অনলাইন ডেস্ক : গেল বছর নানা কারণে সরকারি খাদ্য মজুদের পরিমাণ তলানিতে ঠেকে। আপদকালীন মজুদ যেটুকু থাকার কথা তাও ছিল না সরকারি গুদামে। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমত ধান-চালের দাম বাড়ায়। সিন্ডিকেট ঠেকাতে চালকল মালিকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে এবং হুশিয়ারি দিয়েও সুফল আসেনি। ফলে বছরজুড়েই চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। বাধ্য হয়ে চাল আমদানির পথে হাটে সরকার। মজুদ বাড়াতে আমদানি শুল্কহার সাড়ে ৬২ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ১০ লাখ টন চাল আমদানির আভাস দেয় সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গেল বছরের শুরুতেই সরকারি গুদামে খাদ্য মজুদ ছিল ১৩ লাখ ৮৬ হাজার ৯৩ টন। জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি গুদামে কমপক্ষে সাড়ে ১০ লাখ টন খাদ্য মজুদ থাকতে হবে। অথচ বছরের শেষ দিকে মজুদের পরিমাণ দাঁড়ায় সাত লাখ ৩৮ হাজার ৯৪ টন। ফলে অসাধু চাল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে প্রতিনিয়ত চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন পাঁচ কোটি গরিব মানুষ। সংশ্লিষ্টরা জানান, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মিলাররাই ধান-চালের দাম বাড়ায়। ৩২-৩৩ টাকার মোটা চাল ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি কেজি মিনিকেট ও নাজিরশাইল বিক্রি হয় ৬২ থেকে সর্বোচ্চ ৬৭ টাকা। বিআর ২৮ চাল বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৪৮-৫১ টাকা। গেল বছর আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সাড়ে আট লাখ টন ধান-চাল কেনার টার্গেট নেয় সরকার। ২৬ টাকা কেজি দরে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে দুই লাখ টন ধান কেনার কথা। এ ছাড়া ৩৭ টাকা কেজি দরে ছয় লাখ টন সিদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ৭ নভেম্বর থেকে ধান ও ১৫ নভেম্বর থেকে চাল সংগ্রহ শুরু হয়। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে। কিন্তু আমনের ভরা মৌসুমেও সরকারি গুদামে চাল দিচ্ছে না মিলাররা। সরকারি দামের চেয়ে চালের দাম বেশি হওয়ায় তারা চাল দিচ্ছে না। চুক্তির সময় বাড়িয়েও মিল মালিকদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সাড়া পায়নি খাদ্য মন্ত্রণালয়। চলতি আমন মৌসুমে ছয় লাখ টন চাল কেনার টার্গেট নিলেও এখন পর্যন্ত মিলারদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে দেড় লাখ টনের মতো। অন্যদিকে চালের মজুত কমছে হু-হু করে। এমতাবস্থায় চাল আমদানির মাধ্যমে মজুদ বাড়ানোর পথে হাটে সরকার।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বন্যা, অতিবৃষ্টিসহ নানা কারণে গেল বছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমনের উৎপাদন হয়নি। যে কারণে ধানের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে চালের ওপর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশের মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৩৬ শতাংশ আসে আমন থেকে। গত বছর সারা দেশে ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমন চাষের টার্গেট নেয়া হয় এবং লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এক কোটি ৫৪ লাখ টন। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ৩৭টি জেলায় সব মিলিয়ে এক হাজার ৩২৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ফলে বাজারে আমন ধান ও চালের দাম বেশি।