সোনা কান্তি বড়ুয়া : “আমার সোনার বাংলা” জাতীয় সংগীতটি আমাদের হিন্দু মুসলমানের ভালোবাসা. আমাদের গর্ব! “আমার সোনার বাংলা” যখনি আমরা আমাদের দেশের জাতীয় সংগীত শুনি তখনি আমাদের গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায় কেননা “আমরা এই দেশকে ভালোবাসি, এই দেশের মাটিকে ভালোবাসি, এই দেশের সৎ মানুষদেরকে ভালোবাসি। ধর্মের জিগির তুলে মুক্তচিন্তা বা বিশ্বাসকে ভুল পথে প্রবাহিত করে স্বার্থোদ্ধারে দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর কাজে তাদের কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। মানবতার কল্যাণে নিবেদিত বাংলাদেশ এবং বাঙালি সংস্কৃতির মূল কথা হলো বিশ্বমানবতা, অসা¤প্রদায়িকতা ও স¤প্রীতি। ‘আজি ভুসুকু বঙ্গালী ভইলী ভুসুকু আজ আলোকপ্রাপ্ত সিদ্ধপুরুষ বা বাঙালি হলেন” থেকে ঐতিহাসিক’ শব্দের অভ‚তপূর্ব সংযোজন হয়েছিল। স¤প্রতি টরন্টোর বাংলাদেশী সাপ্তাহিক আজকাল (১১ আগষ্ট, ২০০৯) পত্রিকার ৩০ পৃষ্ঠায় ইংরেজি সংবাদে আমরা পড়েছি, বৌদ্ধধর্ম পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মের পুরস্কার লাভ করেছেন।” এবং আগামীর বাংলাদেশ হবে মানবতার কল্যাণে নিবেদিত একটি দেশ।
বাঙালী জাতির আত্মপরিচয়ে বিশ্বমানব হবি যদি আদর্শ বাঙালি হও, সম্পূর্ন বাঙালি (আলোক প্রাপ্ত মহাপুরুষ) হও।” বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে “আমার সোনার বাংলা” বেছে নেওয়ার পিছনে রয়েছে বাঙালির স্বাতন্ত্র্যবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান মিলিয়া “আমার সোনার বাংলা” জাতীয় সংগীতটি আমরা গাইতাম। ধর্ম মানব জাতির সদাচরনে এবং আমাদের সময় (১০ই জুলাই, ২০০৭) পত্রিকায় হেডলাইন সংবাদ ছিল, জেহাদের প্রস্তুতি নিতে সারা দেশে প্রচার পত্র বিলি করেছেন নিষিদ্ধ হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামির অন্যতম নেতা মুফতি মুনসূরুল হক। তার লেখা বইয়ের নাম আফগান জিহাদ। রামুর মুসলমান ফেইসবুকে কোরাণের উপর পদচিহ্ন রচনা করলে সে বেঈমান মুসলমান! রামুর বৌদ্ধ বিহার ধ্বংসযজ্ঞের শোক ও মৌলবাদের বৌদ্ধ নির্যাতন! অন্যকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার যোগ্যতা নেতৃত্বের অন্যতম প্রধান গুণ। কারণ সব কাজ তাঁর একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। তিনিই যোগ্য নেতা, যিনি অসংখ্য নেতা তৈরি করার ক্ষমতা রাখেন। নেতা তৈরি করার উপায় কী? উপায় হলো অনুপ্রাণিত করা। আর একবার অনুপ্রাণিত হলে তিনি নেতার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকবেন। সব সমস্যায় যদি নেতাকেই এগিয়ে আসতে হয়; বুঝতে হবে, তিনি নেতা তৈরি করতে পারেননি। নিজের ও দলের আদর্শে কর্মীদের উজ্জীবিত করতে পারেননি।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পণ্ডিত ড. হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, প্রতিক্রিয়াশীল POLITICAL ISLAM নষ্টরা “বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ- ঠাকুর যাঁকে বাতিলের চেষ্টা করে আসছে নষ্টরা পবিত্র পাকিস্তানের কাল থেকে; পেরে ওঠেনি। এমনই প্রতিভা ঐ কবির, তাঁকে বেতার থেকে বাদ দিলে তিনি জাতির হৃদয় জুড়ে বাজেন; তাঁকে পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিলে তিনি জাতির হৃদয়ের কাব্যগ্রন্থে মুদ্রিত হয়ে যান, তাঁকে বঙ্গভবন থেকে বাদ দেওয়া হলে তিনি সমগ্র বঙ্গদেশ দখল করেন; তাঁর একটি সংগীত নিষিদ্ধ হলে তিনি জাতীয় সংগীত হয়ে ওঠেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মুসলমান ছিলেন না! যদিও তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা, তবুও তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি নন WHY?
প্রতিক্রিয়াশীল নষ্টরা অনেক লড়াই করেছে তাঁর সাথে, পেরে ওঠেনি; তাঁকে মাটি থেকে বহিষ্কার করা হলে তিনি আকাশ হয়ে ওঠেন; জীবন থেকে তাঁকে নির্বাসিত করা হলে তিনি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন জাতির স্বপ্নালোকে। নষ্টরা তাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে আপ্রাণ। যদিও তিনি জাতীয় সংগীতের রচয়িতা, তবুও তিনি জাতীয় কবি নন। তাঁর নামে ঢাকায় একটি রাস্তাও নেই; সংস্থা তো নেই। তাতে কিছু যায় আসে নি তাঁর; দশকে দশকে বহু একনায়ক মিশে যাবে মাটিতে। তিনি বেঁচে থাকবেন বাঙলায় ও বিশ্বে।”
“আমার সোনার বাংলা” জাতীয় সংগীতটি -দ্য লাইট অব বাংলাদেশ আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে শক্তি দিয়েছে। এটি কোনো একক ব্যক্তির জাতীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয় নয়; বরং এটি আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক। ‘বাংলাদেশ ও -জাতির সাহিত্যের ইতিহাসে “আমার সোনার বাংলা অপরাজেয়” জাতীয় সংগীতটি – দ্য লাইট অব বাংলাদেশ! ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ! আমরা দাম দিয়ে কিনেছি বাংলাদেশ।
জনাব মহসিনুল হক: (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, চাঁদপুর, SAMAKAL, 13 NOVEMBER 2023), লিখেছেন, “আমরা চাই বাংলাদেশের তরুণদের একদিকে থাকবে বিশ্বাস, আরেকদিকে থাকবে যুক্তি ও বিবেক। ধর্মের জিগির তুলে মুক্তচিন্তা বা বিশ্বাসকে ভুল পথে প্রবাহিত করে স্বার্থোদ্ধারে দেশ-জাতির জন্য ক্ষতিকর কাজে তাদের কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। ধর্ম হবে এক আলোকবর্তিকা।
সমাজে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় মানুষকে উজ্জীবিত করে তোলার মূলমন্ত্র হবে এই ধর্ম। সবার ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবন হবে নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সংস্কার ও আদর্শ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। সেখানে কেউ কারও বিশ্বাসের প্রতি অবজ্ঞা হেতু কুৎসিত আক্রমণ করবে না। ধর্মের জিগির তুলে মুক্তচিন্তা বা বিশ্বাসকে ভুল পথে প্রবাহিত করে স্বার্থোদ্ধারে দেশ-জাতির জন্য ক্ষতিকর কাজে তাদের কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।”
বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের অভিষেকের তরে সোনার ঘটে আলোক ভরে! বিশ্বসাহিত্যে রবীন্দ্র সাহিত্যের স্রষ্টা বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ১৬৪তম শুভ জন্মজয়ন্তীতে পুণ্যচেতনা স্মরণ করে বিশ্বকবিকে মোদের সাষ্ঠাঙ্গ প্রনতি। তিনি সব বাঙালির। আসুন, সবাই মিলে সেই শুভ দিনটি উদ্্যাপন করি। বৌদ্ধ সহজতত্ত¡ ও রবীন্দ্রনাথের অরূপ সাধনা এই রূপ সব্যসাচী প্রতিভাধর মানুষ আর দেখা যায় না! সাহিত্যের সর্বদিকে তাহার বিচরণ মানুষকে দেয় প্রশান্তি, খুঁজে পায় বিশ্বমানবতা দর্শনের ভাবধারা, তাই সেই বিশ্বমানবতায় উদ্ভাসিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিরন্তন! আজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ১৬৪ তম জন্মদিনে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বাংলা সাহিত্য জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে যদি কেউ থেকে থাকেন তাহলে সেটা অবশ্যই আমাদের সকলের প্রিয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর অসাধারণ লেখা সব কবিতা ও গান, আজও প্রত্যেকটা বাঙালীর সমানভাবে মন কাঁড়ে। তিনি শুধু একজন শ্রেষ্ঠ গল্পকারই ছিলেন না, সেইসাথে ছিলেন একজন ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিকও! ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ২২৩২টি গান, ১৩টি উপন্যাস, ৯৫টি ছোটোগল্প, ৩৬টি প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৯ খণ্ড চিঠিপত্র, বহু অসামান্য ছবি, মোট ৩২ খণ্ড রচনাবলী। বিশ্বভারতীর মতো আন্তর্জাতিকমানের বিশ্ববিদ্যার প্রতিষ্ঠান নির্মাণ। ৮০ বছরের পরমায়ু। এই অ-লৌকিক প্রতিভাসম্পন্ন মানুষটি এক জীবনে যা লিখেছেন, যা ভেবেছেন, তা পাঠ করতেই আমাদের মতো লিলিপুটদের একটা গোটা জীবন কেটে যাবে। আর সেই পাঠ-কে আত্মস্থ করতে চাই আরও একটা জীবন। বিশ্বমানবতায় উদ্ভাসিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ চিরন্তন!
মুসলমানর ভালোবাসা ও একটু সহানুভ‚তি কী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পেতে পারে না — JUST FOR YOUR SYMPATHETIC JOY! প্রতীয়মান হয় বিখ্যাত ভারতীয় শিল্পী ভ‚পেন হাজারিকাতাঁর জীবন চর্যায় সেই অমর সংগীত – মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভ‚তি কী? মানুষ পেতে পারে না! বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মুসলমান ছিলেন না! রাষ্ট্রকাঠামোর অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তি হারিয়ে দিব! “আমার সোনার বাংলা” জাতীয় সংগীতটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়, সারা জীবন পূর্ণ উদ্যমে স্বপ্ন নিয়ে বাঁচুন, কখনো হাল ছাড়বো না, কখনো আত্মসমর্পণ করবেষ না। রাষ্ট্রকাঠামোর অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তি তাদের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছে। বাংলা নববর্ষ বরণে-
গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান,
মিলিয়া বাউলগান আর মুর্শিদী গাইতাম।
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম,
আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।”
জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে অনুমোদন! ১৯৪৭ সালে দ্বিতীয় বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হলে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানে যোগ দেয় যা পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত হয়। তৎকালীন সময়ে রবীন্দ্রচর্চা একপ্রকার নিষিদ্ধ ছিল। [৪] ১৯৫৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে পশ্চিম পাকিস্তানের কিছু গণপরিষদ সদস্যদের সম্মানে গণপরিষদ সদস্য, পূর্ব পাকিস্তানের শিল্পমন্ত্রী ও পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রচেষ্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও কাজী নজরুল ইসলামের গানের পাশাপাশি লোকগান পরিবেশন করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান সেই অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র সঙ্গীতজ্ঞ সনজীদা খাতুনকে ‘আমার সোনার বাংলা’ গাইবার জন্য অনুরোধ করেন। সনজীদার মতে পাকিস্তানিদের কাছে গানটির প্রতি প্রীতি ও ভালোবাসার জানান দিতে এবং গানটি বাঙালিকে কতখানি আবেগ তাড়িত করে তা বোঝাবার জন্যে অতিথিদের গানটি তিনি শোনাতে চেয়েছিলেন।[৫][২]
লেখা সম্পূর্ণ আমার সোনার বাংলা গানটি এখানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই গানের প্রথম দশ চরণ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃত।
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি\
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে-
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি\
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো-
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর ক‚লে ক‚লে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে-
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি\
তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে,
তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে-
তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি\
ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে,
সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে,
তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে,
মরি হায়, হায় রে-
ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি\
ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে-
দে গো তোর পায়ের ধুলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে।
ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে,
মরি হায়, হায় রে-
আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভ‚ষণ ব’লে গলার ফাঁসি
১৯৪৮ সালে এইচএমভির লেবেলে গানটির গ্রামোফোন রেকর্ড প্রথমবার প্রকাশিত হয়। ১৯৭০ সালে ইএমআইয়ের লেবেলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রকাশিত আরেকটি গ্রামোফোন রেকর্ড পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জীবন থেকে নেওয়া চলচ্চিত্রে এই গান ব্যবহৃত হয়েছিল। জহির রায়হান নির্মিত এই চলচ্চিত্রটিতে তৎকালীন বাঙালি স্বাধীনতা আন্দোলনকে রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছিল। ২০০৬ সালে শ্রোতাদের পছন্দানুসারে বিবিসি বাংলার তৈরি সেরা বিশটি বাংলা গানের তালিকায় এই গানটি প্রথম স্থান দখল করে। শিল্পকলা সম্পর্কিত দ্য আর্টস ডেস্ক নামক ব্রিটিশ সাংবাদিকতা ওয়েবসাইট ২০১২ সালে স্বর্ণপদক পাওয়ার যোগ্য ১০টা দেশের জাতীয় সঙ্গীতের তালিকা করে। যেখানে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত “আমার সোনার বাংলা” স্থান পায়। ২০১৪ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশে ঢাকার শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় প্যারেড ময়দানে একসঙ্গে ২,৫৪,৫৩৭ জন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মাধ্যমে গিনেস বিশ্ব রেকর্ড করে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বীয় স্রষ্টাকে বহুবিধ, সংজ্ঞায়, বচনে, উচ্চাসে, উচ্চারণে, কথায়, সম্বোধন করেছেন হে, ওহে, হে প্রিয়তম, ওহে অন্তরতম, ত্রিভুবনেশ্বর, পরাণ সখা, হে প্রিয়, হে আমার বন্ধু, হে আমার নাথ, বন্ধু হে আমার, হে মোর দেবতা, ওহে সুন্দর তুমি, ওগো অসীম, তুমি হে, হে অন্তরযামী, মানব জন্মতরীর মাঝি, ওহে অসীম, তুমি কে, বার বার তার কবিতায়, উপন্যাসে, নাটকে, বিশেষ উপমায়, সম্বোধনে উচ্চারণ করেছেন তা তার বিস্ময়কর মরমীভাবের প্রকাশ। বাঙালির হৃদয়ের আকাশে অবস্থানকারী উজ্জ্বলতম নক্ষত্র কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম তম জন্ম দিনে জানাই সশ্রদ্ধ প্রনাম। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়,
আমার এ জন্মদিন-মাঝে আমি হারা
আমি চাহি বন্ধুজন যারা
তাহাদের হাতের পরশে
মর্তের অন্তিম প্রীতিরসে
নিয়ে যাব মানুষের শেষ আশীর্বাদ।
শূন্য ঝুলি আজিকে আমার;
দিয়েছি উজাড় করি
যাহা কিছু আছিল দিবার,
প্রতিদানে যদি কিছু পাই —-
কিছু স্নেহ , কিছু ক্ষমা —-
তবে তাহা সঙ্গে নিয়ে যাই
পারের খেয়ায় যাব যবে
ভাষাহীন শেষের উৎসবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর–
পর্যায় — শেষ লেখা!”
‘বিশ্ব ভুবনের অস্তিত্ব ও আমার অস্তিত্ব একাত্মক। ভ‚ভুব: স্ব: এই ভ‚-লোক, অন্তরীক্ষ, আমি, তারই সঙ্গে অখন্ড। এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের আদি অন্তে যিনি আছেন তিনি আমাদের মনে চৈতন্য প্রেরণ করেছেন। চৈতন্য ও বিশ্ব, বাহির ও অন্তরে, সৃষ্টির এই দুইধারা একধারায় মিলেছে। এমনি করে ধ্যানের দ্বারা যাকে উপলব্ধি করছি তিনি বিশ্ব আত্মাতে আমার আত্মাতে চৈতন্যের যোগে যুক্ত’।
প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় বলেছেন ‘খেয়ার নেয়ে’ আলোছায়ার রহস্যলোকে অস্পষ্টভাবে ক্ষণে ক্ষণে দেখা দিয়েছেন আর গীতাঞ্জলীর দেবতা ভক্তের সম্মুখে আসীন। রবীন্দ্রনাথের DEEP SPIRITUAL বিশ্বমানবতায় রসানুভ‚তি গীতাঞ্জলি, গীতিমাল্য ও গীতালীতে স্তরে স্তরে গভীর হতে গভীরে গিয়ে পূর্ণতা লাভ করেছে। (রবীন্দ্র জীবনী ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা- ২৪৫)। আতœার দৃষ্টি রচনায় কবি বলেছেন “আমাদের চেতনা আমাদের আত্মা যখন সর্বত্র প্রসারিত হয় তখন জগতের সমস্ত সত্তাকে আমাদের সত্তা ধারাই অনুভব করি। ইন্দ্রিয়ের দ্বারা নয়, বৈজ্ঞানিক যুক্তি দ্বারা নয়, সে পরিপূর্ণ অনুভ‚তি একটি আশ্চার্য্য ব্যাপার!
বুদ্ধভ‚মি পুন্ড্রবর্দ্ধনে (বগুড়া) গৌতমবুদ্ধের বাংলাদেশ : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, “সমস্ত বিশ্বে আজ এ বাণী পৌঁছেছে, ইউরোপেও। ইউরোপ আজ বড় দুঃখে পীড়িত, হিংসায় শতধা বিভক্ত। কোন রাজনৈতিক কলে (পন্থায়) শান্তি তৈরী করা যেতে পারে না, ইউরোপ তা বোঝে না। শান্তি ম্যাঞ্চেষ্টারের কল এ তৈরী করা কাপড়ের মত কিছু হতে পাওে না, এই যে মানুষের মন নিয়ে খেলা। ইউরোপকে একবার প্রাচ্যেও দিকে তাকাতে হবে, যেখানে সত্য রয়েছে, সেখানে কবে মানুষের দৃষ্ঠি পড়বে?বড় দুঃখে আমরা অনেক দিনের পাপ বহন করে এসেছি, এই মানুষকে অপমান করে। তিনি আমাদের এই ভেদ বুদ্ধি থেকে রক্ষা করুন। পার্লামেন্টারী বিধি নিয়মে, অথবা ভোট নেবার কোন এক কৌশলে অন্তরের মধ্যে বিষ পোষণ করে, কলের (যন্ত্র) সৃষ্ঠ শান্তি আমাদের ধর্ম নয়। ধর্ম হইতেছে জীবে দয়া, মানুষে শ্রদ্ধা।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ব কবি হিসাবে সর্বাধিক পরিচিত তবে তিনি বহু প্রতিভার মানুষ ছিলেন। একদিকে তিনি প্রথম ভারতীয় সাহিত্যের জন্য নোবেল জিতেছিলেন এবং অন্যদিকে একজন উপন্যাসিক যিনি একটি সম্পূর্ণ ঘরানার গান লিখেছেন এবং সুর করেছেন। তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদ যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা প্রচলিত শিক্ষাকে চ্যালেঞ্জ করে গড়ে উঠেছিল মুক্ত প্রকৃতিতে। আবদ্ধ ঘর যে প্রকৃত শিক্ষা দিতে পারে না, তিনি তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন।
সকল ধর্মের উপদেশে বিরাজমান, “মানুষ মানুষের ভাইবোন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা, ছোট ছোট দুঃখ কথা / নিতান্তই সহজ সরল! সহস্র বিস্মৃতি রাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি / তারি দু’চারিটি অশ্রুজল / নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা / নাহি তত্ত¡ নাহি উপদেশ!” ‘বিশ্ব ভুবনের অস্তিত্ব ও আমার অস্তিত্ব একাত্মক। ভ‚ভুব: স্ব: এই ভ‚-লোক, অন্তরীক্ষ, আমি, তারই সঙ্গে অখন্ড। এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের আদি অন্তে যিনি আছেন তিনি আমাদের মনে চৈতন্য প্রেরণ করেছেন। চৈতন্য ও বিশ্ব, বাহির ও অন্তরে, সৃষ্টির এই দুইধারা একধারায় মিলেছে। এমনি করে ধ্যানের দ্বারা যাকে উপলব্ধি করছি তিনি বিশ্ব আত্মাতে আমার আত্মাতে চৈতন্যের যোগে যুক্ত’।
২০০২ সালের ১৯ মার্চ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর ও তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী এবং সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মুজাহিদ ইসলামি মূল্যবোধ ও চেতনার আলোকে জাতীয় সংগীত সংশোধন করতে একটি যৌথ সুপারিশপত্র তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছে জমা দেন। তবে পরে উক্ত সরকারের মন্ত্রীপরিষদ প্রস্তাবটি নাকচ করে দেয়। ২০১৯ সালে, ভারতীয়-বাংলা সঙ্গীতানুষ্ঠান সা রে গা মা পা বাংলায় রানার-আপ হওয়া বাংলাদেশী গায়ক মঈনুল আহসান নোবেল এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, “রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ যতটা না দেশকে প্রকাশ করে তার চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি প্রকাশ করেছে প্রিন্স মাহমুদের লেখা ‘বাংলাদেশ’ গানটি”। তার এই মন্তব্য বাংলাদেশিদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করে। পরে তিনি নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চান।
২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গোলাম আজমের মেঝো ছেলে ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় জাতীয় সংগীত নিয়ে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পুনরায় লেখা উচিত, কারণ বর্তমান জাতীয় সংগীতটি মূলত ভারত কর্তৃক প্রণীত”। তার মতে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত “আমার সোনার বাংলা” গানটি ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের প্রেক্ষাপটে দুই বাংলাকে একত্রিত করার উদ্দেশ্যে রচিত হয়েছিল। আযমী বলেন, “বাংলাদেশ স্বাধীন একটি রাষ্ট্র, তাই আমাদের জাতীয় সংগীতও নতুনভাবে হওয়া উচিত।”[১৫] তিনি আরও বলেন, “আমরা কি দুই বাংলা এক করার জন্য কাজ করছি, নাকি স্বাধীন বাংলাদেশকে রক্ষা করতে চাই? ১৯৭১ সালে ভারতের চাপের ফলে আমাদের অস্থায়ী সরকার এই সংগীতকে গ্রহণ করেছিল, কিন্তু এখন সময় এসেছে নতুন একটি জাতীয় সংগীত নির্বাচন করার।” আযমী আরও বলেন, “বাংলাদেশের আরও অনেক সুন্দর গান আছে যা আমাদের জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচন করা যেতে পারে।”
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages) “ সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!