অনলাইন ডেস্ক : ঢাকার শাহজালালে পরিত্যক্ত ১২টি উড়োজাহাজ তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় এখন তা নিলামে বা কেজি দরে বিক্রির পরিকল্পনা করছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এ তথ্য জানায়। পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের আটটি, জিএমজির একটি, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের দুটি এবং অ্যাভিয়েনা এয়ারলাইন্সের একটি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দর কার্গো ভিলেজ অ্যাপ্রোনের বিশাল অংশ দখল করে রাখা উড়োজাহাজগুলো সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, এসব এয়ারলাইন্সের কাছে কয়েকশ’ কোটি পাওনা রয়েছে বেবিচকের। কোনো ধরনের চার্জ পরিশোধ না করেই উড়োজাহাজগুলো বছরব্যাপী বিমানবন্দর রানওয়ে এলাকায় ফেলে রাখা হয়। বর্তমান ঢাকার বিমানবন্দরে চলছে বিশ্বমানের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ। ফলে পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলোর কারণে নির্মাণ কাজে বাধার সৃষ্টি হয় বলে সংশ্নিষ্টরা জানান।
জানা গেছে, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রপ্তানি কার্গো ভিলেজের সামনে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে চারটি এয়ারলাইন্সের ১২টি পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ। একদিকে এসব এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে বকেয়া পাওনা আদায় করতে পারছে না বেবিচক, অন্যদিকে পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো না সরানোয় কার্গো ভিলেজের সামনের জায়গা ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়েছে। বারবার চিঠি দিয়েও এসব এয়ারলাইন্স মালিকের সাড়া না পাওয়ায় উড়োজাহাজগুলো নিলামে অথবা কেজি দরে বিক্রি করতে নেওয়া হয় নানা কৌশলগত পদক্ষেপ।
এ ব্যাপারে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এইচএম তৌহিদুল আহসান বলেন, বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজের জন্য এর বিভিন্ন জায়গায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে উত্তর দিকে নতুন করে ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণ করা হয়। বিমানবন্দরের মূল পার্কিং জোনে আমদানি-রপ্তানির মালপত্র উড়োজাহাজে ওঠানো-নামানো হয়। এতে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজগুলোকে পার্কিংয়ের জায়গা দিতে সংকটে পড়তে হয়। অন্যদিকে, বিমানবন্দরের উত্তর দিকে রপ্তানি কার্গো ভিলেজের সামনে পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো সরাতে পারলে কমপক্ষে ছয়টি কার্গো উড়োজাহাজকে পার্কিংয়ের জায়গা দেওয়া সম্ভব হবে। তবে বছরের পর বছর বেবিচক চিঠি দিলেও পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো সরাতে কোনো উদ্যোগ নেননি সংশ্নিষ্ট এয়ারলাইন্স মালিকরা। ফলে এসব উড়োজাহাজের রেজিস্ট্রেশন কার্যকর থাকায় আইনগত পদক্ষেপ নিয়ে নিলামে অথবা কেজি দরে বিক্রির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, পরিত্যক্ত ১২টি উড়োজাহাজের বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে যাওয়া এয়ারলাইন্সের। এর মধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের আটটি, জিএমজি এয়ারলাইন্সের একটি, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের দুটি ও অ্যাভিয়েনা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ রয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের বকেয়া পাওনা ১৯০ কোটি ১৬ লাখ ১৬ হাজার ৯৩৫ টাকা। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে বকেয়া পাওনা ২৩৬ কোটি ৯ লাখ ৩২ হাজার ৭০ টাকা, জিএমজি এয়ারলাইন্সের কাছে বকেয়া পাওনা ৩২৬ কোটি ১৪ লাখ ৯ হাজার ৫৪৫ টাকা। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোনো প্রকার ঘোষণা ছাড়াই ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করে দেয় ইউনাইটেড এয়ার। ২০০৫ সালে বেবিচকের অনুমোদন পাওয়ার পর ২০০৭ সালের ১০ জুলাই ফ্লাইট অপারেশন শুরু করেছিল এ এয়ারলাইন্সটি। বেবিচক দেশের বিমানবন্দরগুলো থেকে এয়ারলাইন্সটির বিমান সরানোর জন্য একাধিকবার নোটিশ করলেও কোনো ধরনের উদ্যোগ নেননি মালিকরা।
এ ব্যাপারে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শাহজালাল বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত ১২টি উড়োজাহাজ বিমানবন্দর উন্নয়ন কাজে বাধার সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজ চলছে। এ কারণে পরিত্যক্ত এসব উড়োজাহাজের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।