সোমবার রাতে বছর ৩৫-এর এক কোভিড রোগিনীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দীনদয়াল হাসপাতালে।

সেন্টার ফর ডিজিজেস ডায়নামিকস, ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিসির পরিচালক ডা. রামাণন লক্ষ্মীনারায়ণ বলেন, ভারত যদি দ্রুততার সাথে টিকা উৎপাদন বাড়াতে পারে এবং জরুরি ভিত্তিতে অন্য কোম্পানিকে টিকা তৈরির অনুমোদন দেয়, তাহলে করোনাভাইরাসের এই সঙ্কট নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। আর তার মতে, এটাই একমাত্র ‘দীর্ঘমেয়াদী সমাধান’। লক্ষ্মীনারায়ণ বলেন, ‘ভারত যদি চায়, তবে সেটা করার সামর্থ্য আছে এ দেশের।” থাকবে, মানুষ মানুষকে রক্ষা করবে, মানুষ মানুষের কাছ থেকে উপকৃত হবে। ক্ষমতার দম্ভ, খ্যাতির দম্ভ, বিত্তের দম্ভ এসব কিছুই নিমিষেই যে কোনো সময় চুপসে যেতে পারে। বড় কোনো শক্তির কাছে নয়। অতি ক্ষুদ্র এক আণুবীক্ষণিক ভাইরাসের কাছে। পুরো দুনিয়াটাকে অচলাবস্থায় নিয়ে যেতে পারে খালি চোখে অদেখা এক ভাইরাস। তাই আমাদের সব রকমের দম্ভকে যেন আমরা সবসময় নিয়ন্ত্রণের মাঝেই রাখি।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ ভারতের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়। দিল্লি শ্মশানে জুড়ে অব্যাহত আকালের স্মৃতি! নিভছে না চিতা! একটা কথা বড়ই ভাবাচ্ছে। মৃতদেহের দীর্ঘ সারির মাঝখানে দাঁড়িয়ে! গত ২৪ ঘণ্টায় (আনন্দবাজার পত্রিকা, নয়াদিল্লি ৩০ এপ্রিল ২০২১ ) দিল্লিতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৬৮ জনের। বৃহস্পতিবার রাজধানীর এক শ্মশানে। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে বাংলায় দেখা গিয়েছিল, শ্মশানে ‘শৃগাল-কুকুর’। ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাস ফিরে দেখলে, ‘‘কে কাহাকে জল দেয়, কে কাহাকে স্পর্শ করে?… অতি রমণীয় বপু অট্টালিকার মধ্যে আপনা আপনি পচে।’’

রাজধানীর বর্তমান পরিস্থিতি এই রকমই কি না, সেই প্রশ্ন আজ দগদগে। শ্মশানে জায়গা না-পেয়ে বাড়িতে মৃতদেহ ফিরিয়ে এনে পচন আটকাতে বরফ-চাপা দেওয়াটা দিল্লির বিভিন্ন প্রান্তে নিত্য-নৈমিত্তিক। একাকী যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের কারও কারও সৎকার হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে। অক্সিজেন নিয়ে হাহাকার অব্যাহত, নিভছে না চিতা। গড়ে প্রতি ঘণ্টায় দশ থেকে পনেরো জন কোভিড রোগীর দাহ হচ্ছে শ্মশানে।

অক্সিজেনের অভাবে, বেড এর অভাবে মানুষ মরেছে, আর কেন্দ্র সরকার রাজ্য সরকারের উপর দোষারোপ করছে। আবার রাজ্যে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখিয়ে কেন্দ্রীয় মোদী সরকার বাহ্ বা লোটার চেষ্টা করছে । মোদী মিডিয়া দিন রাত প্রচার করছে এই মহামারীর জন্য মোদী সরকার নয় সিস্টম দায়ী।

সিস্টেম চালায় কে?
বিভিন্ন রাজ্যের বড় বড় শহর গুলির শ্মশানে দিন রাত ২৪×৭ লাশ জ্বলছে, টোকেন নিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে কখন নম্বর আসবে? কোথাও কোথাও একসঙ্গে ৫০ থেকে ৭০টি লাশ একসঙ্গে জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। মহারাষ্ট্রের বিড় জেলা সদরের মত ছোট্ট শহরে একটা অ্যাম্বুলেন্স এ ২২টি লাশ একসঙ্গে নিয়ে গিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে সকলে দেখেছেন। গুজরাটের সুরাট শহরে লাশ জ্বালাতে জ্বালাতে চিমনি গলে পড়ার খবর খুব বেশি পুরনো নয়। দেশের এমন কোন রাজ্যে নেই যেখানে গণমৃত্যু না হচ্ছে। অথচ দেখুন সরকার এবং সংবাদ মাধ্যমে বলছে গত ২৪ ঘন্টায় ২৮০০ মরছে, ৩২৯৮ জন মরেছে, ৩৬০০+ মরেছে। অর্থাৎ হাসপাতালের বাইরে বা হাসপাতালের ফ্লোরে, গাড়িতে অপেক্ষায় থাকা কখন হাসপাতালে ভর্তি করা যায়, বা বাড়িতে থাকা অবস্থায় করোনার কারণে মৃত্যু হলে সেগুলো গণনায় ধরা হচ্ছে না।
মৃতদেহের দীর্ঘ সারির মাঝখানে দাঁড়িয়ে অসহায় সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষই। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য, আইনজীবী অনীপ সচতে অক্সিজেন না-পেয়ে বাড়িতেই মারা যান। তাঁর স্ত্রী এবং কন্যা সকাল ১১টায় শ্মশানে গিয়ে শোনেন, ২৫ জনের পিছনে রয়েছেন তাঁরা। সচতের স্ত্রীর কথায়, “আমরা পুরো দিন অপেক্ষা করেছি, বিভিন্ন শ্মশানে ফোন করে গিয়েছি।” শেষে দাহকার্য হয় মাঝরাতে। এই শহরে যাঁরা একা রয়েছেন অথবা যাঁদের সঙ্গীও কোভিডে আক্রান্ত, তাঁদের পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর। দিল্লির বসন্তকুঞ্জের প্রবীণা বাসিন্দা সংঘমিত্রা সেন মারা গিয়েছেন কোভিডে। তাঁর স্বামীও করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে। একমাত্র ছেলে আটকে রয়েছেন বেঙ্গালুরুতে। যুব কংগ্রেস এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় সংঘমিত্রাদেবীর শেষকৃত্য হয়। একটি চ্যানেলে দেখা গিয়েছে শ্রুতি সাহাকে। মাকে বাঁচাতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে একটি কারখানায় লাইন দিয়েছিলেন শ্রুতি। সকলের হাতে-পায়ে ধরছিলেন, যদি ফাঁকা সিলিন্ডারটা একটু তাড়াতাড়ি ভরে দেওয়া হয়। তাঁকে বলা হয়েছিল, অপেক্ষা করতে। লাইনেই খবর এল, মা আর নেই।

ভারতে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো তিন লাখের বেশি করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে তিন লাখ ২৩ হাজার ১৪৪ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সংখ্যা সোমবার শনাক্ত হওয়া তিন লাখ ৫২ হাজার ৯৯১ জনের চেয়ে অনেকটা কম হলেও এতে সংক্রমণ হ্রাস পাচ্ছে, এমন সিদ্ধান্ত টানা বিভ্রান্তিকর হবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির একজন বিশেষজ্ঞ। টানা পাঁচ দিন ধরে দৈনিক রোগী শনাক্তের বিশ্বরেকর্ড করা ভারতের হাসপাতালগুলো শয্যা সংকট ও তীব্র অক্সিজেন ঘাটতিতে ভুগছে। উপচে পড়া ভিড় সামলাতে বহু রোগীকে ফিরিয়ে দিচ্ছে তারা। এ পরিস্থিতিতে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী হু হু করে বাড়তে থাকা সংক্রমণ মোকাবেলায় জরুরি চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে মাঠে নামার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

গতকাল সকালের আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আরও দুই হাজার ৭৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু এ সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি হবে বলে দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস। অপরদিকে, হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে রোববার জানানো হয়, টিকা তৈরির কাঁচামাল রপ্তানিতে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা তুলে নেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে ভারতকে চিকিৎসা, করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট, ভেন্টিলেটর এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ দেবে যুক্তরাষ্ট্র। আর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক টুইটে বলেন, ‘মহামারীর শুরুতে আমাদের হাসপাতালগুলোতে যখন চাপ বাড়ছিল, তখন ভারত যেভাবে আমাদের সহায়তা পাঠিয়েছে, ভারতের প্রয়োজনেও আমরা সহায়তা দিতে বদ্ধপরিকর।’
সোমবার বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সামনের মাসগুলোতে নিজেদের মজুদ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের ছয় কোটি টিকার ডোজ অন্যান্য দেশেকে দেওয়া হবে। তবে কোন কোন দেশ টিকা পেতে যাচ্ছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল, ডা. বিবেক মূর্তির ওই ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়নি। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে টিকার ঘাটতি না থাকায় ভারতকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিতে বাইডেনের কাছে তদবির চালিয়েছেন কংগ্রেস সদস্যরা। বিশ্বজুড়ে সংক্রমণের হার বাড়তে থাকার এই সময়ে অনেক দেশই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ওপর নির্ভরশীল।

টিকা উৎপাদনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী আদর পুনাওয়ালা এ মাসের শুরুতে টিকা তৈরির কাঁচামালের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে টুইট করেছিলেন। সোমবার হোয়াইট হাউজের কোভিড-১৯ টিকা সরবরাহের সমন্বয়কারী টিম ম্যানিং টুইটারে বলেন, গত মার্চে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের করা ডিফেন্স প্রোডাকশন অ্যাক্ট আসলে কোনো নিষধাজ্ঞা নয়। ‘কোম্পানিগুলো রপ্তানি করতে পারবে’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাস্তবে যেসব কোম্পানি আমাদের টিকা সরবরাহ করে, সারা বিশ্বেই তাদের পণ্য রপ্তানি হয়।’

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, সেরাম ইনস্টিটিউট এখন প্রতিদিন ২৪ লাখ ডোজ টিকা তৈরি করলেও টিকাদানের গতি বাড়াতে খাবি খাচ্ছে ভারত। ১৪০ কোটি মানুষের এই দেশে মোট জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা গেছে। অথচ মহামারীর মধ্যে ছয় কোটি ৬৪ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দিয়েছে ভারত। পাশাপাশি বিক্রির লক্ষ্য রেখে টিকা নীতি ঘোষণা করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ভারতকে ৪৯৫টি অক্সিজেন তৈরির যন্ত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য। এসব যন্ত্র খোলা বাতাস থেকে অক্সিজেন তৈরি করে রোগীদের দিতে পারবে। সেই সাথে ১৪০টি ভেন্টিলেটরও দেবে দেশটি। অক্সিজেন পাঠানোর চিন্তা করছে ফ্রান্স এবং অস্ট্রলিয়াও।

শত বৈরিতার মধ্যেও প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান এক্স-রে মেশিন, ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য সহায়তা দিতে চেয়েছে ভারতকে। মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা এবং গুগল প্রধান সুন্দার পিচাই জানিয়েছেন, ভারতকে অর্থ সহায়তা দেবে তাদের প্রতিষ্ঠান। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, করোনাভাইরাস মোকাবেলার প্রস্ততি এবং সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের চেয়ে পিছিয়ে ছিল ভারত। ডিউক গ্লোবাল হেলথ ইনোভেশন সেন্টারের পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক কৃষ্ণ উদয়কুমার বলেন, ‘আগেই আরও বেশি মাত্রায় বিনিয়োগের খুব দরকার ছিল।’

অতিমারির শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত দিল্লিতে কোভিডে মৃতের সংখ্যা পনেরো হাজারের কিছু বেশি। গত তিন-চার সপ্তাহে শুধুমাত্র নথিভুক্ত মৃতদেহ ৩৯৮২টি। সূত্রের মতে, প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি, কারণ নথিভুক্ত না-করেই অগণিত মৃতদেহ দাহ হয়ে যাচ্ছে। এগারো বছর ধরে দিল্লির দয়ানন্দ মুক্তিধাম শ্মশানে কাজ করছেন রাম পাল। জনে জনে প্রতিটি পরিবারকে বলছেন, ‘‘এখানে আসবেন না। জায়গা নেই।’’ কিন্তু সে কথায় কাজ হচ্ছে না। রাম পাল বলছেন, ‘‘এখানে প্রতিদিন ৩০টি দেহ দাহ করা সম্ভব। সেখানে গত পাঁচ দিনে রোজ চল্লিশ থেকে পঞ্চাশটি দাহকার্য করতে হয়েছে। সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, যমুনার তীরে দাহকার্যের ব্যবস্থা করুন। তা হলে অন্তত পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করা যাবে। এখানে তা সম্ভব হচ্ছে না। একটি দেহ দাহ করতে অন্তত ৩০০ কেজি কাঠ লাগে। এত কাঠই বা কে জোগায়? এখন তো কাঠের থেকে শবের সংখ্যা বেশি!

বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!