হিমাদ্রী রয় : জীবনে প্রতিটি মানুষের সান্নিধ্য এক একটি অভিজ্ঞতা। কেউ প্রয়োজনে প্রিয়জন হয়ে আসে, কেউ ব্যবহার করতে আসে, কেউ চৈতন্য হয়ে আসে। রেখে যায় সবক আর এর থেকে যে শিক্ষা মেলে তাহল নিজের উপর ভরসা করতে; কেননা রোদ পড়লে নিজের ছায়াও আড়াল হয়ে যায়।

অনেক ভিড়ের মাঝেও আমরা খুব একা। দুঃখ আর অপমান শুধুই পেছনে তাকায়, চিন্তা লেফট রাইট করবেই এক আত্মবিশ্বাসই সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আত্মবিশ্বাস আবার হোমিওপ্যাথির মাত্রার মত; প্রয়োজনের বেশি হওয়া চলবে না। আমি পারি কিংবা আমাকে পারতে হবে পর্যন্ত ঠিক আছে। একমাত্র আমিই পারি সেটি অহংকার হয়ে যায়। ইংরেজি আই থেকে মুক্তি এত সহজ নয় কাটতে হয় আর আইয়ের মাঝে দাগ কেটে প্লাস করলে চার্চের ক্রস হয়ে গেল; এত সহজ নয় জনাব খরচা আছে। বুকের রক্ত ঢেলে সকল অহংকার ডুবিয়েছিলেন যীশু।

আজকাল অভিজ্ঞতার ছায়া দেখলেই বসে পড়ি। সবকিছু চাইলেই তো আর গুগলে মিলে না। কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, ভালো হয়ে কাজ কর ভালো তবে সত হয়ে করা আরও ভালো, সাধনায় ফাঁকি দেওয়া চলবে না। কথাগুলো দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছি নিজের মধ্যে। পরিবর্তন মানুষের মধ্যে না খুঁজে আয়নায় খুঁজলে অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়।
ব্যাস্ত থাকার সুবিধা হচ্ছে স্বার্থবুদ্ধি থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায়। ব্যাস্ততায় দুঃখ, কিংবা জ্বালা অনুভবের সময় থাকে না। যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণই বেদনার অনুভূতি কাজ করে, রাগ, ক্ষেদ, জ্বালা, ইর্ষা কাজ করে। যাকে শ্মশানে পুড়িয়ে এসেছি তার মধ্যে জ্বলনের অনুভূতিও ছিলো না। অথচ জীবদ্দশায় একে অন্যের দ্বারা জ্বলেই চলেছি; যত দোষ আগুনের।

যে মানুষ কখনো নিজের যন্ত্রণা শেয়ার করে না তার মানে এই নয় যে, তার জীবন সুখে পরিপূর্ণ। ব্যাক্তিগতভাবে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ এদের অনেক দুঃখ ছিল কিন্তু তারা কলম ধরেছিলেন মানুষের জন্য, মানবতার জন্য। নিজের বেদনা আড়ালে রেখেছেন। গভীর নদীর মত, বয়ে চলেছে অথচ কোন আওয়াজ নেই। কান্না ছাড়াও যেমন কিছু-কিছু দুঃখ থাকে। আর আমরা আমদের জাগতিক প্রেম, অপ্রেম, বেদনা, বঞ্চনাকে শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করি, টাচে থাকার সহজ রাস্তা।

সময় ভালো আর মন্দ পরিবর্তন কালের নিয়ম। কে আর সময়কে মনে রাখে? কিন্তু সময়ে মানুষের পরিবর্তনগুলো মনে থাকে। সময় শোনেনা, সময় বলতে পারে না তবে দেখে সবকিছু। মানুষ মতলবের জন্য কতটা নিচে নামতে পারে এই বিনোদন কেবল সময়ই দেখাতে পারে। সময় আবার সুদ সমেত ফিরিয়েও দেয় অনেক কিছু।

যে সবাইকে খুশি রাখতে চায়, সবাইকে খুশি দেখতে চায় তাকেই একেলা থাকতে হয় অন্তে। তবে অন্তবিহীন জীবনের এই পথটায় চলার হক ছাড়তে নেই। দীর্ঘ পথচলায় কাল আপনজন খুঁজতাম এখন নিজেকে খুঁজি। এখানে রাস্তা জিজ্ঞেস করলে কেউ হয়তো পথ দেখায় কিন্তু গন্তব্য নিজেকেই খুঁজতে হয়। কেউ ভোঁকবে, কেউ কাটবে, জ্বলনের গন্ধ আসবে আবার কেউ মলমও লাগাবে।

মানুষকে সমীহ করে চললে অনেকেই এর কদর বুঝে না, সমাদর করতে জানে না। পাত্তা পাওয়াটাকে কেউ কেউ হক মনে করে। সম্পর্ককে যে কদর করতে জানে, সম্পর্ক ধরে রাখতে ঝোঁকে সেই। কিন্তু বারবার আপনিই ঝুঁকবেন তবে নিজেকে রুখে একটু ভাবুন। যে আপনার ইজ্জতের বেজ্জতি করাকে হক মনে করে, যখন কেউ আপনার সততা ও নিষ্ঠার কর্মকে, সৃজনশীলতাকে উদযাপন করতে পারে না, তোষামোদি আর কেয়ারিংকে গুলিয়ে ফেলে সেই সম্পর্ককে চালাতে হয় না তা সে হউক, দাম্পত্য, স্বকিয়া, পরকিয়া, দল, বন্ধু কিংবা নেতৃত্ব।

লক্ষে স্থির থেকে সত্যকে সহজে মেনে নিয়ে সিদ্ধান্তে অবিচল থাকলে মঞ্জিলের দিশা মিলবেই। আর মেলে দোয়া, আশীর্বাদ, ভালোবাসা।
‘যদিও সঙ্গী নাহি অনন্তঅম্বরে
যদিও ক্লান্তি আসিছে অঙ্গে নামিয়া
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনই অন্ধ বন্ধ করোনা পাখা’।