অনলাইন ডেস্ক : প্রযুক্তির নানা উদ্ভাবনীর কারণে এমনিতেই হুমকির মুখে রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ তার সাথে যেন আমাদের আতঙ্ক বাড়াতে আরও একটি জিনিসের প্রয়োজন বাকি ছিল! আর সেটি হল আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির উদ্ভাবন। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিজ্ঞানীর সর্বশেষ সতর্কতা যাকে অনেকে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতিষ্ঠাতা বা গডফাদার বলে মনে করে, তিনি এক সতর্কতার মাধ্যমে ভয়ের একটি নতুন স্তর যোগ করেছেন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) পথিকৃৎ মনে করা হয় ব্রিটিশ-কানাডিয়ান জেফ্রি হিনটনকে। তবে এআই আরও উন্নত হলে বিপদের আশঙ্কা করছেন তিনি। আর এই ‘অনুতাপ’ থেকেই হিনটন গুগল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। স¤প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ ঘোষণা দেন।

‘এআই গডফাদার’ খ্যাত জেফ্রি হিনটন বলেছেন, এআই চ্যাটবট যেসকল বিপদ ডেকে আনছে, সেগুলো বেশ ভীতিকর। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে তারা আমাদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান নয়, কিন্তু আমার মনে হয় তারা শীঘ্রই আমাদের থেকে বেশি বুদ্ধিমান হয়ে যাবে। অবশ্য চাকরি ছাড়ার পেছনে বয়সও একটা কারণ বলে জানিয়েছেন ৭৫ বছরের হিনটন। তিনি বলেছেন, ‘আমার বয়স ৭৫। তাই এখনই অবসরে যাওয়ার সময়।’

হিনটন বলেন, এআই চ্যাটবট থেকে কিছু বিপদ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি যত দূর বলতে পারি, এখন এআই চ্যাটবট আমাদের চেয়ে বেশি বুদ্ধি রাখে না। তবে শিগগিরই এমনটা হতে পারে।’ ডিপ লার্নিং ও নিউর‌্যাল নেটওয়ার্কের ওপর হিনটনের গবেষণাকে পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই গবেষণা চ্যাটজিপিটির মতো এআই পদ্ধতির উন্নয়নের পথ সুগম করেছে।
তবে ব্রিটিশ-কানাডীয় এই মনোবিদ ও কম্পিউটারবিজ্ঞানী বলেছেন, চ্যাটবট শিগগিরই মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা দেখছি জিপিটি-৪ তার সাধারণ জ্ঞানের মাত্রা অনুসারে মানুষকে ছাড়িয়ে যায় এবং এটি সফলভাবে তাদেরকে ছাড়িয়ে যাবে। তবে এটা এখন পর্যন্ত কার্যকারণ নির্ণয়ে ততটা দক্ষ নয়। তবে ইতিমধ্যে এটি সহজ কার্যকারণ মেলাতে পেরেছে।’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পথিকৃৎ বলেন, ‘অগ্রগতির ধারা বিবেচনায় নিলে আমরা ধারণা করতে পারি, দ্রæতই বিষয়গুলো আরও উন্নতি করবে। তাই এ নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার অবকাশ রয়েছে।’

এআইয়ের জন্য কি বিশ্ব প্রস্তুত?
নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধে হিনটন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, অসৎ কেউ খারাপ উদ্দেশ্যে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করতে পারে। বিষয়টির ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বিবিসিকে বলেন, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি যেটা হতে পারে, সেটা অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতো। হিনটন বলেন, ‘উদাহরণ হিসেবে আপনি ধরুন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মতো খারাপ কেউ রোবটকে নিজস্ব লক্ষ্যও ঠিক করার মতো ক্ষমতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ এই বিজ্ঞানী সতর্ক করে বলেন, ‘এতে রোবট নিজের লক্ষ্য স্থির করতে পারে, “আমাকে” আরও শক্তি অর্জন করতে হবে।’

এই গবেষণার পথিকৃৎ বলেন, ‘আমি পরিশেষে বলতে চাই, যে ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন আমরা করছি, তা বর্তমানে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আছে, তার চেয়ে পুরোপুরি আলাদা হবে।’ তবে হিনটন জোর দিয়ে বলেন, টেক জায়ান্ট গুগল এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে তিনি সমালোচনা করতে চান না। তিনি বলেন, ‘আমি গুগল সম্পর্কে ভালো কথা বলতে চাই। আমি গুগলের জন্য কাজ না করলে আমার বলা কথা আরও নির্ভরযোগ্য হবে।’

এক বিবৃতিতে গুগলের প্রধান বিজ্ঞানী জেফ ডিন বলেছেন, ‘আমরা এআই নিয়ে দায়িত্বশীল আচরণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নতুন কিছু উদ্ভাবনের পাশাপাশি আমরা ঝুঁকির বিষয়গুলোও বুঝতে পারছি।’

এ দিকে, কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা যারা আজকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ভিত্তি তৈরি করতে সাহায্য করেছেন তারা এর বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করছেন, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে তারা সেই বিপদগুলি কী বা কীভাবে তাদের প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে একমত। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে গত ৩ মে, বুধবার একটি সম্মেলনে হিনটন বলেছেন, যখন স্মার্ট জিনিসগুলো আমাদের ছাড়িয়ে যেতে পারে তখন মানবতার বেঁচে থাকা হুমকির মুখে পড়ে।
বুধবার সিবিসি রেডিওর অ্যাজ ইট হ্যাপেনসে তিনি নীল কোকসালকে বলেছিলেন, কয়েক বছরের মধ্যে তারা (এআই) মানুষের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি বুদ্ধিমান হতে পারে। বুধবার বক্তাদের তালিকায় শীর্ষস্থানীয় ছিলেন আরেক কানাডিয়ান জোয়েল পিনিউ। যিনি মন্ট্রিলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হওয়ার পাশাপাশি মেটা এআই গবেষণার একজন নেতা। মেটা ফেসবুকের মূল কোম্পানি।

চ্যাটজিপিটি’র মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও এরইমধ্যে এআই খাত নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিচ্ছে বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এই তালিকায় নাম আছে ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, চীন, জাপান, ফ্রান্স এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও।

রোবট বা যন্ত্রের দখলে চলে যাওয়া ভবিষ্যৎ কাল্পনিক পৃথিবী নিয়ে অনেক বছর ধরেই গল্প লিখে আসছেন হলিউডের চিত্রনাট্যকারেরা। এবার তারাই যন্ত্রের কাছে নিজেদের চাকরি হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন। প্রতিবাদে শুরু করেছেন ধর্মঘটও।

টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির (এআই) ব্যবহারে রাশ টেনে ধরার দাবি তুলেছে দ্য রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা-ডবিøউজিএ। তবে স্ট্রিমিং সেবায় মুনাফার কাটতি আর পড়তি বিজ্ঞাপনী আয়ে ধুঁকতে থাকা হলিউড স্টুডিওগুলো সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। কয়েক বছর ধরেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে হলিউড পাড়ায় বিতর্ক চলছে। শেষমেশ সোমবার থেকে ধর্মঘটে নেমেছেন মার্কিন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের চিত্রনাট্যকারেরা। সূত্র : সিবিসি নিউজ