ডঃ বাহারুল হক : নিউ ইয়র্ক থেকে এবার টরন্টো ফিরার পালা। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম- নিউ ইয়র্ক থেকে সরাসরি টরন্টো যাবোনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন যাবো। সেখানে একদিন থাকবো। তারপর ওয়াশিংটন থেকে টরন্টো ফিরে যাবো। একদিনে যা দেখা যায় দেখবো। পুর্ব পরিকল্পনা মত আমরা খুব সকালে পৌঁছে গেলাম নিউ ইয়র্কের লা গুয়ার্ডিয়া এয়ারপোর্ট। এই এয়ারপোর্ট সম্মন্ধে একটু বলি। এটি নিউ ইয়র্কের তৃতীয় বৃহত্তম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। তবে নামটা শুনলে হঠাত মনে হয় এটা বুঝি সাউথ আমেরিকার হন্ডুরাস, গুয়েতেমালা, ইকুএডর, উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে, এ সমস্ত কোন দেশের এয়ারপোর্ট। আসলে কিন্তু তা নয়। নিউ ইয়র্কের অত্যান্ত জনপ্রিয় সফল এক মেয়র ছিলেন মিঃ ফিউরেলো লা গুয়ার্ডিয়া। তার কৃতিত্বপুর্ণ কাজের পুরস্কার হিসেবে, তার নামকে অমর করে রাখার জন্য এই এয়ারপোর্টের নাম দেয়া হয়েছে লা গুয়ার্ডিয়া এয়ারপোর্ট। মিঃ ফিউরেলো লা গুয়ারর্ডিয়ার আন্তরিক কর্মতত্পরতার ফসল এই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। সারা বিশ্বের ২৫টি ব্যাস্ততম এয়ারপোর্টের মধ্যে লা গুয়ার্ডিয়া একটি। প্রতি বছর গড়ে ২৫ মিলিয়ন যাত্রী এই এয়ারপোর্ট ব্যাবহার করে। লা গুয়ার্ডিয়া এয়ারপোর্টটি ৮০ বছরের ও বেশি সময় চালু রয়েছে।

বোর্ডিং পাস নিয়ে ওয়েটিং রুমে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর বিমানে উঠার জন্য যাত্রীদের বলা হলো। আমরা এগিয়ে গেলাম পাসপোর্ট নিয়ে। যাত্রীদের বিমানে উঠার অনুমতি দিল কিন্তু ‘ক্যারি অন’ ব্যাগটি রেখে দিল। যাত্রীদের হাতে এখন পার্সোনাল একটা ছোট ব্যাগ ছাড়া আর কিছু নাই। অনেক যাত্রীর হাতে পার্সোনাল ব্যাগও নাই। আমি বিমানের ভিতরে প্রবেশ করলাম। পেছনের দিকে ছিল আমার সিট। আমি সিটে গিয়ে বসলাম। পাশের সিটে আমার স্ত্রী বসলেন। কিন্তু আমার ছেলে বসলো অন্য সারিতে। ছোট একটা বিমান- ন্যারো বডিড সি – ৩১৯ বিমান। প্যাসিঞ্জারে হাউস ফুল। সিটে বসার পর বুঝলাম কেন ‘ক্যারি অন’ ব্যাগ যাত্রীদের থেকে নিয়ে নেয়া হয়েছিল। অন্যান্য বিমানে যেমন ওভার হেড বক্স থাকে ‘ক্যারি অন’ ব্যাগ রাখার জন্য এ বিমানে সে রকম ওভার হেড বক্স নাই। আমাদের বিমান সকাল নয়টায় ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে আকাশে উঠলো। তারপর আকাশে মাত্র সোয়া ঘন্টা। সোয়া ঘন্টা পর বিমান ওয়াশিংটনের রোনাল্ড রিগান ন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরন করলো।
আশ্চার্য! বিমানে যাত্রীদের কিছুই খেতে দেয়া হলো না, এমন কি এক কাপ কফিও না। বুঝলাম যে কোন কারণেই হোক আমেরিকান এয়ারলাইন্স অর্থ ব্যায়ে অসম্ভব সাবধানতা অবলম্বন করছে। তবে এই পথে তো দুনিয়ার আর কোন এয়ারলাইন্স গেলো না।
আমেরিকান এয়ারলাইন্স কেন গেলো? যাই হোক, বিমান থেকে নেমে আমরা লাউঞ্জে বসলাম। ওয়াশিংটনে এই আমাদের প্রথম আগমন। ওয়াশিংটন নিয়ে কথা আছে। জর্জ ওয়াশিংটন আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের অধিনায়ক যার নেতৃত্বে আমেরিকা স্বাধীনতা সংগ্রামে জয়ী হয়েছে, ১৭৭৬ সনে স্বাধীনতা লাভ করেছে। ১৭৭৬ সন থেকে আমেরিকা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাস্ট্র যে রাস্ট্রের অফিসিয়াল নাম ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা (ইউ এস এ) বা মার্কিন যুক্তরাস্ট্র।

স্বাধীন আমেরিকানরা সিদ্ধান্ত নিল স্বাধীনতার মহান কারিগর মেধাবি বীর পুরুষ জর্জ ওয়াশিংটনের নাম অমর করে রাখবে। ১৭৭৬ সনে আমেরিকা যখন স্বাধীন হয় তখন আমেরিকার রাজধানী ছিল পেন্সিলভ্যানিয়া। পরে নতুন রাজধানী হয় অন্যত্র। ১৭৯১ সনে নতুন সেই রাজধানীর নাম দেয়া হয় ওয়াশিংটন। ১৭৯১ সন থেকে ওয়াশিংটন স্বাধীন সার্বভৌম ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকার রাজধানী। জর্জ ওয়াশিংটনের নামে শুধু রাজধানীর নাম করে আমেরিকানরা পরিতৃপ্ত নয়। ওয়াশিংটনের নামে আরও কিছু করতে চায় তারা। এবার সিদ্ধান্ত নিল ওয়াশিংটনের নামে হবে একটা স্টেটের নাম। ১৮৫৩ সনে আমেরিকার স্টেটের তালিকায় সংযোজিত হলো একটা নতুন স্টেট। দি স্টেট অব ওয়াশিংটন। কোন স্টেটের নাম পরিবর্তন করে এ নাম রাখা হয়নি। অরিগন স্টেটের একটা অংশকে পৃথক করে নাম দেয়া হয়েছে স্টেট অব ওয়াশিংটন। নদীর নামে শহরের নাম হয়, প্রতিষ্ঠানের নাম হয়, যেমন কানাডার রাজধানী অটোয়া শহরের নাম হয়েছে অটোয়া নদীর নামে। হাম্বার নদীর নামে আছে হাম্বার কলেজ, এরকম আরো বহু। কিন্তু মানুষের নামে শহরের নাম! আমার জানা মতে ২য়টি নাই। আছে শুধু ওয়াশিংটন। শহরটি একেবারেই আমাদের অচেনা। তবে ছেলে সাথে আছে, অতএব চিন্তার কিছু নাই। প্রথমেই আমরা ব্রেক ফাস্টের কথা ভেবে নিলাম। আমরা ব্রেক ফাস্টটা এয়ারপোর্টেই সেরে নিলাম। আমরা যেহেতু এক দিনের বেশি থাকবো না তাই আমরা সবচেয়ে বেশি আকর্ষনীয় স্থান গুলো দেখার পরিকল্পনা করে রেখে ছিলাম। ওয়াশিংটন আসলে একটি পার্ক এবং মেমোরিয়াল-মনুমেন্টের শহর। আছে লিংকন মেমোরিয়াল, ওয়াশিংটন মনুমেন্ট, মার্টিন লুথার কিং মেমোরিয়াল, ওয়ার্ল্ড ওয়ার \ মেমোরিয়াল, জেফারসন মেমোরিয়াল, ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট মেমোরিয়াল, ইত্যাদি আরো অনেক। হোয়াইট হাউজ, ন্যাশনাল সেমেট্যারি, ক্যাপিটাল হুইল, মিউজিয়াম অব দি বাইবেল, এসবও ওয়াশিংটনে অন্যতম প্রধান আকর্ষনীয় স্থান। ওয়াশিংটনে বেড়াতে যারা আসেন তারা অনেকেই পটোম্যাক নদী, আমেরিকার জাতীয় নদী, দর্শনেও যান। পটোম্যাক নদীর অববাহিকা পর্যটকদের আকর্ষণ। পটোম্যাক নদীর অববাহিকায় এক কৃষক পরিবারে ১৭৩২ খ্রীস্টাব্দে জন্মগ্রহন করেন জর্জ ওয়াশিংটন, আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম পুরুষ, আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট।

লাউঞ্জের বাহিরে এসে দাঁড়ালাম। ছেলে একটা উবার ডাকলো। উঠে বসলাম টেক্সিতে। গন্তব্য ওয়াশিংটন মনুমেন্ট। দশ মিনিট পরই আমরা পৌঁছে গেলাম ন্যাশনাল মলে যেখানে মনুমেন্টটি অবস্থিত। মনুমেন্টটি আর কিছু নয় একটা চতুষ্কোণাকার স্তম্ভ যা দাঁড়িয়ে আছে ওয়াশংটনের যত ভবন, প্রাচীর, মনুমেন্ট, মেমোরিয়াল আছে সব কিছু ছাড়িয়ে একেবারে আকাশ ছুঁয়ে। এত উঁচা! আমিতো দেখে অবাক। স্তম্ভটির শীর্ষদেশ পিরামিড আকৃতির। ধীরে ধীরে হেঁটে পৌঁছে গেলাম ওয়াশিংটনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের একেবারে কাছে। সেখানে একজন দর্শনার্থীদেরকে বলে যাচ্ছেন স্মৃতিস্তম্ভটি সম্বন্ধে। এটির উচ্চতা ৫৫৫ফুট। সে সময় এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচা স্ট্রাকচার। পরে প্যারিসে আইফেল টাওয়ার নির্মিত হলে ওয়াশিংটন স্মৃতিস্তম্ভ ২য় স্থানে নেমে আসে। এটি নির্মানে ব্যাবহার করা হয়েছে বিশুদ্ধ গ্র্যানাইড আর মার্বেল মেটাফোরিক পাথর। এটি ইজিপ্সিয়ান পিরামিডের আদলে তৈরি করা হয়েছে। বাহিরটা সলিড, কিন্তু ভিতরটা হলো। ভিতরে সেন্টারে আছে একটি এলিভেটর। এলিভেটরের চারপাশে আছে সিঁড়ি। সিঁড়ি বেয়ে যেমন উপরে উঠা যায় তেমনি এলিভেটরে চড়ে উঠা যায় স্মৃতিস্তম্ভের একেবারে শীর্ষদেশে। আমরা উপরে উঠতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। আমরা টিকেট পাইনি। দর্শনার্থী এত বেশি যে অন্তত দুইদিন আগে টিকেট সংগ্রহ করতে হয়। আমরাতো আরো দুইদিন থাকব না তাই আমরা আর টিকেট সংগ্রহ করতে গেলাম না। বাহিরে যা যেমন দেখা যায় তাই দেখলাম। স্তম্ভটিকে কেন্দ্র করে বাহিরে একটা সার্কেল আছে। সে সার্কেলে উঁচা উঁচা স্ট্যেন্ডের উপর উড়ছে আমেরিকার ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ। আমেরিকা রাস্ট্রটি যতগুলো স্টেট নিয়ে গঠিত ঠিক ততগুলো ফ্ল্যাগ সেই সার্কেলে উড়ছে।স্মৃতিস্তম্ভের নির্মান কাজ শুরু হয় ১৮৪৮ সনে। চার বছর চলার পর নির্মান কাজ অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৭৯ সনে পুনরায় কাজ শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৮৮৪ সনে। তারপরও ছোটখাট কিছু কাজ ছিল। সেগুলো সমাপ্ত করার পর ১৮৮৮ সনের অক্টোবর মাসে এটি সর্বসাধানের জন্য খুলে দেয়া হয়। ওয়াশিংটন মনুমেন্টের উত্তর পুর্ব পাশে কিছু ফোয়ারা আর সলিড কিছু স্তম্ভ নিয়ে আছে একটা গার্ডেন- ওযাশিংটন গার্ডেন। সেখানে স্তম্ভের সংখ্যা অমেরিকার মোট স্টেটের সংখ্যা নির্দেশ করে। প্রতিটি স্তম্ভে খোদাই করে লেখা আছে একটা করে স্টেটের নাম। ওয়াশিংটন মনুমেন্টের পুর্ব উত্তর পাশে আছে রেকটেংগুলার আকৃতির একটি অগভীর কৃত্তিম লেক। লেকটি প্রায় এক কিঃমিঃ লম্বা। ফলে লিংকন মেমোরিয়াল এবং ওয়াশিংটন মনুমেন্ট স্থাপনা দুটি মুখোমুখি হলেও একটি অপরটি থেকে এক কিঃ মিঃ দুরে। লেকটির তলদেশ এবং চতুর্পার পাথর দিয়ে বাঁধানো। লেকের দুপাশে আছে পাকা রাস্তা। সে রাস্তা দিয়ে দর্শনার্থীরা লিংকন মেমোরিয়াল এবং ওয়াশিংটন মনুমেন্টে সহজে যাওয়া আসা করতে পারে।

রাস্তার পাশে আছে বৃক্ষের সারি। বৃক্ষ, লেক, স্থাপনা, সব মিলিয়ে সেখানে সৃষ্টি হয়েছে এক মনোহর দৃশ্য। সে দৃশ্য দর্শনার্থীদের দিন রাত শুধু মুগ্ধ করছে। লেকটির যে পাশে ওয়াশিংটন মনুমেন্ট ঠিক তার বিপরীত পাশে আমাদের ২য় আকর্ষনীয় স্থান, লিংকন মেমোরিয়াল। এই মেমোরিয়াল আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট মহামতি আব্রাহাম লিংকনের স্মরণে নির্মিত হয়েছে। বলতে পারেন এত প্রেসিডেন্ট থাকতে শুধু আব্রাহাম লিংকন কেন? আছে, কারণ আছে। ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ এই ৪ বছর সিভিল ওয়ার চলে অমেরিকায়। এতে আমেরিকা ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা। অত্যান্ত মেধাবি-দুরদর্শী ব্যাক্তিত্ত¡ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের চেস্টায়, সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র নামক দেশটি তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়। সেই জন্য তিনি অসাধারন, সবার থেকে আলাদা, সবার থেকে বেশি স্মরণীয়-খ্যাতিমান।

লিংকন মেমোরিয়াল পশ্চিমমুখী একটি খোলা ভবন যা দেখতে প্রাচীন ক্লাসিক গ্রীক মন্দিরের মত। মেমোরিয়ালের মুল স্ট্রাকচারটির উচ্চতা ৯৯ ফুট। প্রথমে লেকের পার থেকে ক্রমশঃ উঁচা করে কংক্রিটের একটি ফাউন্ডেশন তৈরি করা হয়েছে। সেই ফাউন্ডেশনের উপর নির্মিত হয়েছে মুল মেমোরিয়াল। ফাউন্ডেশনের উপরের ফ্লাটফরম (যার উপর মুল মেমোরিয়াল ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে) থেকে নিচে লেকের পার পর্যন্ত আছে ৮৭টি সিঁড়ি। লেকের পার থেকে ২৯টি সিঁড়ি বেয়ে উঠলে ফাউন্ডেশনের প্লাজা। প্লাজা থেকে ফ্লাটফরম পর্যন্ত মোট সিঁড়ির সংখ্যা ৫৮টি। অসুবিধা নাই। যারা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে অক্ষম তাদের জন্য আছে এলিভেটর।
মেমোরিয়ালের মুল ভবনটির বহিঃঅঙ্গনে পেরিস্টাইল অনুসরন করে স্থাপন করা হয়েছে ৩৬টি স্তম্ভ। স্তম্ভগুলোর প্রতিটিতে আছে একটা করে স্টেটের নাম। গুপ্তঘাতক দ্বারা খুন হওয়া পর্যন্ত আব্রাহাম লিংকনের সময় আমেরিকায় স্টেটের সংখ্যা ছিল ৩৬টি; তাই মেমোরিয়ালে স্তম্ভও বসানো হয়েছে ৩৬টি। মেমোরিয়ালের ভিতরটা খোলা হলেও সেটাকে তিন ভাগে ভাগ করে তিনটি প্রকোষ্ঠ করা হয়েছে। মধ্যখানের প্রকোষ্ঠটিতে আছে স্বেত পাথরে তৈরি চেয়ারে বসা লিংকনের বিরাট এক ভাস্কর্য। দুই পাশের দুই প্রকোষ্ঠে পাথরের উপর খোদাই করে লেখা আছে লিংকনের বিশ্বখ্যাত কালজয়ী ভাষণ গ্যাটিসবার্গ ভাষণের চুম্বকাংশ। অগণিত দর্শনার্থীর পদভারে প্রকম্পিত এই লিংকন মেমোরিয়াল। ওয়াশিংটন মনুমেন্ট ও লিংকন মেমোরিয়াল কাছাকাছি হওয়াতে সুবিধা হলো। আমরা ওয়াশিংটনের দুইটি প্রধান দর্শনীয় স্থান কম সময় ব্যায় করে দেখতে পারলাম। তবুও বেলা হয়ে গেল। দুপুরের খাবার যে খেতে হবে। তাই আর দেরি না করে একটা উবার নিয়ে চলে গেলাম হোয়াইট হাউজ দেখতে। হোয়াইট হাউজ পেন্সিলভেনিয়া এভিনিউতে অবস্থিত। সেখানেই একটা রেষ্টুরেন্টে আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। রেষ্টুরেন্টও থেকে হোয়াইট হাউজ দুরে নয়। তাই হেঁটেই হোয়াইট হাউজের পথ ধরলাম। হোয়াইট হাউজ আমেরিকার প্রেসিডেন্টের অফিস কাম বাসভবন। জন এডামস আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি ১৮০০ সনে সপরিবারে হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেন। বলে রাখি এই স্বেত ভবন শুরু থেকে হোয়াইট হাউজ নামে পরিচিত ছিল না। এই ইমারত প্রেসিডেন্ট প্যালেস, প্রেসিডেন্সিয়াল ম্যানশন, প্রেসিডেন্ট হাউজ, ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিল। হোয়াইট হাউজ নামটি নথিভুক্ত করা হয় ১৮১১ সনে। হোয়াইট হাউজ থেকে আমরা চলে গেলাম দুনিয়া বিখ্যাত এক মিউজিয়াম দেখতে। ন্যাশনাল এয়ার এন্ড স্পেস মিউজিয়াম। এখানেই আমরা লম্বা সময় ব্যায় করলাম। এই মিউজিয়ামে অনেক কিছু দেখার আছে। তবে রাইট ব্রাদারস কর্তৃক উদ্ভাবিত দুনিয়ার প্রথম বিমানটি দেখার পর মনে হলো মিউজিয়ামে আসাটা সম্পুর্ণরুপে সার্থক হয়েছে। সারাটা দিন গেলো কোথাও বিশ্রাম না নিয়ে। ফলে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়লাম এবং নতুন কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে টরন্টো ফিরে যাওয়ার কথা ভাবতে থাকলাম।