অনলাইন ডেস্ক : সিলেটের একটি সড়ক। গুরুত্ব অনেক বেশি। বিষয়টি অনুধাবন করেছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ কারণে তিনি প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু প্রকল্প নিয়ে হচ্ছে নানা টালবাহানা। দুই লেনের ওই সড়ককে চার লেন করা হচ্ছে না। এ নিয়ে অনেক ক্ষোভ সিলেটে। সড়কটি হচ্ছে বিমানবন্দর-বাদাঘাট-তেমুখী সড়ক।

এদিকে গত শনিবার এই সড়কটি পরিদর্শন করেছেন সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা। দুপুরে তারা বিমানবন্দর থেকে তেমুখী পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তারা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এই সড়কের প্রস্তাবনা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের প্রবেশমুখ নগরীর আম্বরখানা এলাকা। আম্বরখানা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এই রাস্তা এখন সবচেয়ে ব্যস্ত সড়ক। এই সড়ক দিয়ে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও সদর উপজেলার মানুষ যাতায়াত করেন। পাশাপাশি কোম্পানীগঞ্জ ও বিছনাকান্দি থেকে প্রতিদিন পাথরবাহী শত শত ট্রাক চলছে। এতে করে আম্বরখানা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তাটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। আর যানজটও নিত্যদিনের সঙ্গী। এই অবস্থায় ভোগান্তি মাথায় নিয়েই চলাচল করেন আকাশপথের যাত্রীরা। যানজটের কারণে নির্ধারিত সময়ে অনেক যাত্রীই ফ্লাইট ধরতে পারেন না। এ কারণে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নগরীর আম্বরখানা সড়কের চাপ কমাতে বিমানবন্দর থেকে বাদাঘাট হয়ে তেমুখী পর্যন্ত একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তিনি ওই সড়কে দুই লেনের একটি সড়ক নির্মাণ করেন। পরে ওই সড়কটিকে চার লেনের করার প্রস্তাব করা হয়। এই সড়কের সংযোগস্থল হচ্ছে টুকেরবাজারের সুরমা নদীর উপর স্থাপিত তৃতীয় শাহজালাল সেতু পর্যন্ত। এ কারণে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইঘাট থেকে যে সব পাথর ট্রাকে আসবে সেসব ট্রাক আম্বরখানা না ছুঁয়ে বাদাঘাট বাইপাস হয়ে নগরের বাইরে দিয়ে গন্তব্যে চলে যাবে। এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জ সাদাপাথর, গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি ও রাতারগুলে আসা দূরদূরান্তের পর্যটকরাও ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন। এতে করে আম্বরখানার উপর চাপ কমে আসবে। এদিকে সন্ধ্যার পর থেকে শত শত ট্রাকের চলাচল শুরু হলে সিলেট শহরজুড়ে দেখা দেয় তীব্র যানজট। স্থবির হয়ে পড়ে শহরের সড়কগুলো। গত এক বছরে শহরের ভেতরে অন্তত ১০ জন পাথরবাহী ট্রাকচাপায় প্রাণ হারিয়েছেন। ট্রাকের চাপায় মানুষ মৃত্যুর ঘটনায় সিলেটে দফায় দফায় হয়েছে আন্দোলনও। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, গুরুত্ব বিবেচনা করে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১২-১৪ অর্থবছরে নির্মাণ করেন সিলেট বিমানবন্দর-বাদাঘাট বাইপাস সড়ক। এরপর তিনি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের নতুন কমপ্লেক্স সেখানে নির্মাণ করেন। কারাগার নির্মাণের পর এই সড়কের গুরুত্ব আরো বেড়েছে। এ জন্য দুই লেনের এই সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার দাবি ওঠে সিলেটে। সাধারণ মানুষ, পাথর ব্যবসায়ী, সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি সহ বিভিন্ন মহল থেকে এমন দাবি জোরালো হয়। সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ চলমান। কাজ শেষ হলে বিমানবন্দরটিতে বাড়বে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। ফলে বিমানবন্দরে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়বে। সিলেট বিভাগের চার জেলার মধ্যে একমাত্র আন্তর্জাতিক এই বিমানবন্দরে ব্যস্ততা বাড়লে সিলেট মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে বিমানবন্দর-বাদাঘাট বাইপাস সড়ক চার লেনে উন্নীত হলে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের যাত্রীরা শহরে প্রবেশ না করেই ওই বাইপাস দিয়ে বিমানবন্দরে যেতে পারবেন। জোরালো দাবি ওঠার প্রেক্ষিতে বিমানবন্দর-বাদাঘাট বাইপাস চার লেনে উন্নীত করতে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ২০১৬ সালে সেই প্রস্তাবনা পাঠানো হয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে। পরবর্তীতে প্রস্তাবনা সংশোধন করে চার লেন সড়কের সঙ্গে দুটি সার্ভিস লেন যুক্ত করে নতুন প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর বছরখানেক আগে ফের চার লেনের প্রস্তাবনা যায় মন্ত্রণালয়ে। দুই লেন থেকে চার লেন নাকি ছয় লেন করা হবে- ৫ বছরে হয়নি এর সুরাহা। সমপ্রতি এ বাইপাসের বিষয়ে সড়ক সচিব নিজের মতামতে এটিকে দুই লেনেই রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। কিন্তু সিলেটের মানুষ তার এ মতের সঙ্গে একমত হচ্ছেন না। এই অবস্থায় গতকাল শনিবার সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম প্রধান জাকির হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম সিলেটে আসে। দুপুরে তারা বিমানবন্দর এলাকা থেকে বাদাঘাট হয়ে তেমুখী পর্যন্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। তারা ভালোভাবে সড়কটি পর্যবেক্ষণ করেন। একই সঙ্গে তারা সড়কটির গুরুত্ব নিয়েও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। বিকালে সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্যালয়ে এ নিয়ে তারা বৈঠকও করেন। সড়কটি পরিদর্শনের পর টিমের প্রধান, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানিয়েছেন, সড়কটি টেকসই করতে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে হলে আঁকাবাঁকা স্থানকে সোজা করতে হবে। এ জন্য তারা নতুন করে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করবেন। এবং ওই প্রস্তাবনা আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে জমা দেবেন। পুরাতন যে সার্ভে করা হয়েছিল সেই সার্ভে এখন গ্রহণযোগ্য হবে না। ফলে সেটি নতুন করে সার্ভে করতে হবে বলে জানান তিনি। সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ জানিয়েছেন, সড়কটির গুরুত্ব অনেক বেশি। গুরুত্ব বিবেচনা করে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সেখানে দুই লেনের সড়ক করেছিলেন। পরবর্তীতে সেই সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এখন আমাদের দাবি হচ্ছে চার লেন করার। আম্বরখানাকে যানজট মুক্ত করতে হলে চার লেনের বিকল্প নেই বলে তিনি সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদেরও বিষয়টি জানিয়েছেন বলে জানান।