সুহেল ইবনে ইসহাক, টরন্টো, কানাডা: চলতি বছরের ১৮ মার্চ বা তার পরে যে কোনো সময়ে স্টাডি পারমিট পাওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের এখনি কানাডায় আসতে নিষেধ করছে সরকার। তার আগে অনুমোদন পাওয়া শিক্ষার্থীদেরও ভ্রমণ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার আগে খোঁজখবর নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। সকল বিদেশি শিক্ষার্থীদের নতুন নির্দেশনা জানিয়ে চিঠি পাঠাচ্ছে কানাডা ইমিগ্রেশন। গত ২১ জুলাই কানাডা সরকার নতুন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। (সূত্র: গভর্নমেন্ট অফ কানাডার ওয়েবসাইড)। কানাডা সরকারের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি অবস্থানরত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছেন। তাদের অনেকেই বিমানের টিকেট কেটে করোনা ভাইরাসের টেস্ট করতে নমুনা দিয়েছেন।কিন্তু কানাডার নতুন নির্দেশনার পর তারা কানাডায় আসতে পারবেন কী না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছেন না।
এ প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেনেকা কলেজের একজন শিক্ষক বাংলা কাগজকে জানান,”কোভিড-১৯ এক কারণে সরকার সকলের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছে, যার কারণে সাময়িক অসুবিধার সৃষ্টি হলেও, সময়ের সাথে সাথে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে, আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রী যারা সেমিস্টার ফি প্রদান করেছেন, তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা নয়। “টরন্টো ডাউন টাউনের এভারগ্রিন প্রাইভেট কলেজের ছাত্র মনসুর হাসান বাংলাকাগজকে জানান, “স্টাডি পার্মিট পাওয়া বাংলাদেশী অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন কানাডাতে তাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা কার্যক্রম এর কথা চিন্তা করে।” এ ব্যাপারে সেনেকা কলেজ মার্কাম ক্যাম্পাসের ছাত্র সাইদুর রহমান সায়েম বাংলা কাগজকে জানান, “বাংলাদেশ হতে যারা স্টাডি পারমিট পেয়ে এখনো কানাডাতে আসতে পারেননি, তারা বাংলাদেশে থেকেই স্বীয় কলেজ হতে অনলাইনে ৫০% ক্লাস করে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম সমভাবে চালিয়ে নিতে পারবেন।” সেনেকা কলেজ নেওনহাম ক্যাম্পাসের ছাত্র জামিল আহমেদ কাদের বাংলা কাগজকে জানান, ” ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টরা ৫০% ক্লাস স্বীয় দেশে থেকে করতে পারলেও কানাডাতে আসার পর তাদেরকে বাকি ৫০% ক্লাস সম্পন্ন করতে হবে, তাছাড়া সব কলেযে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। “তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত নিয়মিত ছাত্ররা এ নিয়ে উদ্ভিগ্ন আছেন বলে জামিল জানান। প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে গত মার্চে কানাডা বিদেশি নাগরিকদের কানাডায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নাগরিক এবং স্থায়ী বাসিন্দাদের পরিবারের নিকটতম সদস্যদের এই নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যহতি দেয়। স্টাডি পারমিট প্ওায়া বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও এই নিষেধাজ্ঞা বাইরে রাখা হয়। গুল্ফ, অন্টারিও এর জি.সি.বি.আই. হাই স্কুলের একজন বাঙালি বংশোদ্ভূত থাইল্যান্ডের ছাত্রী রাফি জামান বাংলা কাগজকে জানান,”কোভিড-১৯এর কারণে, সে কানাডাতে ভীষণ সমস্যার মধ্যে আছে, তার বাবা মা থাইল্যান্ডে থাকেন, এখানে তার কেউ নেই, কোভিড-১৯ এর কারণে তার মা তাকে দেখতে আসতে পারছেন না। ভীষণ উদ্ভিগ্নতার মধ্যে সে দিন কাঠাচ্ছে ,টরোন্টোতে পেয়িং গেস্ট হিসেবে এক পরিবারের সাথে সে বসবাস করছে। তার মা কানাডাতে আসতে গিয়ে ইমিগ্র্যাশন ভিসা সংক্রান্ত সব কিছু ঠিক থাকার পরও দুবাই থেকে ফিরে যেতে হয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মের কারণে।” তার মাকে কানাডাতে আসার অনুমতি প্রদানের জন্য রাফি জামান সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ করেছেন। গত ২১ জুলাই নতুন সিদ্ধান্তে ১৮ মার্চ এবং তার পরে অনুমোদন প্ওায়া শিক্ষার্থীদের সীমান্ত না খোলা পর্যন্ত কানাডায় না আসার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ১৮ মার্চ বা তার পরে স্টাডি পারমিট প্ওায়া বিদেশি শিক্ষার্থীরা কানাডায় এলে তাদের ঢুকতে দেয়া হবে না। ১৮ মার্চের আগে স্টাডি পারমিট প্ওায়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হলেও তাদের অনুসরণের জন্য কয়েকটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।প্রয়োজনী নির্দেশনা দিয়ে তাদেরও চিটি পাঠানো হচ্ছে। চিঠিতে কানাডায় আসার পর সম্ভাব্য যে সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বিশেষ করে স্বাস্থ্যবিধি এবং ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাকার্যক্রম চালু আছে কীনা তার খোঁজ নিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ১৮ মার্চের আগে স্টাডি পারমিট পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে সেটি ঐচ্ছিক কিংবা স্বেচ্ছা ভ্রমন(অপশনাল বা ডিসক্রিশনারী) নয় তার প্রমান দিতে হবে। অর্থ্যাৎ এই মুহুর্তে তার কানাডা ভ্রমন অপরিহার্য- তার স্বপক্ষে দালিলিক প্রমান দিতে হবে।