অনলাইন ডেস্ক : কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা কানাডিয়ান সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসজানিয়েছে, ভারত ও চীন কানাডার আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করতে পারে।

গত সোমবার সংস্থাটি এই অভিযোগ করে। তবে, এমন এক সময়ে এ অভিযোগ তোলা হলো, যখন কানাডার সঙ্গে এই দুই দেশেরই কূটনৈতিক সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে আছে।

এদিকে কানাডার আগাম নির্বাচনের বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিএসআইএস-এর উপপরিচালক ভ্যানেসা লয়েড জানান, বৈরি রাষ্ট্রীয় শক্তিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে নির্বাচনে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, ‘চীনের পিপলস রিপাবলিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত টুল ব্যবহার করে কানাডার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার সম্ভাবনা খুব বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া চীন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে এমন কিছু প্রচার চালাতে পারে, যা তাদের স্বার্থ রক্ষা করে এবং গোপন ও বিভ্রান্তিকর কৌশলের মাধ্যমে কানাডায় বসবাসরত চীনা জাতিগোষ্ঠী, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়গুলোর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।’

ভ্যানেসা লয়েড বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ভারত সরকার কানাডার সম্প্রদায় ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের সক্ষমতা ও ইচ্ছা রাখে, যাতে তারা তাদের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে পারে।’

ভ্যানেসা লয়েড জানান, শুধু ভারত ও চীনই নয়, রাশিয়া ও পাকিস্তানও কানাডার আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে পারে। মূলত পাকিস্তান কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কানাডার নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে পারে। বিশেষত, পাকিস্তান তার রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি ভারতের বৈশ্বিক প্রভাব কমানোর চেষ্টা করতে পারে।

এর আগে এ বছরের জানুয়ারিতে কানাডার এক কমিশনের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, কানাডার নির্বাচনে কিছু বিদেশি সরকার হস্তক্ষেপ করছে। যদিও ভারত এই অভিযোগকে ‘অমূলক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘আমরা এই প্রতিবেদনের ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছি এবং আশা করছি যে, অবৈধ অভিবাসনকে সহায়তা করার অবকাঠামো আর প্রসারিত করা হবে না।’

এদিকে কানাডিয়ান সংবাদপত্র দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল দাবি করেছিল, ভারত প্রক্সি এজেন্টদের মাধ্যমে তিনটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের গোপনে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, ভারত ও কানাডার সম্পর্কের অবনতি শুরু হয় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ভারতের বিরুদ্ধে খলিস্তানি সন্ত্রাসী হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনার পর থেকেই এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির শুরু হয়।

তবে, ওই সময় ভারত এই অভিযোগকে নির্লজ্জ ও অযৌক্তিক বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল।

পরবর্তীতে কানাডা ভারতীয় কর্মকর্তাদের সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলে ভারত ছয়জন কানাডিয়ান কূটনীতিককে বহিষ্কার করে এবং অটোয়াতে নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনে।

শুধু ভারত নয়, কানাডার সঙ্গে চীনের সম্পর্কও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খারাপ গেছে বলে জানা যায়। মূলত চলতি মাসের শুরুর দিকে চীন কানাডার কৃষিপণ্য ও খাদ্যপণ্যের ওপর ২.৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি শুল্ক আরোপ করে। এটি কানাডার চীনা ইলেকট্রিক যানবাহন, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কের প্রতিশোধ হিসেবে মনে করা হয়।

আগামী ২৮ এপ্রিলের কানাডায় নির্বাচনের আগে ভারত, চীন, রাশিয়া ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কানাডার গোয়েন্দা সংস্থার নতুন এই অভিযোগ আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।