অনলাইন ডেস্ক : আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার একদিন পর বিশ্বের সব দেশকে আফগানিস্তান থেকে শরণার্থী গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। পাশাপাশি তাদের নির্বাসিত করা থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
আজ মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের টুইটের বরাত দিয়ে এই খবর প্রকাশ করেছে।
টুইটে আন্তোনিও গুতেরেস লেখেন, ‘অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত ও ব্যথিত হৃদয় নিয়ে বিশ্ব আফগানিস্তানের পরিস্থিতি অবলোকন করছে। এমন সময়ে আমি জোর আহ্বান জানাচ্ছি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতি, তারা যেন আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দেয় এবং তাদের যেন নির্বাসিত না করে। আফগানরা প্রজন্ম ধরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখন সময় তাদের পাশে দাঁড়ানোর। তাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখানোর।’
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মতে, যুদ্ধের কারণে চলতি বছর প্রায় ৪ লাখ আফগান নাগরিক আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। কিছু দেশ অবশ্য ইতোমধ্যে আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। নারীসহ ঝুঁকিতে রয়েছেন এমন ২০ হাজার আফগান নাগরিকদের আশ্রয় দেওয়ার কথা জানিয়েছে কানাডা।
এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ন্যাটো জোটভুক্ত দেশও জানিয়েছে যে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তারা আরও শরণার্থীকে স্বাগত জানাবে এবং ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ রাখবে।
এদিকে, বিশেষ অভিবাসন ভিসার মাধ্যমে প্রায় এক হাজার ২০০ আফগানকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এ ছাড়া আরও সাড়ে ৩ হাজারের বেশি মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার পরিকল্পনা করছে দেশটি। আফগান দোভাষীসহ মার্কিন বাহিনীর সহায়তাকারীদেরকেই মূলত প্রাধান্য দিচ্ছে দেশটি।
এর আগে আফগান শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিতে অনুরোধ জানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর আগে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় তা নাকচ করে দেয় বাংলাদেশ। গতকাল সোমবার রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান তালেবানের শাসনে ছিল। এর মধ্যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদার নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট সেখানে যৌথ অভিযান চালায়, যার মাধ্যমে তালেবান শাসনের অবসান ঘটে। অভিযানে আল-কায়েদার শীর্ষ নেতাদের দমন করা হলেও ‘শান্তিরক্ষার স্বার্থে’ সেখানে ঘাঁটি গেড়ে অবস্থান করছিল পশ্চিমা সেনারা। কিছু বছর পার হওয়ার পর সেখান থেকে ধাপে ধাপে যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্য দেশের সেনাদের ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রও তাদের সেনাদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করলে প্রত্যন্ত এলাকা দখল করে থাকা তালেবান কাবুলের ক্ষমতার মসনদে উঠতে জোর লড়াইয়ে নামে। যদিও এর মধ্যে তালেবানের সঙ্গে কাবুলের শাসকগোষ্ঠীর সংঘাতের অবসানে কাতারসহ বিভিন্ন পক্ষের মধ্যস্থতায় নানা সময়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সব আলোচনাই ভেস্তে গেছে।