শুজা রশীদ : ৩.
রোববার এলে মনটা একটু খারাপ হয়ে যায় রিমার। এই শহরের অধিকাংশ দোকান যদিও তাড়াতাড়িই বন্ধ হয়ে যায়, বাংলা টাউনে রাত দশটা পর্যন্ত তো খোলা থাকেই। ড্যানফোর্থ এভেনিউ আর ভিক্টোরিয়া পার্ক এভেনিউয়ের মাঝখানের বেশ কয়েকটা বøক জুড়ে এই এলাকা। যত দিন যাচ্ছে ততই বাংলাদেশী অভিবাসীরা এখানে এসে দোকান-পাট খুলছে- গ্রোসারি থাকে শুরু করে হালাল রেস্টুরেন্ট, বেকারি, ইলেক্ট্রনিক্স, কাপড়, প্রিন্টিং, ফার্নিচার ইত্যাদি। রিমার মনে হয় প্রতিদিন যেন নতুন নতুন ব্যাবসা গজিয়ে উঠছে। এই এলাকার আশে পাশে বিশাল সংখ্যার বাংলাদেশী অভিবাসীদের বসবাস। তাদের অধিকাংশই এখান থেকে নিকটবর্তি এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সগুলোতে থাকে – ক্রিসেন্ট টাউন, মেসি স্কোয়ার, টিসডেল প্লেস, হোমস্টেড যার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য। ড্যানফোর্থ এভেনিউ এবং ভিক্টোরিয়া পার্কের উত্তর পূর্ব দিকে বাইতুল আমান মসজিদটা স্থাপিত হবার পর অনেক বাংলাদেশী অধিক মূল্য দিয়ে নিকটবর্তি বাড়ীঘর কিনে এখানে বাস গেড়েছেন, প্রতিদিন মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া যায় জামাতে, বাচ্চাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া সহজ হয়, গাড়ি নিয়ে ছোটাছুটি করতে হয় না।
রিমা থাকে ক্রিসেন্ট টাউনে। বংলা টাউনের কাছাকাছি থাকার অনেক সুবিধা আছে। তার এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে এলিমেন্টারি স্কুল, একটা ছোট স্ট্রিপ মল এবং সাবওয়ে স্টেশন আছে। আর আছে এক বিশাল দেশী কমিউনিটি। যে কারণে নতুন বাংলাদেশী অভিবাসীরা এখানে এসে উঠবার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। রিমা অবশ্য ওসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। বন্ধু বলতে তার তেমন কেউ নেই। কারো সাথে সে খুব একটা আলাপও করে না। গত কয়েকটা বছর ধরে ওর জীবন নিজেকে আর তার তিন সন্তানকে নিয়ে একটা ক্ষুদ্র গন্ডীর মধ্যে আবদ্ধ হয়ে আছে। এমনকি মিন্টুও যেন ছিল একরকম বহিরাগত। রিমার চারপাশের জীবন চাঞ্চল্য এক ঝড়ো বাতাসের মত বয়ে যায় তাকে একরকম অবহেলা করে।
ঢাকা গ্রোসারী এখানকার সবচেয়ে পুরানো দেশী দোকান। সেখানে ক্যাশিয়ারের কাজ করে রিমা। রোববারের প্রতি ওর বিতৃষ্ণার কারণ আছে। সন্ধ্যায় ওর শিফটের শেষ দিকে ও যখন বাসায় গিয়ে একটু হাত পা খুলে বসার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে ঠিক তখনই রাজ্যের সাহেব আর মেমসাহেবদের দোকানে এসে ভীড় করার সময় হয়। শপিং কার্ট টপাটপ ভরে ওঠে, ক্যাশিয়ারের সামনে লাইন লম্বা হতে থাকে, বাচ্চারা দোকানের মধ্যে ছোটাছুটি শুরু করে, বড়রা গলা উঁচিয়ে খুব খাস আলাপ শুরু করেন- সব মিলিয়ে খুব একটা পার্টি পার্টি ভাব। গ্রোসারির অপেক্ষাকৃত ছোট দুটি ঘর এমন কানায় কানায় ভরে ওঠে যে নড়া চড়া করাই কঠিন হয়ে যায়।
ছয়টা পনের। নিজের ক্যাশ বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে রিমা ক্লান্ত দৃষ্টিতে ক্রেতাদের উপর চোখ বুলায়। তাদের সারিটা এঁকেবেঁকে এখন পাশের ঘরে যেখানে মাছ এবং মাংসের সেকশন আছে সেখানে পর্যন্ত চলে গেছে। রিমা সময় গুনছে। কখন এই শোরগোল থেকে বের হতে পারবে সেটাই ওর ভাবনা। ওর শিফট শেষ হবার কথা ছিল ছয়টায়। কিন্তু ওর পর যে মেয়েটা কাজ করে- রজনী, এখনও আসে নি। সব সময় দেরী করে। একের পর এক ক্রেতাদের জিনিষপত্র স্ক্যান করে, প্যাক করে, দাম নিতে নিতে ঘন ঘন নিজের সেল ফোনে নজর বোলায় ও, সময় দেখে। কেউ দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেই তার দৃষ্টি ছুটে যায় সে দিকে।
রজনী আর কত দেরী করবে? মেয়েটাকে সে পছন্দ করে। মধ্য বিশ, স্বামীর সাথে মেসি কন্ডোমনিয়ামে থাকে। স্বামী কজ করে ওঞ তে। বছর দুয়েক আগে লোকটা দেশে ফিরে গিয়ে রজনীকে বিয়ে করে এখানে নিয়ে আসে। মেয়েটার নিজস্ব গাড়ী আছে, একটু পুরানো কিন্তু ভালোই চলে। কলেজে গিয়ে পড়াশুনা শুরু করবার প্ল্যান করছে। দেশে ইকনমিক্সে মাস্টার্স করেছিল। সেটার এই কানাডাতে কোন মূল্য নেই। ঢাকা গ্রোসারীতে সে পার্ট টাইম কাজ করে। রবিবার সন্ধ্যা ওর বরাদ্দ।
তাড়াতাড়ি আয় না, লক্ষ্মী! রিমা মনে মনে আকুল আবেদন করে। আজ দিনটা খুব একটা ভালো যায়নি। বেশ খানিকক্ষণ ধরেই মাথাটা ধরে আছে, গলাটা শুকিয়ে আছে। শরীর খারাপ হবার আলামত নাকি? না হলেই ভালো। এখন অসুস্থ হলে খুব সমস্যা হবে।
ওর ফোনটা ভাইব্রেট করছে। টেক্সট এসেছে। ফায়জার।
মা, কখন আসবে তুমি?
আসছি।
এক ক্রেতাকে সামলাতে সামলাতে দ্রুত এক আঙ্গুলে উত্তর দেয় সে। মাঝ বয়েসী মহিলা মৃদু হাসেন। দরদী কন্ঠে বলেন, “অনেক্ষন কাজ করছো বোধহয়। দেখে ক্লান্ত মনে হচ্ছে। বাইরে গিয়ে একটু হাওয়া খেয়ে আসো। ভালো লাগবে।”
সে হাসে, কিছু বলে না। এই মহিলা প্রায়ই আসেন। এটা সেটা নিতে। তার মত অনেকেই আছেন। দেশী দোকানের পরিবেশটা বোধহয় পছন্দ, ফেলে আসা দেশের স্মৃতি মনে পড়ে যায়। ক্যাশে পাওনা মিটিয়ে রিমার হাতে আলতো করে একটা চাপড় দিয়ে নিজের ব্যাগটা কাউন্টারের উপর থেকে হাতে তুলে নিয়ে ধীর গতিতে দরজা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে গেলেন। সেপ্টেম্বর মাসের সন্ধ্যা। রিমার ইচ্ছা হচ্ছিল তার পিছু পিছু বাইরে বেরিয়ে যায়, বুক ভরে শীতল বাতাস নেয়। আজ কি হল রজনীর? এতো দেরী তো কখন করে না।
ঘর ভর্তি মানুষ যখন সামনে লাইন দিয়ে আছে, জিনিষপত্রের দাম দিয়ে যে যার পথে চলে যাবার অপেক্ষায়, তখন মনযোগ হারানোর সুযোগ খুব একটা থাকে না। একটা স্বয়ংক্রিয় মেশীনের মত কাজ করতে থাকে রিমা। অভিবাদন ‘কেমন আছেন’ থেকে শুরু করে একটা একটা করে জিনিষ স্ক্যান করা, শাক সব্জী হলে ওজন করে দাম টাইপ করা, ব্যাগে ঢোকানো, ক্যাশ না কার্ড? ওর ফোনে টেক্সট মেসেজ জমছে, বুঝতে পারছে সে কিন্তু পড়ার সময় নেই। পরবর্তি ক্রেতাকে সম্বোধন করবার আগে দ্রুত পাশের ক্যাশিয়ারের মহিলার দিকে তাকায়। শেফালী জোয়ার্দার মানুষ ছোটখাট হলেও তার বুদ্ধি প্রখর, বয়েস চল্লিশ পার হলেও দেখে আরেকটু কমই মনে হয়। সে দোকানের মালিক মানিক জোয়ার্দারের স্ত্রী।
মানিক একটু মোটাসোটা, বয়েস পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে, মুখে সবসময় খোচাখোচা দাঁড়ি মোচ, চোখে ভালোমানুষি দৃষ্টি। প্রথম তাকে দেখলে খুব সহজ সরল মনে হতে পারে, কিন্তু তাকে মনযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলে বুঝতে কারোরই বাকী থাকবে না সে ব্যাবসায়ী হিসাবে তুখোড়। অর্থ এবং মানুষ দুটোই সে ভালোই বোঝে। কিন্তু পোশাক আষাক পরে গরীবের মত, কারো নজরে পড়তে চায় না, অকারণ ঝামেলা এড়াতে চায়।
মানিকের কোন কিছুই শেফালীর পছন্দ নয়। সে চেয়েছিল চাঁছা ছোলা, সুবেশী, সুভাষী এক ভদ্রলোক ব্যাবসায়ী যাকে দেখে মনে হবে বড় কোন কম্পানীর হর্তা কর্তা। তেমন কাউকেই যদি তার পছন্দ ছিল তাহলে মানিককে বিয়ে করবার কি করাণ সেটা রিমার মাথায় ঢোকে না। শেফালী ভীষণ গোপনীয়ত প্রিয়। গত চার বছর ধরে এখানে কাজ করলেও তাকে কখন মন খুলে কথা বলতে দেখেনি রিমা। মহিলা অন্যের কথা শুনতেও খুব একটা পছন্দ করে না। সামান্য কারণে হঠাৎ হঠাৎ ধমকা ধমকি করে। সবাই তাকে একটু পাগলা পাগলা মনে করে দূরত্ব বজায় রাখে।
বার কয়েক তাকানোর পর শেষ পর্যন্ত শেফালীর মনযোগ কাড়া গেল। নিজের কব্জীতে আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিয়ে সময় বোঝায় রিমা। ঘড়ি দেখল শেফালী। কাঁধ ঝাঁকাল।
“আমার যেতে হবে,” রিমা বলে, একটু গলা উঁচিয়ে যেন চারদিকের এতো শব্দের মাঝে তার কন্ঠ শোনা যায়। “বাচ্চারা বাসায়। কাল আবার স্কুল। রজনী কোথায়?”
শেফালী রাগী ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। জানে না। রজনী সব সময় দেরী করে আসে, ইতিমধ্যেই সবাই সেটা লক্ষ্য করেছে।
এক মিনিট।
সে একটা আঙ্গুল দেখিয়ে হাতের কাজটা শেষ করে, পায়ের আঙ্গুলের উপর উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে ভীড় করে থাকা ক্রেতাদের মাথার উপর দিয়ে কামরার অন্য পাশে কাঁচের রেফ্রিজারেটরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবার চেষ্টা করে।
“মানিক! মানিক! এখানে আসো!” সে চীৎকার করে ডাকে।
মানিক হাঁসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ে এবং ধীর গতিতে ক্রেতাদের ভীড় ঠেলে কাউন্টারের দিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে।
“তাড়াতাড়ি আসো!” শেফালী রাগী গলায় বলে। হতাশভঙ্গীতে এপাশ ওপাশ মাথা দুলিয়ে বিরবিড়িয়ে ওঠে, “জলহস্তী একটা!”
মানিক স্বভাবজাত শ্বান্ত ভঙ্গিতে পরিচিত মানুষজনদের সাথে খুচরা আলাপ করেতে করেতে এক সময় কাউন্টারের সামনে এসে হাজির হয়। “কি হয়েছে মনা?”
শেফালী বুড়া আঙ্গুল দিয়ে দ্রæত রিমার দিকে নির্দেশ করে। “ওকে যেতে হবে। ওর ক্যাশীয়ারে দাঁড়াও। রজনীকে বের করে দেয়া দরকার। প্রত্যেক দিন দেরী করে। বেয়াদপ!”
মানিক দোষী দোষী মুখ করে মাথা চুলকায়। এটা দেখলেই শেফালীর শরীর ঘিন ঘিন করে ওঠে।
“একেবারেই ভুলে গেছি মনা!” মানিক অপরাধী মুখে বলে। “আমাকে ফোন দিয়েছিল, কি একটা জরুরী কাজ পড়ে গেছে। আজকে আসতে পারবে না। আমি রিমারটা নিচ্ছি।”
রিমা মনে মনে কৃতজ্ঞ বোধ করল। পুরো সন্ধ্যাটা কাজ করবার কোন ইচ্ছা তার নেই। ক্যাশ বাক্সটা দ্রুত মানিককে বুঝিয়ে দিয়ে সে একরকম ছুটে দোকান থেকে বেরিয়ে আসে। সাড়ে ছয়টা। স্র্যূ ডোবার এখনও ঘন্টা খানেক বাকী। শেষ বিকেলের রোদটুকুর উষ্ণ আঁচ শরীরে মাখতে মাখতে সে ধীর পায়ে হাঁটতে থাকে।
৪.
ফুটপথে মোটামুটি ভীড় আছে। অধিকাংশই নিরীহ দর্শন দেশী, ছেলেরা পড়েছে প্যান্ট শার্ট, দু একজন গোড়ালীর উপর পাজামা আর হাঁটুর নীচে পর্যন্ত লম্বা পাঞ্জাবী; মেয়েদের পোষাকে বৈচিত্রতা কিছু বেশি- প্রথাগত শার্ট প্যান্ট এবং সালোয়ার কামিজ বাদেও শাড়ীর চলনও রয়েছে, কারোও মাথায় হিজাব, কেউ আবার তাদের কালো চুল পিঠময় ছড়িয়ে রেখেছে। ড্যানফোর্থের এই ছোট্ট জায়গাটুকুর মধ্যেও বাংলা ভাষার বিভিন্ন আঞ্চলিকতা ঝট করেই কানে আসে।
রিমা একটা সাইড রোড নিল। এটা ধরে ও উঠবে ডেন্টোনিয়া পার্কে, তারপর একটা শর্টকাট নিয়ে ওর এপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে। সব মিলিয়ে এক কিলোমিটারের মত পথ, মিনিট পনের লাগে হেঁটে যেতে। গ্রীষ্মে এই হাঁটা পথটুকু ও বেশ উপভোগ করে। ড্যানফোর্থের এতো ব্যাস্ততার ঠিক কোল ঘেঁষেই দাঁড়িয়ে থাকা এই চুপচাপ এলাকাটা শেষ হয়েছে ডেন্টোনিয়া পার্কের বিস্তীর্ণতায়- স্থানীয় ছেলেমেয়েদের ফুটবল, ক্রিকেট এবং বেসবল খেলার জন্য জনপ্রিয় একটি স্থান। ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা হয়ত একটু বেশীই হবে যেহেতু এই এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে প্রচুর ভারতীয়, পাকিস্থানি, শ্রিলঙ্কান এবং বাংলাদেশী সহ অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের বাস ক্রিকেট অঙ্গনে যাদের ভীষণ দাপট। বয়েস যখন কম ছিলো, ঢাকায় থাকতে রিমাও অল্প বিস্তর ক্রিকেট খেলেছে কিন্তু সেসব স্মৃতি আজ প্রায় সে ভুলতেই বসেছে। বয়েস মাত্র ত্রিশ পেরুলেও তার জীবনের সেই সময়গুলোকে মনে হয় যেন কতকাল আগে পেছনে ফেলে এসেছে!
ফোনটা বাজছে। কলার আইডি দেখল। টেলিমার্কেটিয়ারদের জন্য ফোন ধরাই দায়। মানুষজনকে ফোন দিয়ে বলছে তারা সরকারী ট্যাক্স অফিসের লোক, সরকার অত টাকা পায় না দিলে পুলিশ গিয়ে এরেস্ট করবে। কেউ কেউ ভয়ে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে। রিমা ভেবে পায় না যারা এই জাতীয় ফাঁদে পড়ে তারা কি সত্যি সত্যি বোকসোকা নাকি তাদের লুকানোর কিছু আছে।
ফোন করেছে মিলা। ডেন্টোনিয়া পার্কের মাঝ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ধরল রিমা। আকাশটা হঠাৎ করেই মেঘলা হয়ে গেছে। মনে হয় বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি শুরু হবার আগেই বাসায় পৌঁছাতে চায়। এই বছর সেপ্টেম্বর মাসটা একটু ঠান্ডার দিকে, ভিজে গেলে বিচ্ছিরি লাগবে।
“কাজ শেষ হয়েছে?” মিলা জানতে চায়। রিমার ওর বাসায় যাবার কথা কিন্তু তার কাজ থেকে বের হতে দেরী হওয়ায় পরিকল্পনা ভেস্তে যাবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
“হ্যাঁ, বের হয়ে গেছি,” রিমা বলে। মনে মনে ভাবছে এখনও যাওয়াটা সম্ভব হবে কিনা। ফায়জা তের-তে পড়েছে, খুব বুদ্ধিমতি আর দায়িত্ববতী মেয়ে। দুই ভাইকে সামলানো ওর জন্য কোন সমস্যাই নয়। কিন্তু মাঝে মাঝে ফায়জার মন টন ভালো থাকে না। তখন দুই বিচ্ছুর দেখভাল করবার মত ধৈর্য তার থাকে না। আজ মনে হচ্ছে সেই রকম আরেকটা দিন। সেই বিকেল থেকে সমানে টেক্সট করে চলেছে মাকে, বাসায় কখন ফিরবে সে।
“জিনিষ এসে গেছে,” মিলা কন্ঠ লোভনীয় করে বলে। “আধ ঘন্টা পরে গাড়ী নিয়ে আসি?”
রিমা ফিক করে হেঁসে ফেলে। মিলা আর তার মধ্যে এটা একটা গোপন ব্যাপার। দুজনাই মাঝে সাঝে একটু গাঁঞ্জা টানতে পছন্দ করে। সারা সপ্তাহ ধরে জল্পনা করেছে, নষ্ট করতে মন চাইছে না।
“এক ঘন্টা,” সে বলে। “ফায়জা আজকে একটু তেঁতে আছে। কি হয়েছে কে জানে। দুই বিচ্ছু মাঝে মাঝে খুব জ্বালায়।”
“সখী আমার, সেই কথাই থাকল তাহলে,” মিলা খুব নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে। “এক ঘন্টাই সই। দেখা হবে।”
রিমা মাথায় আর ঘাড়ে বৃষ্টির ফোঁটা অনুভব করে। ওর গতি বেড়ে যায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে মেঘেদের ঘনঘটা দেখতে দেখতে হিসাব করার চেষ্টা করে হাতে আর কতটুকু সময় রয়েছে। এই বুঝি ঝরঝরিয়ে নামে বর্ষণ।
(ক্রমশ: চলবে)