ফরিদুর রহমান : অলিম্পিয়া আর্কিওলজিক্যাল সাইট এবং আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়ামে প্রবেশের জন্য দর্শনার্থী টিকেটের মূল্য ১২ ইওরো, তবে অনেক সময়েই হ্রাসকৃত মুল্যে অর্থাৎ ৬ ইওরো দিয়ে টিকেট কেনা যায। একই টিকেটে পুরো খ্রিস্টপূর্ব ইতিহাসের বিশাল চত্বর, জিউস এবং হেরার মন্দির, আলেক্সান্ডারের স্মৃতিস্তম্ভ এবং ৭৭৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দের অলিম্পিক স্টেডিয়াম ঘুরে আবার জাদুঘরে প্রবেশের জন্য ৬ এমন কি ১২ ইওরো আমার কাছে যথেষ্ট কম বলেই মনে হলো। বছরে ছয়দিন আন্তর্জাতিক মনুমেন্ট দিবস, ইওরোপিয় ঐতিহ্য দিবস এবং গ্রিসের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী মেলিনা মার্কুরি স্মৃতি দিবসের মতো বিভিন্ন দিবসে বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রত্যেক মাসের প্রথম রবিবার প্রবেশমূল্য ছাড়াই ঢুকে পড়া যাবে প্রতœ এলাকা এবং জাদুঘরে। মেলিনা মার্কুরি কবে ইহলোক ত্যাগ করেছেন সে খবর না নিয়েই আমরা অলিম্পিয়ায় চলে এসেছি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে আছেন ইতিহাসের একজন জীবিত অধ্যাপক ও প্রত্নত্ত¡বিদ। অতএব আমাদেরও টিকেট কিনতে হয়নি, সদলবলে তাঁর পেছনে পেছনে ঢুকে পড়েছি।
এথেন্সের বাইরে প্রথম প্রত্নতত্ত¡ জাদুঘর অলিম্পিয়া আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়ামের যাত্রা শুরু ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে। গ্রিক অলিম্পিয়ার পাহাড়ের পাদদেশে প্রায় শতবর্ষ ধরে খনন কাজ চালিয়ে আবিষ্কৃত মূল্যবান প্রত্ন নিদর্শন সংরক্ষণ জরুরি হয়ে পড়েছিল। প্রাগৈতিহাসিক কালে তৈরি এবং ব্যবহৃত নানা নিদর্শনে সমৃদ্ধ এই সংগ্রহশালার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে প্রাক্সিটেলেসের হেরমেস এ্যান্ড ইনফ্যান্ট ডিওনিসাস ভাস্কর্য, জিউসের মন্দিরে আবিষ্কৃত ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র, ভাস্কর পাইনিওসের তৈরি গ্রিক দেবী নাইকের মূর্তি, ফিডিয়াসের তৈরি গ্রিক মৃৎশিল্পের অনন্য উদাহরণ বড় আকারের চিত্রিত কলস এবং ব্রোঞ্জের তৈরি বিপুল সংখ্যক বর্ম, আচ্ছাদন, শিরস্ত্রাণ, তৈজসপত্র এবং অন্যান্য সামগ্রী।
বর্তমানের প্রত্নতত্ত¡ জাদুঘরটি শতবর্ষের পুরোনো জাদুঘরের নতুন সংস্করণ। ১৯৮২ সালের নতুন এই ভবনে মাঝখানের বিশাল হলঘর এবং চারপাশের ছোট বড় আরো এগারোটি গ্যালারি মিলিয়ে মোট প্রদর্শনী কক্ষের সংখা বারটি। জিউসের মন্দিরের উপরে তিনকোণা কার্নিশ অলংকরণ কিংবা ভেতরের বেদীতে সাজসজ্জার জন্যে ব্যবহার করা খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের যে সব নিদর্শন এখন এই জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে তার বেশিরভাগই আড়াই হাজার বছর আগের গ্রিক শিল্পকর্মের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ। পেলপস এবং অয়নিমাওসের যুদ্ধরথের দৌড় প্রতিযোগিতায় কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসাবে উপস্থিত স্বয়ং জিউস। মন্দিরের প্রতিকৃতিগুলো ছাড়াও এ্যাপোলো বা হারকিউলিসের মতো বহুবার শোনা গ্রিক মিথলজির চরিত্রগুলো আমাদের চোখের সামনে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে ভাবতেই অন্যরকম এক অনুভূতি স্পর্শ করে।
বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন প্রত্নতাত্তি¡ক নিদর্শনের অন্যতম আধুনিক এই সংগ্রহশালার প্রদর্শন ব্যবস্থা যেমন সুশৃংখল এবং সুপরিকল্পিত, তেমনি আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই জাদুঘরের আলোকসম্পাত ব্যবস্থা। আলোর শৈল্পিক ব্যবহার প্রতিটি প্রত্ননিদর্শন, বিশেষ করে ভাস্কর্যগুলোকে নান্দনিকভাবে উপস্থাপনের যে প্রচেষ্টা, তা অতুলনীয়। আমরা হেরমেসের কোলে দেবশিশু ডাইনিসাসের মূর্তির মতো আরো অনেক জানা অজানা ভাস্কর্যের ভেতর দিয়ে একেরপর এক প্রদর্শনী কক্ষ ঘুরে বিভিন্ন আকার আকৃতির পূর্ণাঙ্গ ভাস্কর্য, আবার কোথাও উদ্ধারকৃত ভগ্নাবশেষের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাই।
খ্রিস্টপূর্ব নবম শতক থেকে পরবর্তী হাজার বছরের নানা সময়ের প্রায় চৌদ্দ হাজার ব্রোঞ্জের তৈরি নিদর্শন সংরক্ষণ করা হয়েছে এই মিউজিয়ামে। এর মধ্যে মানুষ এবং পশু-পাখির প্রতিমূর্তি, যুদ্ধাস্ত্র, শিরস্ত্রাণ, যোদ্ধা এবং ক্রীড়বিদের মূর্তিসহ রয়েছে অসংখ্য এতিহাসিক এবং প্রাগৈতিহাসিক সামগ্রী। প্রাচীন মুদ্রা, ধাতব অলঙ্কার, যুদ্ধাস্ত্র এবং তৈজসপত্রের সংগ্রহও নেহায়েত কম নয়। এ সব নিদর্শনের নির্মাণ কাল প্রাচীন হেলেনিক যুগ থেকে পঞ্চম শতাব্দীর রোমান সা¤্রাজ্যের অবসানের পূর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত। অলিম্পিয়ার জাদুঘরের আরও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সংগ্রহ প্রতœযুগের ভাস্কর ফেইডিয়াসের কারখানা। খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ অব্দে যিনি স্বর্ণ এবং আইভরি ব্যবহার করে পৃথিবীর অন্যতম সপ্তম আশ্চর্য জিউসের প্রতিরূপ গড়েছিলেন সেই ফেইডিয়াসের নির্মাণ যজ্ঞের কেন্দ্র থেকে আবিষ্কৃত নির্মাণ সামগ্রী, যন্ত্রংশ, অলঙ্কার, ছাঁচ এবং কাঁচামাল একটি বিশেষ প্রদর্শনী কক্ষে জায়গা করে নিয়েছে। এই কক্ষের বিশেষ উল্লেখযোগ্য ব¯‘টি একটি ব্যক্তিগত পানপাত্র, যাতে সে কালের শ্রেষ্ঠ ভাস্কর খোদাই করে লিখে রেখেছেন, ‘I belong to Pheidias.’
অলিম্পিয়া আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়ামে কোথাও ছবি তুলতে বা ভিডিও ধারণ করতে কোনো বাধা নিষেধ নেই। বিভিন্ন কক্ষের ভাস্কর্য বা গ্যালারিতে সাজানো নানা প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শনের ছবি তুলতে তুলতে এ ঘর সে ঘর ঘুরে ঘুরে যতোটা সম্ভব দেখতে চেষ্টা করছি। জিউসের মন্দির থেকে উদ্ধার করা খ্রি¯টপূর্ব পাঁচ থেকে চারশত অব্দের এক সারি মার্বেল পাথরের ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে তিয়েনলিনের হাতে ক্যামেরা ধরিয়ে দিয়ে বেশ কায়দা করে দাঁড়িয়েছি। এই সময় কোথায় থেকে সিকিউরিটির দায়িত্বে নিয়োজিত এক কর্মকর্তা ছুটে এসে বললেন, ‘নো ফটোগ্রাফ প্লিজ!’ আমরা একটু হতচকিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ছবি তোলা যাবে না, এ কথা তো কেউ বলেনি এবং কোথাও লেখাও নেই।’ এবার নিরাপত্তা বালিকা বললেন, ‘ছবি তুলতে কোনো আপত্তি নেই, তবে কোনো বিশেষ ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে বা ছবির জন্য ‘পোজ’ দিয়ে কোনো মূর্তির সাথে ছবি তোলা যাবে না।’ মিউজিঢামের নিয়ম-কানুনকে শিরোধার্য করেই আরো কয়েকটি গ্যালারি ঘুরে বেশ কিছু ছবি তুলে আমরা বেরিয়ে এলাম। তিয়েনলিনকে বললাম, ‘ঘরে যখন ছবি তোলা হলোই না, চলো, জাদুঘরের বারান্দায় দুই একটা ছবি তুলে রাখি।’
জাদুঘরের সামনে পার্কিং লটে আমাদের ফেরার বাস দাঁড়িয়ে আছে। সরু খালের মতো কদেয়াস নদীর উপরের সেতু পার হয়ে পার্কিংয়ে পৌঁছে অনেকগুলো বাসের মধ্যে নিজেদের বাস খুঁজে বের করাই কঠিন হয়ে পড়লো। লিটো আমাদের বাসের নম্বর বলে দিয়েছিল, কিন্তু সেই নম্বর তো কেউই মনে রাখিনি। এক-দুই-তিন করে তৃতীয় বাসের সামনে নম্বর নয়, স্বয়ং লিটোকে পেয়ে বাসে উঠে পড়লাম। তিন হাজার বছর আগের প্রত্ননগরী ছেড়ে বাস চলতে শুরু করলে তিয়েনলিন তার ব্যাগের ভেতর থেকে দুটো কমলা বের করে একটা আমার হতে ধরিয়ে দিল। পিরগসের পথে ফিরে যেতে যেতে কমলা ছিলে মুখে দেবার পরে মনে হলো তিয়েনলিনের কথাই ঠিক, সাইট্রাস প্রজাতির ফলের স্বাভাবিক টকটুকু বাদ দিলে আড়াই হাজার বছর আগের কমলা মিষ্টিই ছিল বলা যায়।
শেষ বিকেলটা হোটেলে কাটিয়ে সন্ধ্যে হতে না হতেই হোটেল থেকে বের হয়ে কিছুক্ষণ আলোক সজ্জা দেখতে দেখতে পিরগস শহরের রাস্তায় উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটলাম। ডিসেম্বরের এই সময় বড়দিনের প্র¯‘তি চলছে। কাজেই আলোয় সাজানো সড়কপথের বিপনী বিতানগুলোতেও জনসমাগম বেড়েছে। অবশ্য পঁচিশ ত্রিশ হাজার মানুষের শহরে কেনাকাটর ধুম বলতে যা বোঝায় তা আর কতোই বা জমতে পারে!
অলিম্পিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের প্রতিযোগিতার ফলাফল এবং পুুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরু হবার কথা রাত আটটায়। কনফারেন্স হলে পৌঁছে দেখলাম হলের ভেতরে অনুষ্ঠানের প্র¯‘তি চলছে আর বাইরের লবিতে চলছে সমবেত নাচ গানের আসর। এমনিতেই গ্রিকরা সহজেই আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠতে জানে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে পূর্ব ইওরোপ এবং বলকান অঞ্চলের তরুণ তরুণীরা। যদিও শুধু নবীনরা নয় গিটার এবং তাম্বুরিনেসর মতো বাদ্যযন্ত্র নিয়ে প্রবীণদের কয়েকজনও অনানুষ্ঠানিক আসর বেশ জমিয়ে ফেলেছেন। আফ্রিকা, সেন্ট্রাল এশিয়া বা ইওরোপের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে আগে থেকেই এ ধরনের কোনো যুথবদ্ধ নৃত্য-গীত-বাদ্যের প্রচলন ছিল না, সাম্প্রতিক কালে তা আরো সংকুচিত হয়ে আসছে। কাজেই আন্তর্জাতিক যে কোনো উৎসবে আয়োজনে প্রীতি সম্মিলনে আমরা কেবলই নীরব, কখনো কখনো সরব দর্শক। আমি এক পাশে দাঁড়িয়ে অসাধারন গ্রিক সুরের মূর্চ্ছনা ভিডিওতে ধারণ করার চেষ্টা করছিলাম, এরই মধ্যে মান্দি এসে বলে গেল, বাইরে হৈ চৈ চলতে থাকুক, তোমরা ভেতরে চলে এসো।
কনফারেন্স হলের ভেতরে ঢুকে দেখলাম গত কয়েকদিনের পরিচিত মিলনায়তন চেনা যায় না, আজ রীতিমতো উৎসবের সাজে সেজেছে। মঞ্চে উঠে গেছে ফেস্টিভ্যাল লোগোসহ সাজানো ব্যাকগ্রাউন্ড, নানারঙের আলোর ঝলকানি এবং দর্শকসারির আসনের প্রথম দুই-তিন সারিতে বিশিষ্ট অতিথি এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া নির্মাতাদের জন্য নির্ধারিত আসন। আমরা ভেতরে ঢুকে যে যার আসনে বসে পড়ার পরপরই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক উপস্থাপিকারা মঞ্চে এলেন। দ্বিতীয় সারিতে আমার পাশে বসেছিল বুলগেরিয়ার এলদোরা আর তৃতীয় সারিতে তিয়েনলিন। সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা বিবৃতি খুব বেশি ছিল না, তারপরেও সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইওরোপিয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখলেন। এরপরে জুরিদের মধ্যে থেকে একজন পুস্কার নীতিমালা এবং প্রায় সবগুলো ভালো ছবির মধ্যে প্রথম দ্বিতীয় ইত্যাদি নির্বাচিত করতে তাদের কেমন গলদঘর্ম হতে হয়েছে সেইসব প্রায় জানা কথাই পুনরুল্লেখ করলেন।
অনেক প্রতিযোগিতা এবং অনেক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিযোগী হিসাবে আবার অনেক জায়গায় বিচারক বা জুরি হিসাবে অংশ নেয়ার ফলে মহামতি বিচারকর্তাদের বক্তব্য কী হবে তা জানা হয়ে গেছে। এখানে প্রামাণ্য ছবির প্রতিযোগিতা ‘চিলড্রেন এ্যান্ড ডক’এ বেশ কয়েকটা প্রয়োজনীয়, সমসাময়িক এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ভালো প্রামাণ্য ছবি দেখেছি, তাতে জুরির বক্তব্য পুরস্কার ঘোষাণার আগেই আমার জন্যে সাস্ত¡না ভাষণ হিসাবে ধরে নিয়েছিলাম। এলদোরার ‘কেমব্রিজ’ দেখিনি, কিন্তু তিয়েনলিনের ‘কামিং এ্যান্ড গোয়িং’ নিঃসন্দেহে পরিবার ও শিশুদের নিয়ে সমসাময়িক চীনা বাস্তবতার একটি মানবিক প্রামাণ্যচিত্র। জুরিদের বক্তব্য শেষে পুরস্কার ঘোষণার পালা। আমার ধারণা অনুযায়ী প্রামাণ্যচিত্রের শ্রেষ্ঠ পুরস্কারটি পেলো তিয়েনলিন ঝু। কাহিনিচিত্র ক্যামেরা জিজানিও এবং বিভিন্ন বিভাগ মিলিয়ে আরো অনেকগুলো পুরস্কার ছিল। কাজেই সবার নাম এবং ছবির নাম কোনোটাই তাৎক্ষণিকভাবে মনে রাখা সম্ভব হলো না। পুরস্কার বিতরণ শেষে ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর দমিত্রি স্পাইরোর সংক্ষিপ্ত ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা ইত্যাদির মাঝে দিয়ে শেষ হলো অলিম্পিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল।
তিয়েনলিনকে আমরা অভিনন্দন জানালাম। পাশাপাশি এলদোরাসহ আরো দুই একজন ওকে বলেছিল, ‘পুরস্কারে প্রাপ্তি উদযাপনের জন্য আগামীকাল একটা ট্রিট দিতে হবে।’ তিয়েনলিন বললো, ‘আহা! আমি তো কাল সকালেই চলে যাচ্ছি, এটা ভবিষ্যতের জন্যে তোলা রইলো।’
আমি বললাম, ‘সেই ভবিষ্যত আমরা কখনো দেখবো বলে আশা করি না, তবুও তোমাকে অভিনন্দন!’
আনুষ্ঠানিকতা শেষে ছিল নৈশভোজর আয়োজন। সকলেই যখন কয়েকটি বাহনে চেপে রেস্টুরেন্টে পৌঁছলাম তখন রাত সাড়ে এগারোটা। গ্রিকদের জন্যে সম্ভবত তখন সবে সন্ধ্যা। ফলে সকলের মধ্যে বিদায়ের সুর বেজে উঠলেও নাচ-গান এবং হৈ হূল্লোড়ের কোনো অভাব ছিল না। পানাহারের বিপুল আয়োজন শেষ করে যখন ঘরে ফেরার সময় হলো তখন রাত প্রায় পৌনে দুটা। প্রথম দিনের মতো ইচ্ছে করলে আমি হয়তো ফিরে যেতে পারতাম, কিন্তু মনে হলো পিরগসে নিশ্চয়ই আর কখনো আসা হবে না। বিশেষ করে দমিত্রির যা বয়স তাতে ভবিষ্যতে কখনো প্রিগসে এলেও দমিত্রি স্পাইরোর সাথে দেখা নাও হতে পারে। কাজেই শেষের রাতটা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত থেকে যাওয়াই ঠিক হবে।
রেস্তোরা থেকে বেরিয়ে বাসে উঠে যাবার মুহূর্তে মান্দি জড়িয়ে ধরে বললো, ‘কাল সকালে তোমার সাথে দেখা হবে না। তাই বিদায়টা এখনই নিয়ে নিলাম। আগামীতে আবার কখনো নিশ্চয়ই দেখা হবে।’
আমি উত্তরে কী বলেছিলাম মনে নেই। তবে বাস চলতে শুরু করলে আলোকোজ্জ্বল রেস্তোরার সামনে দাঁড়িয়ে যে সব গ্রিক বন্ধু হাত নাড়ছিল তারা দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাওয়া পর্যন্ত পেছনে তাকিয়ে ছিলাম। চলবে…