অনলাইন ডেস্ক : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতায় টিকে থাকতে এখন ক্ষমতাসীনরা ইতিহাস বিকৃত করে অপরাজনীতিতে নেমেছে। যে গণতান্ত্রিক চেতনা, গণতাকি রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করা হয়েছে বর্তমান সরকার সেই চেতনাকে হিমাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার সংগ্রামে বিএনপিই জনগণের কাছে একমাত্র ভরসা। তাই ক্ষমতাসীনরা এখন মিথ্যাচার করে ইতিহাস বিকৃত করার প্রক্রিয়ায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে খাটো করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি ও জিয়া পরিবারের প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনকে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় মোকাবেলা না করে বর্তমান সরকার শুরু করেছে ষড়যন্ত্র আর চক্রান্তের। সে কারণেই জিয়াউর রহমানসহ বিএনপির চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার এক ব্যর্থ অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। দেশে বিরাজমান নৈরাজ্য, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট ও মানবাধিকার বিরোধী গুম-খুন ও বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্যই তারা এই ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যরাতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির মাধ্যমে স্বঘোষিত আওয়ামী লীগ সরকার নির্লজ্জভাবে আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে। সীমাহীন নৈরাজ্য, দুর্নীতি, অরাজকতা, করোনা মোকাবেলায় চরম ব্যর্থতা ও চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে দেশকে নিপতিত করে সরকার আজ দিশেহারা। রাজনৈতিকভাবে চরম দেউলিয়া হয়ে জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে একমাত্র রাষ্ট্রশক্তির ওপরেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এই সরকার। এখন আর বর্তমান সরকারের কোন রাজনীতি নেই। তাই সরকারে টিকে থাকার জন্য তারা অপরাজনীতিতে নেমেছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকেই ব্যবহার করে চলেছে দেশের মালিক জনগণের বিরুদ্ধে। বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হচ্ছে একের পর এক মিথ্যা মামলা। আজও ১৯৭২-৭৫ সালের সরকারের বিচারবরিহভুত হত্যার সংস্কৃতি চলছে। বিচার-বহির্ভূত প্রক্রিয়ায় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা, গুম ও খুন আজ সরকারের দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে। যা জাতিসঙ্ঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংবিধানের মৌলিক চরিত্র পরিবর্তন করেও আশ্বস্ত নয় এই সরকার। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের নামে সকল গণমাধ্যম ও স্বাধীন মতামতের কন্ঠরোধ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো জঘন্য আইনের। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে দলীয় ক্ষমতার হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। আসলে সরকার জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তাকে ভয় পায়। এত অত্যাচার, নির্যাতনের পরেও দেশব্যাপী বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি ও গণভিত্তির তথ্য সম্পর্কে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরকার যতই অবগত হয়, ততই তাদের আক্রোশ বাড়ছে বিএনপি তথা দেশবাসীর প্রতি। আর সেই আক্রোশ থেকেই ইতিহাস বিকৃতির এ ঘৃণ্য তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে বর্তমান সরকার।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির ভিডিও প্রচার উদ্দেশ্যমূলক দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৫ আগস্ট হত্যা মামলায় ফাঁসির এক আসামিকে (মেজর [অব.)] মাজেদ) দিয়ে বন্দি অবস্থায় দেশের আইন, আদালত, শাসনব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সরকাররের মুসাবিদায় মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ধারণকৃত ভিডিও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারে বাধ্য করা এবং একই সাথে বেতনভুক্ত সাইবার ফোর্স নিয়োগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়েছে। আইন বিরোধী এই ধরনের পদক্ষেপ আসলে অপরাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়।