অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক রুটে বাণিজ্যিক বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় শুধু ব্রিটেন ও আমেরিকার অন্তত দশ হাজার প্রবাসী দেশে দীর্ঘদিন ধরে আটকা পড়েছেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিপুল সংখ্যক যাত্রীও গন্তব্যে ফেরার অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। অনেক বৃদ্ধ ও অসুস্থ প্রবাসীর সঙ্গে আনা ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। সন্তানের জন্য চিকিৎসার জন্য সয়াদুধসহ অনেক ওষুধ তারা খুঁজে পাচ্ছেন না বাজারে। ব্রিটেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লকডাউন শিথিল করা হলেও শুধু বাণিজ্যিক বিমান চলাচল না থাকায় গন্তব্যে ফিরতে না পারা বহু প্রবাসী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রিটেন-বাংলাদেশ রুটে ফ্লাইট পরিচালনাকারী ইত্তেহাদ, এমিরাত, টার্কিশ এয়ারলাইন্সের পর সর্বশেষ গত ২৯ মার্চের পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও এই রুটে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। এতে করে প্রায় পাঁচ হাজার ব্রিটিশ নাগরিক ও দেশটির রেসিডেন্স পারমিটধারী স্থায়ী বাসিন্দা বাংলাদেশে আটকা পড়েন। এ পর্যন্ত ১২টি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছে আটকে পড়াদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। তবে এখনও দেশে রয়ে গেছেন প্রায় তিন হাজার। ব্রিটেনে স্বজনদের রেখে দেশে উদ্বিগ্ন অবস্থায় গৃহবন্দি অবস্থায় দিন কাটছে তাদের। ফিরতে না পারায় ব্রিটিশ সরকারের ঘোষিত নাগরিকদের জন্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
ফারজানা রহমান নামে আটকে পড়া লন্ডন প্রবাসী রবিবার জানান, রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে আগে ফিরে যাইনি। তখন ব্রিটেনের করোনা পরিস্থিতিও ভয়াবহ ছিল। এখন ফিরতে চাইছি কিন্তু ফ্লাইট পাচ্ছি না। ১৫ মাস বয়সী সন্তানকে নিয়ে আটকা পড়েছি।
সাংবাদিক আহমেদ বখত চৌধুরী বছরজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ উভয় দেশেই বসবাস করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক মার্কিন নাগরিক আটকা পড়েছেন। তারা নিজ দেশে ফিরে আসার জন্য ব্যাকুল। আমেরিকা থেকে ছুটি কাটাতে বাংলাদেশে আসা মার্কিন নাগরিকদের বাচ্চাদের খাবার, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ওষুধ-পথ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন পার করছেন।’
লকডাউনে আটকে পড়া প্রবাসীরা চরম ভোগান্তিরও শিকার হচ্ছেন। মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পেজে অনেকে অনুরোধ করছেন আরও কয়েকটি চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনার জন্য। এখন পর্যন্ত মার্কিন দূতাবাস দেশটির নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ৬টি চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে। সর্বশেষ ৫ জুন কাতার এয়ারওয়েজের একটি স্পেশাল ফ্লাইট ৪৬০ জন যাত্রী নিয়ে নিউ ইয়র্ক অবতরণ করে।
সৈয়দ করিম আহমেদ নামে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একজন যাত্রী জানান, হাইকমিশনে ফোন করলে বলা হচ্ছে ই-মেইলে যোগাযোগ করতে। তিনি অভিযোগ করেন, এয়ারলাইন্সগুলোর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা পাওয়া যাচ্ছে না। টার্কিশ এয়ারওয়েজ তার ৩১ মার্চের ফ্লাইট বাতিল করে। পরে তিনি একই এয়ারলাইন্সের পরবর্তী সম্ভাব্য ১৮ এপ্রিলের ফ্লাইটে টিকিট বুকিং দেন। ওই ফ্লাইটও বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। ফিরতি ফ্লাইটের টিকিটের অর্থ রিফান্ড চাইলে তা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। তারা এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছে।
ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশন বাংলাদেশে এখনও আটকে পড়া ব্রিটিশ নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সার্বিক পরিস্থিতি সমন্বয় করছে বলে জানা গেছে। তবে হাইকমিশনের একজন মুখপাত্র জানান, এই মুহূর্তে লন্ডনের পথে ঢাকা থেকে ব্রিটিশ সরকারের আর কোনও স্পেশাল ফ্লাইট নেই।
অপর একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক রুটে বাণিজ্যিক বিমান চলাচলে বাংলাদেশ সরকারের বিধিনিষেধ অব্যাহত রেখেছে। ১৫ জুনের পর তা শিথিল করা না হলে ব্রিটিশ সরকার আটকে পড়া যাত্রীদের ফিরিয়ে নিতে আরও কয়েকটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে।
ব্রিটিশ সরকার ছাড়াও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লন্ডন-ঢাকা রুটে একটি রিটার্ন ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কর্তৃপক্ষ চাইছে আটকে পড়া প্রবাসীদের নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরিয়ে দিতে। এজন্য তারা ইউরোপের বিভিন্ন রুটে স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে। একই সঙ্গে ব্রিটেন আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আশিক নবী রবিবার ফোনে জানান, লন্ডনে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের দ্বিতীয় বিশেষ ফ্লাইট আগামী ১৩ জুন ঢাকার পথে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ছাড়বে। এক্ষেত্রে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ইকোনমি ক্লাসে সাধারণ যাত্রীদের জন্য ৬০০ ব্রিটিশ পাউন্ড।