অনলাইন ডেস্ক : দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ায় ছুটি বা পরিবারিক প্রয়োজনে ঢাকায় এসে আটকা পড়েছেন ইতালিতে বাসবাসকারী কয়েক হাজার বাংলাদেশি। তারা এক চরম অনিশ্চয়তায় দিনাতিপাত করছেন। কবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে? কবে ইতালিগামী ফ্লাইটে উঠতে পারবেন? সেই অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। অনেকের বৈধতা সংক্রান্ত কার্ডের মেয়াদ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। অনেকের কাজের কন্ট্রাক্ট শেষ হওয়ার পথে। রোম বা মিলানে রেখে আসা পরিবারের সদস্যরাও অভিবাবক শূণ্যতায় সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে কোন ফ্লাইটই তাদের বহনে রাজী হচ্ছে না। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশসহ ১৬ দেশের নাগরিকের ইতালি প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সহসা প্রত্যাহারের কোন লক্ষণ এখনও নেই।

যদিও প্রত্যেক রাষ্ট্রই স্বতন্ত্রভাবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একটি সূত্রের দাবি, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের বহনকারী মধ্যপ্রচ্যের একাধিক বিমান সংস্থাকে আর্থিক জরিমানা দিতে হয়েছে। যদিও জুলাই থেকে এ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকা অবস্থায় নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রাষ্ট্রগুলোর কোন নাগরিক ইতালি ইমিগ্রেশন পার হতে পারেননি। বিমানবন্দরের টারমার্ক কিংবা বোডিং ব্রিজ থেকে তাদের পুশব্যাক করা হয়েছে, ফিরতি ফ্লাইটে তুলে দেয়া হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইতালি ফিরতে মরিয়া বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ফেরানোর চমকপ্রদ অফার দিচ্ছে নানা দুষ্ট চক্র। তারা ইতালি সরকারের বিভিন্ন নোটিশ প্রচার করে আটকে পড়াদের বিভ্রান্ত করছে! রোম ও মিলানের বাংলাদেশ মিশনের দায়িত্বশীল কূটনীতিকরা বলছে, ইতালি সরকারের তরফে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সংক্রান্ত সুস্পষ্ট ঘোষণা না এলে কেউ ঢুকতে পারবেন না। তাছাড়া বিমান সংস্থাগুলোও তাদের বহনে রাজী হবে না। এতে ভিন্ন কৌশল বিশেষত তৃতীয় কোন দেশে ১৪ দিন অবস্থান করে রোম বা মিলানগামী ফ্লাইটে চড়ার চেষ্টা কতটা সফল হবে তা পরিস্থিতিই বলে দেবে। এমনটি হলে তা একান্তই ইতালি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত, তাকে ঢুকতে দিবে কি-না? সম্প্রতি ইতালি সরকারের এক নোটিশে বলা হয়, চার ক্যাটাগরিভুক্ত প্রবাসী, যারা বিভিন্ন দেশে আটকা পড়ে আছেন তারা ইতালি ফিরতে পারবেন। পর্যটন শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের জারি করা নতুন ওই অধ্যাদেশের বরাতে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশসহ নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা ১৬ রাষ্ট্রের নাগরিকরাও এ সূযোগ নিতে পারেন। যদিও দেশগুলোর নাগরিকদের বিমান চলাচল বারণ রয়েছে ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। নোটিশ বলছে, যে সব প্রবাসী ইতালিতে চাকরি করতেন এবং চাকরি থেকে অব্যাহতি না নিয়ে নিজ দেশে ছুটি কাটাতে গিয়ে করোনার কারণে ফিরতে পারেননি, তারা এখন ফিরতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে তাদের ইতালিতে কাজের চুক্তিপত্র (কন্ট্রাক্ট) প্রদর্শন করতে হবে। এছাড়া ইতালিতে যাদের ট্রেড লাইসেন্সসহ বৈধ ব্যবসা রয়েছে তারাও ফিরতে পারবেন। ইতালির বৈধ কাগজধারী প্রবাসী যদি পূর্বে দেশটিতে চিকিৎসা নিয়েছেন এমন ডকুমেন্ট প্রদর্শন করতে পারেন, চিকিৎসার প্রয়োজনে তিনিও ফিরতে পারবেন। কোন শিক্ষার্থী যদি ইতালিতে অধ্যয়নরত থাকেন তার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে তিনিও ফিরতে পারবেন। তবে অবশ্যই সবার ইতালিতে প্রবেশের জন্য ভিসাসহ বৈধ ডকুমেন্ট থাকতে হবে। যাদের কার্ড বা ডকুমেন্টের মেয়াদ করোনাকালে উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের নিকটস্থ ভিএসএফ গ্লোবাল থেকে রি-এন্ট্রি ভিসা নিতে হবে। তাছাড়া ইতালির স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে অটো সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে, যা ইতালি ইমিগ্রেশনে জমা দিতে হবে। বাংলাদেশি কূটনীতিকরা বলছেন, ইতালি সরকারের সাম্প্রতিক অধ্যাদেশ বা নেটিশ সত্য। তবে এতে যথেষ্ট অস্পষ্টতা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা বাংলাদেশসহ ১৬ দেশে ১৪ দিন অবস্থানের প্রমাণ পেলে তাদের কোন ফ্লাইটই বহন করবে না। যতক্ষণ না আইকাও ওয়েবসাইটে প্রচারিত ইতালি সরকারের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত নোটিশ পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে।