অনলাইন ডেস্ক : ঈদের পর থেকে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সব চাকা সচল হতে শুরু করবে। সীমিত আকারে খুলে দেয়া হবে দেশের পর্যটন স্পটগুলো।

আগামী অক্টোবরের মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রায় সবই সচল করে দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত সীমিত আকারে সচল রাখার বর্তমান নির্দেশনাও তুলে দেয়া হবে।

বাড়ানো হবে দোকানপাট ও বিপণিবিতানগুলো খোলা রাখার সময়সীমা। মানুষের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরও শিথিল করা হবে। তবে সব খাতেই স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার শর্ত আরোপ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসায় সরকার এখন সবকিছু পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়ার পক্ষে।

বেসরকারি খাতসহ সংশ্লিষ্টরাও তাই চাচ্ছেন। তবে সবকিছু নির্ভর করবে করোনা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণের ওপর। কেননা ইতোমধ্যে আবার বিভিন্ন দেশে করোনা বিস্তার ঘটতে শুরু করেছে। এ কারণে সরকার বেশ সতর্কভাবে এগোচ্ছে।

করোনার সংক্রমণের শুরুতে গত মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যায়। ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় অঘোষিত লকডাউন।

জুন থেকে সীমিত আকারে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এখন প্রায় সব খাতই খুলে দেয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত পর্যটন, আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস, রেস্টুরেন্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ট্রেনিং সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম খুবই সীমিত আকারে চলছে। করোনা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এলাকাভেদে এসব কর্মকাণ্ড পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়া হবে।

এর মধ্যে ঈদের পর থেকে দেশের পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেয়া হবে। ইতোমধ্যে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতসহ আশপাশে পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু করোনা আতঙ্কে ও আর্থিক সংকটের কারণে ওইসব স্পটে পর্যটকদের আনাগোনা নেই বললেই চলে।

ঈদের পরদিন থেকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ও আশপাশে পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেয়া হবে। একই সঙ্গে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি পর্যটন স্পটগুলোও খুলে দেয়া হবে।

এগুলো যাতায়াতে ব্যবহৃত গণপরিবহন, আবাসিক হোটেল, মোটেল ও রেস্টুরেন্টে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে চলতে হবে। এগুলো তদারকি করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তবে ভারতে করোনার প্রকোপ এখন ব্যাপক থাকায় সীমান্ত এলাকার পর্যটন স্পটগুলো এখনই খুলে দেয়া হচ্ছে না। ভারতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে ওইগুলো খুলে দেয়া হবে।

পর্যটন খাত বন্ধ থাকায় হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট, গণপরিবহন ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের প্রণোদনা দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে এগুলো বন্ধ রাখতে চাচ্ছে না সরকার।

স্বাস্থ্য খাত ইতিমধ্যে বেশির ভাগই সচল করা হয়েছে। এখনও যেগুলো সচল হয়নি সেগুলো অচিরেই সচল করা হবে। এ বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হবে। সরকারি নির্দেশ না মানলে শাস্তির ব্যবস্থা বা লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

গণপরিবহনে এখনকার মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ইতোমধ্যে দেশের অভ্যন্তরীণ সব রুটে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ ছিল। ২৯ জুলাই থেকে এ রুটে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ট্রেন চলাচল বাড়ানো হবে।

রফতানিমুখী শিল্পের সব অফিস ও কারখানাই এখন খোলা। তবে অর্ডার না থাকার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এগুলো চালু রাখার জন্য বিকল্প উপায় খুঁজে বের করা হচ্ছে।

এর মধ্যে তৈরি পোশাকের জন্য একটি সেন্ট্রাল ব্যান্ডেড ওয়্যার হাউস করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। যেসব কারখানার অর্ডার নেই তারাও সীমিত আকারে কারখানা খোলা রেখে পোশাক তৈরি করে সেগুলো ওয়্যার হাউসে জমা রাখবে।

আগামী শীতের আগে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে পোশাকের চাহিদা বাড়বে। তখন এগুলো রফতানি করা হবে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলো রফতানিকারকদের ঋণ দিয়ে সহায়তা করবে। অন্যান্য যেসব শিল্পপণ্য মজুদ রাখা যায় সেসব শিল্পের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বের দেশগুলোর মধ্যে মিয়ানমার, চীন, ভিয়েতনাম, লাউস, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ অনেক দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ওইসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে।

এজন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে চিঠি দেয়া হবে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য। এদিকে বেসরকারি খাতের রফতানিকারক ও আমদানিকারকদেরও ওই সব দেশমুখী হতে পরামর্শ দেয়া হবে।

এখন পর্যন্ত সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সেপ্টেম্বর থেকে সীমিত আকারে চালু করা হবে। করোনা পরিস্থিতি আরও নিয়ন্ত্রণে এলে অক্টোবর থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীদের চলাচল হচ্ছে না। এতে এলাকা ভেদে গণপরিবহন, বই, খাতা কলম ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালু হলে এগুলো সচল হয়ে যাবে।

ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলো পুরোদমে চালু করা হয়েছে। তবে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি সীমিত রাখা হয়েছে। অক্টোবরের মধ্যে তা পুরোদমে চালু হবে।

এছাড়া আর্থিক সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্রঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ সব আর্থিক সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে।

কেননা, আর্থিক সেবা সীমিত হওয়ার কারণে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণের অর্থ ছাড়ে দেরি হচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল হতেও দেরি হচ্ছে।

মানুষের চলাচল এখনও সীমিত রয়েছে। করোনার ভয় কমাতে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে মানুষ নিজ নিজ কাজে বের হন এ বিষয়ে উৎসাহিত করা হবে।

বর্তমানে রাত ৯টার পর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে মানা। এ বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে।

রেস্টুরেন্টগুলো সীমিত আকারে চালু হলেও রাত ৮টার মধ্যেই বন্ধ করতে হচ্ছে। এর সীমা আরও বাড়ানো হবে।

জরুরি পণ্য উৎপাদন ও সেবার সঙ্গে জড়িত শিল্পকারখানা ও অফিস সার্বক্ষণিক খোলা রাখা হবে। এর মধ্যে বন্দর, বাসস্ট্যান্ড, হাসপাতাল, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস এসব প্রতিষ্ঠান।

উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে বন্দরের গতি আনতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, মোংলা সমুদ্রবন্দর, বিভিন্ন নদীবন্দর, স্থলবন্দরগুলো সপ্তাহে সাত দিনই প্রয়োজন অনুযায়ী খোলা রাখা যাবে।

এসব এলাকার ব্যাংকগুলো প্রয়োজন বোধে খোলা রাখা যাবে। একই সঙ্গে অন্যান্য সেবাও চালু থাকবে। এসব খাতে এখনও অনেক সেবা প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে চলছে।