সোনা কান্তি বড়ুয়া : জীবনসঙ্গিনী আমার প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব শিল্পী যুথিকা বড়ুয়া আর নেই! ১৮ এপ্রিল ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ আমার WIFE সহধর্মিণী বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী মিসেস যুথিকা বড়ুয়া ভারতের কলকাতার বাটানগর (বাপের বাড়িতে) বেড়াতে এসে আমাদের সবাইকে ছেডে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন! এই মহতী শিল্পীর আত্মার পরলৌকিক শান্তি কামনা করছি। পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়। আমি আমার জীবনসঙ্গিনী যুথিকা বড়ুয়ার পরলোক গমনে শোকাহত! আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন / আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো আমার জীবনসঙ্গিনী যুথিকা বড়ুয়া!
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়,
“দীর্ঘ জীবনপথ, কত দুঃখতাপ, কত শোকদহন–
গেয়ে চলি তবু তাঁর করুণার গান\
খুলে রেখেছেন তাঁর অমৃতভবনদ্বার–
শ্রান্তি ঘুচিবে, অশ্রু মুছিবে, এ পথের হবে অবসান\
অনন্তের পানে চাহি আনন্দের গান গাহি–
ক্ষুদ্র শোকতাপ নাহি নাহি রে।
অনন্ত আলয় যার কিসের ভাবনা তার–
নিমেষের তুচ্ছ ভারে হব না রে ম্রিয়মাণ!”
আমার জীবনসঙ্গিনী যুথিকা বড়ুয়া মারা যাওয়ার পর আমার কিছুই মনে থাকে না। কিছু করব, মেন্টালি সেটআপ ও হতে পারছি না। কষ্টটা হচ্ছে, কাছের মানুষটাই হারাই ফেলছি, এটাই এখন বড় কষ্ট। আমার জীবনসঙ্গিনী কে ভুলতেই পারি না। খালি মনে হয়, “কেমনে তোমারে কব প্রণয়ের কথা। অবশেষে এক আলোকিত জীবনের অবসান আজ ! ভেবেছিনু মনে মনে দূরে দূরে থাকি / চিরজন্ম সঙ্গোপনে শুধাইব একাকী–! কেহ জানিবে না মোর গভীর প্রণয়, কেহ দেখিবে না মোর অশ্রুবারিচয়। / আপনি আজিকে যবে শুধাইছ আসি, কেমনে প্রকাশি কব কত ভালোবাসি!” (বিশ্বকবি)!
বাংলাদেশে একুশে বইমেলায় যুথিকা বড়ুয়ার প্রথম মলাটবদ্ধ গ্রন্থ! সোনা কান্তি বড়ুয়ার জীবনসঙ্গিনী যুথিকা বড়ুয়ার ভাষায়, “আমার অনেক বছরের আশা এ বছর ইং ২০২৩ সালে পূরণ হলো। পরম স্রষ্টাকে অশেষ ধন্যবাদ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাবলী গল্পের মাধ্যমে আমার সমস্ত আবেগ ও অনুভ‚তি দিয়ে পাঁচটি বাছাই করা গল্পের সমণ্বয়ে “নানান রঙের যাপিত জীবন” আমার প্রথম মলাটবদ্ধ গ্রন্থটি সাজিয়েছি। সকল পাঠক বন্ধুদের আমার বিনীত অনুরোধ গ্রন্থটি পড়বেন। আপনারাও উপভোগ করবেন। বাংলাদেশে একুশে বইমেলা ৫৭৮ নম্বর ষ্টলে প্রথম সারিতে গ্রন্থটি স্থান পেয়েছে । আজ আমি ধন্য এবং খুবই আনন্দিত। এই গ্রন্থের প্রচ্ছদ নির্মাতা-আল নোমান! অক্ষর বিন্যাস -মানবেন্দ্র নাথ! প্রতিবিম্ব প্রকাশ প্রকাশনীকে! আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই! গ্রন্থটি প্রকাশনায় সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য। ঢাকা বইমেলায় প্রতিবিম্ব প্রকাশ প্রকাশনীর ৫৭৮ নম্বর ষ্টলে গ্রন্থটি পাবেন। ধন্যবাদ।”
যদি কাগজে লিখ নাম, কাগজ ছিড়ে যাবে।
পাথরে লিখ নাম, পাথর ক্ষয়ে যাবে।
হৃদয়ে লিখ নাম, সে নাম রয়ে যাবে।।
হৃদয় আছে যার, সেই তো ভালবাসে।
প্রতিটি মানুষেরই জীবনে প্রেম আসে।
কেউ কি ভেবেছিল, শ্যামকে ভালোবেসে
রাধার ভালবাসা কাহিনী!
যুথিকা বড়ুয়ার এ আকস্মিক অকাল মৃত্যু সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে জন্য অপূরনীয় ক্ষতি। কবি ও গল্পকার যুথিকা বড়ুয়া’র জন্ম, (26 November 1960), শিক্ষা, দীক্ষা, বেড়ে ওঠা পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। দেশের বাড়ি বাংলাদশের চট্টগ্রামের শ্রীপুর জৈষ্ঠপুরা গ্রামে। লেখিকা যুথিকা বড়ুয়া কৈশোর বয়স থেকে বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে জড়িত। এর পাশাপাশি উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে হাতে খড়ি দিয়ে ক্রমান্বয়ে নিরলস চর্চায় র্সব ভারতীয় উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে প্রথম স্থান অধিকার করে র্স্বণপদক লাভ করেন। এছাড়াও ভারতের উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ থেকে ডিপ্লোমা প্রাপ্ত করনে। তিনি একজন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়,
সকলই নবীন, সকলই বিমল, সুনীল আকাশ, শ্যামল কানন,
বিশদ জোছনা, কুসুম কোমল— সকলই আমার মতো।
তারা কেবলই হাসে, কেবলই গায়, হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়-
না জানে বেদন, না জানে রোদন, না জানে সাধের যাতনা যত।
ফুল সে হাসিতে হাসিতে ঝরে, জোছনা হাসিয়া মিলায়ে যায়,
হাসিতে হাসিতে আলোকসাগরে আকাশের তারা তেয়াগে কায়।
আমার মতন সুখী কে আছে। আয় সখী, আয় আমার কাছে-
সুখী হৃদয়ের সুখের গান শুনিয়া তোদের জুড়াবে প্রাণ।
প্রতিদিন যদি কাঁদিবি কেবল একদিন নয় হাসিবি তোরা-
একদিন নয় বিষাদ ভুলিয়া সকলে মিলিয়া গাহিব মোরা।”
বাংলা ও হিন্দি ভাষায় তাঁর নিজস্ব একাধিক গানের এ্যালবাম দেশে-বিদেশে সমাদৃত। লেখিকা যুথিকা বড়ুয়া উচ্চ মাধ্যমকি পাশ করেই পরম পূজনীয় মাতা-পিতার ইচ্ছানুসারে তখন অষ্টাদশীর ছোঁয়ায় ১৯ বছর বয়সে (8TH MAY 1979) সোনা কান্তি বড়ুয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার জীবনে প্রবেশ করেন! তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি, শত রূপে শত বার! বিশ্বকবির ভাষায়,
তোমারি নয়নে আজ হেরিতেছি সব,
তোমারি বেদনা বিশ্বে করি অনুভব।
তোমার অদৃশ্য হাত হেরি মোর কাজে,
তোমারি কামনা মোর কামনার মাঝে।
দুজনের কথা দোঁহে শেষ করি লব
সে রাত্রে ঘটে নি হেন অবকাশ তব।
বাণীহীন বিদায়ের সেই বেদনায়
চারি দিকে চাহিয়াছি ব্যর্থ বাসনায়।
আজি এ হৃদয়ে সর্ব-ভাবনার নীচে
তোমপূর্ণ আমার বাণী একত্রে মিলিছে।”
সেখান থেকে দীর্ঘ সময় অতক্রিম করে ১৯৯৩ সালে পারিবারিক সূত্রে পারি জমায় কানাডার টরোন্টো শহরে। সৌভাগ্যক্রমে ১৯৯৮ সালের অক্টোবর মাসে বাংলা সাহিত্য জগতে একজন বিশিষ্ট গবেষক এবং কিছু লেখক গোষ্ঠির সংর্স্পশে যাবার সুযোগ পায়। যাদের প্রেরণায় এবং উৎসাহে বাংলা সাহিত্য জগতে প্রথম পদার্পন করনে ১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসে। এটি তাঁর লেখা একাধকি গল্পের মধ্যে বাছাই করা পাঁচটি গল্পের সমন্বয়ে প্রথম প্রিন্টেড পুস্তক “নানান রঙের যাপিত জীবন”। বর্তমানে লেখিকা যুথিকা বড়ুয়া সাহিত্য ও সঙ্গীত জগতে নিজকে নিয়োজিত রেখেছেন। আজীবন সাহিত্যের মধ্যেই থাকতে চান!
জীবনসঙ্গিনী যুথিকা! জীবন মানেই সে কি কেবলই চোখের জল? জীবন কারে কয়!
লেখক যুথিকা বড়ুয়ার লেখা “জীবন মানেই বিশাল এক গল্প!“
তাতে অভিনয়ও থাকে অল্প স্বল্প।
ষোল আনার এই ছোট্ট জীবনে / বারো আনা যায় ব্যর্থ
বাকিটা নিয়েই মাতোয়ারা সবাই / শুধু থাকে না সবার সামর্থ।
বেপরোয়ার ব্যস্ত জীবনে / পরোয়া করে কজনে?
প্রিয়জন সেজে প্রয়োজন মেটায় / শুধু সামনেই মধুর বচন।
চক্ষু যখন বলে কথা / তখন ঠোঁট রয়ে যায় চুপ,
কি এসে যায় ভালোবাসায়? / যদি নাইবা থাকলো রূপ।
বৃষ্টির ফোঁটার মতো ভালোবাসা / যায় না সবটা স্পর্শ করা
শুধু ধরণীর বুক শীতল হয় / সব এমনই ছন্নছাড়া।
ভাঙ্গা গড়া সহজ জানি / যদি সে সম্পর্ক হয় ভালোবাসা
কঠিন শুধু টিকিয়ে রাখা / যেখানে হাজারটা প্রত্যাশা।
ক্ষীণ আলোয় যায় না মাপা / আঁধারের গভীরতা
দূর থেকে যায় না বোঝা / হ্রদয়ের সকল ব্যথা।
একাকীত্বের অন্ধকারে / পাবে না দেখা কারো
যদি চলতে হয় কণ্ঠক পথ / তবে নিজেকেই শক্ত হাতে ধরো।
যখন হারিয়ে যায় মূল্যবোধ / তখন থাকে না কারো অস্তিত্ব
নীরবে নিঃভৃতে অশ্রু ঝড়ায় / মানুষের মনুষ্যত্ব।
রাতের শেষে প্রভাত আসে / শিশির ভেজা স্নিগ্ধ আলো নিয়ে
এমনি করেই দুঃখেরা সব / একদিন দেবে তোমায় সব ভুলিয়ে।
টরোন্টো, কানাডা ২৩/১২/২০২২!
লেখক যুথিকা বড়ুয়ার লেখা এক মাধবী রাতে!
ছুটির নিমন্ত্রণ চেতনায় বাঙালিয়ানা বিষয় : বসন্ত এসে গেছে শিরোনাম! :
গোধূলীর রিমঝিম শেষে, উঠল চাঁদ মুচকি হেসে,
ছড়ায়ে রেশমী জোছনার কোমল আলো দূর-দিগন্ত ঘেঁষে।
উঁকি দেয় সুখতারা, মোর হৃদয় আকাশে। সাথী ছিল সাথে।
আমোদে, আহাল্লাদে, উচ্ছাসিত কলকাকলীতে উঠেছিল মেতে রাঙা অনুরাগে,
এক অভিনব বৈচিত্র্যময় কোমল অনুভবে! যেন হঠাৎ বসন্তের আগমনে, ধেয়ে এলো ধূসর বাদলা মনে, হৃদয়-মন-প্রাণ মাতাল করা যৌবনের বাণ!
যেন স্রোতস্বীনি প্রেম যমুনার উত্তাল তরঙ্গে ভেসে বেড়ানো-
একযুগল মুক্ত-বিহঙ্গের আবেগপূর্ণ মধুর আলাপন! আবেগে সোহাগে,
আদরে আবদারে, প্রতিটি নিঃশ্বাস প্রঃশ্বাসের সারাক্ষণ, মেলে বিস্মিত নয়ন।
উঠেছিল জেগে খুশীর আলোড়ন। চলেছিল, চঞ্চল মনের একটানা-
ছন্দবিহীন সুরের মুর্ছণায় গুন্ গুন্ গুঞ্জরণ।
ক্ষণে ক্ষণে বসন্তের স্নিগ্ধ বাতাসের মিষ্টি চুম্বনে,
ওঠে ছিল কেঁপে নাজুক বদন মোর মধুর শিহরণে।
যেন স্বর্গোদ্যান! নানা বর্ণের ছন্দে নিবিড় আনন্দে শুধু ভালোবাসার অবগাহন!
পূর্ণ চন্দ্রিমার উজ্জ্বল আলোকের রেশমী জোছনা গায়ে মেখে, কল্পনায় করি বিচরণ,
শূন্য নিবিড় স্বর্গলোকে! জ্বালায়ে নয়নের জ্যোতি, ছড়ায়ে সবুজ মনের দ্বীপ্তি,
অবাধ গতীতে এসেছিল নেমে সুখ নদীর ঢল।
যেন স্বপনে দেখা সুবর্ণ ঝিকিমিকি উজ্জ্বল আলোয় চমকিত একটি শীশমহল।
দিশাহারায় চঞ্চল মনময়ূরী আবেগে বিহ্বল, আঁখীদু’টি তার ছল্ ছল্।
ভাগ্য হোক বিরল! তবু জানি, এমন মাধবী রাত
আর জীবনে আসবে না ফিরে বার বার!
শুধু সাক্ষী থাকুক, আকাশের চন্দ্র-গ্রহ-তারা,
বাগিচার সুরভীত জুঁই-কনক-চাঁপা আর সন্ধ্যা-মালতিরা।
সাজায়ে স্মৃতিবিজড়িত এক অনবদ্য মধুর অভিসার! (২০/০৩/২০২২ইং )
লেখক যুথিকা বড়ুয়া র লেখা গল্প ডানাকাটা পরী-পর্ব ৪
কথায় কথায় কখন যে পশ্চিমাকাশের কোণে সূর্যমামা অস্তাচলে ঢলে পড়েছিল, টেরই পাইনি। হঠাৎ ট্রেনের বাঁশি আর ঝিকঝিক শব্দে আমরা দুজনেই চমকে উঠি। পলকমাত্র দৃষ্টিপাতে দেখলাম, মুখের মলিন হাসিটুকু মিলিয়ে গেছে নির্মলার। অসহায় ওর চোখের দৃষ্টি। নৈঃশব্দে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর কষ্ঠ হচ্ছে জেনেও ওকে শান্তনা দেবার মতো একটা শব্দও আমার উচ্চারিত হোলো না। বলার মতোও কোনো ভাষাও খুঁজে পেলাম না। বুকের ভিতরটা আমার বার বার মোচড় দিয়ে উঠছিল, ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। শ’পাঁচেক টাকা ছিল ব্যাগে, ওর হাতে গুঁজে দিতেই আমায় জড়িয়ে ধরে। ভাবলাম, কেঁদে ভাসিয়ে দিলো বোধহয়। অথচ ওর চোখে একফোঁটা জল নেই, কিন্তু বুকের ভিতরটা যে কাঁন্নায় ভেসে যাচ্ছিল, তা ওর প্রতিটি নিঃশ্বাস-প্রঃশ্বাসে আমি দৃঢ়ভাবে সেদিন অনুভব করেছিলাম। একসময় আমার পিঠে মৃদু হস্ত সঞ্চাণল করে বলল, ‘কষ্ট পেলি, তাই না! কি করি বল! সবই আমার দুর্ভাগ্য! মনে কষ্ট নিসনা। আজকের দিনটা তোর মাটি করে দিলাম। তবে যে আনন্দটুকু সঞ্চয় করলাম, সেটুকুই জীবনের বাকী দিনগুলিতে আমার বেঁচে থাকার একটা উপকরণ হয়ে থাকবে। কোনদিন ভুলবো না। যদি পারিস একদিন আমাদের আশ্রমে ঘুরে যাস, আমার ছানাপোনাগুলোকেও একটু দেখে যাস্। কি রে, চুপ করে আছিস? বল না, আসবি তো!’
কম্পিত স্বরে বললাম,-‘হ্যাঁ আসবো। ভালো থাকিস।’
বলে অবিলম্বে ষ্টেশন থেকে বেরিয়ে আসতেই পুরোনো স্বভাব ওর মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ফিক্ করে হেসে বলে,-‘এই শোন শোন, দেখি তোর পেটটা?’ একগাল হেসে বলল, ‘পেটটা একটু বড় লাগছে মনে হচ্ছে! আবার হবে টবে না কি রে?’ বলে হি হি করে হেসে ওঠে। আমি বোবা দৃষ্টি মেলে হাঁ করে থাকি। মুহূর্তের জন্য বিমূঢ় হয়ে পড়লেও হাসি চেপে রাখতে পারিনি। আমিও হেসে ফেলি। কিন্তু ওর হাসি আর বন্ধ হয়না। পাগলের মতো দাঁতকপাটি বার করে হেসেই চলেছে। হাসতে হাসতে একেবারে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। ষ্টেশনের লোকজন সবাই ওর দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হয়তো ভাবছিল, ভদ্রমহিলার মাথা খারাপ কিংবা পাগলই হবে হয়তো! নইলে হাওড়া রেলষ্টেশনে বিশাল জন-সমুদ্রের মাঝে এভাবে তামাশাই বা করবে কেন!
মনে মনে ভাবলাম, হয়তো এমনি করেই বুকের জ্বালা যন্ত্রণা মিটাতে জন-অরণ্যের মাঝে না জানি কত অজস্র দিবস রজনী অতিবাহিত করেছে, কে জানে! কিন্তু কেউ না বুঝুক, সেদিন ওর মনের ব্যথাটা গহীন অনুভ‚তি দিয়ে উপলব্ধি করেছিলাম, জীবনের পরম আকাক্সিক্ষত চাহিদা অপূরণের কারণেই নির্মলার ঐ নির্মম পরিণতি।
ওর ওই দৃশ্য দেখে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরি। পরক্ষণেই বাচ্চা শিশুর মতো শান্ত হয়ে গেল নির্মলা। হাসিটাও মিলিয়ে গেল। আমি পারলাম না ওর সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে। ‘সাবধনে থাকিস, আমি আসছি।’ বলে দ্রুত ষ্টেশন থেকে বেরিয়ে এলাম। কিছুদূর এসে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি, প্ল্যাটফর্মে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে নির্মলা। ঠিক যেন পথের প্রান্তে পড়ে থাকা মলিন বৃক্ষলতার মতো। ক্রমাগত আগন্তুক যাত্রীর পদতলে যেন পিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। অথচ ওর কোনো বিকার নেই। উদ্বেগ নেই। নেই বাড়ি ফেরার কোনো তাড়া। যার কৈফেয়ৎ চাইবার মতোও কোনো স্বজন নেই যে, উদ্বিগ্ন হয়ে ওর অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকবে। হঠাৎ চোখের নিমিষে সংসারচ্যুত নির্মলা বিশাল জন সমুদ্রের মাঝে কোথায় যে মিলিয়ে গেল আর দেখতে পেলাম না।
নির্মলা চলে গেল, যেন বুকভাঙ্গা কান্না এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার বুকের মাঝে। ষ্টেশনের একটা বেঞ্চিতে বসে ব্যাগ খুলে একটা রুমাল বার করে হু হু করে বেরিয়ে আসা চোখের জল মুছতে লাগলাম। হঠাৎ পিছন থেকে সিকিউরিটির পোষাক পড়া একটা বয়স্ক ভদ্রলোক ডেকে বললেন,-‘ম্যাডাম, আপনার কত টাকা গেল আজ?’ চমকে উঠে রূঢ়ভাবে বললাম, ‘কে আপনি? তাতে আপনার কি এসে যায়? ও আমার বন্ধু।’ ভদ্রলোক গোঁফের নীচে ফিক্ করে হাসলেন। হাসিটা বজায় রেখে খানিকটা পরিহাস করে বললেন,-‘ও তাই না কি, মহিলাটি আপনার বন্ধু! ওকে আপনি ভালো করে চেনেন তো?’ বলে হাতের ডান্ডাটা মাটিতে ঠুকতে ঠুকতে কেমন কৌতূক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
রাগে সর্বাঙ্গ জ্বলে গেল। কর্কশ কণ্ঠে বললাম,-‘তার জন্যে আপনার মাথা ঘামাতে হবে না। আপনি আপনার নিজের ডিউটি পালন করুন, যান!’ কিন্তু দেখলাম, বড় বেশরম লোক। তাও গেল না। উল্টে জিজ্ঞ্যেস করলেন, -‘উর্মিলার বয়স কত জানেন?’অবাক কণ্ঠ বললাম, -‘উর্মিলা? কে উর্মিলা?’ -‘ঐ যে, এতক্ষণ হিন্দি ফিল্মের মতো যে আপনাকে দুঃখের কাহিনী শোনাচ্ছিল। আপনি যার সাথে এতক্ষণ কথা বলছিলেন।’
-‘মানে?’ আঁতকে উঠি। যতো শুনছিলাম ততই অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম। আমি হাঁ করে থাকি। আমার গলা শুকিয়ে আসছিল। একটা ঢোক গিলে মৃদু স্বরে বললাম-‘কি দস্যি মহিলা, মিথ্যে কথা বলে আমার কাছ থেকে এতগুলো টাকা ও’ নিয়ে গেল! ওকে তো পুলিশে দেওয়া দরকার। সব জেনে শুনে আপনারা চুপ করে আছেন?’ গলাটা ঝেড়ে নিয়ে ভদ্রলোকটি বললেন,-‘আপনি এখনো ওকে চিনতে পারলেন না? ওতো নির্মলার যমজ বোন, উর্মিলা!’ স্ববিস্ময়ে বললাম,-‘এ্যাঁ, বলেন কি আপনি? ওর এই দশা কেন? কিন্তু আপনি এতো কিছু জানলেন কি করে?’ ভদ্রলোক নীরবে হাসলেন। বললেন,-‘ওতো আমাদের এলাকাতেই ঘোরাফেরা করে। দিনের বেলায় ষ্টেশনে পড়ে থাকে, আর সন্ধ্যে ঘনিয়ে এলেই ফিরে যায় নিজের ঘরে। প্রায়শঃই আমার স্ত্রীর কাছে এটাসেটা চাইতে আসে। আর এলে কি করে জানেন? একেবারে গেঁঢ়ে বসে। ওঠার নামই করেনা। হাত-পা ছড়িয়ে আমাদের বারান্দাতেই বসে পড়ে। সারাক্ষণ বোনেদের গল্প করে। ওদের নারী নক্ষত্র আমাদের সব জানা!’
উৎসুক্য হয়ে বললাম, -‘তা’হলে ওর বোন নির্মলা এখন কোথায়? ওদের সম্বন্ধ্যে আপনি আর কি কি জানেন?’ কিঞ্চিৎ গম্ভীর হয়ে বললেন, -‘স্বামী-পুত্র নিয়ে আপনার নির্মলা খুব সুখেই আছে। ঐ যমজ ভাই সৌরভের ঘরেই। ঘটনার প্রথম দিকের সবটাই সত্য। শেষের দিকটা উর্মিলার ঈর্ষার রঙে বিকৃত। প্র্যাক্টিক্যাল নির্মলা এমন ভুল কেন করবে? স্বামী সৌরভকে নিয়ে সিমলায় বেশ সুখেই আছে। সুন্দরী ছোটবোনকে দত্তক নিলো মাসী-মেসো, মানুষ করলো, ভালো ঘরে বিয়ে দিলো। আর বাকি পাঁচবোনের কেউ গেল দোজবরে, কেউ অকাল বৈধব্যে অমানবিকভাবে শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে করে বসে আত্মহত্যা। আরেকজন বন্ধানারীর কলঙ্ক মাথায় চেপে স্বামীর পরিতক্তা হয়ে একেবারে নিরুদ্দেশ। কোনো খোঁজ-খবর নেই। আর উর্মিলার তো বিয়েই হলো না। স্বল্প বিদ্যা-বুদ্ধির প্রভাবে কিভাবে ঐ অর্ফেনেজের সাথে জুড়ে গিয়ে বেশ কয়েকবছর সমাজ সেবিকার কাজে লিপ্ত ছিল। ওটাই ওর ঘর-সংসার ছিল, নিরাপদ বাসস্থান ছিল, নির্দিষ্ট ঠিকানা ছিল, কিন্তু নিজের স্বভাব চরিত্রের গুনে সেখানে বেশিদিন টিকতে পারেনি। বেচারি যাবেইবা কোথায়। জীবিকার তাগিদেই পয়সা কড়ি জোটাবার জন্যে নানান গল্প ফেঁদে মানুষকে কনভিন্স করার চেষ্টা করে, লোক ভোলায়। কিন্তু আমারও তো মানুষ, স্ত্রী-পুত্র নিয়ে সংসার করি, সবই বুঝি, অনুভব করতে পারি। পুলিশে দেবার কথা ভাবতেই পারি না। জেনে শুনেও চুপ করে থাকি। কিন্তু ওর গল্পগুলি কিছুটা মিথ্যে হলেও অনাথ ছেলেমেয়েদের প্রতি ওর ভালোবাসা মিথ্যে নয়। তাদের চারবেলা ক্ষিদেটাও মিথ্যে নয়।’
ভদ্রলোক অস্ফূট ¤øান হেসে বললেন, -‘আপনাকেও বলতাম না। কিন্তু আপনার কান্না দেখে ভাবলাম, অন্ততঃ জেনে খুশী হবেন যে আপনার বন্ধু নির্মলা সুখেই আছে।’ তার পরক্ষণেই ডেকে বললেন,-‘ম্যাডাম্, উঠে এসে দেখুন!’উঠে গিয়ে প্ল্যাটফর্র্মের রেলিংএর বাইরে কৃষ্ণচূড়া গাছের আড়াল থেকে দেখি, খোলা রাস্তার মাঝে এক ভদ্রলোকের হাত চেপে ধরে, রহস্যাবৃত হাসি ছড়িয়ে উর্মিলা বলছে,-‘চিনতে পারছেন না? আমি নিবেদিতা!’
ড. অর্থদর্শী বড়ুয়ার (অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, খুলশী চট্টগ্রাম) ভাষায় , শীলঘাটা গ্রামের কৃতি সন্তান লেখক, গবেষক, ধর্ম দর্শন ও ইতিহাস বিষয়ে অত্যন্ত প্রাজ্ঞ, বিশ্ব বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সংঘ (WFB) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রাক্তন লাইব্রেরিয়ান ও সহসাধারণ সম্পাদক বর্তমান কানাডা প্রবাসী শ্রদ্ধেয় দাদা সোনা কান্তি বড়ুয়ার সহধর্মিণী বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী মিসেস যুথিকা বড়ুয়া ভারতের কলকাতার বাটানগর (বাপের বাড়িতে) বেড়াতে এসে গতকাল পরপারগত হন। সাথে তাঁর বড় মেয়ে ইন্দিরা বড়ুয়া ও ভ্রমণ এসেছিলেন। বৌদির আকস্মিক প্রয়াণ সংবাদ শুনে আমি গভীরভাবে শোকাহত । পুণ্য দানে বৌদির পারলৌকিক সদগতি ও শান্তি কামনা করছি। দাদা সোনা কান্তি বড়ুয়াসহ পরিবারের সকলের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। উল্লেখ যে শ্রদ্ধেয় সোনা কান্তি বড়ুয়া স্বদেশ ভ্রমণ আসলে আমার অনুপ্রেরণায় আমাদের নির্মাণাধীন বিহারের জন্য একলক্ষ টাকা এবং সাতকানিয়া লোহাগাড়া বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদে এককালীন ২৫০০০/- টাকা দান দিয়ে মাতাপিতার নামে স্মৃতি বৃত্তি প্রদান করে পৃষ্ঠপোষক পদ অলংকৃত করেন। সূদুর বিদেশে অবস্থান করলেও মাতৃভ‚মির প্রতি তাঁর অপরিমেয় আকর্ষণ থাকায় প্রায়শই তিনি স্বদেশের খবরাখবর খোঁজ নিয়ে থাকেন।তাঁর লিখিত গ্রন্থাবলী পণ্ডিত মহলে সমাদৃত।” রবীন্দ্রনাথের বুদ্ধ বন্দনায় বাংলা ও ভারতীয় ভাষার জনক ” PRE- VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM AND MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE. বৌদ্ধ বিশ্বে বহুল প্রচারিত।
Lt ADAARSHA KUMAR বড়ুয়ার ভাষায়, শীলঘাটা গ্রামের কৃতি সন্তান লেখক, গবেষক, ধর্ম দর্শন ও ইতিহাস বিষয়ে অত্যন্ত প্রাজ্ঞ, বিশ্ব বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সংঘ (WFB) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রাক্তন লাইব্রেরিয়ান ও সহসাধারণ সম্পাদক বর্তমান কানাডা প্রবাসী বন্ধুবর সোনা কান্তি বড়ুয়ার সহধর্মিণী বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী মিসেস যুথিকা বড়ুয়া ভারতের কলকাতার বাটানগর (বাপের বাড়িতে) বেড়াতে এসে গতকাল পরলোক গমন করেন।সকলের পুণ্য দান কামনা করছি।”
Mr. SANATH বড়ুয়ার ভাষায়, “সুপ্রিয় বন্ধুরা, আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন যে, টরোন্টোর বাংলাদেশী কমুনিটির অতি জনপ্রিয় শিল্পী মিসেস জ্যুতিকা বড়ুয়া, কলকাতায় অকাল মৃত্যু বরণ করেন। তিনি একজন কানাডিয়ান নাগরিক। তাঁর মৃতদেহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা টরোন্টোতে নিয়ে আসার ব্যাপারে আপনাদের সাহায্য পার্থনা করছেন। জ্যোতিকা বৌদি বিগত ২৫ বছর যাবৎ তাঁর সুরের জাদু দিয়ে আমাদের কমিউনিটি সেবা করেছেন। ঈদ হোক, পূজা হোক, খ্রীষ্টমাস বা বুদ্ধ পূর্ণিমা হোক যাঁরাই উনাকে ডেকেছেন উনি কখনো অনুরোধ উপেক্ষা করেন নাই। অনেক সময় আমরা উনার সঠিক পারিশ্রমিক দিতে পারিনাই।
আসুন আমরা সবাই উনাকে টরন্টো থেকে শেষ বিদায় জানাই
দূর আকাশে তোমার সুর খুঁজে পেলাম!
Mr. ANADI RANJAN বড়ুয়ার ভাষায়, শীলঘাটা গ্রামের কৃতিমান সন্তান বহুগ্রন্থপ্রণেতা ,লেখক ,গবেষক স্ব-পরিবারে কানাডা প্রবাসী শ্রদ্ধেয় দাদা সোনা কান্তি বড়ুয়ার সহধর্মিণী বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী, লেখক যুথিকা বড়ুয়া কানাডা থেকে ভারতে বেড়াতে এসে গতকাল হঠাৎ মৃত্যু বরণ করেন।
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages) “ সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি !