অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর অনেক আগ থেকেই প্রবাসী আয় ছাড়া অর্থনীতির সব সূচক খারাপ অবস্থায় ছিল। এখন করোনার মধ্যেও হঠাৎ করে আমদানিতে ইতিবাচক ধারা শুরু হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত জুন মাসে আমদানিতে প্রায় ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
যদিও ২০১৯-২০ অর্থবছরের পুরো সময়ে আমদানি কমেছে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ। এর ফলে অর্থনীতির ভালো সূচকে প্রবাসী আয়ের সঙ্গে যুক্ত হলো আমদানিও। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে অনেক দেশের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বিশেষ করে চীনের বাজার। এর ফলে ঋণপত্র খোলা হলেও পণ্য আসেনি। এসব পণ্য জুন মাসে এসেছে। আবার করোনাভাইরাসের কারণে সুরক্ষাসামগ্রী আমদানিও বেড়েছে।
জুন মাসে আমদানি বাড়ায় মনে হচ্ছে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর তেমনটি মনে করেন না। তিনি বলেন, করোনা শুরুর পর অনেক দেশ থেকে পণ্য আসেনি। আবার বন্দরে এসেও পড়ে ছিল। চীনসহ অনেক দেশের বাজার খুলে যাওয়ায় জুন মাসে এসব পণ্য এসেছে। এর ফলে আমদানি বেড়েছে। এটা সাময়িক।
আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, পোশাক কারখানাগুলো চালু আছে, আদেশও আসছে। তাই আমদানি বাড়বে। তবে আগের মতো চাহিদা এখন হবে না, ফলে আমদানিতে তেমন প্রবৃদ্ধি হবে না। এ জন্য নতুন বাজার নতুন পণ্য রপ্তানির দিতে মনোযোগ দিতে হবে। তাহলে আমদানিও বাড়বে।
জানা গেছে, অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে গত অর্থবছরে রপ্তানি কমে প্রায় ১৭ শতাংশ। শুধু জুনেই আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আড়াই শতাংশ কম রপ্তানি হয়। আর করোনার কারণে সরকারের রাজস্ব আদায়ও মন্থর হয়ে পড়ে। ফলে গত মে মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায় কমে প্রায় ৩৫ শতাংশ। এদিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রিও কমে গেছে। ফলে ব্যাংকঋণমুখী হয়ে পড়েছে সরকার। আর গত অর্থবছরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে হয় ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।
তবে করোনার মধ্যেও ভালো প্রবাসী আয় আসছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও নতুন নতুন উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে। গত অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে প্রায় ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। আর পুরো অর্থবছরে আয় আসে ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার। ফলে গত ২৯ জুলাই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে হয় ৩ হাজার ৭১৮ কোটি ডলার, যা দিয়ে প্রায় ৭ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অর্থনীতির গতি ফেরাতে হলে রপ্তানির পাশাপাশি আমদানিতেও ভালো প্রবৃদ্ধি হতে হবে। কারণ, পোশাকের কাঁচামালের প্রায় পুরোটাই আমদানি-নির্ভর। কাঁচামাল না এলে পণ্যের উৎপাদন ব্যাহত হবে, যার প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানসহ অর্থনীতির নানা সূচকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বিভিন্ন দেশ থেকে ৪৮০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের জুন মাসের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি। গত বছরের জুন মাসে ৩৮৮ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। আর গত মে মাসে এসেছিল ৩৫৩ কোটি ডলারের পণ্য। ফলে মে মাসের চেয়ে প্রায় ৩৬ শতাংশ বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে জুন মাসে। আর এপ্রিলে এসেছিল মাত্র ২৮৫ কোটি ডলারের পণ্য, যা এক মাসের হিসাবে এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মে মাসে ৩১ শতাংশ, এপ্রিলে ৪৪ শতাংশ, মার্চে ১৩ শতাংশ ও জানুয়ারিতে প্রায় ১৩ শতাংশ কম আমদানি হয়। যদিও ফেব্রুয়ারি মাসে আমদানিতে দশমিক ৪৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ওই মাসে ৪৭২ কোটি ডলারের পণ্য এসেছিল।
জানা গেছে, গত অর্থবছরে বিভিন্ন দেশ থেকে ৫ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। ওই অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছিল ৫ হাজার ৯৯১ কোটি ডলারের। যদিও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য আমদানিতে ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল প্রায় ২৫ শতাংশ।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক দেশে রপ্তানি বন্ধ ছিল, যা এখন খুলে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে কাঁচামাল আমদানি বাড়ছে, রপ্তানিও বাড়বে। এ ছাড়া সুরক্ষাসামগ্রী তৈরির বিভিন্ন কাঁচামালও আমদানি হচ্ছে। এ কারণে আমদানি বেড়ে গেছে। তবে আগের মতো মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভোক্তা পণ্য ছাড়া সব ধরনের আমদানিতে নেতিবাচক ধারা ছিল। মূলধনি যন্ত্রপাতি সাড়ে ৮ শতাংশ, জ্বালানি ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ, শিল্পের কাঁচামালে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ ও অন্যান্য পণ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ কম ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়। তবে ভোক্তা পণ্য আগের অর্থবছরের চেয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ পণ্য আমদানি নিষ্পত্তি হয়।