অনলাইন ডেস্ক : গত ২৪শে অক্টোবর কানাডার সবচেয়ে বড় এবং জনবহুল নগরী টরন্টোর মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে টানা তৃতীয় বারের মত টরন্টোর মেয়র নির্বাচিত হয়ে জন টরি তাঁর বিজয়ী বক্তৃতায় বেশ জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি আমাদের এই শহরকে অনেক ভালোবাসি, আর ভালোবাসি টরন্টোর মানুষের জন্য কাজ করতে।’ তৃতীয় বারের মত নির্বাচিত হবার ফলে তিনি যদি তাঁর আগামী চার বছরের মেয়াদ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারেন, তাহলে তিনি হবেন টরন্টোর ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের মেয়র।
নির্বাচনে বিজয়ী বক্তৃতায় জন টরি তাঁকে তৃতীয় বারের মত মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য টরন্টোবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ‘আপনাদের প্রিয় শহরের মেয়র হিসেবে আমাকে নির্বাচিত করার জন্য আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একজন ব্যক্তি হিসেবে এই নির্বাচিত হওয়া আমার জীবনের অনেক বড় এক প্রাপ্তি। আমি যেহেতু এই মহানগরী এবং মহানগরীর মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে চাই, সে জন্যই আমি বারবার এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে থাকি।’
নির্বাচনের রাতে ফলাফল ঘোষণার পর ফেয়ারমন্ট রয়্যাল ইয়র্কে তাঁর সমর্থকদের জন্য আয়োজিত পার্টিতে তিনি তাঁর সকল কর্মীর প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত আট বছরে আমরা অনেক পথ হেঁটেছি এবং অনেক কাজ করেছি। কিন্তু এখনও আমাদের অনেক অসমাপ্ত কাজ রয়েছে, যেগুলো সমাপ্ত করা খুব বেশী জরুরী। আমরা ট্রানজিট এবং গৃহ নির্মাণে বেশ সাফল্য দেখিয়েছি, কিন্তু আমাদের অনেক পথ সামনে আছে, যেগুলোকে সুন্দরভাবে পাড়ি দিতে হবে।’
উল্লেখ্য, তৃতীয় বারের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় টরির সামনে এখন যেমন নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করার সময় ও সুযোগ সৃষ্টি হবে, ঠিক তেমনি নির্মাণাধীন বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প শেষ করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাঁর উল্লেখ করার মত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অসমাপ্ত কাজের মধ্যে রয়েছে গ্রেটার টরন্টোর ২৮ বিলিয়ন ডলারের ট্রানজিট প্রকল্প। তাঁর প্রচেষ্টায় এবং নেতৃত্বে তিনি এই বিশাল প্রকল্প অন্টারিও সরকারের সাথে করতে পারছেন। রজারস কেবল এর সাবেক নির্বাহী জন টরি নিশ্চয় তাঁর আগামী চার বছরে আরও বেশ কয়েকটি নতুন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
এবারের মেয়র নির্বাচনে মোট ৩১ জন্য লড়াই করলেও পেনালোসা ছাড়া আর কেউ টরির ধারে কাছে ছিলেন না। জন টরি এবারে ভোট পেয়েছেন শতকরা ৬২ শতাংশ, অন্যদিকে গিল পেনালোসা পেয়েছেন শতকরা ১৮ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে থাকা চোলে-ম্যারি পেয়েছেন মাত্র শতকরা ৬ শতাংশ। গত ২০১৮ সালের মেয়র নির্বাচনে জন টরি পেয়েছিলেন শতকরা ৬৫.৫ শতাংশ ভোট। জন টরির আগামী চার বছর টরন্টোবাসীর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক সময়। দিন দিন জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় টরন্টোর সাধারণ নাগরিক খুবই হিমশিম খাচ্ছেন। বিশেষ করে বাড়ীর দাম এবং বাড়ী ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষজন আশপাশের ছোট ছোট শহরে সরে যাচ্ছেন। সেই সাথে টরন্টোতে পূর্বের তুলনায় বেড়ে গেছে বিভিন্ন ধরনের সহিংস ঘটনা। সব মিলিয়ে টরন্টোর নতুন মেয়রকে আগের চেয়ে অনেক বেশী যুগোপযোগী হয়ে নতুন কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার সাথে সাথে সেগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলেই তিনি টরন্টোর ইতিহাসে একজন উল্লেখযোগ্য মেয়র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। আর নিঃসন্দেহে তখন টরন্টো এবং টরন্টোর মানুষকে নিয়ে তাঁর উক্তি যথার্থভাবে সার্থক হবে।