অনলাইন ডেস্ক : অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির গণশুনানিতে ৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হলেন- আবদুল হামিদ, মো. আমিন, সাইফুল আফসার, মো. আমিন (২), জাকির হোসেন, রশিদ আহম্মেদ, আনিছারুল আলম, দেলোয়ার হোসেন, নূরুল আমিন। তারা প্রত্যেকেই ঘটনাস্থল বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী। স্থানীয় এই বাসিন্দাদের ছা্‌ড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারি- বেসরকারি সংস্থার ৬০ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে তদন্ত টিম। সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নিতে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যামেপর ইনচার্জের কার্যালয়ে গণশুনানি গ্রহণ করে তদন্ত কমিটি।

শুনানি শেষে বিকাল ৫ টার পর তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আশা করছি আগামী ২৩শে আগস্টের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে পারবো। এর আগে সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী ১২ জন প্রত্যক্ষদর্শীকে নিবন্ধন করে গণশুনানির নির্দিষ্ট কক্ষে নেন তদন্ত দল। দুপুর ১টা পর্যন্ত তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ চলে। তবে তদন্তকারী দলের সদস্যরা ৯ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন, বাকি তিনজনকে অযোগ্য ঘোষণা করেন।

জানা গেছে, শুনানিতে সাক্ষ্য দিতে নিবন্ধনভুক্ত ১২ জনই টেকনাফ বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা।

শুনানিতে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মনোনীত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লে. কর্নেল সাজ্জাদ, চট্টগ্রামের ডিআইজি মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলী উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ৯টা হতে গণশুনানি স্থলে আসা শুরু করেন সবাই। বক্তব্য দিতে আগ্রহীরা নাম রেজিস্ট্রেশন বুথে যান। গণশুনানি উপলক্ষে মেরিন ড্রাইভের শাপলাপুর এলাকা, ক্যাম্পস্থল এবং আশপাশে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করছেন তারা। এর মাঝে এ হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত, নাকি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটেছে। কার নির্দেশে সিনহাকে গুলি করেছিলেন লিয়াকত। ঘটনার সময় আদৌ সিনহার হাতে অস্ত্র ছিল কি না, এসব অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতে, এসব প্রশ্নের জবাব মিললেই ঘটনার সবকিছু সপষ্ট হবে।
এর আগে গত ১২ই আগস্ট সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় গণশুনানি করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। ওইদিন তদন্ত কমিটির সদস্য ও কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছিল।

সিনহা রাশেদ নিহতের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত হয় এই তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মিজানুর রহমান। সদস্য হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জাকির হোসেন, মোহা. শাজাহান আলী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ। কমিটিকে প্রথমে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা বলা হয়। পরে কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় আরো সাত দিন বাড়ানো হয়। কাজ শুরুর পর গত ৪ঠা আগস্ট কমিটির প্রধান মিজানুর রহমান কক্সবাজারে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছিলেন, তদন্ত কমিটির আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়েছে। কমিটির প্রথম বৈঠকে তদন্তের কর্মপন্থা ঠিক করা হয়েছে। ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলা হবে। ঘটনার নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থে যেটুকু করা দরকার, তদন্ত কমিটি তাই করবে। কমিটি সরজমিন গিয়ে পরিদর্শন করবে।

গত ৩১শে জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার- টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দু’টি মামলা করে। আর রামু থানায় একটি মামলা করে।

পরে ৫ই আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে নয়জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন- টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক।
এর মধ্যে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া পুলিশের চার সদস্য এবং এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় তিন সাক্ষীকে গত শুক্রবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে র‌্যাব। যাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তারা হলেন- সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছ।