ড: বাহারুল হক : কর্ণাটকা দ্রাবিড় অধ্যুষিত দক্ষিণ ভারতীয় এক রাজ্য। কর্নাটক ইউনিভার্সিটি কর্ণাটকের এক স্বনামধন্য ইউনিভার্সিটি। ভারত সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে আমি গেলাম সে ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করতে। শীতের এক সকালে পৌঁছলাম ইউনিভার্সিটিতে। এর আগে আমার দৌড় ছিল ভারতের কলিকাতা পর্যন্ত। কলিকাতা পার হয়ে ভারতের অন্য কোথাও আমি আগে কোনদিন যাইনি। এই প্রথম কলিকাতা পার হয়ে বোম্বে হয়ে ঢার্ভার্ড যাওয়া। ঢার্ভার্ড রেল স্টেশনে নেমে বাসে কর্ণাটক ইউনিভার্সিটি মাত্র আধা ঘন্টার পথ। আমার সাথে বাক্স-পেটরা ছিল বলে বাসে না গিয়ে গেলাম একটা টেক্সি নিয়ে। টেক্সি গিয়ে সোজা থামলো আমার সুপারভাইজর প্রফেসর শ্রীনিবাস সাইদাপুরের বাসার সামনে। স্যারের বাসায় উঠলাম। আমি সকালে পৌঁছবো এটা স্যার জানতেন, তাই স্যার আমার সকালের নাস্তার সব আয়োজন করে রেখে ছিলেন। আমি বাঙালি, তাই স্যার আমার জন্য মিস্টি জাতীয় খাবারের ব্যবস্থা করে রেখে ছিলেন। দুদিন ধরে ট্রেনো পথে নানা রকম পছন্দ অপছন্দের খাবার খেয়ে সময় পার করেছি। তাই স্যারের বাসায় ভালো খাবার পেয়ে বেশ করে খেয়ে নিলাম। শরীর ক্লান্ত চোখে ঘুম, আমার এ অবস্থা স্যার বুঝলেন। তাই দেরী না করে আমাকে স্যার হোস্টেলে আমার রুমে রেখে আসলেন। বড় একটা রুম। আমি রুম মেট হিসেবে পেলাম দিপক মজুমদার নামে একজনকে। বেশ খুশি হলাম মজুমদারকে পেয়ে। কারণ মজুমদারও বাঙালি।
মজুমদারকে পেলামই না। তিনি সেই সকালবেলা আমার সাথে একটু কথা বললেন। তারপরই বেরিয়ে গেলেন কী কাজে। তিনি ফিরলেন রাতে। রাতে আমাকে বললেন- অদ্য শেষ রজনী। আমি চমকে উঠে বললাম – কেন? মজুমদার বললেন- কাল সকালে কলিকাতার ট্রেনে উঠবো, চলে যাবো কলিকাতা, আমার নিজ শহরে; আর কোনদিন ফিরবো না। মজুমদার বললেন এতদিন তিনি ছিলেন এত বড় ইউনিভার্সিটিতে একমাত্র বাঙালি ছাত্র । মনে মনে ভাবলাম- তাহলে তো এবার হবো আমি একমাত্র। যাক, আবার ফিরে আসি আগের জায়গায় মজুমদার চলে গেল। আমি গোসল করলাম। তারপর চলে গেলাম ডিপার্টমেন্টে। ডিপার্টমেন্টে গিয়ে সোজা চলে গেলাম আমার সুপারভাইজর প্রফেসর সাইদাপুরের রুমে। স্যার আমাকে নিয়ে গেলেন ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানের রুমে। স্যার আমার পরিচয় তুলে ধরলেন চেয়ারম্যান প্রফেসর হুলির সামনে। আমি অফিসিয়েলি জয়েন করলাম একজন পিএইচডি স্কলার হিসেবে। চেয়ারম্যান হুলির সাথে কিছুক্ষণ কথা বললেন আমার স্যার। কথাবার্তা যা হলো তা সবই হলো কানাড়া ভাষায়; ফলে আমি কিছুই বুঝলাম না।
স্যার তারপর আমাকে নিয়ে গেলেন তার ল্যাবে। বেশ বড় ল্যাব। ল্যাবে সে সময় উপস্থিত তার অন্য দুই পিএইচডি স্টুডেন্টের আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সে দুই জনের একজন হলেন ম্যাঙ্গালোরের সিভিল সার্জনের মেয়ে শান্তেরি কামাত, অন্যজন হলেন সুরেশ পাতিল। আমি খুব ক্লান্ত ছিলাম। তাই আমি হোস্টেলে ফিরে গেলাম। দুপুরের খাবার খেতে গেলাম ডাইনিং রুমে। ডাইনিং রুমের পরিবেশটাই অন্যরকম ঠেকলো। ছাত্ররা লাইন দিয়ে দাঁড়ানো। একটু একটু করে সামনের দিকে এগিয়া যাচ্ছে। প্রথমেই নিচ্ছে একটা খালি প্লেট। প্লেট নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি সেই প্লেটে দিচ্ছে রুটি, আর কয়েকটি বাটি। সেসব বাটির একটিতে ভাত অন্যগুলোতে আছে সবজি, নানা রকম ডাল আর একটা বাটিতে আছে দৈ। এ প্লেট নিয়ে এবার যেতে হবে সেদিকে যে দিকে আছে ডাইনিং টেবিল আর চেয়ার। আমিও গিয়ে বসলাম এক জায়গায়। টেবিলের উপর একটু দূরে দূরে রাখা আছে বালতি। সে সব বালতিতে আছে সাম্বার। সাম্বার ডালের মত একটা খাবার। তবে আমাদের দেশের ডাল নয়। আমাদের ডাল তৈয়ার হয় মসুর বা কলাই বা মুগ ডাল এবং পানি দিয়ে। সাম্বারে আছে নানা রকম পাতা, টমেটো, সামান্য পরিমাণ ডাল এবং আরো কি কি দিয়ে যেন। সেগুলো সব পানিতে দিয়ে তবে তৈরি করা হয়েছে এই ডাল জাতিয় খাবার, যা যত ইচ্ছা নিয়ে খেতে কোন বাধা নেই। আমি তাকিয়ে দেখছি কিভাবে খায়। আমিও শুরু করলাম। প্রথমে রুটি। রুটিগুলো ঠান্ডা। এই ঠান্ডা রুটি কিভাবে ছিড়ছে খাচ্ছে বুঝলাম না। ভাতের বাটিটা আর দৈ- এর বাটি, এই দুইটা বাটি অন্য বাটিগুলোর থেকে সাইজে ছোট। সেদিন সবজি ছিল বেগুন আর ডাল ছিল দুই রকমের। আমি নাম জানি না। ডাল বলতে আমরা যা বুঝি এগুলো সেরকম ডাল নয়। এ ডালগুলো জামিন্যাশন পর্যায়ে আছে এবং প্রত্যেকটি ডালের সিড কোট ভেদ করে একটা এমব্রায়ো বের হয়ে এসেছে। কাঁচা ডাল ভেজা কিন্তু কোন প্রকার ঝোলের মধ্যে ডুবানো নয়। ছেলেরা ডালগুলো প্লেটে ঢাললো। তারপর সেগুলোর উপর দৈ ঢেলে দিল। দৈ দিয়ে ডালগুলোকে ভালোভাবে মেশালো। এবার রুটি দিয়ে খাওয়া শুরু করলো। আমি প্রথমে একটু দৈ মুখে নিয়ে দেখলাম দৈ কেমন মিস্টি। মুখে দিতেই আমার মুখ চোখ খিচে আসলো। মিস্টি কোথায়! তেতুলের চেয়েও বেশি টক। এমব্রায়োওয়ালা কাঁচা ডাল আমি খাবো না। তেতুলের মত টক দৈও আমি খেতে পারবো না।
তাই ভাবলাম সবজি সাম্বার দিয়ে কতটুকু খাওয়া যায় দেখি। একটা রুটি ছিড়ে টুকর করলাম। সেখান থেকে কয়েক টুকরা বেগুনের তরকারির ঝোলে চুবায়ে খেলাম, কিন্তু বেগুন খেতে পারলাম না। বেগুন শক্ত; বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কাঁচাই বলতে পারি। ঝোল শেষ হলে সে বাটিতে নিলাম সাম্বার। রুটির বাকি টুকরাগুলো সাম্বারে চুবিয়ে ডুবিয়ে খেয়ে শেষ করলাম। আরেকটা রুটি রয়ে গেল। অথচ ছেলেরা সবাই গোগ্রাসে খেয়ে চলছে। তারা প্রত্যেকে আরো রুটি নিয়েছে। রুটি আর খাচ্ছি না। ফলে হাতে আছে শুধু ভাত। ভাবলাম সে ভাতের সাথে দৈ মেশাবো এবং সেই মিক্সারে চিনি ঢালবো। তারপর মজা করে খাবো। চিনি কোথায়? চিনিতো দেয় নাই। তাই একটা টেবিল বয়কে ডাকলাম এবং তাকে বললাম আমাকে চিনি দিতে। সে বললো- চিনি নাই। কি আর করবো? খালি পেটে চলে আসলাম রুমে। বিকালে বের হলাম ভালো করে নাস্তা খাবো এই আশায়। নাস্তা খেতে গিয়েও হতাশ হলাম। অচেনা সব আইটেম। আমি খুঁজতেছিলাম মিস্টি জাতিয় কিছু। সে রকম কিছু পেলাম না। সবই ঝাল ঘরানার। কোনটা বেশি ঝাল কোনটা কম ঝাল এই হলো পার্থক্য। দেখলাম খাদ্য সামগ্রির দামও বেশ। এখানে একটা আইটেম পেলাম যেটার নাম উত্তাপ্পা। উত্তাপ্পা সুজি দিয়ে তৈরি আমাদের দেশের সুজির হালুয়ার মত। পার্থক্য এই আমাদের সুজির হালুয়া মিস্টি, এখানকার এই উত্তাপ্পা ঝাল। উত্তাপ্পায় আছে পেয়াজ আর পোড়া মরিচ। সুবিধা এই যে পোড়া মরিচগুলো গোটা। কেউ খেতে না চাইলে টেনে টেনে তুলে ফেলেও দিতে পারে। আমি একটা বুদ্ধি করলাম। দুই প্লেট উত্তাপ্পা নিলাম। তারপর সেগুলোকে একটা প্যাকেটে রাখলাম।
ক্যান্টিন থেকে উত্তাপ্পার প্যাকেট নিয়ে ফিরে গেলাম হোস্টেলে। হোস্টেলে ফিরার পথে দোকান থেকে কিনে নিলাম দুধ আর চিনি। রাতে আবার সেই দুপুরের মত খাবার। একটা রুটি খেলাম সাম্বারে চুবিয়ে ডুবিয়ে। রুমে এসে বসলাম উত্তাপ্পা নিয়ে। বেছে বেছে উত্তাপ্পা থেকে পিয়াজ মরিচ বের করে নিলাম। এবার দুধ গরম করলাম। দুধের পাত্রে উত্তাপ্পা দিলাম। তারপর দিলাম চিনি। এবার একটা চামুচ দিয়ে ঘুটে উত্তাপ্পা, দুধ আর চিনি ভালো করে মিশালাম। ব্যাস হয়ে গেল চমৎকার সুজির হালুয়া। সেই হালুয়া খাওয়ার পর পেটে আর কোন ক্ষুধা রইলো না।। পরদিন গেলাম ল্যাবে। শান্তেরি আর সুরেশ উপস্থিত। ওদেরকে খাবার সমস্যার কথা বললাম। সুরেশ বললো, তুমি শহরে যাও। সেখানে ভালো ভালো মুসলিম হোটেল আছে। গিয়ে খেয়ে এসো। দুপুরে চলে গেলাম শহরে। পেট ভরে খেলাম খাজা হোটেলে। সে হোটেলে বীফ, মাটন, চিকেন আছে। পরটা আছে। বিরিয়ানি আছে। কাবাব আছে। আমি বাসমতি চালের বিরিয়ানী খেলাম। খেয়ে আবার আসলাম ল্যাবে। খেয়াল করলাম সুরেশ শান্তেরীর সাথে কথা বলে না। আবার শান্তেরীকে দেখি একা একা বসে বসে কাঁদে। আমার আর বুঝতে বাকি রইলোনা কিছু। সুরেশকে সুবিধার মানুষ মনে হলো না।
সুরেশ কথা বলে কম। সুরেশের সাথে মিশে মনে হলো এ বিশ্ব চরাচরে তার পছন্দ মত কাউকে বিধাতা এখনো সৃস্টি করেননি। অন্যদিকে শান্তেরী সরল প্রকৃতির একটা খুবই ভালো মেয়ে। শান্তেরীর অনুরোধে আমি সুরেশের সাথে কথা বলেছিলাম, কিন্তু কোন কাজ হয়নি। সুরেশের এক কথা- “শান্তেরীর নামও নিবে না আমার কাছে। অন্য কোন কথা থাকলে বলো”। আমি শান্তেরীকে বুঝাতে থাকলাম। শান্তেরী আত্মযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছে।
চিকিৎসক স্বামী আর দুইটা পুত্র সন্তান নিয়ে লন্ডনে বসবাস করছে এখন শান্তেরী। সুরেশ পাতিল থাকে আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র আমেরিকায়। পাশের ল্যাবে পেলাম সুহাশ পাতিল আর ড্যানিয়েল কোটিকে। তারা প্রফেসর হুলির পিএইচডি স্টুডেন্ট। তারা দুইজন আমার খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে গেল। ওদের সাথে মেলামেশা করে কথা বলে আমি তৃপ্ত হই। প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী ড্যানিয়েল আমার ল্যাবমেট সুরেশের ঠিক বিপরীত চরিত্রের একটা ছেলে।
ড্যানিয়েলের জন্মই হয়েছে মনে হয় সবাইকে ভালোবাসার জন্য। ড্যানিয়েলের মুখ দেখতে এখন আমার কোন বেগ পেতে হয় না। ভারতের কর্ণাটকা রাজ্যের হুবলি শহরে এ জি চার্চ নিয়ে ডঃ ড্যানিয়েল কোটি এখন সদা ব্যাস্ত। নেট দুনিয়ায় প্রবেশ করে ডঃ ডানিয়েল কোটি নামে খুঁজলেই ভেসে উঠবে ড্যানিয়েলের মুখ।
আমার ল্যাবের সুরেশ পাতিল থাকে শহরে। দুপুরে সে ক্যাম্পাসের পাশে একজনের বাসায় পেইং গেস্ট হিসেবে খায়। পাশের ল্যাবের সুহাশ পাতিল আর আমি দুপুরে একসাথে খাই। সুহাশ ঠিক করে আমরা কোথায় যাবো কোথায় খাবো। আমার ভালো লাগবে এটা ভেবেই সে স্থান ঠিক করে। ক্যাম্পাসে আমাদের সব চেয়ে কাছে নিজলিংগাপ্পা হোস্টেল। ফলে প্রায় আমরা দুপুরের খানা খাই সে হোস্টেলে। ক্যাম্পাসের আশে পাশে কয়েকটা ছোট হোটেল আছে। সময় থাকলে সেগুলোতে আমাদের যাওয়া হতো। হোস্টেলের চেয়ে বাহিরের সে সব হোটেলের খাওয়া ভালো বলে আমার মনে হতো। তবে একটানা কোথাও ভালো লাগতো না। তাই আমরা খাওয়ার জায়গা পরিবর্তন করতাম। ড্যানিয়েলকে আমরা খাওয়ার সময় পেতাম না। তার মটর বাইক ছিল। ড্যানিয়েল তাই বাসায় গিয়ে খেয়ে আসতো। আমাদের অর্থাৎ পিএইচডি, এমফিল, স্টুডেন্টদের যে হোস্টেল সেটা আমাদের ল্যাব থেকে দূরে ছিল। আমি প্রতিদিন রাত এগারটার আগে ল্যাব থেকে বের হতে পারতাম না। রাত নয়টায় আমি আমার ডিনার সেরে নিতাম নিকটস্থ নিজলিংগাপ্পা হোস্টেলে। আমার অসুবিধা হচ্ছে দেখে আমার স্যার নিজলিংগাপ্পা হোস্টেলে আমার থাকার ব্যবস্থা করলেন। আমি পরবর্তি তিন বছর নিজলিংগাপ্পা হোস্টেলে কাটিয়েছি। সুহাশের এক বন্ধুর বিয়ে। সুহাশের বন্ধু হিসেবে সে বিয়েতে যাওয়ার একটি নিমন্ত্রণ পত্র আমিও পেলাম। বিয়ের দিন আমি আর সুহাশ হাজির হলাম বিয়ের অনুষ্ঠানে। কর্ণাটকে কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে এই প্রথম আমার যোগদান করা। ফলে সব কিছু দেখছি বেশ আগ্রহ ভরে। দেখি বাহিরে বেশ বড় একটা প্যান্ডেল। সেখানে সব হচ্ছে। গেস্টরা দাঁড়িয়ে বসে খাচ্ছে, গল্প করছে। গেস্টরা অনেকেই বিশিষ্ট জন। নিয়ম মাফিক গেষ্ট গিয়ে একটা থালা নেয়। তারপর সে থালা হাতে এগিয়ে যাবে খাবার যেখানে দিচ্ছে সেদিকে। ছোটবড়-পিয়ন-প্রফেসর সবাই লাইনে। গেলে থালায় পড়বে নানা পদের খানা। কী খানা? মাছ, মাংস, ডিম এসব নাই। এসব ওরা খায়না। তাহলে কী? সবজির কয়েকটা আইটেম, পাতলা পরটা, সবজির খিচুড়ি, জিলাপি। ব্যাস, আর কিছু নাই। পরটা কয়টা দিবে তা আবার জানতে চায়। দেখলাম সবাই দুইটা নিচ্ছে। আমি তিনটা নিলাম। ঐ থালা নিয়ে দাঁড়িয়ে বসে খাচ্ছে সবাই। খানার চেয়ে গল্পে বেশি মত্ত সবাই। তাদের দেওয়া খাবারে আমার ক্ষুধা মিটলো না। কেউ ২য় বার খানার জন্য যাচ্ছে না দেখে লজ্জায় আমিও গেলাম না। অথচ পেটে ক্ষুধা। জিলাপি আমার সবচেয়ে প্রিয় আইটেম। তাও দিল সবাইকে একটা করে। হতাশ হয়ে বন্ধু সুহাশকে বললাম- “এই তোমাদের বিয়ের খানা”? উত্তরে সে বললো- “কী বল? কেউ কী এখানে খেতে এসেছে। নাকি? সবাইতো এসেছে আশীর্বাদ করতে। কী খেল, কী দিল এসব তো এখানে কেউ ভাবে না”। ওর কথা শুনে মনে মনে লজ্জা বোধ করলাম। আমাদের বিয়েতে খানার ধুম লেগে যায়! দোয়ার কথা উঠে না, উঠে খানার কথা। ম্যাঙ্গালোরের সিভিল সার্জনের মেয়ে আমার ল্যাবমেটা তার সাথে একদিন ওখানকার বিয়ের খানার কথা উঠলো। একটা জিলেপি দিয়েছে শুনে সে দুঃখ করলো এবং বেশ গর্ব করে বললো- “আমার বাবা ঠিক করেছে আমার বিয়েতে আগত গেস্টরা প্রত্যেকে দুইটা জিলেপি পাবেন”। শুনে আমি আফসোস (কৃত্রিম) করে বললাম- “আহারে! তাহলেতো তোমার বাবার অনেক টাকা খরচা হয়ে যাবে”। ওদের ধর্ম গ্রন্থে অপচয় নিয়ে কি লিখা আছে জানি না তবে আমাদের পবিত্র কোরআনে আছে – “আর তোমরা অপচয় করো না, কারণ তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না”। (সুরা আনআম: আয়াত- ১৪১)।