বিদ্যুৎ সরকার : মেঘ ছুঁয়েছে আকাশ
‘মেঘ বলেছে যাবো যাবো’… মেঘেরা ভীষণ দু:খি, তাদের একান্ত আপন কোন ঠিকানা নেই। শুধুই ঠিকানাবিহীন উড়ে উড়ে পথ চলা। এক আকাশ থেকে অন্য এক আকাশে, শূন্যে থেকে অনন্তে, সংগী হয়ে বাতাসের অনুকুলে, মনের প্রতিকুলে। অভিবাসী মেঘ প্রবাসী হয়ে যায় বড় অনিচ্ছায় বড় অবহেলায়। অভিমানী মেঘেরা বুঝি আমারই মতন। যেমন, আমি শেকড়হীন, নিজ ভ‚মি থেকে বিচ্ছিন্ন। মেঘেদের মতো আমারও অভিমান আছে, বার বার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ভালোবাসার এক ঠিকানা থেকে। মেঘেরা বড়ই ক্ষণস্থায়ী কোন এক আকাশে। এক দখিনা বাতাস সঙ্গী করে নিয়ে যায় উত্তরের অজানা, অচেনা কোন এক নতুন আকাশে। আমার অবস্থানটাও তেমনি স্বল্প মেয়াদী। পরিযায়ী পাখী হয়ে দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটে চলি বাঁচার তাগিদে। বিবাগী মেঘগুলোর মতো আমিও আবেগী হয়ে যাই। মেঘ আর আমার মধ্যে অন্তমিল খুঁজে বেড়াই এবং খুঁজেও পাই। এমনটা ভেবে দু:খ লাঘব করার চেষ্টা। তাই, আকাশের দোড়গোড়ায় ছুটে যাই। চিৎকার করে গেয়ে উঠি- ‘আকাশ আমায় ভরলো আলোয়, আকাশ আমি ভরবো গানে’। নাছোড়বান্দা মেঘের মতো আমিও ভীষণ নাছোড়বান্দা মানব। মেঘের আকাশ বদলের পালা আমার যেমন মৃত্তিকা বদল। সেই মৃত্তিকার সুধা ঘ্রাণ, রসময় নরম মৃত্তিকা, শীতল স্নেহময়ী মৃত্তিকা খুঁজে বেড়াই সারাক্ষণ। যে মৃত্তিকার অন্তরে গ্রোথিত ছিলো আমার শেকড়, আমার অস্তিত্ব, আমার প্রেম-ভালোবাসা, ঐতিহ্য।

শীতের সকালে জানালা গলে রোদ এসে ছড়িয়ে পরে না কাঠের মেঝেতে। পুরু কাচের পরতে পরতে আটকে থাকে বরফ গলা জলবিন্দু। সমস্ত সবুজ সাদা হয়ে আবির্ভাব হয় রাতের নির্জন প্রহরে। মৃত্তিকার টানে, শেকড়ের সন্ধানে মানুষ মানবিক হবার আলো চায়। অনিন্দ সুন্দর ভালোবাসার দিন রাত্রি আজ শুধুই স্মৃতি। বিষন্ন বিপন্ন স্মৃতি কাতর মন ভাংগা কাচের টুকরোর মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয় চারিধার। ‘মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভিতর মন খারাপের দিস্তা’…। এক মুঠো সকালের জন্য কি যে হাহাকার। একটু অনুরাগের ছোয়া, আর একটু উষ্ণতা সবই বুঝি নিরুদ্দেশ, ঠিকানাবিহীন সোনালী ডানার চিল। হারিয়ে গেছে অন্য এক আলো ঝলমল আকাশে।
বিদ্যুৎ সরকার : লেখক ও আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা