অনলাইন ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী করোনার থাবা ঈদের আনন্দে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে প্রবাসীদের মনেও। বিশ্বের অনেক দেশেই শুক্রবার (৩১ জুলাই) পালিত হয়েছে ঈদুল আজহা। কয়েকটি দেশে শুধু নামাজেই ঈদের আনুষ্ঠানিকতা সীমিত থাকলেও অনেক দেশেই পশু কোরবানি দিতে পারেননি অনেক প্রবাসী। সবমিলিয়ে অনেকটা সাদামাটা ঈদ পালন করেছেন তারা। কয়েকটি দেশের প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ঈদ পালিত হয়েছে শুক্রবার। সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সীমিত পরিসরে ঈদের নামাজে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশ নেন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও। পর্তুগাল, ফ্রান্সসহ ইউরোপের প্রত্যেকটি দেশেই শুক্রবার ঈদ উদযাপন হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে প্রবাসীরা এবার কোরবানি দিয়েছেন তুলনামূলকভাবে কম। কেউ কেউ মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করলেও বেশিরভাগই বাসায় আদায় করেছেন ঈদের নামাজ। সৌদি প্রবাসী ডা. মামুনুর রশিদ জানান, এবারের ঈদে অনেকেই বাসায় নামাজ আদায় করেছেন। কোরবানির পরিমাণও ছিল আগের তুলনায় অনেক কম। ঈদের কুশলাদি বিনিময়, সামাজিক আনুষ্ঠানিকতা তেমন কিছুই নেই। দূতাবাসের পক্ষ থেকে ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজনের ব্যবস্থা থাকলেও এবার না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানান তিনি।
৮৬ বছর পর আবারও তুরস্কের ঐতিহ্যবাহী আয়া সোফিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে অংশ নিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও। সেখানকার প্রবাসীদের মতে, এরকম ঈদ আগে কখনও বিদেশের মাটিতে আসেনি। করোনা সংকট দ্রুত পৃথিবী থেকে বিদায় হোক— এই প্রত্যাশা তাদের।
মালয়েশিয়ায় মসজিদে ঈদের নামাজে এবং সেদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের পশু কোরবানিতে নিষেধাজ্ঞা ছিল বলে জানিয়েছেন সেখানকার প্রবাসীরা। তাই তারা ঘরেই নামাজ আদায় করেছেন। দীর্ঘ দিন মালয়েশিয়ায় বাস করা প্রবাসী মো. ইলিয়াস জানান, আমরা ঘরে নামাজ আদায় করেছি। করোনার কারণে এখন মসজিদে নামাজ পড়া নিষেধ। এখানকার স্থানীয়রা কোরবানি দিতে পেরেছেন, কিন্তু প্রবাসীদের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল।
শুক্রবার সকাল ৯টায় জার্মান সরকারের সব নিয়মনীতি মেনে বার্লিনে খোলা মাঠে কয়েকশ’ প্রবাসী বাংলাদেশি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। ঈদের নামাজে উপস্থিত ছিলেন— বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ বলে জানিয়েছে দূতাবাস। রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান এবং সবার কাছে দেশবাসীর জন্য দোয়া চান। নামাজের পর মোনাজাতে মুসলিম উম্মার জন্য শান্তি কামনা, দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য এবং বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য দোয়া করা হয়।
কুয়েত সরকার ঈদের নামাজ জামাতে আদায়ের অনুমতি দেওয়ায় কিছুটা স্বস্তিতে আছেন প্রবাসীরা। এমনকি অনেকেই পশু কোরবানি করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা। কুয়েত থেকে মো. সগীর জানান, অনেকেই বাসার ছাঁদে জামাতে নামাজ আদায় করেছেন। রোজার ঈদেও এবার ঘরে বসে নামাজ পড়তে হয়েছে। এবার কুয়েত সরকার জামাতে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন তাপরা।
স্পেনে ঈদুল ফিতরে নামাজ আদায়ের অনুমতি না থাকলেও এবার ঈদুল আজহায় স্বাস্থ্যবিধি মানা সাপেক্ষে অনুমতি দিয়েছে দেশটির সরকার। তবে পশু কোরবানির নিয়ম না থাকায় স্থানীয় দোকান থেকে মাংস কিনে ঈদ পালন করেছেন প্রবাসীরা।
পর্তুগালে জরুরি অবস্থা তুলে নিলেও সরকার দুর্যোগপূর্ণ রাষ্ট্র ঘোষণা করায় লিসবনে একসঙ্গে ১০ জন এবং বাকি শহরগুলোতে ২০ জনের বেশি জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেক জায়গায় ঈদের জামাত করার অনুমতির দেয়নি দেশটির সরকার। তবে কিছু কিছু জায়গায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় ঈদুল আজহার নামাজের আয়োজন করেছেন প্রবাসীরা। এছাড়া, অনেকটা সাদামাটাভাবে ঘরে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১০ জন করে ঈদের নামাজ ও ঈদ উদযাপন করেছেন প্রবাসীরা।
সুইডেন প্রবাসীরা জানান, রোজার ঈদে নামাজের অনুমতি না থাকলেও এবার ঈদে নামাজ আদায় করা গেছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে মসজিদের পাশাপাশি খোলা মাঠেও আদায় করা হয়েছে ঈদের জামাত। সুইডেন প্রবাসী ইশতিয়াক জানান, সুইডিশ সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব মেনে আমরা ঈদের নামাজ আদায় করেছি এবার। এছাড়া ঈদের আয়োজন সব ঘরোয়াভাবেই ছিল।