অনলাইন ডেস্ক : ক্যান্সার একটি গুরুতর রোগ, যেখানে শরীরের কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে। শরীরে কোষগুলো তৈরি হয় এবং এক সময়ের পরে মারা যায়। তারপর নতুন কোষ তৈরি হয়। তবে ক্যান্সার হলে কোষগুলো আর মারা যায় না, বরং অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে।

কোষ বৃদ্ধির ফলে এটি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। ক্যান্সার থেকে বাঁচতে মানুষকে তাদের জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু খাবার খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়, আবার অনেক কিছু ক্যান্সার থেকে বাঁচাতে পারে। তাই মানুষকে তাদের খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর রাখতে হবে।

এটি নিয়ে অবহেলা করা বিপজ্জনক হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘আমাদের শরীরে ফ্রি র‍্যাডিক্যালস বেড়ে গেলে এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করে এবং এর ফলে ক্যান্সার হতে পারে।’

ফ্রি র‍্যাডিক্যালসকে ক্যান্সারের একটি ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফ্রি র‍্যাডিক্যালসকে নিষ্ক্রিয় করতে শরীরের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের প্রয়োজন হয়।

এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো মানুষকে খাদ্য ও মানসিক চাপ কমানোর মাধ্যমে পাওয়া যায়।

যদি কারো শরীরে পর্যাপ্ত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, তাহলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কিছুটা কম হতে পারে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো ক্যান্সার, হার্ট ডিজিজসহ অনেক গুরুতর রোগ থেকে বাঁচাতে কার্যকর হতে পারে। সবাইকে ডায়েটে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় যেসব খাবার
ডায়েটিশিয়ানদের মতে, প্রক্রিয়াজাত মাংস বেশি খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

কারণ এতে নাইট্রেটস ও নাইট্রাইটসের মতো রাসায়নিক থাকে, যা শরীরে ক্যান্সারজনক উপাদানে পরিণত হতে পারে।

বেশি তেলে ভাজা খাবার ও জাংক ফুড বেশি খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এতে অনেক উপাদান থাকে, যা মারণ রোগের কারণ হতে পারে। অ্যালকোহল পান করলেও বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

চিনি ও উচ্চ-ফ্যাট ডায়েটও ওজন বাড়াতে পারে, যা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। বেশি লবণযুক্ত খাবার ও প্যাকেজড ফুডও শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এ ছাড়া ক্যাফেইনের বেশি সেবনও ক্ষতিকর হতে পারে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় যেসব খাবার
বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান সমৃদ্ধ খাবার কোষগুলোকে ক্ষতিকর উপাদান থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। ফল খেলে ক্যান্সার থেকে বাঁচা যেতে পারে। কারণ এতে ফাইটোকেমিক্যালস থাকে, যা ক্যান্সার কোষগুলোর বৃদ্ধি রোধ করতে পারে।

টমেটো, ব্রোকলি, গাজর, কেল, রসুন, আদা ও পালং শাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরকে ফ্রি র‍্যাডিক্যালস থেকে রক্ষা করে। ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি, ডালিম, কমলা, লেবু, পেঁপে ও আঙুরে অ্যান্টিক্যান্সার গুণ পাওয়া যায়।

এই ফলগুলো খেলে ক্যান্সারের মতো রোগ থেকে বাঁচতে সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়া ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন- ডাল, গোটা শস্য ও ডালজাতীয় খাবার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করলে ক্যান্সারের কোষ থেকে বাঁচা যেতে পারে।

পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যান্সার থেকে বাঁচতে মানসিক চাপ কমানোও অত্যন্ত জরুরি। মানসিক চাপ বাড়লে শরীরে কর্টিসল হরমোন বেড়ে যায়, যা ক্যান্সারের মতো রোগের কারণ হতে পারে। মানসিক চাপ কমানোর জন্য ধ্যান, যোগ বা শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল অনুশীলন করাও উপকারী হতে পারে।

প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ভালো ঘুম নিলে শরীরের সিস্টেম বুস্ট হয়ে যায় এবং ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি কম হতে পারে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয় এবং ক্যান্সার থেকে বাঁচা যেতে পারে।

এ ছাড়া ভালো জীবনযাপন ও উন্নত খাদ্যাভ্যাসের সংমিশ্রণ সঠিক হলে ক্যান্সারই নয়, বরং অধিকাংশ রোগ থেকে বাঁচতে সাহায্য করতে পারে।

সূত্র : নিউজ ১৮