অনলাইন ডেস্ক : বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে সুপরামর্শ প্রত্যাশা করছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘সুপরামর্শ দিন। অবশ্যই তা সাদরে গ্রহণ করা হবে। সেই সঙ্গে সরকারেরও গঠনমূলক সমালোচনা করুন। ওই সমালোচনাও ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হবে। কেননা, ভুল সংশোধনের মতো সৎ সাহস শেখ হাসিনা সরকারের রয়েছে।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরও বলেছেন, বিএনপি আন্দোলন এবং নির্বাচনে ব্যর্থ। জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে তারা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। গণমাধ্যম আছে বলেই তাদের রাজনীতি এখনও টিকে আছে। এখন তাদের একটাই কাজ, মিথ্যাচার করা। অকারণে সরকারের বিরোধিতা করা। তারা দিনের আলোয় রাতের আঁধার দেখে। পূর্ণিমার আলোয় দেখে অমাবস্যার আঁধার।
সমকালকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে ওবায়দুল কাদের আরও বলেছেন, অশুভ চক্র আগস্ট মাসে নানামুখী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে। আগস্টেই দুটি রক্তাক্ত ঘটনা ঘটেছে। ১৯৭৫ সালের আগস্টে জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে নারকীয় গ্রেনেড হামলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে। এই আগস্টেই মুন্সীগঞ্জ ছাড়া ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ, আগস্টে অপরাধী ও খুনি চক্রের চক্রান্ত বাড়ে। এ কারণেই আগস্ট এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছোট বোন শেখ রেহানাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ে- কখন কী ঘটে?
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগস্টে সংঘটিত দুই মর্মান্তিক বেদনাদায়ক ঘটনার সঙ্গে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নাম জড়িয়ে আছে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা প্রকাশ্যে বলেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে পর্দার অন্তরালে ছিল মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। তার অবৈধ শাসনামলে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে রূপ দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করা হয়েছিল। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময় ক্ষমতায় ছিলেন খালেদা জিয়া।
সাক্ষাৎকারে বেশ খোলামেলা কথা বলেছেন ওবায়দুল কাদের এমপি। তিনি বলেছেন, ক্ষমতার সঙ্গে অনেক আগাছাও রাজনৈতিক দলে ঢুকে পড়ে। তবে অপকর্মে জড়িত বর্ণচোরাদের জায়গা আওয়ামী লীগে নেই। এই ধরনের কেউ আওয়ামী লীগে থাকলে তাদের দ্রুতই বের করে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ওই বর্ণচোরারা কোন কোন নেতার হাত ধরে দলে এসেছে, তাদেরও খোঁজা হবে। সেই কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। ওই নেতাদের বিরুদ্ধে নানাভাবে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কেউ নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হচ্ছেন। কেউ দলের পদপদবি থেকে বাদ পড়ছেন।
ওবায়দুল কাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকারের চলমান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান। তিনি বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। কোনোভাবেই দলীয় পরিচয় দিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি ঢাকা যাবে না। তিনি রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম, জেকেজি হেলথ কেয়ার সেন্টারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী এবং অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতের কারাগারে বন্দি স্বতন্ত্র এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলসহ সংশ্নিষ্টদের নিয়েও কথা বলেন।
ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজির শীষ কর্তাব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের ঘটনাই প্রমাণ করে, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। গণমাধ্যম সাহেদ করিম, ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীসহ বর্ণচোরাদের চিহ্নিত করেনি। যারা জনগণের অসহায়ত্ব নিয়ে অবৈধ ব্যবসা ও প্রতারণা করছে, তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল শেখ হাসিনার সরকারই তাদের গ্রেপ্তার করেছে।
খ্যাতিমান রাজনীতিক মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, দুর্বৃত্তের কোনো দল নেই। অপরাধীর কোনো দলীয় পরিচয় নেই। যতই ক্ষমতাধর হোক, তাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে। মুখোশের আড়ালে যতই মুখ লুকিয়ে রাখুক, কোনো অপরাধীই ছাড় পাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় পরিচয়ে কাউকে ক্ষমা করেননি। তিনি (শেখ হাসিনা) জনগণের মনের ভাষা বোঝেন। তিনি কখনোই কোনো অপরাধীকে ছাড় দেননি। ভবিষ্যতেও দেবেন না। শেষ পর্যন্ত অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেতেই হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে কারও কারও বিরুদ্ধে ত্রাণসামগ্রী লোপাটের অভিযোগ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, যারা ওই অপকর্ম করেছেন তাদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। সবাই গ্রেপ্তার হয়েছেন। দল থেকেও বহিস্কার করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে দু-একজনের কর্মদক্ষতা নিয়ে জনমনে সৃষ্ট বিরূপ মনোভাব এবং তাদের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, মন্ত্রিসভায় রদবদলের বিষয়টি দেখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনা সংকটের পাশাপাশি বন্যাদুর্গত মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টি সরকারের জন্য নতুন আরেকটি চ্যালেঞ্জ। তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়ও সরকার সাফল্য পাবে ইনশাল্লাহ। কেননা দুর্যোগকালে মানবিকতার আধার ও আস্থার ঠিকানা শেখ হাসিনা সবসময় অসহায় মানুষের পাশে আছেন। তার নেতৃত্বেই বীর জাতি হিসেবে বাঙালি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে আবারও গতি সঞ্চার হবে।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে সরকার অসহায় কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে মানবিক সহায়তা নিয়ে। জীবন ও জীবিকার চাকা সচল রাখতে নিয়েছে নানা উদ্যোগ। ৬৪ জেলায় এরই মধ্যে দুই লাখ ১১ হাজার ১৭ মেট্রিক টন চাল এবং প্রায় ১২৩ কোটি টাকার শিশুখাদ্যসহ অন্যান্য সামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ মানুষের মধ্যে আড়াই হাজার টাকা করে বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছেন। এ ছাড়াও রেশন কার্ডের আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৫০ লাখ থেকে বাড়িয়ে এক কোটিতে উন্নীত করা হয়েছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম তথা সুরক্ষাসামগ্রী সংগ্রহসহ নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে। ৮০টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। কভিড হাসপাতালসহ জেলা শহরের প্রধান হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা সক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। এ পর্যন্ত এক কোটি ২৫ লাখের বেশি অসহায় পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে দলীয়ভাবে। নগদ সহায়তার পরিমাণ ১০ কোটি টাকারও বেশি। রমজানে ইফতার, ঈদ উপহার ছাড়াও তিন শতাধিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সুরক্ষা ও চিকিৎসাসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। রোগীদের কল্যাণে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা, দাফন-কাফন ও সৎকারে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ধান কেটে কৃষকের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রবল বন্যায় ৩৩টি জেলার ১৫৮ উপজেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ১০ লাখ ৬০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫৫ লাখ মানুষ। সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় ১৪ হাজার ৪১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তিন কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। শিশুখাদ্য হিসেবে এক কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১ লাখ ৫২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারসহ গৃহনির্মাণে ৩০০ বান্ডিল ঢেউটিন এবং নয় লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।