স্পোর্টস ডেস্ক : ৩৩ বছর বয়স, সার্জিও আগুয়েরো কি কখনো ভেবেছিলেন এতো দ্রুত বুট জোড়া তুলে রাখতে হবে তাকে? বিধিবাম! আর্জেন্টাইন তারকার সহায় হয়নি ‘হৃদযন্ত্র’। হার্টের সমস্যাজনিত কারণে ফুটবলকে বিদায় বলেছেন বার্সেলোনার এই স্ট্রাইকার। বিদায় বেলায় অশ্রুসিক্ত নয়নে আগুয়েরো জানালেন, সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে অবসর নেয় ছাড়া উপায় নেই তার। ফুটবল অঙ্গন থেকে প্রিয় সতীর্থের আকস্মিক বিদায় বিস্ময়করই লিওনেল মেসির জন্য। আবেগঘন বার্তার মাধ্যমে আগুয়েরোকে নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা জানিয়েছেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক।
বয়সভিত্তিক দল থেকে দুজনের একসঙ্গে পথচলা শুরু। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গড়ে উঠেছে দারুণ বন্ধুত্ব। শারীরিক অসুস্থতার কারণে আগুয়েরোর আগেভাগে অবসরের সিদ্ধান্ত তাই স্বাভাবিকভাবেই নাড়া দিয়েছে মেসিকে। আগুয়েরোর অবসরের ঘোষণার পর ইনস্টাগ্রামে দীর্ঘ পোস্টে প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলোর স্মৃতিচারণ করেছেন মেসি।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘প্রায় পুরো ক্যারিয়ারই একসঙ্গে, কুন (আগুয়েরো)… আমাদের অসাধারণ কিছু মুহূর্ত আছে এবং আরও কিছু মুহূর্ত অতটা দারুণ না হলেও সময়গুলো আমাদের আরও ঘনিষ্ঠ করেছে। আমরা ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছি। মাঠের বাইরেও আমাদের এই সম্পর্ক বজায় থাকবে।’
আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দল থেকে একসঙ্গে খেলছেন মেসি ও আগুয়েরো। ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে ফুটবলে আর্জেন্টিনা সোনার পদক জয়ী দলের সদস্য ছিলেন দুজন। গত জুন-জুলাইয়ে কোপা আমেরিকা শিরোপা জয়েও সঙ্গী ছিলেন দুজন। মেসি বলেন, ‘মাত্র কয়েক মাস আগে কোপা আমেরিকা জয়ের আনন্দময় মুহূর্ত, সঙ্গে ইংল্যান্ডে তুমি যা অর্জন করেছো এবং সত্যিটা এই যে, তুমি যে কাজটা করতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসো সেটাই আজ বন্ধ করতে হলো তা দেখে অনেক কষ্ট লাগছে।’
নতুন জীবনের জন্য আগুয়েরোকে শুভ কামনা জানিয়ে মেসি লিখেছেন, ‘আমি নিশ্চিত যে তুমি সুখি থাকবে। কারণ তুমি এমন একজন মানুষ যে সবার মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে দেয়। আমরা যারা তোমাকে ভালোবাসি, তোমার পাশেই থাকব। এখন তোমার জীবনের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে এবং আমি নিশ্চিত যে, তুমি সেটা একই উদ্দীপনার সঙ্গে হাসিমুখে উপভোগ করবে।’
জাতীয় দলে আগুয়েরোর শূন্যতা বোধ করবেন মেসি। তিনি লিখেছেন, ‘জীবনের নতুন অধ্যায়ে তোমাকে শুভ কামনা। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি বন্ধু। তোমার সঙ্গে মাঠে এবং জাতীয় দলে কাটানো সময়টা অনেক মিস করব।’
গত ৩০শে অক্টোবর স্প্যানিশ লা লিগায় আলাভেসের বিপক্ষে মাঠে নামে বার্সেলোনা। খেলাচলাকালীন বুকে ব্যথা অনুভব করেন আগুয়েরো। মাঠে প্রাথমিক চিকিৎসা করার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর আসে তিন মাসের জন্য মাঠের বাইরে চলে গেছেন আর্জেন্টিনা ফরোয়ার্ড। এরপর গুঞ্জন ছড়ায় অবসরই নিয়ে নেবেন আগুয়েরো।
গুঞ্জন সত্যি করে বুধবার ন্যু-ক্যাম্পে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অবসরের ঘোষণা দেন আগুয়েরো। ১৮ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ইতি টানার সময়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আগুয়েরো বলেন, ‘শারীরিকভাবে ভালো থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকরা আমাকে বলেছেন যে, খেলা বন্ধ করাই সবচেয়ে ভালো হবে। আর তাই আমি বার্সা ছেড়ে যাচ্ছি এবং ফুটবল থেকে বিদায় নিচ্ছি।’
‘ক্লিনিকে আমার শরীরে প্রথম পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা আমাকে ডেকে বললেন, জোর সম্ভাবনা আছে যে আমি হয়তো আর খেলা চালিয়ে যেতে পারব না। ওই মুহূর্ত থেকেই আমি নিজেকে (অবসরের জন্য) একটু একটু করে প্রস্তুত করেছি। কিন্তু এটা সহজ ছিল না। চিকিৎসকদের মধ্যে একজন আমাকে সরাসরি বলেছিলেন, যথেষ্ট হয়েছে।’
বর্ণিল ক্যারিয়ারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবকিছুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আগুয়েরো বলেন, ‘সবাইকে বলতে চাই যে, আমি সম্ভাব্য সব চেষ্টাই করেছি। পাঁচ বছর বয়স থেকে এবং ফুটবলে প্রথম স্পর্শের পর থেকে আমি ফুটবল খেলার স্বপ্ন দেখেছি। কখনও ভাবিনি যে ইউরোপে খেলতে পারবো। কোথায় কোথায় অনুশীলন করেছি সেটা বিষয় নয়, সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’
শৈশবের ক্লাব ইন্দিপেনদিয়েন্তের হয়ে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন আগুয়েরো। ২০০৬ সালে ইউরোপে পাড়ি জমান তিনি। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ এবং ম্যানচেস্টার সিটিতে দুর্দান্ত সময় কাটিয়েছেন আর্জেন্টাইন স্টার।
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে ২৩৪ ম্যাচে ১০১ গোল করেছেন আগুয়েরো। জিতেছেন ২০১০ সালের ইউরোপা লীগ। ২০১১ সালে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে খেলেছেন টানা ১০ বছর। জিতেছেন পাঁচটি প্রিমিয়ার লীগ, একটি এফএ কাপ ও ছয়টি লীগ কাপ। ম্যান সিটির সর্বোচ্চ গোলদাতা আগুয়েরোর প্রিমিয়ার লীগে গোল সংখ্যা ২৬০।
আর্জেন্টিনার জার্সিতেও উজ্জ্বল আগুয়েরো। তিনটি বিশ্বকাপে খেলা এই স্ট্রাইকার জাতীয় দলের হয়ে ১০১ ম্যাচে ৪১টি গোল করেছেন। জিতেছেন কোপা আমেরিকার শিরোপা।